‘ভক্তে’র কাছে হার রোনালদোর, হার এমবাপ্পের, জিতল জার্মানি
Published: 21st, March 2025 GMT
বিশেষ কিছুই করতে হয়নি। চারটি ভালো পাস খেলে গোল করেছে ডেনমার্ক। ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো মাঠে অসহায়ের মতো দাঁড়িয়ে দেখেছেন সেই দৃশ্য। শুধু কি তা-ই, গোলের পর তাঁর ট্রেডমার্ক উদ্যাপন ‘সিউ’ দিয়ে তাঁরই চোখের সামনে আনন্দও সেরে নিয়েছে প্রতিপক্ষ এবং শেষ পর্যন্ত ওই গোলেই দলের হার। কোপেনহেগেনের পার্কেন স্টেডিয়ামে কাল রাতটা তাই মোটেও ভালো কাটেনি রোনালদোর।
উয়েফা নেশনস লিগ কোয়ার্টার ফাইনাল প্রথম লেগের এ ম্যাচে ডেনমার্কের কাছে ১-০ গোলে হেরেছে পর্তুগাল। ৭৮ মিনিটে ডেনিশদের জয় এনে দেওয়া গোলটি যিনি করেছেন, সেই রাসমুস হয়লুন্দের কাছে রাতটা আবার অন্য রকম। মাঠে নিজের আদর্শকে সাক্ষী রেখে গোল করে তাঁর মতো করেই উদ্যাপন সেরেছেন। ঠিক ধরেছেন। ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের এই স্ট্রাইকার রোনালদোর বড় ভক্ত। ম্যাচ শেষে হয়লুন্দ পরিষ্কার জানিয়ে দিয়েছেন, রোনালদোকে উপহাস করতে ‘সিউ’ উদ্যাপন করেননি। নিজের আদর্শকে সামনে রেখে তাঁরই সামনে দলের বিপক্ষে গোল করা হয়লুন্দের কাছে অনেক বড় অর্জন। সেটা স্মরণীয় করে রাখতেই তাঁর অমন উদ্যাপন।
জয়ের ব্যবধান বাড়াতে পারত ডেনমার্ক। প্রথমার্ধে ডেনিশ মিডফিল্ডার ক্রিস্টিয়ান এরিকসেনের পেনাল্টি রুখে দেন পর্তুগিজ গোলকিপার দিওগো কস্তা। ডেনমার্কের হয়ে ২০১৬ সালের পর এই প্রথম পেনাল্টি মিস করলেন এরিকসেন। তাঁর একটি শট গোল লাইন থেকে ক্লিয়ারও করেন পর্তুগিজ ডিফেন্ডার ডিওগো দালত। তাঁর একটি ফ্রি–কিকও রুখে দেওয়া হয়। অন্যদিকে রোনালদো এ ম্যাচে মোটেও প্রভাব ফেলতে পারেননি। পর্তুগাল অধিনায়কের একটি হেড ডেনিশ পোস্টের ওপর দিয়ে চলে গেছে এই যা। বেঞ্চ থেকে মাঠে নামা হয়লুন্দ ৭৮ মিনিটে রাইট উইঙ্গার আন্দ্রেস স্কোভ ওলসেনের ক্রস থেকে গোল করেন।
আরও পড়ুনমেসি–দিবালার অনুপস্থিতিতে আর্জেন্টিনার ১০ নম্বর জার্সি কার১২ ঘণ্টা আগেগোলের পর মাঠের এক কোনায় গিয়ে সিউ উদ্যাপন করেন হয়লুন্দ। রোনালদো মাঠে কোমরে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে তা দেখেছেন। কিছুদিন আগে সংবাদমাধ্যম ‘ডিআর’কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে রোনালদোর প্রতি মুগ্ধতা স্পষ্টভাবেই প্রকাশ করেছিলেন হয়লুন্দ, ‘ক্রিস্টিয়ানোর কারণে ফুটবলের প্রেমে পড়েছি।’ এবার তাঁর দলের বিপক্ষে গোল করে উদ্যাপনটা নিজের আদর্শকেই উপহার দেওয়ার কথা জানালেন হয়লুন্দ।
