চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে বাজে পারফরম্যান্সের পর বড় পরিবর্তন এসেছে পাকিস্তান দলে। মোহাম্মদ রিজোয়ান ও বাবর আজমদের মতো অভিজ্ঞ ক্রিকেটারদের বাদ দিয়ে নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজ খেলতে গিয়েছে তারা।

তবে কিউইদের বিপক্ষে পরপর দুটি ম্যাচে কোন প্রতিদ্বন্দ্বীতা না গড়েই হারতে হয় পাকিস্তানকে। তবে দেশটির গতি তারকা হারিস রাউফ আহ্বান জানালেন তরুণদের প্রতি আস্থা ও ধৈর্য রাখার। এই পেসারের বিশ্বাস নবাগতদের প্রতি বিশ্বাস রাখলে ভবিষ্যতে পুরস্কৃত হবে দলই।

নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে পাঁচ ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজে ২-০ পিছিয়ে পড়েছে পাকিস্তান। এই সিরিজে আব্দুল সামাদ, হাসান নওয়াজ এবং মোহাম্মদ আলীর মতো ক্রিকেটাররা খেলেছেন প্রথম দুই ম্যাচেই। যারা  আবার নিউ জিল্যান্ড সফরের মাধ্যমেই পাকিস্তান স্কোয়াডে প্রথম ডাক পেয়েছিলেন।

আরো পড়ুন:

রিজওয়ানের চুক্তি বতিলের পরামর্শ 

পাকিস্তানের তিন ভেন্যুতে বাংলাদেশের ছয় ম্যাচ

এই ত্রয়ীকে সমর্থন জানিয়ে রাউফ সাংবাদিকদের বলেন, “আপনারা সমালোচনার কথা বলেন, আমি মনে করি এটা পাকিস্তানে সাধারণ হয়ে গেছে। এরা তরুণ খেলোয়াড়। আপনি পৃথিবীর যে কোনো জায়গায় যান, যে কোনো দলের দিকে তাকান, তারা তরুণদের পুরো স্বাধীনতা দেয়। যদি তারা তরুণদের সুযোগ দেয়, তবে তারা ১০-১৫টি ম্যাচের সুযোগ দেয়। এর মাধ্যমে তারা খেলোয়াড় হয়ে ওঠে।”

রাউফের মতে তরুণরা সব সময়ই প্রথমে সংগ্রাম করেন। তবে তাদের সঙ্গে কজন অভিজ্ঞ ক্রিকেটার থালে সে ব্যাপারটা কাটিয়ে উঠা সম্ভব। পাক্সিতানের এই দলে তরুণ এবং অভিজ্ঞতার সেই মিশ্রণটা আছে। রাউফ বলেন, “যে কেউই আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে আসলে, শুরুতে সংগ্রাম করে। আপনি সমালোচনার কথা বলছেন, এটা এখন একটা প্রথা হয়ে গেছে। সবাই বসে থাকে এবং পাকিস্তান দল হারলে তারা সেই নিয়ে কথা বলে।”

রাউফ আরও যোগ করেন, “সমালোচকদের মতামত আছে, কিন্তু আমরা আমাদের দল গড়ার চেষ্টা করছি। আমরা তরুণদের অন্তর্ভুক্ত করার চেষ্টা করছি, সিনিয়ররা সেখানে আছেন। আমরা সিনিয়ররা আমাদের জুনিয়রদের অনুপ্রাণিত করি, এবং তাদের পরামর্শ দেই যে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে সফল হতে কী কী দরকার। তারা যত দ্রুত শিখবে, তাদের জন্য তত ভালো হবে।”

প্রথম টি-টোয়েন্টিতে ৯ উইকেটের হারার পর, পাকিস্তান মঙ্গলবার (১৮ মার্চ, ২০২৫) বৃষ্টিতে সংক্ষিপ্ত হওয়া দ্বিতীয় ম্যাচে ৫ উইকেটে হারে। ১৫ ওভারে পাকিস্তানকে ১৩৫/৯ রানে সীমাবদ্ধ রাখার পর, ব্ল্যাক ক্যাপসরা ১১ বল ও ৫ উইকেট হাতে রেখেই লক্ষ্য অতিক্রম করে।

