বাংলাদেশের ৯০ শতাংশ মানুষ প্রকৃত আইনের সুরক্ষায় নেই। বিশেষত গৃহশ্রমিকেরা ঘর থেকে সচিবালয়—সর্বক্ষেত্রে বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন বলে মন্তব্য করেছেন শ্রম সংস্কার কমিশনের কমিশনপ্রধান সৈয়দ সুলতান উদ্দিন আহমেদ।

আজ শুক্রবার রাজধানীর বিএমএ হলরুমে বাংলাদেশ হরিজন ঐক্য পরিষদ কর্তৃক আয়োজিত গণসমাবেশে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

সৈয়দ সুলতান উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘শ্রমিকদের বৈষম্য নিরসনে সংস্কার কমিশন তাৎক্ষণিক কোনো সমাধান দিতে না পারলেও আমরা আপনাদের কথাগুলো কমিশনের কাছে তুলে ধরব।’

হরিজনদের নিজেদের বক্তব্য বলিষ্ঠ কণ্ঠে উপস্থাপনের আহ্বান জানিয়ে সুলতান উদ্দিন আহমেদ বলেন, একই বয়সের দুটি মেয়ের একজন স্কুলে যায়, অপরজন পানি আনতে যায়। এর চেয়ে বড় বৈষম্য আর কিছু হতে পারে না। গৃহশ্রমিককে তুই বলে সম্বোধন করা হয়। আর একটু বয়স বেশি হলে তার প্রকৃত নামটি হারিয়ে বুয়া হয়ে যায়।

শ্রমিকদের প্রতি রাষ্ট্র কর্তৃক নেতিবাচক মনোভাব জিইয়ে রাখার অভিযোগ তুলে বাংলাদেশ হরিজন ঐক্য পরিষদের সভাপতি শ্রী কৃষ্ণালাল বলেন, রাষ্ট্রের মৌলিক সেবা থেকে হরিজনরা এখনো বঞ্চিত, এমন মনোভাব বেদনাদায়ক।

ব্রিটিশ ভারত থেকে চব্বিশের গণ–অভ্যুত্থান—সর্বক্ষেত্রে বাংলাদেশের হরিজন সম্প্রদায়ের ভূমিকা উল্লেখ করে শ্রী কৃষ্ণালাল বলেন, ‘দ্বিতীয় স্বাধীনতা’র পর নাজিরাবাজারে আমাদের ওপর বুলডোজার চালানো হয়েছে। সারা দেশে হরিজনদের উচ্ছেদের ষড়যন্ত্র চলছে। বিভিন্ন রেলস্টেশনের পাশে যারা বসবাস করে, তাদের উচ্ছেদের চেষ্টা করছে। কিন্তু আমরা কোথায় যাব? আমরা এ দেশের নাগরিক। আমাদের প্রতি রাষ্ট্র সব নাগরিক অধিকার নিশ্চিতের অঙ্গীকার করলেও সেটির বাস্তবায়ন হয়নি।’

গণসমাবেশে হরিজনদের বসবাসের সঠিক স্বীকৃতি, স্বাস্থ্য সুরক্ষা, জাত হরিজনদের কোটা এবং নারী শ্রমিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিতসহ ১২ দফা দাবি তুলে ধরা হয়।

সমাবেশে নারী ও শিশু অধিকার নিয়ে কাজ করা বাদাবন সংঘের নির্বাহী পরিচালক লিপি রহমান সংঘের পক্ষ থেকে হরিজনদের দাবির সঙ্গে একাত্মতা পোষণ করেন।

বাংলাদেশ হরিজন যুব ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক পঙ্কজ বাসফোরের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন হরিজন ঐক্য পরিষদের উপদেষ্টা বাইজু লাল। এতে বিভিন্ন জেলা ও থানা পর্যায়ের নেতারা অংশ নেন।

.

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

কাজের আনন্দই জীবনের সার্থকতা

জন্মদিনের অনুষ্ঠান নয়, তবে অনানুষ্ঠানিক আয়োজনটি ছিল সে উপলক্ষেই। আলোকিত মানুষ গড়ার কারিগর, বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা শিক্ষাবিদ ও সুবক্তা অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদের জন্মদিন ছিল গত ২৫ জুলাই। তাঁর অগণিত অনুরাগীরা চেয়েছিলেন তাঁকে নিয়ে জন্মদিনের অনুষ্ঠানে মিলিত হতে। উত্তরার মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে যুদ্ধবিমান বিধ্বস্তের যে হৃদয়বিদারক ঘটনা ঘটে গেছে, তারপর আর জন্মদিনের অনুষ্ঠান করতে কিছুতেই সম্মত হননি তিনি।

