দৃষ্টিশক্তি হারালেও হার মানেননি মিজান
Published: 17th, March 2025 GMT
কুড়িগ্রামের প্রত্যন্ত একটি গ্রামের খুবই সাধারণ একটি পরিবারে জন্ম মিজানুর রহমান মিজানের। আর পাঁচ-সাতজন মানুষের মতো স্বাভাবিক ছিল না তাঁর জীবনের শুরুটা। জন্ম থেকেই দৃষ্টিশক্তিহীন মিজানকে লড়াই করেই বড় হতে হয়েছে। তবে জীবনের এই সীমাবদ্ধতাকে কখনোই তিনি নিজের দুর্বলতা হতে দেননি। অন্ধকার জীবনেও স্বপ্ন দেখতে ভোলেননি, হাল ছাড়েননি।
চোখে না দেখতে পেলেও পড়াশোনার প্রতি মিজানের আগ্রহ ছিল প্রবল। হাজারো প্রতিবন্ধকতার মধ্যে চেষ্টা করেন পড়াশোনা চালিয়ে যেতে। স্থানীয় মাদ্রাসা থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করেছেন তিনি। কিন্তু এরপরই জীবন তাঁকে কঠিন এক বাস্তবতার মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দেয়। দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী হওয়ায় কোথাও কোনো কাজ পাওয়া সম্ভব হচ্ছিল না। পরিবার ও নিজের জন্য কিছু করার প্রবল ইচ্ছা থাকলেও কোথাও সফল হতে পারছিলেন না। অনেক চেষ্টা করেও যখন কাজের সুযোগ মিলছিল না, তখনো ভেঙে পড়েননি মিজান।
মিজান বলেন, ‘আমি ভেঙে পড়িনি। সব সময় ভেবেছি নিজেকে এবং পরিবারকে বাঁচিয়ে রাখতে আমাকে কিছু করতে হবে। হার মানলে চলবে না।’
হতাশ না হয়ে নিজেই নিজের পথ খুঁজতে শুরু করেন মিজান। করার কিছুই না পেয়ে অবশেষে খোলা আকাশের নিচে বসে বাংলালিংকের স্ক্র্যাচ কার্ড বিক্রি করা শুরু করেন তিনি। এখান থেকেই ধীরে ধীরে আত্মনির্ভরশীল হতে শুরু করেন মিজান। নিজের পাশাপাশি সব ধরনের সংগ্রামে পাশে থাকা পরিবারের দায়িত্ব নিতে শুরু করেন। স্ক্র্যাচ কার্ড বিক্রি করতে করতে তিনি মোবাইল রিচার্জ ব্যবসার কথাও জানতে পারেন।
তবে এই ব্যবসার জন্য টাইপিং জানতে হয়। কিন্তু এটিও বাধা হিসেবে দেখেননি মিজান। অ্যানালগ মুঠোফোনের বোতাম স্পর্শ করে টাইপ করা শিখে নেন তিনি। কারও সাহায্য ছাড়াই স্পর্শের মাধ্যমে চিনতে পারতেন প্রতিটি নোট ও কয়েন। বিস্ময়করভাবে মাত্র একবার শুনেই যেকোনো ফোন নম্বর মনে রাখতে পারতেন মিজান। অনেক প্রতিবন্ধকতা থাকলেও এই দক্ষতাগুলোই মূলত তাঁকে ব্যবসায় এগিয়ে যেতে সাহায্য করে।
মিজান বলেন, ‘পরে আমি অনেকের কাছে বাংলালিংকের রিচার্জের ব্যবসা সম্পর্কে জানতে পারি। যেহেতু আমি একটি নম্বর একবার শুনলেই মনে রাখতে পারি, দ্বিতীয়বার আর শোনার প্রয়োজন হতো না, তাই আমার মনে হয় এই ব্যবসা আমি করতে পারব। শুরুতে বাধা এসেছিল। তারপরও বাধা মোকাবিলা করে এই পর্যায়ে আসি।’
