রেকর্ড ভাঙা দুর্যোগে বড় ক্ষতি বাংলাদেশের
Published: 20th, March 2025 GMT
টালমাটাল রাজনীতি আর গণঅভ্যুত্থানের মতো বাংলাদেশের প্রকৃতিও ২০২৪ সালের বৈরী অবস্থার মধ্য দিয়ে গেছে। এ বছরটা বাংলাদেশের ইতিহাসে উষ্ণতম বছর হিসেবে রেকর্ড করা হয়েছে। ভয়াবহ বন্যায় ভেসেছে দেশ।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্য অনুসারে, গত বছরের এপ্রিলে তাপমাত্রা ছিল ৭৬ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। গত বছরের এপ্রিল থেকে মে মাস পর্যন্ত দেশে টানা ৩৫ দিন তাপপ্রবাহ চলে। এ পরিস্থিতিতে বিজ্ঞানীরা সতর্ক করে বলেছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে তাপমাত্রা বৃদ্ধি এবং পরিবেশের ক্ষতি এমন মাত্রায় পৌঁছেছে, যা অতীতে কখনও দেখা যায়নি। বিশেষ করে বাংলাদেশের মতো ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলো এর সবচেয়ে ক্ষতিকর প্রভাব মোকাবিলা করছে। চরমভাবাপন্ন আবহাওয়ার বিপদ সামনের দিনে আরও বাড়তে পারে।
বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থার (ডব্লিউএমও) বুধবার প্রকাশিত ‘স্টেট অব দ্য গ্লোবাল ক্লাইমেট রিপোর্ট’-এ উদ্বেগজনক এ তথ্য প্রকাশ পেয়েছে। ২১ মার্চ বিশ্ব হিমবাহ দিবস ও ২২ মার্চ বিশ্ব পানি দিবস এবং ২৩ মার্চ বিশ্ব আবহাওয়া দিবস সামনে রেখে প্রতিবেদনটি প্রকাশ হয়। বৈশ্বিক আবহাওয়া সংস্থাটি বলছে, চরম আবহাওয়াজনিত কারণে ২০২৪ সাল ছিল বিশ্বব্যাপী প্রাকৃতিক দুর্যোগে রেকর্ড ক্ষয়ক্ষতির বছর। এর সরাসরি প্রভাব পড়ছে বাংলাদেশের মানুষের জীবন, জীবিকা ও স্বাস্থ্যের ওপর। অতি গরম ছাড়াও ঘূর্ণিঝড়, টাইফুনসহ নানা কারণে গত ১৬ বছরের মধ্যে ২০২৪ সালে সবচেয়ে বেশি মানুষ উদ্বাস্তু হয়েছে।
ডব্লিউএমওর প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, গত ১০ বছরের মধ্যে প্রতিটি বছর বিশ্বের সর্বোচ্চ ১০ উষ্ণতম বছরের তালিকায় জায়গা করে নিয়েছে। এর মধ্যে ২০২৪ সালে গরম ছাড়াও সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা, এর তলদেশে তাপপ্রবাহ এবং বায়ুমণ্ডলে কার্বন ডাইঅক্সাইডের রেকর্ড বৃদ্ধি হয়েছে। এর প্রভাব শত শত বছর এমনকি হাজার বছরও অপরিবর্তনীয় থেকে যাবে।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, গত ২০২৩ এবং ’২৪ সালের রেকর্ড তাপমাত্রার মূল কারণ ছিল ক্রমবর্ধমান গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমন, যার সঙ্গে একটি শীতল লা নিনা থেকে, একটি উষ্ণ এল নিনোতে স্থানান্তর যুক্ত হয়েছিল। এ ছাড়া সৌরচক্রের পরিবর্তন, একটি বিশাল আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাত এবং শীতলকারী অ্যারোসোলের পরিমাণ হ্রাসসহ অন্যান্য কারণ এর সঙ্গে যুক্ত থাকতে পারে।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত ২০২৪ সালে তাপমাত্রার রেকর্ড বৃদ্ধির বাইরেও আরও অনেক কিছু ঘটছে। এর মধ্যে সমুদ্রের তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা আরও বাড়ছে, হিমবাহ গলছে এবং অ্যান্টার্কটিকার সমুদ্রের বরফ দ্বিতীয় সর্বনিম্ন পর্যায়ে পৌঁছেছে। বন্যা, খরা ও ঘূর্ণিঝড়ের কারণে খাদ্য সংকট বৃদ্ধি পেয়েছে এবং বিশাল অর্থনৈতিক ক্ষতি হয়েছে।
বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থার এ প্রতিবেদন নিয়ে বাংলাদেশের আবহাওয়া ও জলবায়ু বিশেষজ্ঞরা উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেছেন, ২০২৩-২৪ সালের জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব দীর্ঘস্থায়ী হবে। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে যে হারে ক্ষতি হচ্ছে, তা ঠেকাতে জনগণ ও পরিবেশ রক্ষার জন্য জরুরি ভিত্তিতে কার্যকর জলবায়ু নীতি গ্রহণের ওপর জোর দিয়েছেন তারা।
জলবায়ু পরিবর্তন বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড.
জলবায়ু পরিবর্তনের এই ক্ষতিকর প্রভাব মোকাবিলা বিষয়ে আবহাওয়াবিদ আবুল কালাম মল্লিক বলেন, বাংলাদেশে এখন সবচেয়ে জরুরি বনায়ন; দ্বিতীয়ত, মিঠাপানির উৎস সংরক্ষণ; তৃতীয়ত, কার্বন নিঃসরণ কমানো। বিশেষ করে জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার কমাতে হবে। এ জন্য দরকার সমন্বিত জাতীয় নীতিমালা, যা দ্রুত গ্রহণ করতে হবে।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: জলব য় ঝ ক ২০২৪ স ল র কর ড জলব য় বছর র
এছাড়াও পড়ুন:
সুদ পরিশোধে ব্যয় বাড়ছে
সুদ পরিশোধে সরকারের ব্যয় বাড়ছে। এ ব্যয় বহন করতে রীতিমত হিমশিম খেতে হচ্ছে। বাজেটে সরকারের সুদ পরিশোধ সংক্রান্ত পূর্বাভাসে দেখা যাচ্ছে, আগামী বছরগুলোতে সুদ ব্যয় ক্রমাগত বৃদ্ধি পাবে।
পরিচালন ও উন্নয়ন বাজেটের প্রায় ১৫ ভাগ অর্থই সুদ খাতে খরচ করতে হচ্ছে এখন। এ পরিস্থিতিতে আগামী তিন অর্থবছরে সুদ খাতেই ব্যয় করতে হবে চার লাখ ১০ হাজার ৭০০ কোটি টাকা। পাঁচ অর্থবছরের ব্যবধানে সুদ ব্যয় বাড়ছে ৩৩ শতাংশ। এর মধ্যে শতাংশের হিসাবে বৈদেশিক ঋণের সুদ ব্যয় সবচেয়ে বেশি বাড়বে।
অর্থ বিভাগের করা ‘মধ্যমেয়াদি সামষ্টিক অর্থনৈতিক নীতি বিবৃতি-২০২৫-২০২৬ থেকে ২০২৭-২০২৮’ এ তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে।
পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরে সুদ খাতে ব্যয় হয়েছিল এক লাখ ১৪ হাজার ৭০০ কোটি টাকা। এর মধ্যে অভ্যন্তরীণ খাতে সুদ ব্যয় ছিল ৯৯ হাজার ৬০০ কোটি টাকা এবং বিদেশি ঋণের সুদ ব্যয় গেছে ১৫ হাজার ১০০ কোটি টাকা।
