আমার এক ফেসবুক বন্ধু একটি ভিডিও পাঠিয়েছেন। তাতে দেখছি, ভারিক্কি চেহারার এক ভদ্রলোক বাজারে রমজানের মধ্যে কে কে রোজা রাখার বদলে ধূমপান করছে, তার হিসাব নিচ্ছেন। কাউকে পাওয়া গেলে সবার সামনে কানে হাত দিয়ে ওঠবস করাচ্ছেন।
এটি হয়তো বিচ্ছিন্ন একটি ঘটনা, এর ভিত্তিতে মৌলবাদ আসছে বলে পাগলা ঘণ্টি বাজানো আমার উদ্দেশ্য নয়। তবে এ ঘটনার যে ধরন রয়েছে, সেটাও অস্বীকার করা যাবে না। কোনটা ঠিক, কোনটা বেঠিক—কারও কারও মনে তার একটি পূর্বনির্ধারিত ধারণা রয়েছে। অনেক ক্ষেত্রেই এ পূর্বধারণার উৎস ধর্মীয় বিশ্বাস। তাঁদের পূর্বনির্ধারিত ধারণার ব্যতিক্রম দেখলে কেউ কেউ নিজেই বিচারের দায়িত্ব তুলে নিচ্ছেন।
যেমন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক কর্মচারী একই বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রী তার চোখে যথেষ্ট শালীন পোশাক না পরায় তাঁকে হেনস্তা করেছে। ব্যাপারটা এখানেই থেমে থাকেনি; আদালত পর্যন্ত গড়ায়। জামিন পেয়ে মুক্ত হলে নিজের পক্ষে সাফাই গেয়ে কর্মচারীটি বলে, ‘আমি এমন কী বলেছি!’
উদাহরণ আরও আছে। ঠিক-বেঠিকের পূর্বধারণা প্রয়োগ করে সারা দেশে ভাস্কর্য ভাঙা হয়েছে। বাউলের আখড়ায় হামলা হয়েছে। হামলা হচ্ছে মাজারে। এমনকি ক্লাসে বিজ্ঞান পড়াতে গিয়েও ছাত্রদের বিক্ষোভের মুখে পড়ে জেলে যেতে হয়েছে হাইস্কুলের শিক্ষককে। ফেসবুকে মন্তব্যের জন্য গ্রেপ্তার হয়েছেন কবি, সাইবার মামলায় পড়েছেন আন্দোলনকর্মী। সবার দাবি, ধর্মের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ নয় বলে তাঁরা এসব পদক্ষেপ নিয়েছেন।
ভয়টা এখানেই। আজকের বাংলাদেশে ধর্মের নামে অন্যের ব্যক্তিগত অধিকারের ওপর এমন আক্রমণের ঘটনা হরহামেশাই ঘটছে। এসব ঘটনার কোনোটির সঙ্গেই ধর্ম বা ধর্মাচারের কোনো সম্পর্ক নেই। সম্পর্ক রয়েছে মৌলবাদের, যার উৎস ধর্মীয় অনুশাসনের আক্ষরিক ব্যাখ্যার প্রতি নিঃশর্ত আনুগত্যে। কাজটা ধর্মের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ ভেবে যাঁরা অন্যের ধর্মীয় ও ব্যক্তিগত অধিকারে হস্তক্ষেপ করেন, তাঁরা সবাই যে নিজ ধর্ম বিষয়ে খুব সুপণ্ডিত, এ কথা বলা যাবে না। অথবা নিয়মিত ধর্ম পালন করেন, তা–ও নয়। কিন্তু তাঁদের মাথায় ‘ঠিক-বেঠিকের’ একটা সুনির্দিষ্ট ধারণা অনেক আগে থেকেই গাঁথা রয়েছে।