শুক্রবার সন্ধ্যায় বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের ষষ্ঠতলায় কেন্দ্রের প্রাক্তনী ও তাঁর কিছু ঘনিষ্ঠজন আলাপচারিতার এক ঘরোয়া আয়োজন করেছিলেন আবদুল্লাহ আবু সায়ীদকে নিয়ে। সেখানে তিনি বললেন, কাজের মধ্য দিয়ে জীবনে যে আনন্দ পেয়েছেন, সেটিই জীবনের সার্থকতা। এই আনন্দই তাঁকে অনুপ্রাণিত করে, শক্তি জোগায়।

এ আয়োজনে অংশগ্রহণকারীরা অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদকে বিভিন্ন প্রশ্ন করেছেন। তিনি তাঁর চিরপরিচিত সরস অথচ বুদ্ধিদীপ্ত গভীর তাৎপর্যময় কথায় উত্তর দিয়েছেন। কবিতা, সাহিত্য, শিল্প থেকে শিক্ষা, ইতিহাস, দর্শন, ধর্ম, রাজনীতি, অর্থনীতি, সংগঠন, প্রেম–ভালোবাসা—সবকিছু উঠে আসে প্রশ্নোত্তরভিত্তিক কথোপকথনে। রবীন্দ্রনাথ, নজরুল থেকে শুরু করে বিশ্বসাহিত্যের বহু কালজয়ী লেখকের রচনা থেকে প্রচুর উদ্ধৃতি দিয়েছেন তিনি। এক অন্তরঙ্গ প্রাণবন্ত আবহ বিরাজমান ছিল সন্ধ্যা থেকে অনেকটা রাত অবধি এই আয়োজনে।

আবৃত্তিশিল্পী জয়ন্ত চট্টোপাধ্যায় শুরুতেই আবদুল্লাহ আবু সায়ীদের একটি কবিতা আবৃত্তি করে জানতে চান, তিনি কবিতার চর্চা করেননি কেন? জবাবে তিনি বলেন, কবি শামসুর রাহমান একবার তাঁকে বলেছিলেন, তাঁর মধ্যে কবিত্বের ঘাটতি আছে। তাঁর নিজেরও সে রকম মনে হয়েছে। তারপর সাহিত্য পত্রিকা কণ্ঠস্বর প্রকাশ ও অনেক রকম কাজ করতে গিয়ে আর কবিতা লেখা হয়ে ওঠেনি।

অর্থনীতিবিদ দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য প্রশ্ন করেন, এখন একটা কঠিন সময় যাচ্ছে। তরুণ প্রজন্মকে কীভাবে দেখেন, কী আশা করেন তাদের কাছে?

আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ বলেন, ‘তরুণেরা কী হবে, তা তরুণদের ওপরে নির্ভর করে না। সেটা নির্ভর করে আমরা তাদের কী বানাতে চাই, তার ওপর। দেখতে হবে তরুণদের গড়ার মতো আমাদের ক্ষমতা কতটা আছে। অর্থাৎ শিক্ষক কেমন হবে, তার ওপরে নির্ভর করে তাঁর ছাত্র কেমন হবে। সক্রেটিস শিক্ষক ছিলেন বলে ছাত্র প্লেটো হয়েছেন। প্লেটোর শিক্ষা পেয়ে ছাত্র অ্যারিস্টটল হতে পেরেছেন। বড়দের যদি বড়ত্ব না থাকে, তবে ছোটরা বড় হতে পারে না। দুর্ভাগ্য যে আমরা বড়রা তাদের সামনে আদর্শ দাঁড় করাতে পারিনি। ফলে এখন বড়দেরই ছোটদের পেছনে দাঁড়াতে হচ্ছে।’

ডেইলি স্টার সম্পাদক মাহ্‌ফুজ আনাম জানতে চান, তিনি এত বিচিত্র ধরনের এত বিপুল কাজ করেছেন। এই প্রাণশক্তি পান কেমন করে?

উত্তর দিতে গিয়ে আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ বলেন, ‘শক্তি আসে আনন্দ থেকে। কাজ করতে পারাটাই আনন্দের। আর সব সময় আশাবাদী থাকি। আশা কখনো শেষ হয় না। আশা শেষ মানে আমি শেষ।’

আলাপচারিতায় আরও অংশ নেন দুদক চেয়ারম্যান এম এ মোমেন, ব্র্যাকের নির্বাহী পরিচালক আসিফ সালেহ, চিকিৎসক আমজাদ হোসেন, অভিনয়শিল্পী খায়রুল আলম সবুজ, কথাশিল্পী আনিসুল হক, ছড়াকার আমিরুল ইসলাম, উপস্থাপক আবদুন নূর তুষার, অভিনয়শিল্পী আফসানা মিমি, মশিউর রহমান, আলী নকী প্রমুখ। সঞ্চালনা করেন বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের প্রাক্তনী খাদিজা রহমান।

সম্পর্কিত নিবন্ধ