‘সন্ত্রাসী’ সাজ্জাদের স্ত্রী তামান্না শারমিন বলেছেন, তাঁকে নিয়ে যাঁরা ফেসবুকে পোস্ট করছেন, ভিডিও শেয়ার করছেন, মিথ্যা লাইভ করছেন, তাঁদের সবার বিরুদ্ধে সাইবার নিরাপত্তা আইনে মামলা করবেন। মামলার হুমকি দিয়ে তামান্না শারমিনের বক্তব্যের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে।

এর আগে সাজ্জাদকে গ্রেপ্তারের পর তামান্নার আরেকটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছিল। এতে তামান্নাকে বলতে শোনা যায়, ‘আমরা কাঁড়ি কাঁড়ি, বান্ডিল বান্ডিল টাকা ছেড়ে আমার জামাইকে (স্বামী) নিয়ে আসব। যারা এই ঘটনা ঘটিয়েছে, তাদের ছাড় দেওয়া হবে না।’

গত শনিবার রাত ১০টার দিকে ঢাকার একটি শপিং মলে ঘোরাঘুরি করার সময় সাজ্জাদকে আটক করে তেজগাঁও থানা-পুলিশ। পরে তাঁকে চট্টগ্রামে আনা হয়। সাজ্জাদ যখন শপিং মলে আটক হন, তখন তাঁর সঙ্গে ছিলেন স্ত্রী তামান্না শারমিনও। কিন্তু তিনি সটকে পড়েন। একটি ভিডিওতে দেখা যায়, আটকের সময় সাজ্জাদ বারবার তাঁর স্ত্রীকে খুঁজছিলেন। তিনি ‘এই তামান্না, তামান্না’ বলে ডাকতে থাকেন। কিন্তু কোনো সাড়া পাননি স্ত্রীর।

নগরের বায়েজিদ বোস্তামী ও চান্দগাঁও থানার দুটি হত্যা মামলায় ১৪ দিনের রিমান্ডে এনে সাজ্জাদকে জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ। এর আগে সাজ্জাদকে ধরতে গত ৩০ জানুয়ারি পুরস্কার ঘোষণা করেছিলেন চট্টগ্রাম নগর পুলিশ কমিশনার হাসিব আজিজ। আগের দিন ফেসবুক লাইভে এসে নগরের বায়েজিদ বোস্তামী থানার ওসি আরিফুর রহমানকে পেটানোর হুমকি দিয়েছিলেন সাজ্জাদ হোসেন।

ভিডিওটিতে সাজ্জাদকে ভালোবেসে বিয়ে করেছেন বলে উল্লেখ করেন তামান্না শারমিন। তিনি বলেন, ‘আমাকে গালমন্দ করে যাঁরা ভিডিও করতেছেন, যাঁরা ফেসবুকে পোস্ট করতেছেন, আমি আপনাদের কোনো ক্ষতি করি নাই। আমি আপনাদের নাম ধরব না। আপনারা জানেন কাকে বলতেছি। আপনারা আমাকে নিয়ে পোস্ট করে কী লাভ, আমি আপনাদের শত্রু না, আপনাদের কাউকে আমি চিনি না। আপনারা কে, কার সঙ্গে বিরোধ, সেটি আমার দেখার বিষয় নয়। আমি যদি আপনাদের নিয়ে পোস্ট করতাম, আপনারা করতেন, সেটি একটি সৌন্দর্য।’ স্বামী সাজ্জাদের জন্য প্রয়োজনে ভিক্ষা করবেন জানিয়ে তামান্না বলেন, ‘আমি বিদেশে চাকরি করছি। প্রয়োজনে এখন ভিক্ষা করব। আপনারা কথা বলতে পারেন না।’

পুলিশ জানায়, সাজ্জাদ হোসেন বিদেশে পলাতক ‘শিবির ক্যাডার’ হিসেবে পরিচিত আরেক সন্ত্রাসী সাজ্জাদ আলীর অনুসারী। তাঁর বিরুদ্ধে হত্যা, অস্ত্র ও চাঁদাবাজির ১৭টি মামলা রয়েছে। গত বছরের আগস্ট থেকে অক্টোবরে আনিস, কায়সার ও আফতাব উদ্দিন নামের তিন বালু ব্যবসায়ীকে গুলি করে হত্যার মামলার আসামি তিনি।

জানা গেছে, গত বছরের ১৭ জুলাই চান্দগাঁও থানা-পুলিশ অস্ত্রসহ সাজ্জাদকে গ্রেপ্তার করে। পরের মাসের শুরুতে তিনি জামিনে বেরিয়ে আসেন। বায়েজিদ বোস্তামী থানাসংলগ্ন হাটহাজারীর শিকারপুরের মো.

জামালের ছেলে তিনি। গত বছরের ৪ ডিসেম্বর নগরের অক্সিজেন এলাকায় পুলিশ ধরতে গেলে গুলি ছুড়তে ছুড়তে পালিয়ে যান সাজ্জাদ। এতে পুলিশসহ পাঁচজন আহত হন।

এদিকে সাজ্জাদকে গ্রেপ্তারের পর তাঁর বিচার চেয়ে চট্টগ্রাম আদালতপাড়ায় পোস্টার সাঁটানো হয়েছে। নগরের ‘চান্দগাঁও, বায়েজিদ বোস্তামী, হাটহাজারী, রাউজান, ফটিকছড়ি ও রাঙ্গুনিয়ার সর্বস্তরের জনগণ’ পরিচয়ে এই পোস্টার সাঁটানো হয়। এতে বলা হয়, ‘ন্যায়বিচার এবং চট্টগ্রামকে সন্ত্রাসমুক্ত করতে একাধিক হত্যা মামলার আসামি সাজ্জাদ ও তাঁর সহযোগী হাসানের বিচার ও ফাঁসি চাই।’

