প্রিয়জনের সঙ্গে ঈদ করতে আগামী সপ্তাহ থেকে ঢাকা ছাড়তে শুরু করবে লঞ্চে যাতায়াতে অভ্যস্ত দক্ষিণ বঙ্গের মানুষ। রাজধানীর সদরঘাট টার্মিনাল থেকে ৪৫টি রুটে প্রতিদিন প্রায় দেড় শতাধিক লঞ্চ চলাচল করে। প্রতিবছর ঈদকে কেন্দ্র করে নামানো হয় ফিটনেস বিহীন লঞ্চ। চলতি পথে নদীর মাঝপথে নৌকা দিয়ে লঞ্চে যাত্রী ওঠানো হয়। এ কারণে ঘটে দুর্ঘটনা। ঈদে ঘরে ফেরার আনন্দ প্রিয়জন হারানোর বেদনায় পরিণত হয়। 

এ বছর ঈদে যেন ফিটনেস বিহীন লঞ্চ চলতে না পারে এবং  নদীর মাঝপথ থেকে যেন যাত্রী ওঠানো না হয় এ জন্য সরকার থেকে কঠোর বার্তা দেওয়া হয়েছে। সরকারের পক্ষ থেকে হুঁশিয়ারি দিয়ে বলা হয়েছে, এ কাজ করলে ওই লঞ্চ মালিক ও চালককে পেতে হবে শাস্তি। 

ঈদ উপলক্ষ্যে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত এক প্রস্তুতিমূলক সভায়  নিরাপদ নৌচলাচল এবং যাত্রীদের নিরাপত্তার স্বার্থে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। নৌপরিবহন এবং শ্রম ও কর্মসংস্থান উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.

) ড. এম  সাখাওয়াত হোসেনে সভায় সভাপতিত্ব করেন। সভায় সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভিন্ন দপ্তর-সংস্থার প্রধান ও প্রতিনিধিরা অংশ নেন। 

নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, ঈদ উপলক্ষে নদীপথে ঘরমুখো মানুষের যাত্রা নিরাপদ ও নির্বিঘ্ন করতে বেশ কিছু কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। এগুলো হলো: নৌপথে যে কোনো দুর্ঘটনায় প্রয়োজনীয় সহযোগিতা ও উদ্ধার কার্যক্রম গ্রহণের জন্য উদ্ধারকারী জলযান প্রস্তুত রাখা। লঞ্চে অগ্নি দুর্ঘটনা রোধকল্পে ঢাকা নদী বন্দরসহ গুরুত্বপূর্ণ নদী বন্দর এলাকায় ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরকে প্রস্তুত রাখা এবং প্রয়োজনে সকল স্থানে ভাসমান নৌ ফায়ার স্টেশন স্থাপন করা। 

এ ছাড়াও সদরঘাটসহ অন্যান্য নদী বন্দরের টার্মিনাল, ঘাট পয়েন্ট এবং লঞ্চে জুয়া খেলা বন্ধ করা, ফিটনেস বিহীন নৌযান ও ফেরি চলাচল সম্পূর্ণভাবে বন্ধ করা, লঞ্চের মাস্টার, চালক ও কর্মচারীসহ সকল ঘাটের ইজারদের নেম ট্যাগসহ নির্ধারিত পোষাক পরা, লঞ্চে অতিরিক্ত যাত্রী ও মালামাল বহন করা যাবে না, লঞ্চের ছাদে যাত্রী ওঠানো যাবে না। ছাদে যাত্রী ওঠানোর কাজে ব্যবহৃত সিঁড়ি অপসারণের ব্যবস্থা করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। 

যাত্রীর নিরাপত্তার স্বার্থে লঞ্চে ঈদের পরের দুই দিন পর্যন্ত ন্যূনতম চারজন আনসার দায়িত্ব পালন করবে। এ জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা লঞ্চ মালিকগণ গ্রহণ করবেন। ঈদের আগে ও পরে পাঁচ দিন সদরঘাটে ডিঙ্গী নৌকা চলাচল বন্ধ থাকবে। সরকার কর্তৃক নির্ধারিত ভাড়ার তালিকা সব নদী বন্দর, টার্মিনাল ও নৌযানে দৃশ্যমানভাবে টাঙ্গিয়ে প্রচারের জন্য কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করাসহ প্রয়োজনে মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় বন্ধ করার সিদ্ধান্তও সভায় নেওয়া হয়। 

ঈদের আগে তিন দিন থেকে পরের তিন দিন নিত্য প্রয়োজনীয় ও দ্রুত পচনশীল পণ্যবাহী ট্রাক ব্যতীত সাধারণ ট্রাক ও কাভার্ড ভ্যান ফেরিতে পারাপার বন্ধ রাখা হবে। লঞ্চের স্বাভাবিক চলাচল নিশ্চিতকল্পে নৌপথে সকল মাছ ধরার জাল পাতা বন্ধ রাখা হবে। 