ম্যাচ শেষে ডেনিশ সম্প্রচারক টিভি ২-কে বলেছেন,‘এটা আমার আদর্শের জন্য। এটা তাঁকে উপহাস করা কিংবা এমন কোনো ইচ্ছা থেকে করিনি। আমার ও আমার ফুটবল ক্যারিয়ারের ওপর তাঁর প্রভাব অসামান্য। হয়তো একটু অন্য রকমও লাগতে পারে, তবে পর্তুগাল ও তাঁর বিপক্ষে গোল করা আমার জন্য বিশাল কিছু। ২০১১ সালে ফ্রি–কিক থেকে তাঁর গোল করা মনে আছে। ম্যাচটি আমি দেখেছি এবং তার পর থেকেই আমি ক্রিস্টিয়ানোর ভক্ত।’ লিসবনে আগামী রোববার রাতে ফিরতি লেগ।
আরও পড়ুনশেষ মুহূর্তে ভিনিসিয়ুস–জাদুতে ব্রাজিলের দারুণ জয়৫৫ মিনিট আগেফ্রান্সের হার
একই রাতে কোয়ার্টার ফাইনাল প্রথম লেগের অপর ম্যাচে স্বাগতিক হয়ে ফ্রান্সকে ২-০ গোলে হারিয়েছে ক্রোয়েশিয়া। প্রথমার্ধে স্বাগতিকদের হয়ে গোল দুটি আন্ত বুদিমির ও ইভান পেরিসিচের। ম্যাচের ৮ মিনিটে পেনাল্টি থেকে আন্দ্রে ক্রামারিচের শট ফ্রান্সের গোলকিপার মাইক মাইগনান রুখে না দিলে ক্রোয়েশিয়ার জয়ের ব্যবধান আরও বাড়ত। গাভার্দিওলের দূরপাল্লার একটি শটও ঠেকান মাইগনান। এই হারে কিলিয়ান এমবাপ্পে ও উসমান দেম্বেলের ফ্রান্স দলে ফেরাটা স্মরণীয় হলো না।
মদরিচের ক্রোয়েশিয়ার কাছে হেরেছে এমবাপ্পের ফ্রান্স.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: র আদর শ পর ত গ গ ল কর র একট প রথম
এছাড়াও পড়ুন:
ডলার ও বিদেশিদের ব্যাংক হিসাবে আমানত এক বছরে বেড়ে দ্বিগুণ
হঠাৎ করে দেশে অবস্থানকারী বিদেশিরা বাংলাদেশের বিভিন্ন ব্যাংকে অর্থ জমার পরিমাণ বাড়িয়ে দিয়েছেন। আবার বাংলাদেশিরাও দেশের ব্যাংকগুলোতে আগের চেয়ে বেশি বিদেশি মুদ্রা জমা রাখছেন। এতে ব্যাংকগুলোতে বিদেশি মুদ্রার যে হিসাব আছে, সেটিও বাড়ছে অন্যান্য আমানত হিসাবের চেয়ে বেশি। গত এক বছরে দেশের বিভিন্ন ব্যাংকে বিদেশি মুদ্রায় রক্ষিত আমানত বেড়ে প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। যদিও বিদেশি মুদ্রার বাইরে দেশীয় মুদ্রার আমানত হিসাবে এক বছরে আমানত বেড়েছে ১ দশমিক শূন্য ৯ শতাংশ। সম্প্রতি প্রকাশিত ব্যাংকগুলোর আর্থিক তথ্য নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের ত্রৈমাসিক এক প্রতিবেদন থেকে এই তথ্য পাওয়া গেছে।
প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, মূলত ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থানে গত বছরের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকে এসব হিসাবে অর্থ জমা বেশি বেড়েছে। এর ফলে ঘরে রাখা ডলার ও অন্যান্য বিদেশি মুদ্রা আবার ব্যাংকে ফিরতে শুরু করেছে। এটা শুরু হয়েছে আবাসিক বৈদেশিক মুদ্রা আমানত বা রেসিডেন্ট ফরেন কারেন্সি ডিপোজিট (আরএফসিডি) হিসাব ও বৈদেশিক মুদ্রার হিসাবের ওপর সুদসহ বাড়তি সুবিধা দেওয়ার কারণে।
আমানত কতটা বাড়ল