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: প স ট কর আপন দ র ফ সব ক আপন র নগর র

এছাড়াও পড়ুন:

সাকিবের পথে হাঁটছেন মিরাজ

সাকিব আল হাসানের সঙ্গে নিজের তুলনাকে মেহেদী হাসান মিরাজ হয়তো উপভোগই করেন। কারণ, তাঁর স্বপ্ন সাকিবের মতো বিশ্বনন্দিত অলরাউন্ডার হয়ে ওঠা। সেই পথে বোধ হয় গুটি গুটি পায়ে এগিয়ে যাচ্ছেন। বিশেষ করে টেস্টে দেশে-বিদেশে সম্প্রতি ভালো করছেন। পাকিস্তানে দারুণ প্রশংসিত ছিলেন অলরাউন্ড পারফরম্যান্স করে। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে দুই টেস্টের হোম সিরিজে উভয় টেস্টে নিজেকে ছাপিয়ে গেলেন। সিলেটের হারের ম্যাচেও ১০ উইকেট ছিল তাঁর। চট্টগ্রামে সেঞ্চুরি ও পাঁচ উইকেট নিয়ে সাকিব ও সোহাগ গাজীর কাতারে নাম লেখালেন। মূলত মিরাজের অলরাউন্ড নৈপুণ্যে ইনিংস ব্যবধানে টেস্ট জেতা সম্ভব হয়। 

গতকাল শতকের ঘরে যেতে কম কসরত করতে হয়নি তাঁর। নব্বইয়ের ঘরে গিয়ে তো অনিশ্চয়তায় পড়ে গিয়েছিলেন হাসানের আউটের শঙ্কায়। ভাগ্য সুপ্রসন্ন হওয়ায় দ্বিতীয় শতকের দেখা পান তিনি। ২০২১ সালে এই চট্টগ্রামেই ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে প্রথম টেস্ট সেঞ্চুরি ছিল মিরাজের। গতকালের পারফরম্যান্স নিয়ে টাইগার এ অলরাউন্ডার বলেন, ‘ব্যাটিংয়ের সময় চেষ্টা করেছিলাম ২ রান নিয়ে ১০০ রানে যেতে। সেভাবে দৌড় দিয়েছিলাম। কিন্তু ফিল্ডারের হাতে বল চলে গিয়েছিল (হাসি)। তার পর তো আল্লাহর ওপর ছেড়ে দিয়েছিলাম। হাসান অনেক ভালো সাপোর্ট দিয়েছে। তানজিমও ভালো সাপোর্ট দিয়েছে। তাইজুল ভাইও। এই তিনজনকেই অনেক অনেক ধন্যবাদ। কারণ, ওদের জন্যই আমি ১০০ রান করতে পেরেছি।’ 

জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে করা সেঞ্চুরি ও পাঁচ উইকেট প্রাপ্তিকে নিজের সেরা পারফরম্যান্স দাবি মিরাজের, ‘ওয়েস্ট ইন্ডিজের সাথে ১০০ করেছিলাম, ৩ উইকেট নিয়েছিলাম। অল্পের জন্য ৫ উইকেট হয়নি। হলে ভালো লাগত। ওই ম্যাচ হেরেছিলাম এই মাঠে। সে জিনিসটা মাথায় ছিল। ভালো লাগছে ম্যাচটি জিতেছি।’ মিরাজ ১৬২ বলে ১১টি চার ও একটি ছয় মেরে ১০৪ রান করেন। ২১ ওভারে ৩২ রান দিয়ে নেন পাঁচ উইকেট।

টেস্টে এ রকম অলরাউন্ড পারফরম্যান্স বাংলাদেশে আর দু’জনের আছে। সাকিব আল হাসান দু’বার ম্যাচে সেঞ্চুরি ও পাঁচ উইকেট পেয়েছেন ২০১১ সালে পাকিস্তানের বিপক্ষে মিরপুরে আর ২০১৪ সালে খুলনায়। সোহাগ গাজী নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সেঞ্চুরি ও পাঁচ উইকেট শিকার করেন চট্টগ্রামে। সেই মাইলফলক ছোঁয়া মিরাজকে সম্প্রতি অলরাউন্ডার ক্যাটেগরিতে ফেলা হয়। সাকিবের বিকল্প ভাবা হয় তাঁকে এখন। 

এ ব্যাপারে মিরাজের অভিমত, ‘দেখেন একটা জিনিস, যখন সাকিব ভাই ছিলেন, ভিন্ন রোল ছিল। এখন ভিন্ন রোল। যেহেতু টিম ম্যানেজমেন্ট, সবাই ব্যাটিংয়ে আস্থা রাখে। আমিও ভেবেছি আমার ব্যাটিংটা গুরুত্বপূর্ণ। এখন হয়তো আমি লিডিং রোল প্লে করছি, আগে সাকিব ভাই করত। এখন আমাদের দায়িত্ব আরও বেশি।’ 

সিলেটে দুই ইনিংসে পাঁচ উইকেট করে নিয়েও দলকে জেতাতে পারেননি মিরাজ। চট্টগ্রামে সাদমান, তাইজুলের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ম্যাচ জয়ের নায়ক হন। এই সাফল্য নিয়ে বলেন, ‘সত্যি কথা বলতে, প্রথম ম্যাচ হারার পর যেভাবে কামব্যাক করেছি, এটা খুবই দরকার ছিল। আমাদের সবাই ভেবেছিল, আমরা ভালো করব।’ মিরাজ কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন কোচিং স্টাফ ও সতীর্থের কাছে। আর তাঁর কাছে কৃতজ্ঞতা পুরো দলের।

সম্পর্কিত নিবন্ধ