সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মাননীয় ফেলো অধ্যাপক রওনক জাহান বলেছেন, মুক্তিযুদ্ধের বয়ান দিচ্ছেন দেশের রাজনীতিবিদরা। তারা বয়ানটা দিচ্ছেন নিজেদের রাজনীতির স্বার্থসিদ্ধির জন্য। এতে করে একেক সরকারের আমলে একেকভাবে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস লেখা হচ্ছে। তাতে ইতিহাসের নায়করাও পাল্টে যাচ্ছেন।

শনিবার মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ২৯তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী ও স্বাধীনতা উৎসব উপলক্ষে আয়োজিত স্মারক বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। ‘আমাদের স্বাধিকার আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধ : রাজনীতি ও গবেষণার চ্যালেঞ্জ’ শীর্ষক বক্তব্যে অধ্যাপক রওনক জাহান বলেন, ইতিহাস বদলের ফলে আমাদের প্রজন্ম যারা মুক্তিযুদ্ধ দেখেছি, তারা হয়তো বিভ্রান্ত হচ্ছি না; যারা মুক্তিযুদ্ধ দেখেনি, যারা বই পড়ছে কিংবা স্কুলের ছাত্রছাত্রী, তারা যদি কয়েক বছর পরপর একেক রকমের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস পড়ে, তাহলে তারা বুঝতেই পারছে না ঘটনাটা কী? এখানে কোনটি সত্য আর কোনটি মিথ্যা, সেটা প্রতিষ্ঠিত করাই বড় সমস্যা রয়ে যাচ্ছে।

রওনক জাহান বলেন, বাংলাদেশে রাজনৈতিক তথ্য সংগ্রহে অনেক রকম ভয়। এ জন্যই রাজনৈতিক কোন্দল। এটা যেমন নিজের গবেষণাকাজের সময় দেখেছি, আজও তাই দেখছি। 

মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর সৃষ্টির প্রেক্ষাপট তুলে ধরে তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে আমরা স্বাধীন হয়েছি। কিন্তু এই যুদ্ধের কোনো কিছুই রক্ষা হচ্ছিল না। তখন সরকার নয়, আমাদেরই কয়েকজনের  উদ্যোগে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর গড়ে উঠেছিল। এটি আমাদের জন্য অনুপ্রেরণার, গর্বের বিষয়। এর পর থেকে জাদুঘরটি আজ বিশাল হয়েছে। 

অনুষ্ঠানে রওনক জাহানের সংক্ষিপ্ত জীবনী পাঠ করে শোনান নাট্যজন ত্রপা মজুমদার। অনুষ্ঠানের শুরুতে শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের প্রতিষ্ঠাতা ট্রাস্টি সারওয়ার আলী। তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের যা কিছু অর্জন, এর সবটাই সম্ভব হয়েছে দেশের সাধারণ জনগণের সহযোগিতায়। যে শিশুকে মুক্তিযুদ্ধের সময় পিষে মারা হয়েছিল, তার কাছেও দায় আছে। জাদুঘরের দায় হচ্ছে, অতীতকে মানুষের হাতে তুলে দেওয়া। এই কাজটির মধ্য দিয়ে আমরা অতীতকে সক্রিয় করতে চাই।

জাদুঘরের বার্ষিক প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন ট্রাস্টি ও সদস্য সচিব সারা যাকের। তিনি বলেন, চার বছর ধরে বার্ষিক ৬ কোটি টাকা করে অনুদান পাচ্ছে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর। তবে পরিচালন ব্যয় অনেক বেশি। তাই তহবিল সংগ্রহে মনোযোগ দিতে হয়।
 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ম ক ত য দ ধ জ দ ঘর রওনক জ হ ন জ দ ঘর র আম দ র র জন ত

এছাড়াও পড়ুন:

স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা না হওয়া পর্যন্ত প্রতিরোধ চলবে: হামাস

স্বাধীন ও সার্বভৌম ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা না হওয়ার প্রতিরোধ চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে হামাস। গত মঙ্গলবার জাতিসংঘের সদর দপ্তর থেকে দেওয়া এক ঘোষণাপত্রের অস্ত্র ত্যাগের আহ্বানের জবাবে সংগঠনটি এই প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে।

বৃহস্পতিবার হামাসের সংক্ষিপ্ত বিবৃতিতে বলা হয়েছে, দখলদারির অবসান এবং জেরুজালেমকে রাজধানী করে একটি স্বাধীন ও সম্পূর্ণ সার্বভৌম ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা না হওয়া পর্যন্ত প্রতিরোধ থামবে না তারা।

মঙ্গলবার জাতিসংঘের সদর দপ্তর থেকে দেওয়া ঘোষণায় বলা হয়েছিল, ‘গাজায় যুদ্ধ বন্ধে হামাসকে (এই উপত্যকায়) তার শাসনের অবশ্যই অবসান ঘটাতে হবে এবং আন্তর্জাতিক অংশগ্রহণ ও সমর্থনের মাধ্যমে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের কাছে অস্ত্র সমর্পণ করতে হবে। সার্বভৌম ও স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যের সঙ্গে এটি সংগতিপূর্ণ।’

