যুক্তরাষ্ট্র জানিয়েছে, তারা কিউবা, হাইতি, নিকারাগুয়া ও ভেনেজুয়েলা থেকে আসা ৫ লাখ ৩০ হাজার অভিবাসীর অস্থায়ী বৈধতা বাতিল করতে যাচ্ছে। ট্রাম্প প্রশাসন জানিয়েছে, এ অভিবাসীদের থাকার অনুমতি ও বহিষ্কার সুরক্ষা বাতিল হবে আগামী ২৪ এপ্রিল। এর আগেই তারা যেন দেশটি ছেড়ে চলে যায়, সে বিষয়ে তাদের সতর্ক করা হয়েছে। মার্কিন ফেডারেল সরকারের বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। 

শনিবার বিবিসির খবরে বলা হয়, এই ৫ লাখ ৩০ হাজার অভিবাসীকে বাইডেন প্রশাসনের সময় চালু হওয়া সিএইচএনভি নামক একটি কর্মসূচির আওতায় যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের সুযোগ দেওয়া হয়েছিল। এর মাধ্যমে বৈধভাবে অভিবাসনের সুযোগ দেওয়া হতো। ডোনাল্ড ট্রাম্প দেশটির প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব নেওয়ার পর এ কর্মসূচি স্থগিত করেন। এ অভিবাসীদের মধ্যে কতজন এরই মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে থাকার জন্য অন্য কোনো ভিসা বা আইনি অবস্থান অর্জন করেছেন, সে বিষয়টি এখনও স্পষ্ট নয়।

২০২২ সালে ডেমোক্র্যাট প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের প্রশাসনের অধীনে শুরু হওয়া এ কর্মসূচিটি প্রথমে ছিল শুধু ভেনেজুয়েলানদের জন্য। পরে এটি অন্যান্য দেশের জন্যও চালু হয়। এ কর্মসূচির আওতায় এসব অভিবাসী ও তাদের পরিবারের সদস্যদের যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসের অনুমতি দেওয়া হয়। সেই সঙ্গে তাদের দুই বছরের অস্থায়ী অভিবাসন মর্যাদা বা প্যারোল দেওয়া হয়।

এটি চালুর বিষয়ে বাইডেন প্রশাসনের যুক্তি ছিল, সিএইচএনভি কর্মসূচিটি যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ সীমান্তে অবৈধ অভিবাসন কমাতে সহায়তা করবে। সেই সঙ্গে যারা যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করছেন, এ প্রোগ্রামের আওতায় তাদের আরও ভালোভাবে যাচাই করা যাবে। শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রের স্বরাষ্ট্র নিরাপত্তা বিভাগ বাইডেন প্রশাসনের সমালোচনা করেছে এবং জানিয়েছে, এ কর্মসূচি তার লক্ষ্য পূরণে ব্যর্থ হয়েছে।

সংস্থাটি থেকে এক বিবৃতিতে বলা হয়, বাইডেন প্রশাসন তাদের (অভিবাসীদের) যুক্তরাষ্ট্রে চাকরির জন্য প্রতিদ্বন্দ্বিতার সুযোগ করে দিয়েছে এবং মার্কিন শ্রমিকদের ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। প্রতারণার ঘটনা চিহ্নিত করা হলেও কর্মচারীদের জোরপূর্বক এ কর্মসূচির প্রচার করতে বাধ্য করেছে। পরে অপরাধ বৃদ্ধির দায় রিপাবলিকানদের ওপর চাপিয়েছে। তবে ফেডারেল রেজিস্টারের ৩৫ পৃষ্ঠার এক নোটিশে বলা হয়, সিএইচএনভি কর্মসূচির আওতায় যুক্তরাষ্ট্রে থাকা কিছু ব্যক্তিকে বিশেষ বিবেচনায় থাকার অনুমতি দেওয়া হতে পারে। 

এদিকে, রাশিয়ার সঙ্গে যুদ্ধ থেকে পালিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে আশ্রয় নেওয়া প্রায় ২ লাখ ৪০ হাজার ইউক্রেনের নাগরিকদের অস্থায়ী বৈধতা বাতিল করা হবে কিনা, সে বিষয়েও বিবেচনা করতে শুরু করেছে ট্রাম্প প্রশাসন। ওই কর্মসূচির আওতায় হাইতি থেকে ২ লাখ ১৩ হাজার, ভেনেজুয়েলা থেকে ১ লাখ ২০ হাজার ৭০০, কিউবা থেকে ১ লাখ ১০ হাজার ৯০০ এবং নিকারাগুয়া থেকে ৯৩ হাজার অভিবাসীকে ভিসা দেওয়া হয়েছিল।
 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: র জন য

এছাড়াও পড়ুন:

গোপালগঞ্জে সহিংসতার ঘটনায় গত চার দিনে ১২ শিশুর জামিন নামঞ্জুর

গোপালগঞ্জে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) পথসভাকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষের ঘটনায় গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের মধ্যে ১৮ জন শিশু রয়েছে। এর মধ্যে গত চার দিনে ১২ শিশুর জামিন আবেদন নামঞ্জুর করেছেন আদালত।

