যশোরের মনিরামপুর পৌরসভায় তিনটি প্রকল্পের ২৮ লাখ টাকার কাজ নিয়ে অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেছে। নিয়মিত দরপত্র আহ্বানের পরিবর্তে রিকোয়েস্ট ফর কোটেশনের (আরএফকিউ) মাধ্যমে এসব কাজ করা হয়। জরুরি কাজের ক্ষেত্রে এ পদ্ধতির প্রচলন রয়েছে। পৌরবাসীর ভাষ্য, এ পদ্ধতিতে কাজ করতে গিয়ে পছন্দের ঠিকাদার বেছে নেওয়া হয়েছে। তারা দায়সারাভাবে তিনটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছেন। এতে বাজারদরের চেয়ে কয়েক গুণ বেশি খরচ হয়েছে। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের মালিকপক্ষের দাবি, পৌর কর্তৃপক্ষ তাদের লাইসেন্সের নামে নিজেরাই কাজ করেছে। 

এসব প্রকল্পের মধ্যে একটিতে প্রতিটি বাল্বের দাম দেখানো হয়েছে ১ হাজার ৮০০ টাকা। অথচ বাজারে এগুলোর দাম পাঁচ-ছয়শ টাকা। পৌরসভা সূত্র জানায়, গত বছরের অক্টোবরে পৌরসভায় তিনটি উন্নয়ন প্রকল্প নেওয়া হয়। এ জন্য সাধারণ তহবিল থেকে বরাদ্দ নেওয়া হয় ২৮ লাখ টাকা। প্রকল্প তিনটি হলো মোহনপুর বটতলার পাশে মহাসড়কের ফুটপথের যাত্রীছাউনি সংস্কার করে মিনি পার্কে রূপান্তর, পৌরসভার ফটকের সামনে ফুটপাতে পার্কিং টাইলস, ৯টি সিসি ক্যামেরা স্থাপন ও ৩২টি বৈদ্যুতিক বাল্ব ফিটিংস এবং পৌর ভবনের সামনে পানির ফোয়ারা নির্মাণ, লাইটিংস ও আশপাশে ফুলের গাছ লাগানো।

প্রথম প্রকল্পের জন্য বরাদ্দ করা হয় ৮ লাখ ৫৩ হাজার টাকা। দ্বিতীয় প্রকল্পে ৯ লাখ ৬২ হাজার টাকা এবং তৃতীয় প্রকল্পে ৯ লাখ ৬৮ হাজার টাকা বরাদ্দ হয়। এসব প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য দরপত্র আহ্বানের নিয়ম রয়েছে। এখানে ব্যত্যয় ঘটিয়ে আরএফকিউর মাধ্যমে পৌর কর্তৃপক্ষ তাড়াহুড়ো করে মেসার্স ফয়জুল ইসলাম, মেসার্স সুমি এন্টারপ্রাইজ, মেসার্স মোল্যা ট্রেডিংয়ের নামে কার্যাদেশ দেয়। 

মোহনপুর বটতলার পাশে মহাসড়কের ফুটপাতের যাত্রীছাউনির টিনে রং করার পর ফ্লোরে পার্কিং টাইলস সেট করার প্রকল্পে বড় অনিয়মের অভিযোগ করেন স্থানীয়রা। ব্যবসায়ী সহিদ বলেন, প্রায় দুই লাখ টাকায় মাটি ভরাট করে তিনি বালু ও খোয়ার ব্যবসা করে আসছিলেন। সেখান থেকে তাঁকে উচ্ছেদ করে সেই মাটি যাত্রীছাউনির আশপাশ সমানে ব্যবহার করে পৌর কর্তৃপক্ষ। পরে সেখানে ফুলের গাছ ও একটি ছাতা বসিয়ে দেওয়া হয়। 

সরেজমিন ফুলের সবগুলো গাছই নষ্ট দেখা গেছে। ওই জায়গায় মাটি ভরাটের নামে পৌরসভা থেকে খরচ দেখানো হয়েছে ৫০ হাজার টাকা। স্থানীয়রা বলছেন, সব মিলিয়ে ওই পার্কটি নির্মাণে খরচ হয়েছে দুই লাখ টাকা। অথচ পৌরসভা খরচ দেখিয়েছে ৮ লাখ ৫৩ হাজার টাকা। 

স্থানীয় ব্যবসায়ী আব্দুল লতিফের ভাষ্য, রাস্তার পাশে পিলার বসিয়ে ফুটপাত বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এতে পথচারী চলাচলে বেগ পেতে হয়। 

দ্বিতীয় প্রকল্পের আওতায় ৯টি সিসি ক্যামেরা ও ৩৮টি বাল্ব লাগানো হয়েছে। বাজারে প্রতিটি বাল্বের বাজারের দাম পাঁচ-ছয়শ টাকা। অথচ দাম দেখানো হয়েছে ১ হাজার ৮০০ টাকা। প্রতিটি সিসি ক্যামেরা বাজারে দুই-আড়াই হাজার টাকায় পাওয়া যায়। অথচ দাম দেখানো হয়েছে প্রায় দ্বিগুণ। 

মেসার্স সুমি এন্টারপ্রাইজের মালিক সাইফুল ইসলাম বলেন,  পৌরসভা কর্তৃপক্ষ তাঁর লাইসেন্সের নামে কাজ নিয়ে নিজেরাই বাস্তবায়ন করেছে। একই মন্তব্য মোল্যা ট্রেডিংয়ের মালিক মনিরুজ্জামানের।

