ব্যবসা বাড়াতে ময়মনসিংহের ভালুকার গ্লোরি গ্রুপের গ্লোরি টেক্সটাইল অ্যান্ড অ্যাপারেলস নামের তৈরি পোশাক কারখানা কিনে নিয়েছে তৈরি পোশাকশিল্পের অন্যতম শীর্ষস্থানীয় শিল্পগোষ্ঠী ডিবিএল গ্রুপ। পবিত্র ঈদুল ফিতরের ছুটির পর তাদের তত্ত্বাবধানে কারখানাটিতে নতুন করে উৎপাদন শুরু হবে।

জানা যায়, ভালুকায় ৩৬ বিঘা জমির ওপর গড়ে ওঠা এই প্রতিষ্ঠান বিভিন্ন কারণে রুগ্‌ণ হয়ে পড়ায় কারখানাটি বিক্রির উদ্যোগ নেয় কর্তৃপক্ষ। পরে গ্লোরি গ্রুপের সঙ্গে দর-কষাকষির পর কারখানাটি কেনার সিদ্ধান্ত নেয় ডিবিএল গ্রুপ। গত সোমবার গ্লোরি গ্রুপ আনুষ্ঠানিকভাবে ডিবিএল কর্তৃপক্ষের কাছে কারখানাটি হস্তান্তর করে।

বিষয়টি নিশ্চিত করে ডিবিএল গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান এম এ রহিম প্রথম আলোকে বলেন, ‘গ্লোরি টেক্সটাইল অ্যান্ড অ্যাপারেলস নিট কম্পোজিট কারখানা। এখানে ৩৬ লাইনের তৈরি পোশাক কারখানা, নিটিং, ডায়িং, প্রিন্টিং ও এমব্রয়ডারি ইউনিট রয়েছে। এখানে আমরা নিট পোশাকই তৈরি করে রপ্তানি করব।’ এম এ রহিম জানান, রুগ্‌ণ হলেও পোশাক কারখানাটি সচল ছিল। প্রায় ৪০০ কোটি টাকায় কারখানাটি কিনেছে ডিবিএল গ্রুপ।

তৈরি পোশাক ও বস্ত্র খাতে নিজেদের অবস্থান শক্ত করতেই কারখানাটি অধিগ্রহণ করেছি। অধিগ্রহণ করা কারখানা থেকে চলতি বছর আমরা ৫ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানির পরিকল্পনা করছিএম এ রহিম, ভাইস চেয়ারম্যান, ডিবিএল গ্রুপ

মূলত গ্লোরি টেক্সটাইল অ্যান্ড অ্যাপারেলসের ব্যাংকঋণ অধিগ্রহণের মাধ্যমে কারখানাটির মালিকানায় যুক্ত হয়েছে ডিবিএল গ্রুপ। গ্রুপটির শীর্ষ কর্মকর্তারা জানান, গ্লোরি গ্রুপের অধীনে থাকার সময় কারখানায় ১ হাজার ১০০ কর্মী কাজ করতেন। তাঁদের নিয়েই আগামী মাসে কারখানাটির উৎপাদন শুরু করা হবে। তবে নতুন শ্রমিকও নিয়োগ করা হবে। পুরোদমে উৎপাদন চালু হলে কারখানার বিভিন্ন ইউনিটে প্রায় ৫ হাজার শ্রমিকের কর্মসংস্থান হবে।

২০১৭ সালে গ্লোরি টেক্সটাইল অ্যান্ড অ্যাপারেলস তৈরি পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর সদস্যপদ পায়। প্রতিষ্ঠানটির ওয়েবসাইটের তথ্য অনুযায়ী, ৪ লাখ ৮০ হাজার বর্গফুট আয়তনের এই কারখানায় দিনে গড়ে ১ লাখ পিস পোশাক তৈরি করা যায়। এর বাইরে দিনে ২০ টন কাপড় নিটিং, ৪০ টন কাপড় ডায়িং এবং ৩৫ হাজার পিস প্রিন্টিংয়ের সক্ষমতা রয়েছে। গ্লোরি গ্রুপ এই কারখানা বিক্রি করলেও তাদের নির্মাণ, বিদ্যুতের খুঁটি, পাট ও সুতার ব্যবসা রয়েছে।

জানতে চাইলে গ্লোরি টেক্সটাইল অ্যান্ড অ্যাপারেলসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (সদ্য সাবেক) মো.

