সুন্দরবনের পূর্ব বনবিভাগের চাঁদপাই রেঞ্জের ধানসাগর এলাকার তেইশের ছিলা নামক স্থানে লাগা আগুনের তীব্রতা কিছুটা কমেছে। তবে, পানির উৎস দূরে থাকায় এবং ভাটার কারণে নদী শুকিয়ে যাওয়ায় আগুন পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আনতে বেগ পেতে হচ্ছে বন বিভাগ ও ফায়ার সার্ভিসকে।

সোমবার (২৪ মার্চ) সকালে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের খুলনা বিভাগীয় কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মো.

আবু বক্কর জামান বলেন, “আগুনের প্রকোপ এখন কিছুটা কমেছে। পানি সংকটের কারণে কাজ ব্যাহত হচ্ছে। রাতে এই দুর্গম এলাকায় কাজ করা খুবই চ্যালেঞ্জিং। আবার ভাটার সময় নদীতে পানি থাকে না, ফলে আগুন নেভানো কঠিন হয়ে পড়ে।”

তিনি আরো বলেন, “রাতে জোয়ার থাকায় আমরা পানি ছিটাতে পেরেছি, যার ফলে আগুন কিছুটা কমেছে। মাটির ওপরে শুকনো পাতা ও মরা ডালের স্তর থাকায় আগুন নিভে গেলেও নতুন করে ধোঁয়া বা আগুন দেখা যাচ্ছে। তাই নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না, কবে আগুন পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আসবে।”

আরো পড়ুন:

সুন্দরবনের আগুন নিয়ন্ত্রণে বেগ পেতে হচ্ছে

সুন্দরবনের নতুন এলাকায় ধোঁয়ার কুণ্ডলী

গতকাল রবিবার সকালে ড্রোনের মাধ্যমে পর্যবেক্ষণ করে বনবিভাগ ধানসাগর টহল ফাঁড়ির অন্তর্গত তেইশের ছিলা এলাকায় আগুন শনাক্ত করে। এরপর বনবিভাগ, ভিলেজ টাইগার রেসপন্স টিম (ভিটিআরটি), সিপিজি এবং টাইগার টিমের সদস্যরা আগুন নিয়ন্ত্রণে ফায়ার লাইন তৈরির কাজ শুরু করেন। দুর্গম পরিবেশ, প্রচণ্ড তাপ, ধোঁয়া ও বাতাসের কারণে আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ায় তা নিয়ন্ত্রণে বেশ বেগ পোহাতে হয় তাদের।

গতকাল বিকেলের আগ পর্যন্ত ভাটার কারণে নদীতে পানি না থাকায় পাম্প বসানো সম্ভব হয়নি। পরে সন্ধ্যার আগে মরা ভোলা নদীতে পাম্প স্থাপন করে পাইপ টানার কাজ শুরু করে বনবিভাগ ও ফায়ার সার্ভিস। রাত সাড়ে ৮টার পর পানি দেওয়া শুরু করলেও কিছুক্ষণের মধ্যে পুনরায় ভাটার কারণে তা ব্যাহত হয়। এরপর মধ্যরাতে জোয়ার শুরু হলে আগুন নেভাতে আবারো পানি দেওয়া শুরু হয়।

সুন্দরবন পূর্ব বনবিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) কাজী মুহাম্মদ নূরুল করিম বলেন, “রাত থেকেই আগুন লাগা এলাকায় পানি দেওয়া শুরু হয়েছে। বনবিভাগ এবং ফায়ার সার্ভিস একসঙ্গে কাজ করছে। পানির সংকটের কারণে আমাদের বেগ পেতে হচ্ছে। ভাটার সময় নদী শুকিয়ে যাওয়ায় পানি দেওয়া কঠিন হয়ে পড়ে। তারপরও আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।”

গত শনিবার সকালে সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগের চাঁদপাই রেঞ্জের ধানসাগর স্টেশনের কলমতেজী টহল ফাঁড়ি সংলগ্ন বনে আগুন লাগে। সেটি নিয়ন্ত্রণে আসার আগেই রবিবার সকালে পাশের তেইশের ছিলা এলাকায় নতুন করে আগুন দেখা যায়। পরপর দুই দিনে দুটি অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় বন বিভাগ ও পরিবেশবিদরা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।

গত ২৩ বছরে সুন্দরবনে ২৭ বার আগুন লেগেছে। বেশিরভাগ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে পূর্ব বন বিভাগের চাঁদপাই রেঞ্জের বিভিন্ন এলাকায়।

ঢাকা/শহিদুল/মাসুদ

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর স ন দরবন বনভ ম আগ ন স ন দরবন বন ব ভ গ প র ব বন বনব ভ গ এল ক য়