আসন্ন ঈদে ফেরি ঘাটে যানজট মোকাবিলার জন্য ৭টি ফেরি ঘাট যথাক্রমে- পাটুরিয়া, আরিচা, চাঁদপুর, ভোলা, লাহারহাট, চিলমারী ও ধাওয়াপাড়া সেক্টরে সর্বমোট ৪৬টি ফেরি নিয়োজিত থাকবে। চাঁদপুর থেকে দক্ষিণাঞ্চলগামী যাত্রীদের নির্বিঘ্নে যাতায়াতের জন্য লঞ্চ মালিক সমিতির ৬টি লঞ্চ ও বিআইডব্লিউটিসির ২টি স্টীমার চাঁদপুর ঘাটে থাকবে বলেও সভায় জানানো হয়। 

নৌপরিবহন এবং শ্রম ও কর্মসংস্থান উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ড. এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, ‘‘আসন্ন ঈদুল ফিতর উপলক্ষে দেশের বিভিন্ন নৌপথের যাত্রীদের ঈদযাত্রা নির্বিঘ্ন করতে সংশ্লিষ্ট সবাইকে আন্তরিকভাবে কাজ করতে হবে। সদরঘাট বা অন্যান্য ঘাটে যাদের ইজারা দেওয়া হয়েছে, তারা যাত্রীদের কোনোভাবে হয়রানি করতে পারবেন না। কোনো অতিরিক্ত চার্জ আদায় করতে পারবেন না।  অভিযোগ পাওয়া গেলে তাৎক্ষণিক কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’’

জরিমানার পাশাপাশি ক্ষেত্র বিশেষে অভিযুক্ত লঞ্চের রুট পারমিট বাতিল করা হবে বলেও জানান তিনি। 

তারা//

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ন পর বহন ব যবস থ সদরঘ ট র জন য গ রহণ সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

দুর্গাপূজা উপলক্ষে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে হিন্দু নেতাদের সাক্ষাৎ

আসন্ন দুর্গাপূজা উপলক্ষে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বিভিন্ন পূজা উদ্‌যাপন পরিষদের নেতারা সাক্ষাৎ করেছেন। তাঁরা এ সময় প্রধান উপদেষ্টাকে পূজামণ্ডপ পরিদর্শনের আমন্ত্রণ জানান।

আজ সোমবার বিকেলে হিন্দু নেতারা রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় যান। এ সময় তাঁদের কাছে দুর্গাপূজার প্রস্তুতি ও সার্বিক অবস্থা সম্পর্কে জানতে চান প্রধান উপদেষ্টা। তিনি তাঁদের বলেন, ‘আপনাদের সঙ্গে সব সময় দেখা করার ইচ্ছা থাকলেও সুযোগ হয় না। পূজা উপলক্ষে বছরে একবার সামনাসামনি দেখা হয়, কথা বলার সুযোগ হয়।’

হিন্দুধর্মীয় নেতারা জানান, গত বছরের তুলনায় এ বছর এক হাজারের বেশি পূজামণ্ডপ বেড়েছে। সারা দেশে পূজামণ্ডপ তৈরির কাজ পুরোদমে এগিয়ে চলছে।

নেতারা বলেন, ধর্ম উপদেষ্টা নিয়মিতভাবে তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখেন, মন্দির পরিদর্শন করেন। দুর্গাপূজা উৎসবমুখর করতে প্রশাসনের পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ সহযোগিতা করা হচ্ছে। গতবারের মতো এবারও নির্বিঘ্নে পূজা উদ্‌যাপন হবে বলে তাঁরা আশা করছি।

এ সময় স্থায়ী দুর্গামন্দিরের জন্য রেল মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে জায়গা বরাদ্দ দেওয়ায় প্রধান উপদেষ্টাকে বিশেষভাবে ধন্যবাদ জানান মহানগর পূজা কমিটির সভাপতি জয়ন্ত কুমার দেব। তিনি বলেন, ‘এটি একটি ঐতিহাসিক ঘটনা। এ জন্য আপনাকে বিশেষ ধন্যবাদ। আপনি দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে নিয়মিত আমাদের খোঁজখবর রেখেছেন। গত বছরের মতো এ বছরও পূজায় আমরা দুই দিন ছুটি পেয়েছি। এ জন্যও আপনাকে বিশেষ ধন্যবাদ। গত বছর ৮ আগস্ট দেশে ফেরার পরপরই আপনি ঢাকেশ্বরী মন্দির পরিদর্শন করে বলেছিলেন, আমরা সবাই এক পরিবার। আপনার বক্তব্য আমাদের মনে গভীরভাবে অনুপ্রেরণা জুগিয়েছে।’