রাউফ বিশ্বাস করেন, পাকিস্তানের পেসাররা ডানেডিনে ভাল পারফর্ম করলেও ভাগ্য সহায় হয়নি, “সব খেলোয়াড়ই চেষ্টা করেছে। এখানে যে ধরনের মাঠ রয়েছে, সেখানে সাধারণত আমরা হাই স্কোরিং ম্যাচ দেখি। এমন না যে, আমরা ভালো বলিং করিনি, আমাদের ভাগ্য কিছুটা খারাপ বটে। কয়েকটি টপ এজ ছিল যেগুলো ছক্কা হয়ে গেছে, মাঠ ছোট সাথে বাতাসের কারণে বল ওভার বাউন্ডারি হয়ে গেছে। আমরা বোলিং ইউনিট হিসেবে চেষ্টা করেছি, কিন্তু আমরা চাওয়া অনুযায়ী ফল পাইনি।”

রাউফ আশাবাদী যে, নবাগতদের প্রতি আস্থা রাখা শেষ পর্যন্ত ফলপ্রসূ হবে। কারণ পাকিস্তান আন্তর্জাতিক মঞ্চে সাফল্য অর্জনের দিকে তাকিয়ে রয়েছে, যা তরুণরাই এনে দিবে। রাউফ বলেম, “এতে কোনো সন্দেহ নেই যে আমাদের ক্রিকেট ধীরে ধীরে অবনতির দিকে গেছে। তবে আমরা একটি দল হিসেবে গড়ছি এবং একটি সমন্বয় তৈরি করার চেষ্টা করছি। আমরা বিভিন্ন জিনিস চেষ্টা করছি। যখন নতুন কিছু চেষ্টা করবেন তখন কিছু পরাজয় আসবেই। কিন্তু আমরা শিখব। ভবিষ্যতে এমন এক দিন আসবে যখন আপনি পাকিস্তান দলের ভালো ক্রিকেট দেখতে পাবেন।”

ঢাকা/নাভিদ

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর আম দ র প রথম

এছাড়াও পড়ুন:

সাকিবের পথে হাঁটছেন মিরাজ

সাকিব আল হাসানের সঙ্গে নিজের তুলনাকে মেহেদী হাসান মিরাজ হয়তো উপভোগই করেন। কারণ, তাঁর স্বপ্ন সাকিবের মতো বিশ্বনন্দিত অলরাউন্ডার হয়ে ওঠা। সেই পথে বোধ হয় গুটি গুটি পায়ে এগিয়ে যাচ্ছেন। বিশেষ করে টেস্টে দেশে-বিদেশে সম্প্রতি ভালো করছেন। পাকিস্তানে দারুণ প্রশংসিত ছিলেন অলরাউন্ড পারফরম্যান্স করে। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে দুই টেস্টের হোম সিরিজে উভয় টেস্টে নিজেকে ছাপিয়ে গেলেন। সিলেটের হারের ম্যাচেও ১০ উইকেট ছিল তাঁর। চট্টগ্রামে সেঞ্চুরি ও পাঁচ উইকেট নিয়ে সাকিব ও সোহাগ গাজীর কাতারে নাম লেখালেন। মূলত মিরাজের অলরাউন্ড নৈপুণ্যে ইনিংস ব্যবধানে টেস্ট জেতা সম্ভব হয়। 