গতকাল বৃহস্পতিবার সাত শিশুর জামিন আবেদনের শুনানি হয়। গোপালগঞ্জ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক (জেলা ও দায়রা জজ) সৈয়দ আরাফাত হোসেন তাদের জামিন আবেদন নামঞ্জুর করেন। এর আগে সোম ও মঙ্গলবার পাঁচ শিশুর জামিন আবেদন করা হয়। তাদের জামিন নামঞ্জুর করা হয়। ওই পাঁচজনের জামিন আবেদন করা হয়েছিল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে।

কারাগার সূত্র জানায়, গত ১৬ জুলাই সংঘর্ষের পর ১৭ ও ১৮ জুলাই জেলার বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে ১৮ শিশুকে আটক করে পুলিশ। ১৮ জুলাই তাদের আদালতে হাজির করে গোপালগঞ্জ জেলা কারাগারে পাঠানো হয়। পরে ২১ জুলাই তাদের যশোরের পুলেরহাট শিশু-কিশোর উন্নয়ন কেন্দ্রে পাঠানো হয়।

আদালতের নথি অনুযায়ী, গ্রেপ্তার হওয়া শিশুদের বয়স, ঠিকানা পরিষ্কারভাবে উল্লেখ নেই। তবে গতকাল পর্যন্ত ১২ শিশুর নাম ও পরিচয় শনাক্ত হয়েছে। প্রথম আলোর পক্ষ থেকে চার পরিবারের সঙ্গে কথা বলা হয়েছে। অভিভাবকদের অভিযোগ, তাদের সন্তানদের কোনো ধরনের তদন্ত ছাড়াই আটক করা হয়েছে।

আরও পড়ুনগ্রেপ্তার হওয়া শিশুদের বিষয়ে তদন্ত কমিটি গঠনের নির্দেশ২৭ জুলাই ২০২৫

একজন শিশুর বাবা বলেন, ‘সংসারে অভাব–অনটন, নিজেরাই সংসার চালাইতে পারি না। আমার কষ্ট দেখে ছেলে রাজমিস্ত্রির কাজে যোগ দেয়। সে গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার রমজান শেখ নামের একটা রাজমিস্ত্রির সহকারী হিসেবে কাজ করে। কাজের সময় পুলিশ তাদের ধরে নিয়ে যায়।’

আরেক শিশুর ভ্যানচালক বাবা বলেন, ‘আমরা গরিব মানুষ, কোথাও কোনো কাইজের মধ্যে নেই। তিনডা ছেলে, বড়টা একটা মাদ্রাসার শিক্ষক। ছোট দুইডা এখনো পড়ে। যারে ধরছে, সে সবার ছোট। ওই দিন সকালে আমার মাদ্রাসায় গেছে, পরীক্ষা ছিল। পরে দুপুরের আগে আমি নিজে যাইয়ে নিয়ে আসছি। সেদিন বাড়িতেই ছিল। পরের দিনও সারা দিন বাড়ি ছিল, সেদিন তো কারফিউ ছিল। আসরের নামাজের পর আমার কাছ থেকে ২০ টাকা নিয়ে গেছে চটপটি খাইতে। পাশে মাদ্রাসার সামনেই চটপটির দোকান বসে। সেই হান দে ওরে ধইরে নিছে।’

ওই ব্যক্তি আরও বলেন, ‘ধরার ঘণ্টাখানেক পর থানা থেইকা ফোন দিছে, কয় ছেলে ধরা হইছে। আমরা থানায় গিয়া অনেক কইছি, ও তো কোথাও যায় না, কোনো গ্যাঞ্জামের ছেলে না। মাদ্রাসায় পড়ে। কিন্তু কেউ কিছুই শুনল না। ছেলেরে ছাড়ায় আনতে অনেক জায়গায় দৌড়াইছি।’ তিনি জানান, এ ঘটনার পর থেকে তাঁদের প্রায় ২০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে।

এ ছাড়া জামিনের আশ্বাস দিয়ে কয়েকজন লোক তাদের কাছ থেকে টাকা নিয়েছে বলেও অভিযোগ করেন একজন অভিভাবক।

আরও পড়ুনগোপালগঞ্জে এনসিপির সমাবেশে হামলার ঘটনায় আরও একটি মামলা, আসামি ৪৭৭ জন৩১ জুলাই ২০২৫

গ্রেপ্তার এক শিশুর আইনজীবী ফিরোজা বেগম বলেন, ১৬ জুলাই সহিংসতার ঘটনায় সন্ত্রাসবিরোধী আইনের মামলায় এই শিশুকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। ফৌজদারি কার্যবিধির ১৭৩ ধারায় দ্রুত তদন্ত করে নির্দোষ প্রমাণিত হলে তাকে মামলা থেকে অব্যাহতি দেওয়ার সুযোগ রয়েছে।

এ বিষয়ে সরকারি কৌঁসুলি তৌফিকুল ইসলাম বলেন, শিশুরা অল্প সময় আগে গ্রেপ্তার হয়েছে, এখনো তদন্ত চলছে। তাই হয়তো বিচারক জামিন নামঞ্জুর করেছেন। এ মামলায় এখনো কারও জামিন হয়নি।

আরও পড়ুনগোপালগঞ্জে সংঘাতের ইঙ্গিত ছিল স্পষ্ট, নিরাপত্তা প্রস্তুতি নিয়ে প্রশ্ন ১৮ জুলাই ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