সৌদি আরব, কাতার, ফ্রান্স ও মিসরসহ ১৭টি দেশ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও আরব লিগ ঘোষণাপত্রটি সমর্থন করেছে। এটি ‘দ্য নিউইয়র্ক’ ঘোষণাপত্র হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে।

বৃহস্পতিবার আলাদা এক বিবৃতিতে প্রতি শুক্রবার, শনিবার ও রোববার বিশ্বব্যাপী যুক্তরাষ্ট্র, ইসরায়েল ও তাদের মিত্র দেশগুলোর দূতাবাসের বাইরে বিক্ষোভ করার আহ্বান জানিয়েছে হামাস। ইসরায়েলের আগ্রাসন বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত তা অব্যাহত রাখার আহ্বান জানিয়েছে তারা।

অনাহারে মৃত্যু ১৫৪

গাজায় কর্মরত চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, উপত্যকাটিতে অনাহারে আরও দুই শিশু এবং এক তরুণ মারা গেছে। এ নিয়ে সেখানে অনাহারে মৃতের সংখ্যা দাঁড়াল ১৫৪ জনে। তাদের মধ্যে শিশু ৮৯টি।

গাজায় প্রায় ২১ লাখ মানুষের বসবাস। উপত্যকাটিতে গত মার্চ থেকে নতুন করে অবরোধ শুরু করে ইসরায়েল। ফলে সেখানে ত্রাণবাহী কোনো ট্রাক প্রবেশ করতে পারছিল না। আন্তর্জাতিক চাপের মুখে সম্প্রতি কিছুদিন ধরে গাজায় সীমিত পরিমাণে ত্রাণ প্রবেশ করতে দিচ্ছে ইসরায়েল। এই ত্রাণ প্রয়োজনের তুলনায় অত্যন্ত নগণ্য।

ত্রাণ নিতে প্রাণহানি ১৩৭৩

জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয় জানিয়েছে, গাজায় গত মে মাস থেকে এখন পর্যন্ত ত্রাণ আনতে গিয়ে মোট ১ হাজার ৩৭৩ জন প্রাণ হারিয়েছেন। এর মধ্যে ৮৫৯ জন মারা গেছেন বিতর্কিত গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশনের (জিএইচএফ) ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রে। গত মে মাসের শেষ থেকে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংস্থাটি ইসরায়েলি সেনাদের সহায়তায় গাজার কয়েকটি স্থানে ত্রাণ দিচ্ছে।

বাকি ৫১৪ জন মারা গেছেন ত্রাণবাহী ট্রাকের আশপাশে। তাঁরা ত্রাণের জন্য অপেক্ষা করছিলেন। অধিকাংশই ইসরায়েলের সেনাদের গুলিতে নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয়।

আল জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শুক্রবার সকালে গাজায় অন্তত আরও ৪২ জন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে ত্রাণ আনতে গিয়ে প্রাণ হারিয়েছেন ১৫ জন। এই নিয়ে প্রায় ২২ মাসের সংঘাতে গাজায় ইসরায়েলি সেনাদের হামলা নিহত হয়েছেন অন্তত ৬০ হাজার ৩৩২ জন।

গাজায় স্টিভ উইটকফ

শুক্রবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ গাজা সফর করেছেন। তিনি উপত্যকাটির রাফা এলাকায় জিএইচএফের একটি ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রও ঘুরে দেখেন। এ সময় ইসরায়েলে নিয়োজিত মার্কিন রাষ্ট্রদূত মাইক হুকাবি তাঁর সঙ্গে ছিলেন। তাঁরা পাঁচ ঘণ্টার বেশি গাজায় ছিলেন।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে উইটকফ নিজেই এই কথা জানিয়েছেন। আগের দিন তিনি ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। উইটকফ বলেছেন, ‘মাঠের পরিস্থিতি বুঝতে ও তথ্য সংগ্রহ করতে আমরা গাজায় গিয়েছিলাম। গাজার মানবিক পরিস্থিতির একটি স্পষ্ট ধারণা মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের কাছে পৌঁছে দেওয়াই আমার উদ্দেশ্য, যাতে করে গাজাবাসীর জন্য খাদ্য ও চিকিৎসা সহায়তা পৌঁছাতে পরিকল্পনা প্রণয়নে সহায়তা করা যায়।’

গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ট্রাম্পের মধ্যপ্রাচ্য-বিষয়ক বিশেষ দূত ও আবাসন খাতের সাবেক আইনজীবী উইটকফের আন্তর্জাতিক নীতি ও মানবিক সহায়তা-সংক্রান্ত কোনো অভিজ্ঞতা নেই। তা সত্ত্বেও তিনি মধ্যপ্রাচ্যের সংকট সমাধানের চেষ্টার পাশাপাশি রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধেও কূটনীতি চালাচ্ছেন। এরই মধ্যে তিনি রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে একাধিকবার বৈঠক করেছেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