ঈদে নৌপথে যাত্রা নির্বিঘ্ন করতে সরকারের কঠোর হুঁশিয়ারি
Published: 21st, March 2025 GMT
প্রিয়জনের সঙ্গে ঈদ করতে আগামী সপ্তাহ থেকে ঢাকা ছাড়তে শুরু করবে লঞ্চে যাতায়াতে অভ্যস্ত দক্ষিণ বঙ্গের মানুষ। রাজধানীর সদরঘাট টার্মিনাল থেকে ৪৫টি রুটে প্রতিদিন প্রায় দেড় শতাধিক লঞ্চ চলাচল করে। প্রতিবছর ঈদকে কেন্দ্র করে নামানো হয় ফিটনেস বিহীন লঞ্চ। চলতি পথে নদীর মাঝপথে নৌকা দিয়ে লঞ্চে যাত্রী ওঠানো হয়। এ কারণে ঘটে দুর্ঘটনা। ঈদে ঘরে ফেরার আনন্দ প্রিয়জন হারানোর বেদনায় পরিণত হয়।
এ বছর ঈদে যেন ফিটনেস বিহীন লঞ্চ চলতে না পারে এবং নদীর মাঝপথ থেকে যেন যাত্রী ওঠানো না হয় এ জন্য সরকার থেকে কঠোর বার্তা দেওয়া হয়েছে। সরকারের পক্ষ থেকে হুঁশিয়ারি দিয়ে বলা হয়েছে, এ কাজ করলে ওই লঞ্চ মালিক ও চালককে পেতে হবে শাস্তি।
ঈদ উপলক্ষ্যে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত এক প্রস্তুতিমূলক সভায় নিরাপদ নৌচলাচল এবং যাত্রীদের নিরাপত্তার স্বার্থে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। নৌপরিবহন এবং শ্রম ও কর্মসংস্থান উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.
নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, ঈদ উপলক্ষে নদীপথে ঘরমুখো মানুষের যাত্রা নিরাপদ ও নির্বিঘ্ন করতে বেশ কিছু কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। এগুলো হলো: নৌপথে যে কোনো দুর্ঘটনায় প্রয়োজনীয় সহযোগিতা ও উদ্ধার কার্যক্রম গ্রহণের জন্য উদ্ধারকারী জলযান প্রস্তুত রাখা। লঞ্চে অগ্নি দুর্ঘটনা রোধকল্পে ঢাকা নদী বন্দরসহ গুরুত্বপূর্ণ নদী বন্দর এলাকায় ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরকে প্রস্তুত রাখা এবং প্রয়োজনে সকল স্থানে ভাসমান নৌ ফায়ার স্টেশন স্থাপন করা।
এ ছাড়াও সদরঘাটসহ অন্যান্য নদী বন্দরের টার্মিনাল, ঘাট পয়েন্ট এবং লঞ্চে জুয়া খেলা বন্ধ করা, ফিটনেস বিহীন নৌযান ও ফেরি চলাচল সম্পূর্ণভাবে বন্ধ করা, লঞ্চের মাস্টার, চালক ও কর্মচারীসহ সকল ঘাটের ইজারদের নেম ট্যাগসহ নির্ধারিত পোষাক পরা, লঞ্চে অতিরিক্ত যাত্রী ও মালামাল বহন করা যাবে না, লঞ্চের ছাদে যাত্রী ওঠানো যাবে না। ছাদে যাত্রী ওঠানোর কাজে ব্যবহৃত সিঁড়ি অপসারণের ব্যবস্থা করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
যাত্রীর নিরাপত্তার স্বার্থে লঞ্চে ঈদের পরের দুই দিন পর্যন্ত ন্যূনতম চারজন আনসার দায়িত্ব পালন করবে। এ জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা লঞ্চ মালিকগণ গ্রহণ করবেন। ঈদের আগে ও পরে পাঁচ দিন সদরঘাটে ডিঙ্গী নৌকা চলাচল বন্ধ থাকবে। সরকার কর্তৃক নির্ধারিত ভাড়ার তালিকা সব নদী বন্দর, টার্মিনাল ও নৌযানে দৃশ্যমানভাবে টাঙ্গিয়ে প্রচারের জন্য কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করাসহ প্রয়োজনে মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় বন্ধ করার সিদ্ধান্তও সভায় নেওয়া হয়।