বাংলাদেশ পূজা উদ্‌যাপন পরিষদের সভাপতি বাসুদেব ধর বলেন, ‘গত বছর দুর্গাপূজায় ঢাকেশ্বরী মন্দির পরিদর্শনে গিয়ে আপনি বলেছিলেন, নিরাপত্তা বাহিনী দিয়ে কড়া পাহারা বসিয়ে পূজা হবে এমন দেশ আমরা চাই না। আমরা প্রথমবারের মতো কোনো সরকারপ্রধানের কাছে এমন বক্তব্য শুনেছি। আমরাও আপনার বক্তব্যের সঙ্গে একমত, আমরাও চাই এ আয়োজনে সবাই সহযোগিতা করুক, দেশের সবার মধ্যে সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক থাকুক।’

বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান কল্যাণ ফ্রন্টের মহাসচিব এস এন তরুণ দে বলেন, ‘আপনি দায়িত্বে থাকাকালীন দেশে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির নজির স্থাপন করেছেন। আমরা লক্ষ করেছি, এক বছর ধরে, বিশেষ করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচুর মিথ্যা কথা, ফেক নিউজ ছড়ানো হচ্ছে। আপনার নেতৃত্বে ধর্ম–বর্ণ–জাতিনির্বিশেষে বাংলাদেশের সব মানুষের কল্যাণ হবে, আমরা সেটাই কামনা করি।’

বৈঠকে ধর্ম উপদেষ্টা আ ফ ম খালিদ হোসেন বলেন, ‘ধর্ম মন্ত্রণালয় সব ধর্মের প্রতিনিধিত্ব করে। কল্যাণ ট্রাস্টের মাধ্যমে আমরা কল্যাণকর কর্মসূচিগুলো নিশ্চিত করি।’ এ সময় তিনি বিভিন্ন ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে সহযোগিতার কথা তুলে ধরেন।

প্রধান উপদেষ্টা সবাইকে আন্তরিক ধন্যবাদ ও পূজার অগ্রিম শুভেচ্ছা জানান এবং দুর্গাপূজা ঘিরে যাতে কোনো ধরনের ষড়যন্ত্রের সুযোগ তৈরি না হয়, সে জন্য সবাইকে সজাগ থাকার আহ্বান জানান।

বৈঠকে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা উপদেষ্টা বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দার, হিন্দুধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্টের ভাইস চেয়ারম্যান তপন চন্দ্র মজুমদার ও সচিব দেবেন্দ্র নাথ উঁরাও, রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশনের অধ্যক্ষ স্বামী পূর্ণানন্দ (একক), বাংলাদেশ জাতীয় হিন্দু সমাজসংস্কার সমিতির সভাপতি অধ্যাপক হীরেন্দ্রনাথ বিশ্বাস, শ্রীশ্রী গীতা হরি সংঘ দেব মন্দিরের সভাপতি বিমান বিহারী তালুকদার, বাংলাদেশ পূজা উদ্‌যাপন ফ্রন্টের আহ্বায়ক অপর্ণা রায় দাস, শ্রীশ্রী সিদ্ধেশ্বরী কালীমন্দিরের সাধারণ সম্পাদক নারায়ণ চন্দ্র দত্ত ও সিদ্ধেশ্বরী সর্বজনীন পূজা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক প্রণীতা সরকার উপস্থিত ছিলেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • রাজকীয় ভোজে ট্রাম্প–মেলানিয়াকে কী কী খাওয়ালেন রাজা চার্লস
  • দুর্গাপূজায় নিরাপত্তায় সতর্ক অবস্থায় থাকবে পুলিশ: আইজিপি
  • শারদীয় দুর্গোৎসব উপলক্ষে সিঙ্গাইরের ৭৭ মণ্ডপে অনুদান বিতরণ
  • শারদীয় দুর্গোৎসব উদযাপন উপলক্ষে বন্দরে প্রস্তুুতিমূলক সভা অনুষ্ঠিত 
  • মোদির জন্মদিনে ট্রাম্পের ফোন, মেসির উপহার
  • বেনাপোল দিয়ে ইলিশের প্রথম চালান গেল ভারতে
  • সদর উপজেলায় শারদীয় দুর্গাপূজা উদযাপন উপলক্ষে প্রস্তুতিমূলক সভা
  • ভারতে ইলিশ রপ্তানির অনুমতি পেল ৩৭টি প্রতিষ্ঠান
  • ‘ওজোনস্তর ক্ষয়ে স্বাস্থ্য, কৃষি ও প্রাণিজগৎ ঝুঁকির মুখে’
  • দুর্গাপূজা উপলক্ষে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে হিন্দু নেতাদের সাক্ষাৎ