১. পরিবারের মেজ সন্তানেরা বড় বা ছোট সন্তানের মতো মা–বাবার সময় বা মনোযোগ না পেলেও বেশির ভাগ ক্ষেত্রে তাঁরা বঞ্চিত বা অবমূল্যায়িত বোধ করেন না। তাঁরা বরং ছোটবেলা থেকেই অবচেতনে নিজের দায়িত্ব বুঝে নেওয়ার শিক্ষা পান। স্বয়ংসম্পূর্ণ হওয়ার চেষ্টা করেন।

২. মেজ সন্তানদের পরিবর্তিত পরিস্থিতির সঙ্গে খাপ খাইয়ে নেওয়ার দক্ষতা বেশি। যেকোনো বিপর্যয় সহজে সামাল দিতে পারেন।

৩.

মেজ সন্তানদের ব্যক্তিত্ব অন্য কারও দ্বারা প্রভাবিত হয় না। তাই তাঁরা নিজেরাই নিজেদের ব্যক্তিসত্তা খুঁজে পান, শক্তিশালী ব্যক্তিত্বের অধিকারী হন। মানসিকভাবে অধিক শক্তিশালী ও সফল হওয়ার প্রবণতাও তাঁদের ভেতর বেশি।

৪. কানাডিয়ান মনোবিদ, লেখক ক্যাথেরিন স্যামন ও জার্মান লেখক ক্যাটরিন শুমানের ‘দ্য সিক্রেট পাওয়ার অব মিডল চিলড্রেন’ বইটি বেশ আলোচিত। এই বইয়ে লেখকদ্বয় বলেছেন, প্রাথমিকভাবে মেজ সন্তানেরা পরিবারে তাঁদের ভূমিকা নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দ্বে ভোগেন। তবে সময়ের সঙ্গে নিজেরাই সেটি কাটিয়েও ওঠেন। সংসারে শান্তি ও যোগাযোগে ভারসাম্য রক্ষার ক্ষেত্রে মেজ সন্তানদের ভূমিকা সবচেয়ে বেশি। বড় ও ছোট সন্তান উভয়ের সঙ্গেই শান্তিপূর্ণ সম্পর্ক বজার রাখার সেতুবন্ধ হিসেবে কাজ করেন তাঁরা। সবার সঙ্গে মিলেমিশে থাকার প্রবণতাও তাঁদের মধ্যে বেশি। এসব কারণে পরিবারের মেজ সন্তানকে বলা হয় ‘দ্য পিসকিপার’।

আরও পড়ুনদ্বিতীয় সন্তান নেওয়ার আগে নিজেকে যে ৩টি প্রশ্ন করবেন১২ ডিসেম্বর ২০২৪

৫. ছোটবেলা থেকেই আধিক্যের সঙ্গে পরিচয় না থাকায় মেজ সন্তানেরা অল্পে তুষ্ট থাকেন। খুঁতখুঁতে স্বভাবের হন না। তাঁদের মধ্যে অভিযোগ করার প্রবণতাও কম।

৬. নিজ উদ্যোগে যোগাযোগদক্ষতা অর্জন করার ফলে তাঁরা সাধারণত বহির্মুখী, মিশুক ও পরোপকারী হন।

৭. একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে, বেশির ভাগ ক্ষেত্রে মা–বাবার শেষ বয়স কাটে মেজ সন্তানের সঙ্গে। বড় ও ছোট সন্তানেরা যখন পরিবার থেকে বেরিয়ে নিজেদের পেশা ও পরিবার নিয়ে ব্যস্ত থাকেন, তখন দেখা যায় মেজ সন্তানেরাই শেষমেশ মা–বাবার দায়িত্ব নেন। এর একটা কারণ হতে পারে, মেজ সন্তানেরা ছোটবেলায় মা–বাবার সঙ্গে সবচেয়ে কম সময় কাটান। বড় হয়ে সেটি পুষিয়ে নেওয়ার একটা প্রবণতা দেখা যায়।

আরও পড়ুনবড় সন্তানেরা কেন বাকিদের তুলনায় এসব ঝুঁকিতে বেশি থাকে২০ জানুয়ারি ২০২৫আপনি মেজ সন্তান হলে কাকে বিয়ে করবেন