মিজানের এই অদম্য মনোবল ও আত্মবিশ্বাস সবার নজর কেড়েছে। স্থানীয়ভাবে পরিচিত হওয়ার পর বিভিন্ন টেলিভিশন চ্যানেলে তাঁর জীবনসংগ্রামের গল্প প্রচারিত হয়। একসময় যাঁকে দৃষ্টি প্রতিবন্ধকতার কারণে কাজ দিতে চাইত না কেউ, সেই মিজানই আজ নিজের ব্যবসা চালাচ্ছেন। তিনি শুধু একজন সফল ব্যবসায়ী নন, বরং হাজারো মানুষের অনুপ্রেরণার উৎস হয়ে উঠেছেন।
তাঁর এ লড়াইয়ে পরিবারের পাশাপাশি সব সময় পাশে ছিল বাংলালিংক। মোবাইল রিচার্জ ব্যবসা গড়ে তুলতে বাংলালিংকের সহায়তা তাঁকে নতুন সম্ভাবনার পথ দেখিয়েছে। তিনি আজ সম্মানের সঙ্গে নিজের জীবন চালিয়ে যাচ্ছেন।
মিজান বলেন, ‘এখন দৈনিক ছয় থেকে সাত হাজার টাকার মোবাইল রিচার্জ করা হয়। আমার জীবন পরিবর্তনে বাংলালিংকের অবদান অনেক বেশি। প্রতি সপ্তাহে বাংলালিংকের কর্মকর্তারা আমার খোঁজখবর নেন। দেখাও করতে আসেন। এমনকি মাঝেমধ্যে আর্থিকভাবেও সহায়তা করেন।’
মিজানের গল্পটি একজন দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী মানুষের সাফল্যের কাহিনি নয়, বরং এটি প্রমাণ করে ইচ্ছাশক্তি ও পরিশ্রম থাকলে সব প্রতিকূলতাই জয় করা সম্ভব। মিজান দেখিয়ে দিয়েছেন, যদি মনোবল ও আত্মবিশ্বাস থাকে, শারীরিক প্রতিবন্ধকতা কখনোই স্বপ্নপূরণের পথে বাধা সৃষ্টি করতে পারে না। আমাদের চারপাশে এমন অনেক মানুষ আছেন, যাঁরা ছোটখাটো প্রতিকূলতায় হাল ছেড়ে দেন। কিন্তু মিজানের গল্প বলে, জীবনযুদ্ধে টিকে থাকার জন্য সবচেয়ে দরকার সাহস এবং কঠোর পরিশ্রম। মিজান শুধু নিজের ভাগ্য বদলাননি, বরং সমাজের দৃষ্টিভঙ্গিও বদলে দিয়েছেন।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: র জ বন পর ব র ব যবস
এছাড়াও পড়ুন:
প্রাক্তন স্ত্রী দেবশ্রীর সঙ্গে প্রেমের সিনেমা করতে চান প্রসেনজিৎ
ভারতীয় বাংলা সিনেমার তারকা জুটি প্রসেনজিৎ চ্যাটার্জি ও দেবশ্রী রায়। পর্দায় এ জুটির রোমান্স দেখে মুগ্ধ হয়েছেন অসংখ্য ভক্ত। রুপালি পর্দার রোমান্স ব্যক্তিগত জীবনেও গড়ায়। ভালোবেসে দেবশ্রী রায়কে বিয়ে করেন প্রসেনজিৎ। কিন্তু কয়েক বছর পরই এ বিয়ে ভেঙে যায়। তারপর দুজনের পথ আলাদা হয়ে যায়।
সংসার ভাঙার পাশাপাশি দর্শক হারান রুপালি পর্দার জনপ্রিয় এই জুটিকে। এরপর আর কোনো সিনেমায় একসঙ্গে দেখা যায়নি তাদের। অবশেষে দূরত্ব কমিয়ে দেবশ্রীর সঙ্গে সিনেমা করার অভিপ্রায় ব্যক্ত করলেন প্রসেনজিৎ।
