গৃহশ্রমিকেরা সর্বক্ষেত্রে বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন: সৈয়দ সুলতান উদ্দিন
Published: 21st, March 2025 GMT
বাংলাদেশের ৯০ শতাংশ মানুষ প্রকৃত আইনের সুরক্ষায় নেই। বিশেষত গৃহশ্রমিকেরা ঘর থেকে সচিবালয়—সর্বক্ষেত্রে বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন বলে মন্তব্য করেছেন শ্রম সংস্কার কমিশনের কমিশনপ্রধান সৈয়দ সুলতান উদ্দিন আহমেদ।
আজ শুক্রবার রাজধানীর বিএমএ হলরুমে বাংলাদেশ হরিজন ঐক্য পরিষদ কর্তৃক আয়োজিত গণসমাবেশে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
সৈয়দ সুলতান উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘শ্রমিকদের বৈষম্য নিরসনে সংস্কার কমিশন তাৎক্ষণিক কোনো সমাধান দিতে না পারলেও আমরা আপনাদের কথাগুলো কমিশনের কাছে তুলে ধরব।’
হরিজনদের নিজেদের বক্তব্য বলিষ্ঠ কণ্ঠে উপস্থাপনের আহ্বান জানিয়ে সুলতান উদ্দিন আহমেদ বলেন, একই বয়সের দুটি মেয়ের একজন স্কুলে যায়, অপরজন পানি আনতে যায়। এর চেয়ে বড় বৈষম্য আর কিছু হতে পারে না। গৃহশ্রমিককে তুই বলে সম্বোধন করা হয়। আর একটু বয়স বেশি হলে তার প্রকৃত নামটি হারিয়ে বুয়া হয়ে যায়।
শ্রমিকদের প্রতি রাষ্ট্র কর্তৃক নেতিবাচক মনোভাব জিইয়ে রাখার অভিযোগ তুলে বাংলাদেশ হরিজন ঐক্য পরিষদের সভাপতি শ্রী কৃষ্ণালাল বলেন, রাষ্ট্রের মৌলিক সেবা থেকে হরিজনরা এখনো বঞ্চিত, এমন মনোভাব বেদনাদায়ক।
ব্রিটিশ ভারত থেকে চব্বিশের গণ–অভ্যুত্থান—সর্বক্ষেত্রে বাংলাদেশের হরিজন সম্প্রদায়ের ভূমিকা উল্লেখ করে শ্রী কৃষ্ণালাল বলেন, ‘দ্বিতীয় স্বাধীনতা’র পর নাজিরাবাজারে আমাদের ওপর বুলডোজার চালানো হয়েছে। সারা দেশে হরিজনদের উচ্ছেদের ষড়যন্ত্র চলছে। বিভিন্ন রেলস্টেশনের পাশে যারা বসবাস করে, তাদের উচ্ছেদের চেষ্টা করছে। কিন্তু আমরা কোথায় যাব? আমরা এ দেশের নাগরিক। আমাদের প্রতি রাষ্ট্র সব নাগরিক অধিকার নিশ্চিতের অঙ্গীকার করলেও সেটির বাস্তবায়ন হয়নি।’
গণসমাবেশে হরিজনদের বসবাসের সঠিক স্বীকৃতি, স্বাস্থ্য সুরক্ষা, জাত হরিজনদের কোটা এবং নারী শ্রমিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিতসহ ১২ দফা দাবি তুলে ধরা হয়।
সমাবেশে নারী ও শিশু অধিকার নিয়ে কাজ করা বাদাবন সংঘের নির্বাহী পরিচালক লিপি রহমান সংঘের পক্ষ থেকে হরিজনদের দাবির সঙ্গে একাত্মতা পোষণ করেন।
বাংলাদেশ হরিজন যুব ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক পঙ্কজ বাসফোরের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন হরিজন ঐক্য পরিষদের উপদেষ্টা বাইজু লাল। এতে বিভিন্ন জেলা ও থানা পর্যায়ের নেতারা অংশ নেন।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
নির্বাচনের আগেই জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি দিতে হবে
জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগেই দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমির চরমোনাই পীর সৈয়দ মুহাম্মাদ রেজাউল করীম। তিনি বলেন, পিলখানা হত্যাকাণ্ড ও শাপলা চত্বরের গণহত্যাসহ উল্লেখযোগ্য বিষয়গুলোকে জুলাই সনদে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।
আজ সোমবার বিকেলে ঢাকার জুরাইন রেলগেট–সংলগ্ন বিক্রমপুর প্লাজা চত্বরে এক গণসমাবেশে ইসলামী আন্দোলনের আমির এ কথা বলেন।