বার্ট্রান্ড রাসেলের ভাষায়, এসবই শৈশবের শিক্ষা। আপাতত সে তর্কে নাহয় না–ই গেলাম। ব্যক্তিগত আচার-আচরণের মধ্যে তাঁদের এই বিশ্বাস সীমিত হলে এতে ভয়ের কিছু নেই। সমস্যা দেখা দেয় যখন কেউ একক বা দলগতভাবে তাঁদের সেই বিশ্বাস বা ধ্যানধারণা অন্যের ওপর চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেন। বিপদটা আরও বাড়ে, যখন এ প্রবণতা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত হয়।
মৌলবাদ যে শুধু আমাদের অঞ্চলে অথবা আমাদের ধর্মের মধ্যে বিস্তৃত, তা মোটেই নয়। বস্তুত মৌলবাদ বা ফান্ডামেন্টালিজম কথাটা আমরা পেয়েছি আমেরিকা থেকে, সেখানে গত শতকের গোড়ার দিকে প্রটেস্ট্যান্ট খ্রিষ্টানরা বাইবেলে আদিষ্ট ধর্মের প্রকৃত অনুসারী হিসেবে নিজেদের ‘ফান্ডামেন্টালিস্ট’ হিসেবে ঘোষণা করেন। গত শতকের সত্তর ও আশির দশকে খ্রিষ্টধর্ম পুনরুজ্জীবনের লক্ষ্যে আমেরিকায় যে ‘মোরাল মেজরিটি’ আন্দোলন গড়ে ওঠে, তার সমর্থকেরাও নিজেদের ফান্ডামেন্টালিস্ট হিসেবেই পরিচিত করাতেন।
আজকের আমেরিকায় মোরাল মেজরিটির গুরুত্ব হ্রাস পেয়েছে বটে, কিন্তু ভিন্ন মোড়কে রিপাবলিকান রক্ষণশীল রাজনীতিক ও ধর্মগুরুদের হাতে তা নতুনভাবে প্রকাশিত হয়েছে। বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে শ্বেতকায় ভোটারদের প্রায় ২৫ শতাংশ নিজেদের ‘ইভানজেলিক্যাল’—অন্য কথায় মৌলবাদী বলে পরিচয় করাতে ভালোবাসেন। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প নিজে ধর্মাচারী হিসেবে পরিচিত না হলেও এই খ্রিষ্টীয় মৌলবাদীদের সমর্থনেই তিনি দ্বিতীয়বারের মতো নির্বাচিত হয়েছেন।
আগে বলেছি, ব্যক্তিগত জীবনে আপনি যেমন ইচ্ছা ধর্ম পালন করুন, তাতে কোনো সমস্যা নেই। কিন্তু আপনার ধর্মবিশ্বাস যখন রাজনৈতিকভাবে একটি দলীয় বা সম্প্রদায়গত ধর্মবিশ্বাস হয়ে দাঁড়ায়, তখন সেই ধর্মবিশ্বাসের বাইরের মানুষের নাগরিক অধিকার লঙ্ঘনের আশঙ্কা দেখা দেয়।
এখন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের যুগ, সবার হাতে হাতে মুঠোফোন। ভারিক্কি চেহারার লোকটির মতো যাঁরা অন্যের পাপ-পুণ্যের অডিট করতে চান, তাঁদের নাম–পরিচয় জানার চেষ্টা করুন। বাউলদের আখড়ায় যারা হামলা করে, সেসব হামলার সঙ্গে তাদের জড়িত থাকার সাক্ষ্য–প্রমাণ সংগ্রহ করুন। তাদের সামাজিকভাবে বর্জনের আহ্বান জানান। আমাদের নীতিজ্ঞান শেখানোর দায়িত্ব তাদের কারও ওপর ছেড়ে দিইনি, সে কথাটা জানিয়ে দিন।যুক্তরাষ্ট্রের কথাই ধরুন। সারা দেশে ইভানজেলিক্যালদের নেতৃত্বে স্কুল ও লাইব্রেরি থেকে খ্রিষ্টধর্মের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ নয়—এমন পুস্তক সরানোর প্রতিযোগিতা চলছে। স্কুলে ডারউইনিজম বা বিবর্তনবাদ বাদ দেওয়ার দাবি উঠেছে। ধর্মের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ নয়—এ যুক্তিতে যুক্তরাষ্ট্রে লিঙ্গান্তরিত ব্যক্তিদের অধিকার এখন উপেক্ষিত হচ্ছে। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এক নির্বাহী আদেশে ঘোষণা করেছেন, এখন থেকে যুক্তরাষ্ট্রে শুধু পুরুষ ও নারী—এ দুই লিঙ্গকে স্বীকৃতি দেওয়া হবে। লিঙ্গান্তরিত মানুষদের কোনো স্বীকৃতি থাকবে না। লিঙ্গান্তর বিষয়ে স্কুলে কোনো পাঠদানও অনুমোদন পাবে না।
মজার কথা হলো মার্কিন কংগ্রেসে এই মুহূর্তে একজন ডেমোক্রেটিক সদস্য রয়েছেন, যিনি ‘ট্রান্সজেন্ডার’। ট্রাম্পের অতি বিশ্বস্ত উপদেষ্টা ইলন মাস্কের রয়েছে একটি লিঙ্গান্তরিত সন্তান।
খ্রিষ্টান মৌলবাদীদের দাবি মেনেই নারীর গর্ভপাতের অধিকার রদ বা সংকুচিত করা হয়েছে। এমনকি জন্মনিয়ন্ত্রক ওষুধ বিতরণে নিয়ন্ত্রণ আরোপ করা হয়েছে। জন্মনিয়ন্ত্রক ওষুধ বিতরণ করায় ইউএসএআইডির বিশব্যাপী কার্যক্রম বাতিল করা হচ্ছে।
আরও পড়ুন‘ধর্ষণ’ শব্দে ডিএমপি কমিশনারের আপত্তি কেন১৬ মার্চ ২০২৫ধর্মের নামে বাংলাদেশে জন্মনিয়ন্ত্রণের ওপর এখনো কোনো নিয়ন্ত্রণ আসেনি, কিন্তু তৃতীয় লিঙ্গ, ট্রান্সজেন্ডারদের অধিকারের ওপর খড়্গ নেমে এসেছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে একটি গোষ্ঠীর চাপেই পাঠ্যসূচি থেকে ট্রান্সজেন্ডার–বিষয়ক আলোচনা বাদ দেওয়া হয়েছে। রাজনৈতিক দলের দাবিতে স্কুলের পাঠ্যপুস্তক থেকে কিছু রচনা বাদ দেওয়া হয়।
মেয়েদের নিয়ন্ত্রণের ব্যাপারে অন্য সবাইকে ছাড়িয়ে গেছে আফগানিস্তানের তালেবান সরকার। নারীরা কী করতে পারেন আর কী করতে পারেন না, তা নির্দেশ করে তারা সম্প্রতি একটি আইন পাস করেছে। এতে মেয়েদের গৃহের বাইরে শুধু কাজ করাই যে নিষিদ্ধ করা হয়েছে তা–ই নয়, প্রাথমিক পর্যায়ের পর স্কুল-কলেজে পড়াশোনাও নিষিদ্ধ করেছে। এমনকি জনসমক্ষে উঁচু গলায় কথা বলাতেও বারণ, এমনকি তা যদি পবিত্র ধর্মগ্রন্থ থেকে পাঠ হয়, তাতেও। এ ছাড়া পা থেকে মাথা পর্যন্ত আবৃত রাখার কড়া নির্দেশ তো আগে থেকেই বলবৎ ছিল।
নারীর ব্যাপারে কট্টরপন্থী পুরুষদের এমন গাত্রদাহের কারণ কী? মনস্তত্ত্ব নিয়ে কাজ করেন—এমন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অধিকাংশ পুরুষ নিজেদের নিরাপত্তাহীনতা (ইনসিকিউরিটি) ঢাকতেই মেয়েদের ওপর কর্তৃত্ব ফলাতে আসেন। নামজাদা মনোবিদ ক্যারেন হরনি, যিনি ‘গর্ভ ঈর্ষা’ (উম্ব এনভি) নামক তত্ত্বের প্রণেতা। তিনি বলেছেন, মেয়েরা জন্মদানে সক্ষম—এটি পুরুষদের মধ্যে গভীর ঈর্ষার জন্ম দেয়। এ থেকে যে হীনম্মন্যতার উদ্রেক হয়, তা ঢাকতেই পুরুষদের প্রয়োজন পড়ে মেয়েদের ওপর অধিকার ফলাতে। তাঁদের অনেকেই নিজেদের দাবির পক্ষে উকিল হিসেবে ধর্মগ্রন্থের একপেশে ব্যবহার করতে ভালোবাসেন।