আরো পড়ুন:
নিজেকে তৈরি করে খোলামেলা দৃশ্যে অভিনয় করব: স্বস্তিকা
ছেলের বন্ধুরা ‘দিদি’ বলে ডাকে: শ্রাবন্তী
কিছুদিন আগে ‘আমি যখন হেমা মালিনী’ সিনেমার প্রচারে চিরঞ্জিত চক্রবর্তী বলেছিলেন—“দেব-শুভশ্রী জুটির পর আমি চাই আবার প্রসেনজিৎ-দেবশ্রী জুটি ফিরুক, এই জুটিটা ফেরার অত্যন্ত প্রয়োজন।” ‘দেবী চৌধুরানী’ সিনেমার প্রচারে চিরঞ্জিতের এই বক্তব্য প্রসেনজিৎকে জানানো হয়।
এ বিষয়ে প্রসেনজিৎ বলেন, “আমি তো চাই দীপকদা একটা স্ক্রিপ্ট লিখুক আমাদের জন্য, আমার বহুদিনের ইচ্ছা ছিল এবং আমি অনেকবার দীপকদাকে বলেছি যে, আমি তোমার পরিচালনায় একটা কাজ করতে চাই। দীপকদা, আমাদের জন্য যদি পরিচালনা করেন তাহলে অবশ্যই আমি সিনেমা করতে চাই। আর আমি নিজেও ব্যক্তিগতভাবে দেবশ্রীর সঙ্গে আবারো একটা পরিণত প্রেমের সিনেমা করতে চাই।”
তাহলে কী পুরোনো তিক্ততা ভুলে গেছেন প্রসেনজিৎ? জবাবে এই নায়ক বলেন, “আমার কারো সঙ্গে কোনো তিক্ততা নেই। যে আমার সঙ্গে হাসিমুখে কথা বলবে, আমি সব সময় তাদের জন্য আছি। আর কোনো তিক্ততা নিয়ে বাঁচতে চাই না, যে কটা দিন আছি সবার সঙ্গে ভালো সম্পর্ক নিয়েই থাকতে চাই।”
এক সময় দেবশ্রীকে নিয়ে কথা বলতে খুব একটা স্বাচ্ছন্দ বোধ করতেন না প্রসেনজিৎ। তবে অভিমান ভুলে কাজের ক্ষেত্রে আবার এক হওয়ার কথা বললেন তিনি। বর্তমানকে ভালোবেসে যেমন এগিয়ে যান, ঠিক তেমনই কি অতীতকেও আঁকড়ে বাঁচেন?
এ প্রশ্নের জবাবে প্রসেনজিৎ বলেন, “নিজের অতীতকে কখনো উপেক্ষা করা যায় না। মাঝেমাঝেই আমি আমার অতীতে ফিরে যাই; সেই সময়গুলোর জন্যই আজকের আমি। অতীত আমাকে অনেক ভালোবাসা, রাগ-দুঃখ-ক্ষোভ দিয়েছে। আমার ক্ষেত্রে যেটা অল্প কিন্তু তবু আছে সেটা হলো—ঘৃণা। সেটাও পেয়েছি, তবে অতীত যেমনই হোক না কেন, তাকে কখনো ফেলে দেওয়া যায় না। আমরা সবাই মাঝে মাঝে অতীতে ফিরে যাই।”
সময়ের সঙ্গে অনেক কিছু বদলে গেছে। বর্তমান প্রজন্মের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতেও দ্বিধাবোধ করেন না প্রসেনজিৎ।তার ভাষায়—“এই বদলগুলোকে মেনে না নিলে আমাকে পিছিয়ে পড়তে হবে। আমি প্রচুর বদল দেখেছি, তবে যেই সময় যেটা এসেছে, তার সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিয়েছি, এটাই তো করা উচিত। না হলে বর্তমান প্রজন্ম থেকে দূরে সরে যেতে হবে।”
ঢাকা/শান্ত