মনিরুজ্জামান শেখ প্রথম আলোকে বলেন, ‘২০২১ সালে আমরা রপ্তানি শুরু করেছিলাম। তবে বিভিন্ন কারণে আমরা কারখানাটি ঠিকঠাকমতো চালাতে পারছিলাম না। সে কারণেই বিক্রি করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’

তিন দশক আগে যুক্তরাজ্যে তিন হাজার পিস পোলো শার্ট রপ্তানির মধ্য দিয়ে ব্যবসায় হাতেখড়ি হয়েছিল দুলাল ব্রাদার্স লিমিটেড বা ডিবিএল গ্রুপের। আবদুল ওয়াহেদ, এম এ জব্বার, এম এ রহিম ও এম এ কাদের—এই চার ভাইয়ের গড়ে তোলা ডিবিএল গ্রুপ বর্তমানে বাংলাদেশের পঞ্চম শীর্ষ পোশাক রপ্তানিকারক। তারা গত ২০২৩-২৪ অর্থবছর ৪৬ কোটি ১৭ লাখ ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি করে। ইউরোপ-আমেরিকা থেকে শুরু করে এশিয়া, মধ্যপ্রাচ্য ও আফ্রিকার ৫৮টি দেশে পোশাক রপ্তানি করছে গ্রুপটি। তাদের হাত ধরে বাংলাদেশে শুরু হয়েছে নাইকি, অ্যাডিডাস ও পুমার মতো বিশ্ববিখ্যাত ব্র্যান্ডের সরাসরি পণ্য বিক্রি।

তৈরি পোশাক দিয়ে শুরু হলেও গত দুই যুগের ব্যবসায় টেক্সটাইল, ওয়াশিং, পোশাক খাতের প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম, প্যাকেজিং, সিরামিক টাইলস, তথ্যপ্রযুক্তি, টেলিযোগাযোগ, ড্রেজিং ও ওষুধের ব্যবসায় নাম লিখিয়েছে ডিবিএল। তাদের ওয়েবসাইটের তথ্যানুযায়ী, ডিবিএল গ্রুপের প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা বর্তমানে ২৪। এসব প্রতিষ্ঠানে কাজ করেন ৪৭ হাজার কর্মী। গ্রুপের বার্ষিক লেনদেন প্রায় ১০০ কোটি মার্কিন ডলার।

ডিবিএলের করপোরেট কার্যালয়ে গত সোমবার গ্লোরি টেক্সটাইল অ্যান্ড অ্যাপারেলসের মালিকানা হস্তান্তর অনুষ্ঠানে ডিবিএল গ্রুপের চেয়ারম্যান আবদুল ওয়াহেদ, ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম এ জব্বার, ভাইস চেয়ারম্যান এম এ রহিম, উপব্যবস্থাপনা পরিচালক এম এ কাদেরসহ জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

তৈরি পোশাক ও বস্ত্র খাতে নিজেদের অবস্থান শক্ত করতেই কারখানাটি অধিগ্রহণ করেছে বলে জানালেন ডিবিএল গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান এম এ রহিম। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘অধিগ্রহণ করা নতুন কারখানায় চলতি বছর আমরা ৫ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি করার পরিকল্পনা করছি। আগামী বছর সেটিকে ১০ কোটি ডলারে নিয়ে যেতে চাই।’ অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরে তৈরি পোশাকের ভালো ক্রয়াদেশ আছে। ফলে আমাদের প্রত্যাশা, ডিবিএলের তৈরি পোশাক রপ্তানি চলতি অর্থবছর ৬০ কোটি ডলারের মাইলফলক ছাড়াবে।’