এ অবস্থা বদলাব কীভাবে। পৃথিবীর সর্বত্র নাগরিক অধিকারের সম্প্রসারণ সম্ভব হয়েছে রাজনৈতিক ও নাগরিক অধিকার আন্দোলনের মাধ্যমে। আর সে আন্দোলনের প্রথম পাঠ ব্যক্তিগত ও সম্মিলিত প্রতিবাদে। বাংলাদেশে একটি চমৎকার স্লোগান রয়েছে—ধর্ম যার যার, রাষ্ট্র সবার। এ কথার অর্থ ধর্ম ও রাষ্ট্রকে বিযুক্ত করতে হবে। আমাদের দেশে এই বিযুক্তির বদলে সরকারের হাত ধরে ধর্ম রাষ্ট্রের ঘাড়ে চড়ে বসছে। ধর্মের নামে সরকার যখন একের পর এক ছাড় দিতে থাকে (যেমন পাঠ্যপুস্তকে পরিবর্তন, অথবা হুমকির মুখে ভাস্কর্য গুঁড়িয়ে ফেলা), তাতে মৌলবাদের হাতকে আরও শক্তিশালী করা হয়।
যাঁরা ব্যক্তিগত ধর্মবিশ্বাসের ভিত্তিতে সামাজিক নৈতিকতা আরোপ করতে চান, তাঁদের সে চেষ্টার প্রতিবাদ করুন। এ কাজে প্রধান ভূমিকা নতুন প্রজন্মের প্রতিনিধিদের, বিশেষত মেয়েদের নিতে হবে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের যে যুবক একটি মেয়েকে শালীনতার সবক দিতে এসেছিল, প্রতিবাদের মুখেই তাকে আটক করা হয়েছিল।
এখন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের যুগ, সবার হাতে হাতে মুঠোফোন। ভারিক্কি চেহারার লোকটির মতো যাঁরা অন্যের পাপ-পুণ্যের অডিট করতে চান, তাঁদের নাম–পরিচয় জানার চেষ্টা করুন। বাউলদের আখড়ায় যারা হামলা করে, সেসব হামলার সঙ্গে তাদের জড়িত থাকার সাক্ষ্য–প্রমাণ সংগ্রহ করুন। তাদের সামাজিকভাবে বর্জনের আহ্বান জানান। আমাদের নীতিজ্ঞান শেখানোর দায়িত্ব তাদের কারও ওপর ছেড়ে দিইনি, সে কথাটা জানিয়ে দিন।
হাসান ফেরদৌস প্রাবন্ধিক ও কলাম লেখক
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: স গত প র ণ র জন ত ক আম দ র অন য র র ওপর
এছাড়াও পড়ুন:
কাজাকিস্তানের যাযাবর জাতির করুণ ইতিহাস
বিংশ শতাব্দীর আগে পৃথিবীর মানচিত্রে কাজাখস্তান, কিরগিজস্তান, উজবেকিস্তান, তাজিকিস্তান এবং তুর্কমেনিস্তান নামের এই পাঁচটি দেশ ছিলো না। মূলত ১৯৯১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর এই রাষ্ট্রগুলো আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাধীনতা লাভ করে। পরে চীনের সহায়তায় ঐতিহাসিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ এই অঞ্চলগুলো বাণিজ্যিক কেন্দ্রস্থল হিসেবে পুনরুত্থান হয়েছে। এখন প্রশ্ন করা যেতে পারে, চীন কেন আবারও এই অঞ্চলগুলোকে শক্তিশালী করে তুলছে?
