Samakal:
2025-04-30@23:41:31 GMT

আতাউল হক সিদ্দিকীর সনেট সমগ্র

Published: 20th, March 2025 GMT

আতাউল হক সিদ্দিকীর সনেট সমগ্র

‘পৃথিবীটা অপরূপ। তবু তার মুগ্ধ তরুতলে।
দোতারা বাজায় বসে কেউ কেউ—উদাসী বাউল।
রাখে সে চরণচিহ্ন দীপ্তিময় তারকার ফুল
দিতে এসে কান্নাভেজা শরতের নিশি শেষ হলে—
ক্লান্ত হাতে উষাকালে রাধিকার ছড়ানো আঁচলে,
স্মৃতির অরণ্যে কিছু রেখে যায় শেফালি বকুল,
ভাদরের ভরানদী ভাঙে যার হৃদয়ের কূল;
অশ্রু তার টলমল তৃণে তৃণে শিশিরের জলে।’
[একটি জিজ্ঞাসা]
‘বিবাগী বসন্ত বাউল যৌবন’ সনেটগ্রন্থের উপর্যুক্ত সনেটটি যখন লেখা হয়, সে সময়টি ছিল ৩ অক্টোবর ১৯৬৮। বিংশ শতাব্দীর ষাটের দশকের শেষাংশে আত্মপ্রকাশ করা কবি আতাউল হক সিদ্দিকী। গ্রন্থভুক্ত হওয়ার আগে সনেটটির শিরোনাম ছিল, ‘একটি জিজ্ঞাসা : তোমার সমীপে’। সনেটটি রচিত হয়েছিল নওগাঁ ডিগ্রি কলেজ বার্ষিকী শাহাদৎ হোসায়েন স্মৃতি সংখ্যায়, মরহুম শাহাদাৎ হোসায়েন স্মরণে। সনেটের দুটি অংশ, অষ্টক এবং ষষ্ঠক। অষ্টক অংশে যেমন কবি পৃথিবীর ‍রূপ-রস-সৌন্দর্যের বর্ণনার মধ্য দিয়ে সূচনা করেছেন, তেমনি ষষ্ঠক অংশে নিয়ম মেনেই সেই রূপ-রস-গন্ধ ও সৌন্দর্য ছেড়ে যাবার বেদনাকে প্রতিভাত করেছেন। ষষ্ঠক অংশে তিনি বলেন, ‘পৃথিবীতে ডানা মেলে দগ্ধ ওরা শ্বেত পারাবত,/ নাগিনী সোহাগীরাত তাহাদের-ফাগুনে আগুন/ ব্যাপ্ত হলে কাছে টানে মরণের চিরচেনা পথ।/ মধুমাসে তারা তাই বুকে নিয়ে তৃষ্ণা নিদারুণ/ করুণার তীর ছুঁয়ে বিস্তৃতির সমুদ্রে মিলায়—/ তুমি কি তেমনিভাবে অসময়ে নিয়েছ বিদায়?’ এই পাঠককে সম্মোহিত করে অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে তৈরি উপাখ্যান, তাতে যদিও জীবনানন্দীয় আবহ বিদ্যমান, তবুও তার নিজস্বতা, একরাশ ভাবের মুখোমুখি হতে হয় পাঠককে। উন্মোচিত হতে থাকে উপলব্ধির জগৎকে প্রসারিত করে লুকানো বিরহগাথা। 
সনেটের স্মরণীয় এবং পূজনীয় ইতালিয়ান কবি পেত্রার্ক এবং ইংরেজ কবি উইলিয়াম শেক্সপিয়র। পেত্রার্ককে বলা হয় সনেটের জনক। অন্যদিকে শেক্সপিয়র সনেট লিখেছেন, তাতে তিনি পেত্রার্কের ফর্ম অনুসরণ করেননি। ফলে অন্যান্য ভাষার কবিরা যখন সনেট রচনায় মনোযোগ দেন, তখন সচেতন দুটো ধারা দৃশ্যমান হয়ে ওঠে। বাংলা ভাষার সঙ্গে পেত্রার্কের রীতি অনুসরণ করেই সনেটের প্রথম পরিচয় করিয়েছিলেন মাইকেল মধুসূদন দত্ত। পরবর্তী সময়ে বাংলা ভাষার প্রথিতযথা কবিরা তো বটেই, অন্য কবিরাও সনেট রচনায় মনোযোগ দিয়েছেন। বাংলা ভাষাতেও লেখা হয়েছে অনবদ্য সনেট। সনেটের বিষয়ের ক্ষেত্রে দেশপ্রেমকে যেমন প্রাধান্য দেওয়া হয়, তেমনি ব্যক্তি বন্দনাও। কবি আতাউল হক সিদ্দিকী, বিংশ শতাব্দীর ষাটের দশকের শেষার্ধে শুরু যখন কাব্য সাধনায় নিজের অস্তিত্ব মিশিয়ে দিতে থাকেন, তখন অন্যদের সঙ্গে তাঁর বড় পার্থক্য হয়ে দাঁড়ায় সনেট রচনার ধারা। সবাই নানা ছন্দের কবিতা লেখার পর সনেট রচনায় হাত দেন, তখন আতাউল হক সিদ্দিকী কাব্যচর্চার সূচনাই সনেটের হাত ধরে। 
১৯৬৮ সালে কলেজ বার্ষিকীতে প্রথম লেখা প্রকাশের পর তাঁর সনেটগুলো প্রথম গ্রন্থভুক্ত হয় ১৯৯৮ সালে। ‘বিবাগী বসন্ত বাউল যৌবন’ শিরোনামের সনেটগ্রন্থের পর একে একে প্রকাশ পেয়েছে, ‘আমি সেই লোক’, ‘উড়ে যায় মরমি পাখি’, ‘বেপথু কীর্তনীয়া’, ‘বরেন্দ্র বাউল’। পরে এই পাঁচটি সনেটগ্রন্থ নিয়ে সনেট সমগ্র। এরপর প্রকাশিত ‘সেই ডাকে’ সনেটগ্রন্থটিসহ আগের পাঁচটি গ্রন্থকে ‘সনেট সমগ্র’ নামে দুই মলাটের মধ্যে এনেছে কথাপ্রকাশ। 
গত ছয় দশকে আতাউল হক সিদ্দিকী নেট রচনা থেকে নিজেকে সরিয়ে নেননি। বরং সনেটকেই নিজেকে প্রকাশের বড় মাধ্যম করেছেন। সনেট রচনায় আতাউল হক সিদ্দিকীর পারঙ্গমতা ঈর্ষণীয়। এ ক্ষেত্রে তিনি শুধু পেত্রার্ককেই অনুসরণ করেননি, তিনি শেক্সপিয়রের রীতিতেও সনেট লিখেছেন। শুরু থেকেই দুটো ধারা তিনি সচেতনভাবে লালন করেছেন, প্রকাশ করেছেন। ৮ ও ৬ পঙ্‌ক্তির যে বিন্যাস, ভাবের যে বিস্তার প্রথম ৮ পঙ্‌ক্তিতে এবং শেষের ৬ পঙ্‌ক্তিতে সিদ্ধান্ত জানানোর যে পেত্রার্কীয় রীতি তা যেমন তিনি অনুসরণ করেছেন। তেমনি ৪, ৪, ৪, ২ পঙ্‌ক্তির বিন্যাসের শেক্সপিয়রীয় রীতিকেও অনুসরণ করেছেন। কোথাও তাঁর সপ্রতিভতার ঘাটতি নেই। সনেটের বিষয় নির্বাচনের ক্ষেত্রেও তাঁর দক্ষতা। সনেটের যে গতি, তা তিনি অনুসরণ করেন। আতাউল হক সিদ্দিকী সনেট রচনার ধারায় আধুনিক। তিনি শব্দ বাছাইয়ে যেমন, তেমনি বিষয়ের ক্ষেত্রেও নিপুণতার ছাপ রেখেছেন। সতত সঞ্চরণশীল কবি আতাউল হক সিদ্দিকী, তাঁর গাঢ় উপলব্ধির যে সহজাত প্রকাশ সনেটের মাধ্যমে তুলে ধরেছেন, তা বাংলা সনেটের ধারাকেই শুধু সমৃদ্ধ করেনি, পাঠককেও তৃপ্তি দিতে সক্ষম।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: বই উৎসব কর ছ ন প রথম