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ড ব এল গ র প র র ব যবস

এছাড়াও পড়ুন:

সরকারি কর্মসম্পাদন পরিবীক্ষণ পদ্ধতি বাস্তবায়নে কমিটি 

সরকারি কর্মসম্পাদন পরিবীক্ষণ পদ্ধতি (গভর্নেন্স পারফরমেন্স মনিটরিং সিস্টেম- জিপিএমএস)’ বাস্তবায়নে অর্থ উপদেষ্টা  সালেহউদ্দিন আহমেদকে সভাপতি করে তিন সদস্যের উপদেষ্টা পরিষদ কমিটি’ গঠন করেছে সরকার। 

সম্প্রতি এই কমিটি গঠন করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে।

কমিটিতে বাকি দুই সদস্য হলেন, পরিকল্পনা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ ও খাদ্য উপদেষ্টা আলী ইমাম মজুমদার।

অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কার কার্যক্রমের অংশ হিসেবে সরকারি কাজের জবাবদিহিতা, দক্ষতা ও জনকল্যাণ নিশ্চিতে প্রশাসনের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কাজের মূল্যায়নের নতুন পদ্ধতি চালু হয়েছে। বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তির (এপিএ) পরিবর্তে নতুন সরকারি কর্মসম্পাদন পরিবীক্ষণ পদ্ধতি (জিপিএমএস) চালু করা হয়েছে। এই জিপিএমএস বাস্তবায়নে উপদেষ্টা পরিষদ কমিটি’ গঠন করা হয়েছে।

মন্ত্রিপরিষদ সচিব, প্রধান উপদেষ্টার মুখ্য সচিব বা প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের সচিব, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সচিব, অর্থ সচিব, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিব (সমন্বয় ও সংস্কার), বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের সচিব, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় বা বিভাগের সচিব কমিটিকে সহায়তা করবেন। তাছাড়া, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ এ কমিটিকে সাচিবিক সহায়তা দেবে।

এ কমিটি জিপিএমএস বাস্তবায়নের বিষয়ে সার্বিক দিক-নির্দেশনা দেবে। মন্ত্রণালয় বা বিভাগের জিপিএমএসে সেকশন ১-এর আওতায় প্রস্তুত করা পরিকল্পনা অনুমোদন দেবে এবং অর্থবছর শুরুর আগে মন্ত্রণালয় বা বিভাগের জিপিএমএস পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে চূড়ান্ত করবে এ কমিটি।

এছাড়া, প্রতি অর্থবছর শেষে মন্ত্রণালয় বা বিভাগের জিপিএমএসের সার্বিক মূল্যায়ন পর্যালোচনা করে সুপারিশ দেবে। জিপিএমএস বিষয়ে সরকারের দেওয়া অন্য যেকোনো দায়িত্ব পালন করবে বলে প্রজ্ঞাপনে জানানো হয়েছে।

ঢাকা/নঈমুদ্দীন/ইভা 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • টানা তিন মাস কমল দেশের পণ্য রপ্তানি
  • বেসরকারি ঋণ তলানিতে, তবে ঋণপত্র খোলায় গতি
  • টানা দুই মাস আড়াই বিলিয়ন ডলারের বেশি প্রবাসী আয় এসেছে
  • তিন মাসে গৃহকর আদায় কমেছে ৩০ কোটি টাকা
  • জুলাই–সেপ্টেম্বরে ঋণছাড়ে এগিয়ে বিশ্বব্যাংক ও রাশিয়া, কোনো অর্থ দেয়নি চীন
  • সরকারি কর্মসম্পাদন পরিবীক্ষণ পদ্ধতি বাস্তবায়নে কমিটি