ঐতিহাসিকভাবে মধ্য এশিয়া অঞ্চল সিল্করোডের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ ছিলো। যা চীনকে মধ্যপ্রাচ্য এবং রোমান সভ্যতার সাথে যুক্ত করেছিলো। বীজ গণিতের জনক আল খারিজমি, আবু সিনার মতো বিজ্ঞানীদের জন্ম হয়েছে এখানে। যাদের লেখা বই ইউরোপে শত শত বছর ধরে চিকিৎসা ও নিরাময়ের জন্য ব্যবহার করা হচ্ছে। চেঙ্গিস খানও এই অঞ্চলে তার সম্রাজ্যের নিদর্শন রেখে গেছেন। পাশাপাশি ঘোড়ার পিঠে আদিম যাযাবর জীবনের ঐতিহ্যও টিকে আছে এখানে।
আরো পড়ুন:
রাশিয়ার বিরুদ্ধে এবার রোমানিয়ার আকাশসীমা লঙ্ঘনের অভিযোগ
রাশিয়ায় ৭.১ মাত্রার ভূমিকম্প, সুনামির সতর্কতা
রাজনৈতিক প্রভাব ও সামরিক হস্তক্ষেপের মাধ্যমে মধ্য এশিয়ায় আধিপত্য বিস্তার করেছিলো রুশরা। উপনিবেশিক শাসন এমনভাবে চালু করেছিলো, যা অনেকটা ব্রিটিশ বা ফরাসি সম্রাজ্যের মতো দেখতে।
রাজ্যগুলোকে শিল্পায়ন ও আধুনিকায়নের ফলে বিশাল পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে। এমনকি যাযাবর জাতিকে যুদ্ধ যেতে বাধ্য করা হয়েছিলো। আর যাযাবর জাতিকে বসতি স্থাপনে বাধ্য করা হয়েছিলো। এরপর ভয়াবহ দুর্ভিক্ষ দেখা দেয়। ফলে কাজাখ জনগোষ্ঠীর চল্লিশ শতাংশ অর্থাৎ ২৫ শতাংশ মানুষ অনাহারে মারা যায়। এবং যাযাবর জনগোষ্ঠীর যে অর্থনীতি, তা সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস হয়ে যায়। কারণ সোভিয়েত আমলে কাজাখ যাযাবররা যে পশুপালন করতো তার নব্বই শতাংশই মারা যায়। ফলে বাধ্য হয়ে কাজাখদের যাযাবর জীবনযাত্রা ছেড়ে দিতে হয়। বলতে গেলে সোভিয়েত আমলে কাজাখ সভ্যতা ও সংস্কৃতির বেদনাদায়ক পুনর্গঠনের মধ্যে দিয়ে যেতে হয়।
১৯৯১ সালে সোভিয়েন ইউনিয়নের পতন হয়, সৃষ্টি হয় এই পাঁচটি স্বাধীন দেশের। এই দেশগুলো স্বাধীন হয়েছে ঠিকই কিন্তু সোভিয়েত ইউনিয়ন পরবর্তী বিশ্বে খাপ খাইয়ে নিতে তাদের ব্যাপক সংগ্রাম করতে হয়। তবে বিগত কয়েক দশক ধরে মধ্য এশিয়ার যাযাবর জাতিগুলো নিজস্ব সীমানার মধ্যে এক অনন্য পরিচয় গড়ে তুলতে সক্ষম হয়েছে। যদিও তাদের ওপর বাইরের প্রভাবও রয়েছে। তুরস্ক এই অঞ্চলে নিজেদের উপস্থিতি আরও বেশি জানান দিচ্ছে। সাংস্কৃতিক, ঐতিহাসিক, ধর্মীয় এবং ভাষাগত মিল আছে। এমনকি শিক্ষাগত কাঠামোতেও মিল রয়েছে। তুরস্ক মধ্য এশিয়ায় রাশিয়ার পণ্য রফতানির একটি গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট হিসেবেও বিবেচিত।
জিনজিয়াং প্রদেশে প্রায় এক কোটি উইঘুর বাস করেন। যাদের বেশিরভাগই মুসলিম। এদের নিয়ে চীনের বিরুদ্ধে মানবতা বিরোধী অপরাধ ও গণহত্যার অভিযোগ রয়েছে। এ ছাড়া উইঘুর পরিচয় মুছে ফেলতে তাদের পুনঃশিক্ষা শিবিরে আটকে রাখার অভিযোগও আছে। যদিও চীন এসব অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে।
বৈশ্বিক অবকাঠামো উন্নয়নের পরিকল্পনা বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ এর চীন মধ্য এশিয়ায় ব্যাপক অবকাঠামো উন্নয়ন করছে। এই অঞ্চলটিকে বাণিজ্যিক কেন্দ্রে পরিণত করতে চাইছে, যা অনেকটা সিল্করুটের মতোই।
চীনের বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ উদ্যোগের মাধ্যমে মধ্য এশিয়ায় প্রাচীন সিল্ক রোড পুনরুজ্জীবিত করার একটি সম্ভবনা দেখা দিয়েছে। এই রোড পুনরুজ্জীবিত হলে রাশিয়া আর চীনের প্রভাব বলয়ে থাকা এই অঞ্চলের ভূ রাজনৈতিক গুরুত্ব কতটা বাড়বে-সেটাও সময় বলে দেবে।
ঢাকা/লিপি