তিনটি প্রকল্প দেখভালের দায়িত্বে আছেন উপসহকারী প্রকৌশলী জাহাঙ্গীর হোসেন ও কার্যসহকারী আব্দুর রাশিদ তপু। তাদের দাবি, কোটেশনে কাজ হলেও তেমন অনিয়ম করা হয়নি। ইতোমধ্যে একটি প্রকল্পের টাকা ছাড় করা হয়েছে। দুটির কাজ অল্প বাকি। দু-এক দিনের মধ্যে সেগুলো শেষ হবে বলে আশা করছেন। 

নির্বাহী প্রকৌশলী উত্তম মজুমদারের দাবি, পৌর প্রশাসকের দায়িত্বে থাকা ইউএনও নিশাত তামান্নার আগ্রহেই এ তিনটি প্রকল্প কোটেশনের মাধ্যমে করা হয়েছে। তবে বিষয়টি অস্বীকার করে ইউএনও নিশাত তামান্না বলেন, পানির ফোয়ারা, লাইটিং ও সিসি ক্যামেরা দ্রুত স্থাপনের জন্য বলা হয়েছিল। এর পরিপ্রেক্ষিতেই নির্বাহী প্রকৌশলী উত্তম মজুমদারের মতামতের ভিত্তিতে কাজটি কোটেশনের মাধ্যমে করা হয়। কাজের মান নিয়ে অভিযোগ উঠলে খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দেন।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: প রকল প র ব যবস প রসভ

এছাড়াও পড়ুন:

চাকরি খেয়ে ফেলব, কারারক্ষীকে কারাবন্দী আ’লীগ নেতা

‘চাকরি খেয়ে ফেলব, দেখে নেব তোমাকে, চেন আমি কে?’ কারবন্দী কুড়িগ্রাম জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান সাজু (৪৯) মঙ্গলবার বিকেল ৪টার দিকে ২ কারারক্ষীকে এভাবে হুমকি দেন বলে অভিযোগ উঠেছে। 

জানা যায়, কুড়িগ্রাম জেলা কারাগারে জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান সাজুকে দেখতে যান তার কয়েকজন স্বজন। কারা নিয়মানুযায়ী সাক্ষাৎ কক্ষে বেঁধে দেওয়া সময়ে কথা শেষ করার কথা থাকলেও তিনি তার মানতে রাজি নন। তিনি দীর্ঘ সময় কথা বলতে চাইলে সাক্ষাৎ কক্ষে দায়িত্বরত মহিলা কারারক্ষী পপি রানী কারাবন্দী নেতার স্বজনদের সময়ের মধ্যে কথা শেষ করতে বলেন। এতে ক্ষিপ্ত হন আওয়ামী লীগ নেতা সাজু। তখন তিনি বলেন, ‘এই আপনি কে? ডিস্টার্ব করছেন কেন? চিনেন আমাকে? চাকরি খেয়ে ফেলব।’

এ সময় সাক্ষাৎ কক্ষে সাজুর স্বজনরাও পপি রানীর সঙ্গেও আক্রমণাত্মক আচরণ করেন। পপি রানীকে নিরাপদ করতে সুমন নামের আরেকজন কারারক্ষী এগিয়ে এলে তাকে লাথি দিয়ে বের করে দেওয়ার হুমকি দেন সাজু। উত্তেজনার একপর্যায়ে ঘটনাস্থলে দ্রুত উপস্থিত হন প্রধান কারারক্ষী আব্দুর রাজ্জাক। তিনি সাজুর স্বজনদের সাক্ষাৎ কক্ষ থেকে চলে যেতে বলেন। তারাও চলে যাওয়ার সময়ে কারারক্ষীদের গালিগালাজ করেন। 

এ ব্যাপারে কারারক্ষী পপি রানী  বলেন, ‘আমি ডিউটিরত অবস্থায় তিনি আমাকে প্রভাব দেখিয়ে চাকরি খাওয়ার হুমকি দেন ও গালিগালাজ করেন। আমি জেলার স্যারের কাছে বিচার প্রার্থনা করছি।’

প্রত্যক্ষদর্শী কারারক্ষী মো. সুমন বলেন, ‘আমরা তো ছোট পদে চাকরি করি, আমাদের নানান নির্যাতন সহ্য করতে হয়। আমি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া আর কিছু বলতে পারব না।’

প্রধান কারারক্ষী আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘সাক্ষাৎ কক্ষের ভেতরে পুলিশ সদস্যকে গালিগালাজ করা হয়। পরে আমি গিয়ে পরিবেশ শান্ত করি।’ 

এ বিষয়ে জানতে চাইলে কুড়িগ্রাম কারাগারের জেলার এ জি মো. মামুদ বলেন, ‘বিষয়টি আমি শুনেছি। বন্দীরা আমাদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করলেও আমরা মানবিকতা প্রদর্শন করি। কেউ অতিরিক্ত কিছু করলে জেলের নিয়ম অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

উল্লেখ্য, জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান সাজুকে গত ৩ ফেব্রুয়ারি বিকেলে রংপুর শহরের সড়ক ও জনপথ কার্যালয়ের কাছ থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশের গোয়েন্দা শাখা (ডিবি)। তার বিরুদ্ধে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে ছাত্র-জনতার ওপর হামলা ও শিক্ষার্থী আশিক হত্যা মামলাসহ একাধিক মামলা রয়েছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