ঢাকায় গ্রেপ্তার লিপি খান ভরসা রংপুর কারাগারে
Published: 17th, March 2025 GMT
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে হত্যাচেষ্টা মামলার আসামি ও ছাত্র আন্দোলন দমনে অর্থের যোগানদাতা লিপি খান ভরসার জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে প্রেরণ করেছেন রংপুর আদালত।
রোববার রাত সাড়ে ৯টার দিকে তাকে রংপুর সিএমএম আদালতে তোলা হলে রংপুর অতিরিক্ত চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত-১ এর বিচারক শোয়েবুর রহমান এই আদেশ দেন। এর আগে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই সুদীপ্ত শাহীন কড়া পুলিশ নিরাপত্তায় ঢাকা থেকে তাকে রংপুর মহানগরীর কোতয়ালি থানায় নিয়ে আসেন। এর আগে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে হত্যাচেষ্টা মামলার আসামি রংপুরের ব্যবসায়ী লিপি খান ভরসাকে রোববার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ঢাকার গুলশান এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।
গ্রেপ্তার লিপি খান রংপুরের ধণাঢ্য ব্যবসায়ী ভরসা পরিবারের পুত্রবধূ। তিনি এসএল ভরসা গ্রুপের চেয়ারম্যান ও সেরা করদাতা। তার বিরুদ্ধে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে হত্যা চেষ্টাসহ আন্দোলন দমনে অর্থ যোগান দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। লিপি খান ভরসা সর্বশেষ ২০২৪ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সংরক্ষিত নারী আসনে আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য হওয়ার জন্য মনোনয়নপত্র কিনেছিলেন। তিনি প্রকাশ্যে আওয়ামী লীগের সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী ও তৎকালীন স্থানীয় সংসদ সদস্য টিপু মুনসির নির্বাচনী সভা-সমাবেশে অংশ নেন।
মামলা সূত্রে জানা যায়, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে গত বছরের ১৯ জুলাই বিকেলে রংপুর নগরীর গ্র্যান্ড হোটেল মোড় থেকে আন্দোলনকারীরা একটি মিছিল নিয়ে সিটি বাজারের সামনে অবস্থান নেন। এ সময় পুলিশ ও আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা অস্ত্র নিয়ে তাদের ওপর গুলি চালায়। এতে গুলি লেগে অনেকেই আহত হন। এ ঘটনায় গুলিবিদ্ধ মামুনুর রশিদ মামুন বাদী হয়ে ১৩ নভেম্বর মহানগর কোতয়ালি থানায় হত্যাচেষ্টার মামলা করেন। লিপি খান ভরসা এ মামলার এজাহারভুক্ত ১৭৯ নম্বর আসামি।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে হামলার অভিযোগে গত ১৩ নভেম্বর রংপুরের হারাগাছার ব্যবসায়ী লিপি খান ভরসার বিরুদ্ধে একটি মামলা হয়। মামলার পর রংপুর মেট্রোপলিটন চেম্বারের পরিচালক অমিত বণিকের মাধ্যমে লিপি খানের কাছে ১০ লাখ টাকা ঘুষ দাবির অভিযোগ ওঠে পুলিশ কর্মকর্তা শিবলী কায়সারের বিরুদ্ধে। বিষয়টি নিয়ে ১১ মার্চ পুলিশ সদর দপ্তরে শিবলী কায়সারের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ করেন লিপি খান। অভিযোগের সঙ্গে অমিত বণিকের সঙ্গে ঘুষ দাবির কথোপকথনের কয়েকটি অডিও রেকর্ড জমা দেন লিপি খান। অভিযোগ করার সময় লিপি খান দাবি করেন, তিনি বিড়ি ব্যবসায়ী। কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুক্ত নন।