চলতি ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরে (যা চলতি জুনের ৩০ তারিখে শেষ হয়ে যাবে) মূল বাজেটে সুদ খাতে ব্যয় বরাদ্দ ছিল এক লাখ ১৩ হাজার কোটি টাকা। কিন্তু বছর শেষে এই সীমায় সুদ ব্যয় ধরে রাখা সম্ভব হয়নি। ফলে সংশোধিত বাজেটে এ খাতে ব্যয় বাড়িয়ে ধরা হয়েছে এক লাখ ২১ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। এ হিসাবের মধ্যে ছিল অভ্যন্তরীণ ঋণের সুদ ব্যয় ৯৯ হাজার ৫০০ কোটি টাকা এবং বিদেশী ঋণের ২২ হাজার কোটি টাকা।
একইভাবে আগামী তিন অর্থবছরে সুদ খাতে ব্যয়েরও একটি প্রক্ষেপণ করেছে অর্থ বিভাগ। এই হিসেবে দেখা যায় আগামী ১ জুলাই থেকে শুরু হওয়া ২০২৫-২০২৬ অর্থবছরে সুদ খাতে ব্যয় হবে এক লাখ ২২ হাজার কোটি টাকা (অভ্যন্তরীণ এক লাখ কোটি টাকা , বিদেশি ঋণের সুদ ব্যয় ২২ হাজার কোটি টাকা)। একইভাবে এর পরের অর্থবছর ২০২৬-২০২৭ অর্থবছরে একলাখ ৩৬ হাজার ২০০ কোটি টাকা(অভ্যন্তরীণ এক লাখ ১২ হাজার কোটি টাকা এবং বিদেশি ঋণের ২৪ হাজার ২০০ কোটি টাকা) এবং ২০২৭-২০২৮ অর্থবছরে সুদ খাতে ব্যয়ের প্রক্ষেপণ করা হয়েছে ১ লাখ ৫২ হাজার ৫০০ কোটি টাকা।
অর্থ বিভাগ থেকে বলা হয়েছে, মোট সুদ ব্যয়ের সিংহভাগই অভ্যন্তরীণ ঋণের সুদ পরিশোধ। অভ্যন্তরীণ ঋণের সুদ পরিশোধ ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরে ৯৯ হাজার ৬০০ কোটি টাকা থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ২০২৭-২০২৮ অর্থবছরে এক লাখ ২৫ হাজার ৫০০ কোটি টাকা গিয়ে পৌঁছাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। কিন্তু মোট বাজেটের অনুপাতে অভ্যন্তরীণ সুদ পরিশোধের হার ২০২৩ -২০২৪ অর্থবছরে ১৬ দশমিক ২৯ শতাংশ থেকে কমে ২০২৭-২০২৮ অর্থবছরে ১২ দশমিক ৭৫ শতাংশে হ্রাস পাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। যদিও বৈদেশিক ঋণের সুদ পরিশোধ মোট সুদ ব্যয়ের তুলনায় কম, তবে এটি উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পাবে বলে অনুমান করা হচ্ছে। ফলে এটি ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরে ১৫ হাজার ১০০ কোটি টাকা থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ২০২৭-২০২৮ অর্থবছরে ২৭ হাজার ১০০ কোটি টাকায় উন্নীত হতে পারে। মোট বাজেটের অনুপাতে বৈদেশিক ঋণের সুদ পরিশোধ এ সময়কালে ২ দশমিক ৪৭ শতাংশ থেকে বেড়ে ২ দশমিক ৭৬ শতাংশে উন্নীত হতে পারে।
বিদেশি ঋণের সুদ ব্যয় নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে অর্থ বিভাগ থেকে বলা হয়েছে, বৈদেশিক ঋণের সুদ পরিশোধের কার্যকর ব্যবস্থাপনা শুধু আর্থিক শৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্যই নয়, বরং এটি সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করা, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ রক্ষা, টেকসই অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি নিশ্চিত করা, আন্তর্জাতিক ঋণমান বজায় রাখা এবং ভবিষ্যতের উন্নয়ন সম্ভাবনা সুরক্ষিত রাখার জন্য অপরিহার্য।