গতকাল শতকের ঘরে যেতে কম কসরত করতে হয়নি তাঁর। নব্বইয়ের ঘরে গিয়ে তো অনিশ্চয়তায় পড়ে গিয়েছিলেন হাসানের আউটের শঙ্কায়। ভাগ্য সুপ্রসন্ন হওয়ায় দ্বিতীয় শতকের দেখা পান তিনি। ২০২১ সালে এই চট্টগ্রামেই ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে প্রথম টেস্ট সেঞ্চুরি ছিল মিরাজের। গতকালের পারফরম্যান্স নিয়ে টাইগার এ অলরাউন্ডার বলেন, ‘ব্যাটিংয়ের সময় চেষ্টা করেছিলাম ২ রান নিয়ে ১০০ রানে যেতে। সেভাবে দৌড় দিয়েছিলাম। কিন্তু ফিল্ডারের হাতে বল চলে গিয়েছিল (হাসি)। তার পর তো আল্লাহর ওপর ছেড়ে দিয়েছিলাম। হাসান অনেক ভালো সাপোর্ট দিয়েছে। তানজিমও ভালো সাপোর্ট দিয়েছে। তাইজুল ভাইও। এই তিনজনকেই অনেক অনেক ধন্যবাদ। কারণ, ওদের জন্যই আমি ১০০ রান করতে পেরেছি।’ 

জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে করা সেঞ্চুরি ও পাঁচ উইকেট প্রাপ্তিকে নিজের সেরা পারফরম্যান্স দাবি মিরাজের, ‘ওয়েস্ট ইন্ডিজের সাথে ১০০ করেছিলাম, ৩ উইকেট নিয়েছিলাম। অল্পের জন্য ৫ উইকেট হয়নি। হলে ভালো লাগত। ওই ম্যাচ হেরেছিলাম এই মাঠে। সে জিনিসটা মাথায় ছিল। ভালো লাগছে ম্যাচটি জিতেছি।’ মিরাজ ১৬২ বলে ১১টি চার ও একটি ছয় মেরে ১০৪ রান করেন। ২১ ওভারে ৩২ রান দিয়ে নেন পাঁচ উইকেট।

টেস্টে এ রকম অলরাউন্ড পারফরম্যান্স বাংলাদেশে আর দু’জনের আছে। সাকিব আল হাসান দু’বার ম্যাচে সেঞ্চুরি ও পাঁচ উইকেট পেয়েছেন ২০১১ সালে পাকিস্তানের বিপক্ষে মিরপুরে আর ২০১৪ সালে খুলনায়। সোহাগ গাজী নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সেঞ্চুরি ও পাঁচ উইকেট শিকার করেন চট্টগ্রামে। সেই মাইলফলক ছোঁয়া মিরাজকে সম্প্রতি অলরাউন্ডার ক্যাটেগরিতে ফেলা হয়। সাকিবের বিকল্প ভাবা হয় তাঁকে এখন। 

এ ব্যাপারে মিরাজের অভিমত, ‘দেখেন একটা জিনিস, যখন সাকিব ভাই ছিলেন, ভিন্ন রোল ছিল। এখন ভিন্ন রোল। যেহেতু টিম ম্যানেজমেন্ট, সবাই ব্যাটিংয়ে আস্থা রাখে। আমিও ভেবেছি আমার ব্যাটিংটা গুরুত্বপূর্ণ। এখন হয়তো আমি লিডিং রোল প্লে করছি, আগে সাকিব ভাই করত। এখন আমাদের দায়িত্ব আরও বেশি।’ 

সিলেটে দুই ইনিংসে পাঁচ উইকেট করে নিয়েও দলকে জেতাতে পারেননি মিরাজ। চট্টগ্রামে সাদমান, তাইজুলের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ম্যাচ জয়ের নায়ক হন। এই সাফল্য নিয়ে বলেন, ‘সত্যি কথা বলতে, প্রথম ম্যাচ হারার পর যেভাবে কামব্যাক করেছি, এটা খুবই দরকার ছিল। আমাদের সবাই ভেবেছিল, আমরা ভালো করব।’ মিরাজ কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন কোচিং স্টাফ ও সতীর্থের কাছে। আর তাঁর কাছে কৃতজ্ঞতা পুরো দলের।

সম্পর্কিত নিবন্ধ