বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে হত্যাচেষ্টা মামলার আসামি ও ছাত্র আন্দোলন দমনে অর্থের যোগানদাতা লিপি খান ভরসার জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে প্রেরণ করেছেন রংপুর আদালত।  

রোববার রাত সাড়ে ৯টার দিকে তাকে রংপুর সিএমএম আদালতে তোলা হলে রংপুর অতিরিক্ত চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত-১ এর বিচারক শোয়েবুর রহমান এই আদেশ দেন। এর আগে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই সুদীপ্ত শাহীন কড়া পুলিশ নিরাপত্তায় ঢাকা থেকে তাকে রংপুর মহানগরীর কোতয়ালি থানায় নিয়ে আসেন। এর আগে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে হত্যাচেষ্টা মামলার আসামি রংপুরের ব্যবসায়ী লিপি খান ভরসাকে রোববার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ঢাকার গুলশান এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।
 
গ্রেপ্তার লিপি খান রংপুরের ধণাঢ্য ব্যবসায়ী ভরসা পরিবারের পুত্রবধূ। তিনি এসএল ভরসা গ্রুপের চেয়ারম্যান ও সেরা করদাতা। তার বিরুদ্ধে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে হত্যা চেষ্টাসহ আন্দোলন দমনে অর্থ যোগান দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। লিপি খান ভরসা সর্বশেষ ২০২৪ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সংরক্ষিত নারী আসনে আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য হওয়ার জন্য মনোনয়নপত্র কিনেছিলেন। তিনি প্রকাশ্যে আওয়ামী লীগের সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী ও তৎকালীন স্থানীয় সংসদ সদস্য টিপু মুনসির নির্বাচনী সভা-সমাবেশে অংশ নেন।

মামলা সূত্রে জানা যায়, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে গত বছরের ১৯ জুলাই বিকেলে রংপুর নগরীর গ্র্যান্ড হোটেল মোড় থেকে আন্দোলনকারীরা একটি মিছিল নিয়ে সিটি বাজারের সামনে অবস্থান নেন। এ সময় পুলিশ ও আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা অস্ত্র নিয়ে তাদের ওপর গুলি চালায়। এতে গুলি লেগে অনেকেই আহত হন। এ ঘটনায় গুলিবিদ্ধ মামুনুর রশিদ মামুন বাদী হয়ে ১৩ নভেম্বর মহানগর কোতয়ালি থানায় হত্যাচেষ্টার মামলা করেন। লিপি খান ভরসা এ মামলার এজাহারভুক্ত ১৭৯ নম্বর আসামি।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে হামলার অভিযোগে গত ১৩ নভেম্বর রংপুরের হারাগাছার ব্যবসায়ী লিপি খান ভরসার বিরুদ্ধে একটি মামলা হয়। মামলার পর রংপুর মেট্রোপলিটন চেম্বারের পরিচালক অমিত বণিকের মাধ্যমে লিপি খানের কাছে ১০ লাখ টাকা ঘুষ দাবির অভিযোগ ওঠে পুলিশ কর্মকর্তা শিবলী কায়সারের বিরুদ্ধে। বিষয়টি নিয়ে ১১ মার্চ পুলিশ সদর দপ্তরে শিবলী কায়সারের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ করেন লিপি খান। অভিযোগের সঙ্গে অমিত বণিকের সঙ্গে ঘুষ দাবির কথোপকথনের কয়েকটি অডিও রেকর্ড জমা দেন লিপি খান। অভিযোগ করার সময় লিপি খান দাবি করেন, তিনি বিড়ি ব্যবসায়ী। কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুক্ত নন।

অভিযোগের পর গত বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টার দিকে অমিত বণিককে থানায় ডেকে নেয় কোতোয়ালি থানা-পুলিশ। ওই দিন বিকেল চারটার দিকে লিপি খানের পক্ষে থানায় মামলা করতে যান তাঁর ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপক পলাশ হাসান (২৭)। ওই দিন বিকেল পাঁচটার দিকে থানায় যান উপপুলিশ কমিশনার শিবলী কায়সার।

প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রের ভাষ্য, শিবলী কায়সার থানায় ঢুকেই পলাশ হাসানের ওপর চড়াও হন এবং তাঁকে বেধড়ক মারধর করেন। একপর্যায়ে কনস্টেবলের রাইফেল কেড়ে নিয়ে তাঁকে (পলাশ) মারতে উদ্যত হন। পরে চাঁদাবাজির অভিযোগে থানায় মামলা হলেও এতে শুধু অমিত বণিককে আসামি করা হয়। মামলায় আগে থেকেই থানা হেফাজতে থাকা অমিত বণিককে গ্রেপ্তার দেখিয়ে গত শুক্রবার আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়।