দেশের ব্যাংকগুলোতে নানা ধরনের আমানত পণ্য রয়েছে। সেই সঙ্গে রয়েছে দেশি ও বিদেশিদের জন্য পৃথক আমানত পণ্য। বিদেশি মুদ্রার জন্য রয়েছে পৃথক আমানত পণ্য। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে অবস্থান করা বিদেশিদের জমা অর্থের পরিমাণ এক বছরে বেড়ে দ্বিগুণ হয়ে গেছে। বিদেশিরা সাধারণত বিদেশি মুদ্রাকে টাকায় রূপান্তর করে এই ধরনের হিসাব পরিচালনা করেন, ব্যাংকের ভাষায় এসব হিসাবকে কনভার্টেবল টাকা অ্যাকাউন্ট অব ফরেনার্স বা বিদেশিদের জন্য টাকায় রূপান্তরযোগ্য হিসাব বলা হয়। ২০২৪ সালের মার্চে এই ধরনের হিসাবে জমা ছিল ১ হাজার ৮০৪ কোটি টাকা, গত মার্চ শেষে তা বেড়ে হয়েছে ৩ হাজার ৮৫৯ কোটি টাকা।
একইভাবে বৈদেশিক মুদ্রার হিসাবেও (এফসিএ) জমা অর্থের পরিমাণ বেড়েছে। গত বছরের মার্চে এই ধরনের হিসাবে জমা ছিল ৬ হাজার ৫৪ কোটি টাকার সমপরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা। গত ডিসেম্বর শেষে তা বেড়ে হয়েছে ১৪ হাজার ৭৫০ কোটি টাকার সমপরিমাণ। আমদানি-রপ্তানির কার্যক্রমের সঙ্গে যুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলোই সাধারণ এফসিএ হিসাব খুলে থাকে। প্রবাসী বাংলাদেশিরাও এ ধরনের হিসাব খুলতে পারেন।
এ ছাড়া শুধু প্রবাসীদের জন্য আলাদা আমানত হিসাবও রয়েছে, তাতে স্থিতি খুব বেশি বাড়েনি। গত বছরের মার্চে প্রবাসীদের আমানত হিসাবে স্থিতির পরিমাণ ছিল ৩ হাজার ৪৭৭ কোটি টাকা, যা গত মার্চে বেড়ে হয়েছে ৪ হাজার ৭৭৮ কোটি টাকা।
অন্যদিকে বিদেশ সফর শেষে দেশে ফেরত আসা বাংলাদেশিদের বৈদেশিক মুদ্রার হিসাবে (আরএফসিডি) আমানতও বেড়েছে। গত বছরের মার্চে এই ধরনের হিসাবে আমানত ছিল ২৬ হাজার ১৩০ কোটি টাকা, যা গত মার্চে বেড়ে হয়েছে ৩৩ হাজার ২৭৩ কোটি টাকা।
তবে সার্বিকভাবে ব্যাংক খাতে আমানত সেভাবে বাড়েনি। ২০২৪ সালের মার্চে পুরো খাতে আমানত ছিল ১৭ লাখ ৬২ হাজার ৩০৩ কোটি টাকা, যা গত মার্চে বেড়ে হয় ১৯ লাখ ২৩ হাজার ৫০৪ কোটি টাকা। সেই হিসাবে এক বছরের ব্যবধানে ব্যাংক খাতে আমানত বেড়েছে ১ শতাংশের কিছু বেশি।
কেন বাড়ছে ডলার ও বিদেশিদের জমা অর্থ
দেশে ডলার–সংকট দেখা দেওয়ায় ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে মানুষের ঘরে থাকা ডলার ব্যাংকে ফেরাতে আবাসিক বৈদেশিক মুদ্রা আমানত বা রেসিডেন্ট ফরেন কারেন্সি ডিপোজিট (আরএফসিডি) হিসাবের ওপর সুদসহ বাড়তি সুবিধা দেওয়ার সুযোগ করে দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। এরপরই দি সিটিসহ কিছু ব্যাংক বাড়তি উদ্যোগ নিয়ে এই ধরনের হিসাব খুলতে শুরু করে। বর্তমানে নগদ ডলারের বড় অংশ মজুত আছে ইস্টার্ন, দি সিটি, ব্র্যাক, ডাচ্-বাংলা, প্রাইম, পূবালী, বহুজাতিক স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ও এইচএসবিসি এবং দেশীয় মালিকানাধীন ইসলামীসহ আরও কয়েকটি ব্যাংকে। মার্কিন ডলারের পাশাপাশি পাউন্ড, ইউরো, অস্ট্রেলিয়ান ডলার, কানাডিয়ান ডলার, সিঙ্গাপুরি ডলারেও আরএফসিডি হিসাব খোলা যায়।