পিআর (সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব) পদ্ধতিতে জাতীয় নির্বাচন আয়োজন, প্রয়োজনীয় রাষ্ট্রসংস্কার ও জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি প্রদান এবং অপরাধী ও খুনিদের দৃশ্যমান বিচারের দাবিতে এই গণসমাবেশের আয়োজন করে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ কদমতলী-শ্যামপুর থানা।
সমাবেশে ইসলামী আন্দোলনের আমির রেজাউল করীম বলেন, পিআর পদ্ধতিতে জাতীয় নির্বাচন দিতে হবে। বাংলাদেশের মানুষ এখন পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন চায়।
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার উদ্দেশে ইসলামী আন্দোলনের আমির বলেন, ‘নতুনভাবে আবার এই নির্বাচনের মাধ্যমে দেশের মানুষকে আপনি কী মেসেজ দিতে চান? আবার সেই স্বৈরাচার আসবে? আবার সেই চাঁদাবাজ আসবে? আবার সেই মায়ের কোলগুলো খালি হবে? দেশের টাকা বিদেশে পাচার হবে? আয়নাঘর তৈরি হবে? পিলখানা হত্যা হবে?’ তিনি বলেন, ‘এটা বাংলাদেশের মানুষ আমরা আর দেখতে চাই না। পরিবর্তন করতে হবে, সংস্কার করতে হবে।’
বিভিন্ন মৌলিক সংস্কারে বিএনপির নোট অব ডিসেন্ট দেওয়ার (দ্বিমত পোষণ করার) বিষয়ে ইসলামী আন্দোলনের আমির বলেন, সরকার গঠনের পরে দুই বছরের ভেতরে সংস্কার করার কথা বলা হচ্ছে। অন্ধকে হাইকোর্ট দেখিয়ে লাভ নেই। হাইকোর্ট এখন সবাই চেনে।
একটি রাজনৈতিক দল জুলাই অভ্যুত্থানের চেতনা এখনো বুঝতে পারেনি উল্লেখ করে সৈয়দ মুহাম্মাদ রেজাউল করীম বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে দলটির কলঙ্ক রচিত হয়েছে। সামনে নির্বাচনেও বাংলাদেশের মানুষ একই কলঙ্ক রচনা করবে। বাংলাদেশের ভেতরে তারা মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারবে না।
সমাবেশে জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার সব রাজনৈতিক দলের মধ্যে ঐকমত্য সৃষ্টি করে দলগুলোকে নির্বাচনমুখী করার পরিবেশ সৃষ্টি করতে পারছে না।
জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল বলেন, ‘সবাই বলেছে, জুলাই সনদকে আইনি ভিত্তি দিতে হবে। একটি বড় দল বলেছে সংবিধানের সংশোধন, আইনি ভিত্তি দেওয়ার এই কাজগুলো এখন হবে না। নির্বাচনের পরে যে সংসদ আসবে, তারাই এসে নাকি সেই কাজগুলো করবে। তাহলে কেন জুলাই সনদের জন্য দুই মাস সময় নষ্ট করা হলো? এর পেছনে নিশ্চয়ই অসৎ উদ্দেশ্য আছে।’
মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, পিআর পদ্ধতি ছাড়া বাংলাদেশে নিরপেক্ষ নির্বাচন হবে না। উচ্চকক্ষ ও নিম্নকক্ষ দুটিতেই পিআর মানতে হবে, তা না হলে দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত রাজপথের আন্দোলন অব্যাহত থাকবে। দেশবাসীকে আন্দোলনের প্রস্তুতি নেওয়ার আহ্বান জানান তিনি।
গণসমাবেশে সভাপতিত্ব করেন ইসলামী আন্দোলনের প্রেসিডিয়াম সদস্য মাওলানা সৈয়দ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল মাদানী। সঞ্চালনা করেন দলটির সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা কে এম শরীয়াতুল্লাহ ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণের যুগ্ম সম্পাদক মাওলানা আবদুর রাজ্জাক। সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন জামায়াতে ইসলামীর কর্মপরিষদ সদস্য মাওলানা খলিলুর রহমান মাদানী, ইসলামী আন্দোলনের প্রেসিডিয়াম সদস্য মাওলানা আশরাফ আলী আকন প্রমুখ।