ঈদের আগে তিন দিন থেকে পরের তিন দিন নিত্য প্রয়োজনীয় ও দ্রুত পচনশীল পণ্যবাহী ট্রাক ব্যতীত সাধারণ ট্রাক ও কাভার্ড ভ্যান ফেরিতে পারাপার বন্ধ রাখা হবে। লঞ্চের স্বাভাবিক চলাচল নিশ্চিতকল্পে নৌপথে সকল মাছ ধরার জাল পাতা বন্ধ রাখা হবে।
আসন্ন ঈদে ফেরি ঘাটে যানজট মোকাবিলার জন্য ৭টি ফেরি ঘাট যথাক্রমে- পাটুরিয়া, আরিচা, চাঁদপুর, ভোলা, লাহারহাট, চিলমারী ও ধাওয়াপাড়া সেক্টরে সর্বমোট ৪৬টি ফেরি নিয়োজিত থাকবে। চাঁদপুর থেকে দক্ষিণাঞ্চলগামী যাত্রীদের নির্বিঘ্নে যাতায়াতের জন্য লঞ্চ মালিক সমিতির ৬টি লঞ্চ ও বিআইডব্লিউটিসির ২টি স্টীমার চাঁদপুর ঘাটে থাকবে বলেও সভায় জানানো হয়।
নৌপরিবহন এবং শ্রম ও কর্মসংস্থান উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ড. এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, ‘‘আসন্ন ঈদুল ফিতর উপলক্ষে দেশের বিভিন্ন নৌপথের যাত্রীদের ঈদযাত্রা নির্বিঘ্ন করতে সংশ্লিষ্ট সবাইকে আন্তরিকভাবে কাজ করতে হবে। সদরঘাট বা অন্যান্য ঘাটে যাদের ইজারা দেওয়া হয়েছে, তারা যাত্রীদের কোনোভাবে হয়রানি করতে পারবেন না। কোনো অতিরিক্ত চার্জ আদায় করতে পারবেন না। অভিযোগ পাওয়া গেলে তাৎক্ষণিক কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’’
জরিমানার পাশাপাশি ক্ষেত্র বিশেষে অভিযুক্ত লঞ্চের রুট পারমিট বাতিল করা হবে বলেও জানান তিনি।
তারা//
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ন পর বহন ব যবস থ সদরঘ ট র জন য গ রহণ সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
শ্রম আইনের সংশোধন কবে হবে, তা বলছে না শ্রম মন্ত্রণালয়
শ্রম আইন সংশোধনের অধ্যাদেশ কবে হবে, সে বিষয়ে আর সময়সীমার কথা বলছে না শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়। গত নভেম্বর মাসে এই মন্ত্রণালয় বলেছিল, ২০২৫ সালের মার্চ মাসের মধ্যে এ অধ্যাদেশ হবে। মার্চ শেষে এপ্রিলও শেষ হচ্ছে আজ বুধবার।
সচিবালয়ে আজ ‘মহান মে দিবস এবং জাতীয় পেশাগত স্বাস্থ্য ও সেফটি দিবস ২০২৫’ উপলক্ষে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় সংবাদ সম্মেলন আয়োজন করে। অনুষ্ঠানে উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, আইন সংশোধনীর ক্ষেত্রে সময়সীমা থাকার পক্ষে নন তিনি। শ্রমিক–মালিকদের স্বার্থ রক্ষাসহ শিগগিরই তা করা হবে। বিষয়টি এখন কোন প্রক্রিয়ায় আছে, তা বলতে রাজি হননি শ্রম উপদেষ্টা।