৮১ বছর বয়সী মার্কিন মনোবিদ ও লেখক ডা. কেভিন লেম্যানের মতে, এক পরিবারের মেজ সন্তান ও আরেক পরিবারের ছোট সন্তানের দাম্পত্যজীবন অসাধারণ হয়ে থাকে। একাধিক গবেষণায়ও তার প্রমাণ মিলেছে। এ ধরনের জুটির বিচ্ছেদের হারও সবচেয়ে কম।

দেখা যায় বিপরীত চিত্রও

অনেক পরিবারের মেজ সন্তান ছোটবেলা থেকে অবজ্ঞা ও অবহেলার শিকার হয়ে নিজেদের নিয়ে হীনম্মন্যতায় ভোগেন। তৈরি হয় ‘কনফিডেন্স ইস্যু’। পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন বোধ করেন তাঁরা। খেই হারিয়ে হতাশায় নিমজ্জিত হন। তাঁদের মনে হতে পারে, ‘আমি যথেষ্ট নই।’ যোগাযোগের দক্ষতাও বাধাগ্রস্ত হতে পারে।

সবাই একরকম নন

তবে সব পরিবার একরকম নয়। আবার প্রত্যেক মানুষের ব্যক্তিসত্তাও আলাদা। তাই সব পরিবারের মেজ সন্তানের ক্ষেত্রে কথাগুলো পুরোপুরি খাটে না। তবে মা–বাবার দায়িত্ব—প্রত্যেক সন্তানকেই যথাযথ মনোযোগ ও প্রচেষ্টা নিয়ে বড় করে তোলা।

সূত্র: ওয়েব এমডি ও হেলথলাইন

আরও পড়ুনপরিবারের বড় মেয়েদের যে ৭টি চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হয়১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৪

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: প রবণত

এছাড়াও পড়ুন:

ইসরায়েলে ইরানের নতুন হামলায় নিহত বেড়ে ৫, আহত ২৯

ইসরায়েলের মধ্যাঞ্চলে অন্তত চার জায়গায় হামলা চালিয়েছে ইরান। এ হামলায় তিনজন নিহত হয় বলে জানায় জেরুজালেম পোস্ট। বিবিসি আরও দুইজন নিহতের খবর দেয়। এরপর আরেকজনের ফলে নতুন হামলায় ইসরায়েলে নিহত বেড়ে পাঁচজনে পৌঁছাল।

আজ সোমবার আল জাজিরার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইসরায়েলের অ্যাম্বুলেন্স ও ব্লাড ব্যাংক সংস্থাগুলো বলছে, এসব হামলায় ২৯ জন আহত হয়েছেন।

বিবিসির খবরে বলা হয়, ইসরায়েলের জাতীয় জরুরি পরিষেবার প্রধান ম্যাগেন ডেভিড অ্যাডম জানান, মধ্য ইসরায়েলজুড়ে ইরানের হামলায় পাঁচজন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে দুইজন নারী, একজন পুরুষ। 

এর আগে সিএনএন ইসরায়েলের ১৫ জন নিহত হওয়ার খবর দেয়। ইসরায়েলের সরকারি সম্প্রচারমাধ্যম কানের খবর বলছে, ইসরায়েলের মধ্যাঞ্চলে হামলায় একজন গুরুতর আহত হয়েছেন। এছাড়াও বন্দরনগরী হাইফায় অন্তত দুইজন আহত হয়েছেন। এছাড়াও সেখান আরও তিনজন নিখোঁজ রয়েছেন।

এর আগে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) জানিয়েছিল, ইরান থেকে নতুন করে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা শুরু হয়েছে। একাধিক ক্ষেপণাস্ত্র শনাক্ত করেছে ইসরায়েল। বর্তমানে হামলা প্রতিহত করার কাজ চলছে বলে জানিয়েছে আইডিএফ।

আজ সিএনএনের এক খবরে বলা হয়েছে, তেল আবিব ও জেরুজালেমসহ ইসরায়েলের বিভিন্ন শহরে জরুরি সতর্ক সংকেত (সাইরেন) বাজতে শুরু করেছে। আইডিএফ সতর্ক করে বলেছে, তাদের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা পুরোপুরি অভেদ্য নয়।