অভিযোগের পর গত বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টার দিকে অমিত বণিককে থানায় ডেকে নেয় কোতোয়ালি থানা-পুলিশ। ওই দিন বিকেল চারটার দিকে লিপি খানের পক্ষে থানায় মামলা করতে যান তাঁর ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপক পলাশ হাসান (২৭)। ওই দিন বিকেল পাঁচটার দিকে থানায় যান উপপুলিশ কমিশনার শিবলী কায়সার।
প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রের ভাষ্য, শিবলী কায়সার থানায় ঢুকেই পলাশ হাসানের ওপর চড়াও হন এবং তাঁকে বেধড়ক মারধর করেন। একপর্যায়ে কনস্টেবলের রাইফেল কেড়ে নিয়ে তাঁকে (পলাশ) মারতে উদ্যত হন। পরে চাঁদাবাজির অভিযোগে থানায় মামলা হলেও এতে শুধু অমিত বণিককে আসামি করা হয়। মামলায় আগে থেকেই থানা হেফাজতে থাকা অমিত বণিককে গ্রেপ্তার দেখিয়ে গত শুক্রবার আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়।
ঘুষ-বাণিজ্য ও থানায় মামলার বাদীকে মারধরের অভিযোগ ওঠার পর উপকমিশনার মোহাম্মদ শিবলী কায়সারকে গতকাল শনিবার দুপুরে রংপুর মহানগর পুলিশ থেকে প্রত্যাহার করে পুলিশ সদর দপ্তরে সংযুক্ত করা হয়। তাঁকে আজ সদর দপ্তরে যোগ দিতে বলা হয়েছে।
মহানগর কোতয়ালি থানার ওসি আতাউর রহমান বলেন, হত্যাচেষ্টা মামলার এজাহারভুক্ত আসামি লিপি খান ভরসাকে রোববার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ঢাকার গুলশান থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সেখানে আইনি প্রক্রিয়া শেষে তাকে রংপুরে এনে আদালতে তোলা হলে তার জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে প্রেরণ করেছে আদালত।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: খ ন ভরস ব যবস য় র ব যবস
এছাড়াও পড়ুন:
বাসাবাড়িতে ১৪ বছরের কম বয়সী শিশু নিয়োগ বন্ধে আইন করার সুপারিশ
বাসাবাড়ির কাজে তথা গৃহকর্মে ১৪ বছরের কম বয়সী শিশুদের নিয়োগ বন্ধে কঠোর আইন করার পাশাপাশি কার্যকরভাবে তা বাস্তবায়নের সুপারিশ করেছে শ্রম সংস্কার কমিশন।
বাংলাদেশ জাতীয় শ্রম আইন ২০০৬ অনুযায়ী, ১৪ বছরের কম বয়সী শিশুদের কাজ করানো হলে তা শিশুশ্রমের অন্তর্ভুক্ত বলে গণ্য করা হয়। এ ছাড়া গৃহকর্মী সুরক্ষা ও কল্যাণনীতি ২০১৫-তে বলা হয়েছে, ১৪ বছরের নিচে কোনো শিশুকে গৃহকর্মে নিয়োগ করা যাবে না।
শ্রম সংস্কার কমিশন এ প্রসঙ্গে বলেছে, গৃহকর্মে ১৪ বছরের কম বয়সী শিশুদের নিয়োগ বন্ধে কঠোর আইন করতে হবে। একই সঙ্গে এই আইনের কার্যকর বাস্তবায়নেও গুরুত্ব দিতে হবে সরকারকে।
সম্প্রতি প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে শ্রম সংস্কার কমিশন যে প্রতিবেদন জমা দিয়েছে, সেখানে এসব সুপারিশ তুলে ধরা হয়।
কমিশনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গৃহশ্রমিকদের বাংলাদেশ শ্রম আইনে অন্তর্ভুক্ত করে শ্রমিক হিসেবে স্বীকৃতি ও মর্যাদা দিতে হবে। এর আগপর্যন্ত নিশ্চিত করতে হবে ‘গৃহকর্মীর কল্যাণ ও সুরক্ষা নীতিমালা–২০১৫’–এর যথাযথ বাস্তবায়ন।
নিয়োগের ক্ষেত্রে আবাসিক, অনাবাসিক, খণ্ডকালীন বা স্থায়ী—সব ধরনের গৃহশ্রমিকদের জন্য কর্মঘণ্টা, বেতন, ছুটি, থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা এবং অন্যান্য সুবিধা উল্লেখ করে একটি স্বচ্ছ ও নির্দিষ্ট বাধ্যতামূলক কর্মসংস্থান চুক্তি প্রণয়নের সুপারিশ করা হয়েছে কমিশনের প্রতিবেদনে। পাশাপাশি নিয়োগকর্তার বিরুদ্ধে শ্রমিকের কোনো অভিযোগ থাকলে সেটি কার বরাবর, কোন স্থানে এবং কীভাবে দায়ের করবেন, সে বিষয়ে সুনির্দিষ্ট নির্দেশনাসহ ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করা হয়।
গৃহশ্রমিকদের কাজের দক্ষতা বৃদ্ধি ও নতুন দক্ষতা অর্জনের জন্য সরকারি উদ্যোগে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করার সুপারিশ করেছে শ্রম সংস্কার কমিশন। প্রতিবেদনে বলা হয়, এর মাধ্যমে গৃহকর্মীদের কর্মসংস্থানের সুযোগ বৃদ্ধি ও নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে। এ ছাড়া গৃহকর্মীদের সংগঠন বা ট্রেড ইউনিয়ন করার অধিকার প্রদানেরও সুপারিশ করেছে কমিশন।
পারলারের কর্মীদের সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচিতে নেওয়ার পরামর্শ
এদিকে বিউটি পারলার খাতের শ্রমিকদের সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় অন্তর্ভুক্ত করার সুপারিশ করেছে শ্রম সংস্কার কমিশন। একই সঙ্গে এ খাতের কর্মীদের স্বাস্থ্যসেবা ও তাঁদের সন্তানদের জন্য শিশু দিবাযত্নকেন্দ্র বা ডে কেয়ার সুবিধা পাওয়ার অধিকার নিশ্চিতের কথা বলেছে কমিশন।
অর্থনৈতিক সুরক্ষা নিশ্চিত করতে এ খাতে ন্যূনতম মজুরি বোর্ড গঠনের সুপারিশও করেছে কমিশন। কমিশনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কর্মীদের কাজের মান ও ঝুঁকি বিবেচনা করে সুনির্দিষ্ট মজুরি কাঠামো নির্ধারণ করা এবং তাঁদের দক্ষতা ও অভিজ্ঞতার আলোকে পদোন্নতি কাঠামো তৈরি করতে হবে।
দেশের সব বিউটি পারলার শ্রমিকদের পেশাগত, অর্থনৈতিক ও সামাজিক মর্যাদা সুরক্ষার জন্য শ্রম আইন অনুযায়ী তাঁদের স্বীকৃতি দেওয়া, অধিকার ও কল্যাণ নিশ্চিত করার সুপারিশ করা হয়েছে কমিশনের প্রতিবেদনে।
বিউটি পারলারের কর্মীদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করতে তাঁদের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যক্তিগত সুরক্ষা সরঞ্জাম প্রদান করাসহ সুনির্দিষ্ট নিরাপত্তা নির্দেশিকা প্রণয়নের কথাও বলা হয়েছে প্রতিবেদনে।
বিউটি পারলারের কর্মীদের বড় একটি অংশ রাতে বাসায় ফেরে। কমিশনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কর্মক্ষেত্রে ও রাত্রিকালীন বাড়ি ফেরার সময় তাঁদের হয়রানি প্রতিরোধ ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ব্যবস্থা নিতে হবে। এসব শ্রমিকের সামাজিক মর্যাদা, সুরক্ষা ও নিরাপত্তার স্বার্থে কমিউনিটিভিত্তিক উদ্যোগ নেওয়া যেতে পারে।