শ্রম উপদেষ্টা বলেন, এবারের দিবসের প্রতিপাদ্য ‘শ্রমিক-মালিক এক হয়ে, গড়ব এ দেশ নতুন করে’। তিনি আরও বলেন, ‘একসময় স্লোগান ছিল দুনিয়ার মজদুর, এক হও।’ এখন তা বদলে গেছে। এখন হবে ‘দুনিয়ার মালিক-শ্রমিক, এক হও’। এখন ভালো মালিকেরা শ্রমিকদের সন্তানের মতো মনে করেন।
প্রস্তাবিত অধ্যাদেশে ১০১টি ধারা ও উপধারা সংশোধন হবে। সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় ১০ থেকে ২০ মার্চ অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) গভর্নিং বডির বৈঠকে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে এ তথ্য তুলে ধরা হয়।
আইএলওর বৈঠকে যোগ দিতে শ্রম ও কর্মসংস্থান উপদেষ্টা এম সাখাওয়াত হোসেনের নেতৃত্বে যে দলটি জেনেভা সফর করে, সেখানে শ্রমসচিব এ এইচ এম সফিকুজ্জামান, প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ দূত লুৎফে সিদ্দিকী, শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. হুমায়ুন কবীর, যুগ্ম সচিব মোহাম্মদ হোসেন সরকার ও শ্রম উপদেষ্টার একান্ত সচিব মো. জাহিদুল ইসলাম ছিলেন।
এর আগে গত বছরের ১০ নভেম্বর তৎকালীন শ্রম উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া ও শ্রমসচিব এ এইচ এম সফিকুজ্জামান আইএলওর গভর্নিং বডির বৈঠক থেকে দেশে ফিরে সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন, মার্চের মধ্যে শ্রম আইন সংশোধন হবে। উপদেষ্টা তখন এ–ও বলেছিলেন, আগের সরকারের আইনমন্ত্রীর (আনিসুল হক) নেতৃত্বাধীন দলকে আইএলও পর্ষদে অপদস্থ করা হয়েছিল। অথচ এবারের চিত্র ছিল ভিন্ন। বাংলাদেশের পদক্ষেপগুলো নিয়ে বরং প্রশংসা করা হয়েছে। কয়েকটি দেশ বাংলাদেশের বিরুদ্ধে হওয়া মামলাগুলো তুলে নেওয়ার কথাও বলেছিল।
জানা গেছে, শ্রম অধিকার বাস্তবায়নে ঘাটতির অভিযোগ এনে জাপানসহ ছয়টি দেশের পক্ষ থেকে আইএলওতে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে মামলা রয়েছে। মামলাগুলো চলমান।
আনুষ্ঠানিক ও অনানুষ্ঠানিক খাত মিলিয়ে দেশে ৭ কোটি ৬৫ লাখ শ্রমিক রয়েছে। এদিকে ত্রিপক্ষীয় পরামর্শ পরিষদকে (টিসিসি) শ্রমিকপক্ষ জানিয়েছে, আইন সংশোধনের সময় সব শ্রমিকের কথা মাথায় না রেখে প্রধানত পোশাক খাতের শ্রমিকদের কথা বিবেচনা করা হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, মে দিবস আর জাতীয় পেশাগত স্বাস্থ্য ও সেফটি দিবস উপলক্ষে আগামীকাল বৃহস্পতিবার সকালে রাজধানীতে শোভাযাত্রাসহ বিভিন্ন কর্মসূচি আয়োজন করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজ–স্কুল পর্যায়ে রচনা ও প্রবন্ধ লেখার ওপরে বিজয়ীদের পুরস্কার দেওয়া হবে।
এ ছাড়া শ্রম অধিকার বিষয়ে প্রকাশিত বা প্রচারিত মানসম্মত সংবাদ বা স্থিরচিত্র যাচাই করে সাংবাদিক ও চিত্রগ্রাহকদের দেওয়া হবে পুরস্কার।