সিএনএনের একজন প্রযোজক জেরুজালেমে সাইরেন এবং একাধিক বিস্ফোরণের শব্দ শুনেছেন। তার তোলা ভিডিওতে আকাশে বহু ক্ষেপণাস্ত্র ছুটে যেতে দেখা গেছে।

ইসরায়েলের জরুরি পরিষেবা সংস্থা ম্যাগেন ডেভিড আদোম জানিয়েছে, তাদের দলগুলো আক্রান্ত এলাকার দিকে রওনা দিয়েছে।

সারা দেশের নাগরিকদের আশ্রয়কেন্দ্রে ঢুকতে এবং পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত সেখানে থাকার আহ্বান জানিয়েছে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী।

বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ইসরায়েলি সেনাবাহিনী এক্সে দেওয়া এক পোস্টে বলেছে, বর্তমানে বিমানবাহিনী হামলা প্রতিহত করার পাশাপাশি পাল্টা হামলা চালানোর কাজ করছে।

ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম ওয়াইনেট নিউজ জানিয়েছে, মধ্য ইসরায়েলের পেতাহ টিকভা শহরের একটি ভবনে একটি ইসরায়েলি ক্ষেপণাস্ত্র সরাসরি আঘাত হেনেছে। হামলার ফলে ওই স্থানে আগুন ধরে যায়। তবে এ ঘটনায় তাৎক্ষণিকভাবে কোনো হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি।

এদিকে মধ্য ইরানে একাধিক বিমান হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। দেশটির সেনাবাহিনী এ তথ্য জানিয়েছে। আল জাজিরার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সেনাবাহিনীর দাবি, বিভিন্ন ক্ষেপণাস্ত্র স্থাপনা লক্ষ্য করে এসব হামলা চালানো হয়েছে।

ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘ইসরায়েলি বিমানবাহিনী সফলভাবে মধ্য ইরানে অবস্থিত একাধিক স্থাপনায় আঘাত হেনেছে। আমাদের গোয়েন্দা তথ্য বলছে, এসব স্থাপনা থেকে ইসরায়েলের দিকে ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া হচ্ছিল।’

তবে ইসরায়েলের এই হামলার প্রতিক্রিয়ায় ইরান এখনো আনুষ্ঠানিক বিবৃতি দেয়নি।

এদিকে ইরানের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ইসরায়েলি বিমান হামলায় রোববার পর্যন্ত নিহতের সংখ্যা বেড়ে ২২৪ জনে পৌঁছেছে।

বার্তা সংস্থা অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসের (এপি) এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নিহতদের মধ্যে ৯০ শতাংশেরও বেশি বেসামরিক নাগরিক। হামলায় ১ হাজার ২৭০ জনেরও বেশি মানুষ আহত হয়েছেন।

এপির প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, গত ১৩ জুন ইরানে বিমান হামলা শুরু করে ইসরায়েল। ওই হামলায় ইরানের নাতাঞ্জ ও ইসফাহান অঞ্চলের পারমাণবিক স্থাপনা ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বেশ কয়েকজন উচ্চপদস্থ সামরিক কর্মকর্তা ও পারমাণবিক বিজ্ঞানী নিহত হন। ইরানে বর্তমানে মসজিদ ও মেট্রো স্টেশনগুলোকে অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে।

ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ইসরায়েলের তিন শিশুসহ অন্তত ১৫ জন নিহত হয়েছেন। রোববার ইসরায়েল সরকারের বরাতে এ তথ্য জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদমাধ্যম সিএনএন।

ইসরায়েল কর্তৃপক্ষ বলেছে, এছাড়া ইরানের হামলায় কমপক্ষে ৩৮৫ জন আহত হয়েছেন, যার মধ্যে সাত জনের অবস্থা গুরুতর।

এদিকে ইসরায়েলি পুলিশের বরাতে আল জাজিরা জানিয়েছে, তেল আবিবের দক্ষিণে অবস্থিত বাত ইয়াম শহরে ৬ জন নিহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে দুই শিশু রয়েছে। এছাড়া সাতজন এখনও নিখোঁজ। ধ্বংসস্তূপের মধ্যে উদ্ধার অভিযান চালাচ্ছেন জরুরি সেবাদানকারীরা।

সম্পর্কিত নিবন্ধ