সুদ বৃদ্ধিসহ ব্যাংকগুলোর নানা উদ্যোগের ফলে ঘরে থাকা ডলার ও অন্যান্য বিদেশি মুদ্রা আবার ব্যাংকে ফিরতে শুরু করেছে। কারণ, ব্যাংকগুলো গ্রাহকদের এসব হিসাবে জমা বিদেশি মুদ্রার ওপর সুদ দিচ্ছে। পাশাপাশি এই ধরনের হিসাবের ডলার কোনো বাছবিচার ছাড়াই দেশে ও বিদেশে গিয়ে খরচ করা যাচ্ছে। প্রতিবার বিদেশ ভ্রমণের সময় এই হিসাব থেকে নগদ ৫ হাজার মার্কিন ডলার নেওয়া যায়। হিসাবধারী এবং তার ওপর নির্ভরশীলদেরও প্রয়োজনে বিদেশে কয়েকটি খাতে অর্থ খরচের সুযোগ রয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে ভ্রমণ, সন্তানের শিক্ষা এবং চিকিৎসা খাতে খরচ। এসব খাতে খরচের কোনো সীমা রাখেনি বাংলাদেশ ব্যাংক। আগে শুধু হিসাবধারীরা নিজ প্রয়োজনে বিদেশে অর্থ নেওয়া ও খরচের সুবিধা পেতেন।
এদিকে ব্যবহারযোগ্য সব ধরনের বৈদেশিক মুদ্রায় হিসাব খোলার সুযোগ রয়েছে প্রবাসীদের জন্য। সেই সঙ্গে প্রবাসীদের নামে খোলা বৈদেশিক হিসাবের সুদের হার বাজারের ওপর ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। ফলে ব্যাংক-গ্রাহক সম্পর্কের ভিত্তিতে সুদের হার নির্ধারিত হচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানান, এত দিন শুধু অনুমোদিত চারটি বৈদেশিক মুদ্রায় প্রবাসীদের হিসাব খোলার সুযোগ ছিল। সেগুলো হলো ডলার, পাউন্ড, ইউরো ও ইয়েন। কিন্তু এখন অনুমোদিত মুদ্রার পাশাপাশি ব্যবহারযোগ্য সব বৈদেশিক মুদ্রায় হিসাব খুলতে পারছেন প্রবাসীরা।
এ ছাড়া যেসব বিদেশি বাংলাদেশে কর্মরত ও বসবাস করছেন, তাঁদের যে টাকার হিসাব রয়েছে, তাতেও আমানত বেড়েছে। এ ধরনের হিসাবে গত সেপ্টেম্বরে আমানত বেশ কমে যায়, তবে ডিসেম্বরে আবার তা বেড়ে যায়। আর গত মার্চ শেষে তা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় বেড়ে দ্বিগুণ হয়ে গেছে। খাতসংশ্লিষ্টরা বলছেন, আগস্টে বড় পরিবর্তনের পর দেশের পরিস্থিতি এখন আগের চেয়ে কিছুটা স্বাভাবিক হয়ে এসেছে। আবার অন্তর্বর্তী সরকারের নানা পদক্ষেপে বিদেশিরা সহায়তা দিচ্ছেন। ফলে দেশে বৈদেশিক মুদ্রার প্রবাহ বাড়ছে ও এই ধরনের হিসাবে জমা অর্থের পরিমাণ বাড়ছে।
এ বিষয়ে বেসরকারি মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ মাহবুবুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ব্যাংক হিসাবে ডলার জমা রাখলে এখন সুদ পাওয়া যায়, এ ছাড়া রয়েছে নানা সুবিধা। যাঁরা নিয়মিত বিদেশ ভ্রমণ করেন, তাঁরাও এখন নিজ নিজ হিসাবে ডলার জমা রাখছেন। এতে মুদ্রার মান কমলেও কোনো ক্ষতি হয় না। এ ছাড়া চীনের বিনিয়োগকারীরা দেশে আসছেন। এই কারণে বিদেশিদের হিসাবে জমা অর্থের পরিমাণ বাড়তে পারে। এটা অর্থনীতির জন্য ভালো খবর। কারণ, অন্য আমানতে যখন এত প্রবৃদ্ধি হচ্ছে না, তখন ডলার হিসাবে জমা অর্থের পরিমাণ বেড়ে দ্বিগুণ হয়েছে।