এছাড়াও পড়ুন:

মানবাধিকারের প্রতিশ্রুতি দিল র‍্যাব, চায় সাইবার ইউনিট

অপরাধের ধরন বদলে যাচ্ছে। অভিনব কৌশলে সক্রিয় সাইবার অপরাধীরা। প্রযুক্তিনির্ভর অপরাধ মোকাবিলা করা নতুন চ্যালেঞ্জ। এ জন্য স্বতন্ত্র সাইবার ইউনিট চেয়েছে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‍্যাব)।

পুলিশ সপ্তাহের দ্বিতীয় দিন গতকাল বুধবার কর্মপরিকল্পনার সারসংক্ষেপ তুলে ধরে বাহিনীর বিভিন্ন ইউনিট। সেখানে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি), র‍্যাবসহ একাধিক ইউনিট একুশ শতকের জটিল অপরাধ ও তা নিয়ন্ত্রণে প্রযুক্তিগত প্রস্তুতির বিষয়টি সামনে আনে। গতকাল পুলিশের যে ইউনিটগুলো পরিকল্পনা তুলে ধরেছে, তা হলো হাইওয়ে পুলিশ, পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই), নৌ পুলিশ, আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন (এপিবিএন), শিল্প পুলিশ, র‍্যাব, অ্যান্টিটেররিজম ইউনিট, রেলওয়ে পুলিশ ও সিআইডি।

কীভাবে প্রত্যন্ত এলাকার ভুক্তভোগী র‍্যাবের সহযোগিতা পেতে পারেন, সে বিষয়টি উপস্থাপন করেন বাহিনীর মহাপরিচালক (ডিজি) এ কে এম শহিদুর রহমান। তিনি দ্রুত গুজব প্রতিরোধে কার্যকর ব্যবস্থার ওপর জোর দেন। র‍্যাবের জন্য আলাদা একটি সাইবার ইউনিটের প্রয়োজনীয়তার কথাও বলেন। র‍্যাব জনবান্ধব হওয়ার চেষ্টা করছে বলে জানান তিনি।

আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে র‌্যাবের বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ উঠেছিল। এর পরিপ্রেক্ষিতে ডিজি বলেন, ‘কার্যক্রমে স্বচ্ছতা, জবাবদিহি ও মানবাধিকার বজায় রাখতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ র‌্যাব। অভ্যন্তরীণ শৃঙ্খলা নিশ্চিত করতে তদন্ত সেলকে শক্তিশালী করা হয়েছে। একটি মানবাধিকার সেলও গঠন করা হয়েছে।’
রুদ্ধদ্বার বৈঠকে উপস্থিত সূত্রের মতে, র‍্যাব ডিজির উপস্থাপনায় মূলত বাহিনীর অর্জনগুলো তুলে ধরা হয়। 

সংশ্লিষ্ট একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সিআইডি ২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২৫ সালের মার্চ পর্যন্ত কার্যক্রমের সংক্ষিপ্ত বর্ণনা দেয়। সিআইডির প্রধান অতিরিক্ত আইজিপি (ভারপ্রাপ্ত) গাজী জসীম অনুষ্ঠানে জানান, জুলাই অভ্যুত্থান-পরবর্তী মামলার অনুসন্ধানে সিআইডি বিশেষ টিম গঠন করেছে। সাবেক মন্ত্রী, প্রভাবশালীদের সন্দেহজনক সম্পদের উৎস ও প্রকৃতি নিয়ে নিবিড়ভাবে চলছে তদন্ত। এস আলম, বেক্সিমকো, বসুন্ধরা, নাবিল, ইউনিক, সিকদার গ্রুপসহ কয়েকটি বড় প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে মামলা ও অনুসন্ধান শুরু হয়েছে। এ সময় প্রায় ৫ হাজার ৮০০ শতাংশ জমি ও হাজার কোটি টাকা মূল্যের সম্পদ শনাক্ত করা হয়েছে। কক্সবাজারের টেকনাফের একটি মামলায় ১০ কোটি টাকার সম্পদ জব্দ করা হয়েছে।

সিআইডির উপস্থাপনায় আরও বলা হয়, ফরেনসিক শাখা দিন দিন অপরাধ বিশ্লেষণের নির্ভরযোগ্য কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। জনবল, সরঞ্জাম এবং অর্থের সীমাবদ্ধতার পাশাপাশি সিআইডিতে আছে কাঠামোগত ও প্রশাসনিক চ্যালেঞ্জ। কোনো জেলা ইউনিটে একটিও অপারেশনাল যানবাহন নেই। এ ছাড়া অনেক কর্মকর্তা-কর্মচারীর মধ্যে অনিয়মিত বদলি আতঙ্ক রয়েছে। সাইবার পুলিশ সেন্টারে রয়েছে সরঞ্জামের অভাব। ফরেনসিক ল্যাবে সফটওয়্যারের জন্য বাজেট-স্বল্পতার কথা তুলে ধরেন তারা।

হাইওয়ে পুলিশের পক্ষ থেকে পণ্য ও যাত্রী পরিবহনে নিরাপত্তা ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনার ওপর জোর দেওয়া হয়। মহাসড়কে চুরি, ডাকাতি ও ছিনতাই প্রতিরোধে চলমান কার্যক্রম তুলে ধরা হয়েছে। বর্তমানে মহাসড়কের সিসিটিভি থেকে হাইওয়ে পুলিশ ডিজিটাল অটো ফাইন সিস্টেম, ট্রাফিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ, ক্লোন নাম্বারপ্লেট শনাক্ত, হাইস্পিড ডিটেকশন করে থাকে।

এর আগে মঙ্গলবার পুলিশ সপ্তাহের প্রথম দিন পুলিশের বিশেষ শাখার (এসবি) পক্ষ থেকে তাদের কর্মকাণ্ড ও পরিকল্পনা উপস্থাপন করা হয়। সেখানে ১৯৭৪ সালের বিশেষ ক্ষমতা আইনের ৩(২) ধারায় তালিকাভুক্ত ব্যক্তিকে ডিটেনশনে (নির্দিষ্ট সময়ের জন্য বিনা বিচারে আটক রাখা) নেওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। বলা হয়, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে এবং পরিস্থিতির অবনতি যেন না ঘটে, সে জন্য তালিকাভুক্ত ব্যক্তিদের ডিটেনশনে নেওয়া উচিত। সরকারের অনুমতি পেলে এসবির পক্ষ থেকে তালিকায় থাকা ব্যক্তিদের বিস্তারিত জেলা প্রশাসকসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরে পাঠানো হবে। ডিটেনশনে নেওয়ার জন্য যাদের তালিকা প্রস্তুত করা হয়েছে, তাদের কেউ কেউ পেশাদার অপরাধী।

সম্পর্কিত নিবন্ধ