ঘুষ-বাণিজ্য ও থানায় মামলার বাদীকে মারধরের অভিযোগ ওঠার পর উপকমিশনার মোহাম্মদ শিবলী কায়সারকে গতকাল শনিবার দুপুরে রংপুর মহানগর পুলিশ থেকে প্রত্যাহার করে পুলিশ সদর দপ্তরে সংযুক্ত করা হয়। তাঁকে আজ সদর দপ্তরে যোগ দিতে বলা হয়েছে।

মহানগর কোতয়ালি থানার ওসি আতাউর রহমান বলেন, হত্যাচেষ্টা মামলার এজাহারভুক্ত আসামি লিপি খান ভরসাকে রোববার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ঢাকার গুলশান থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সেখানে আইনি প্রক্রিয়া শেষে তাকে রংপুরে এনে আদালতে তোলা হলে তার জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে প্রেরণ করেছে আদালত।  

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: খ ন ভরস ব যবস য় র ব যবস

এছাড়াও পড়ুন:

জকসুর গঠন ও পরিচালনা বিধিমালা, নির্বাচনী আচরণবিধির সংশোধন চায় ছাত্রদল

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় শিক্ষার্থী সংসদ (জকসু) গঠন ও পরিচালনা বিধিমালা এবং নির্বাচনী আচরণবিধি সংশোধনে নির্বাচন কমিশনকে স্মারকলিপি দিয়েছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদল। সোমবার প্রধান নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক মোস্তফা হাসানের কাছে এ স্মারকলিপি দেন ছাত্রদলের নেতারা।

স্মারকলিপিতে বলা হয়, ‘আসন্ন জকসু নির্বাচনকে ঘিরে বিভিন্ন গোষ্ঠী জকসু সংবিধি এবং নির্বাচনী আচরণ বিধিমালা নিয়ে বিভ্রান্তিকর প্রচারণা চালাচ্ছে। আমরা বিশ্বাস করি, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্বাচন কমিশন একটি নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত করার জন্য দায়বদ্ধ। ন্যায্য ও স্বচ্ছ নির্বাচন নিশ্চিতে আমাদের অনুরোধ, ভোটার তালিকা প্রকাশের সময় প্রত্যেক ভোটারের ছবিসহ তালিকা প্রকাশ করতে হবে। নির্বাচনে অমোচনীয় কালি ব্যবহার বাধ্যতামূলক করতে হবে এবং স্বচ্ছ, নাম্বারযুক্ত ব্যালট বক্স রাখা আবশ্যক।’

স্মারকলিপিতে আরও বলা হয়, ব্যালট ছাপার সংখ্যা, ভোট প্রদানকারীর সংখ্যা এবং নষ্ট ব্যালটের তথ্য প্রকাশ করতে হবে। মিডিয়া ট্রায়াল বা ভুল তথ্য প্রচার হলে সংশ্লিষ্ট সাংবাদিকের বিরুদ্ধে কেন্দ্র থেকে সরাসরি ব্যবস্থা নিতে হবে। সরকার অনুমোদিত সব মিডিয়াকে নির্বাচনকালীন সময়ে পূর্ণ স্বাধীনতা দিতে হবে।

স্মারকলিপিতে বলা হয়, ডাকসুর তফসিল ঘোষণার ৪১ দিন, চাকসুর ৪৪ দিন, রাকসুর ৮০ দিন এবং জাকসুর তফসিল ঘোষণার ৩১ দিন পর নির্বাচন হয়েছে। যেহেতু জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় একটি অনাবাসিক বিশ্ববিদ্যালয়, তাই শিক্ষার্থীদের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপনের জন্য পর্যাপ্ত সময় দিতে হবে। এ ছাড়া বাকি চার বিশ্ববিদ্যালয়ের তফসিল ঘোষণার সময় ও নির্বাচনের মধ্যবর্তী পার্থক্য বিবেচনা করে জকসু নির্বাচনের তারিখ নির্ধারণ করতে হবে।

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের সদস্যসচিব শামসুল আরেফিন বলেন, ‘জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা যাতে সুষ্ঠু একটা নির্বাচনে অংশগ্রহণের সুযোগ পায়, এজন্য ছাত্রদল নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। এরই ধারাবাহিকতায় আজকে আমরা স্মারকলিপি দিয়েছি। আশা করছি, নির্বাচন সুষ্ঠু হওয়ার জন্য নির্বাচন কমিশন আমাদের দাবিগুলো মেনে নেবে।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