এছাড়াও পড়ুন:

মিরাজ বীরত্বে দারুণ প্রত্যাবর্তনের গল্প লিখলো বাংলাদেশ

পরাজয়ের গ্লানি থেকে গর্বের গাঁথায় ফেরার গল্প যখন লেখা হয়, সেখানে একজন নায়ক থাকেন। এইবার সেই নায়ক মেহেদী হাসান মিরাজ। সিলেটের লজ্জাজনক হার ভুলিয়ে দিয়ে চট্টগ্রামে দ্বিতীয় টেস্টে বাংলাদেশ যেন ঘুরে দাঁড়াল মেঘ ফুঁড়ে রোদ ওঠার মতো। অলরাউন্ড মিরাজের ব্যাটে-বলে দ্যুতি ছড়ানো আর তাইজুল ইসলামের ঘূর্ণিতে বিধ্বস্ত জিম্বাবুয়ে। ইনিংস ও ১০৬ রানের বিশাল জয়ে দুই ম্যাচের সিরিজ শেষ হলো ১-১ সমতায়।

প্রথম ইনিংসে জিম্বাবুয়েকে কোনো সুযোগই দেয়নি বাংলাদেশ। তাইজুল ও নাঈম ইসলামের নির্ভুল বোলিংয়ে মাত্র ২২৭ রানে গুটিয়ে যায় সফরকারীরা। এরপর ব্যাট হাতে পাল্টা জবাব দেন বাংলাদেশের ব্যাটাররা। সাদমান ইসলামের ধারাবাহিকতা আর মিরাজের সংগ্রামী সেঞ্চুরিতে দল পৌঁছে যায় ৪৪৪ রানে। নেয় ২১৭ রানের লিড।

সাদমান তুলে নেন দারুণ এক সেঞ্চুরি, কিন্তু ম্যাচের মূল চিত্রনাট্য লিখলেন মিরাজ। টেস্ট ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় শতকে তিনি ছিলেন নির্ভার, নিবেদিত এবং নিখুঁত। ১৪৩ বলের ইনিংসে ১১টি চার ও একটি ছক্কায় সাজানো তার ১০৪ রানের মহাকাব্যিক ইনিংস শুধু দলীয় সংগ্রহে রানের সংযোজন ছিল না, ছিল প্রতিরোধ আর প্রতিশোধের প্রতীক।

আরো পড়ুন:

বাংলাদেশের বিপক্ষে দারুণ বোলিং করে মুজারাবানির ইতিহাস

ইনিংস ব‌্যবধানে জিম্বাবুয়েকে হারিয়ে বদলা নিলো বাংলাদেশ

তাইজুলের সঙ্গে অষ্টম উইকেটে গড়েন ৬৩ রানের জুটি। এরপর তানজিম হাসান সাকিবের সঙ্গে নবম উইকেটে যোগ করেন আরও ৯৬ রান। তানজিম নিজেও খেলেন ৪১ রানের কার্যকর ইনিংস। শেষ ব্যাটসম্যান হিসেবে মিরাজ যখন আউট হন, তখন স্কোরবোর্ডে বাংলাদেশ—৪৪৪।

প্রথমবারের মতো টেস্ট খেলতে নামা জিম্বাবুয়ের মাসেকসা ১১৫ রান দিয়ে পাঁচ উইকেট নিয়ে রেখেছিলেন আলোচনার খোরাক।

দ্বিতীয় ইনিংসে জিম্বাবুয়ের ইনিংস যেন শুরুই হলো পতনের ধ্বনি বাজিয়ে। মাত্র ৮ রানেই পড়ল ২ উইকেট। তাইজুল প্রথমে বোল্ড করলেন ব্রিয়ান বেনেটকে। এরপর এলবিডব্লিউর ফাঁদে ফেললেন নিক ওয়েলচকে। স্কোর যখন ৬৯, তখন উইকেট ৫টি। এরপর নাম মাত্র প্রতিরোধ গড়ে বেন কুরান ও ক্রেইগ আরভিন। কুরান করেন সর্বোচ্চ ৪৬ রান, আরভিন ২৫। বাকিরা যেন শুধুই আনুষ্ঠানিকতা সারলেন। ১১১ রানে অলআউট হয়ে লজ্জার হার বরণ করে নেয় জিম্বাবুয়ে।

মিরাজ বল হাতেও রচনা করলেন অনন্য মহাকাব্য। ২১ ওভারে ৮ মেডেনসহ মাত্র ৩২ রানে শিকার ৫ উইকেট। এটি তার ক্যারিয়ারের ১৩তম পাঁচ উইকেট শিকার। তাকে দারুণ সহায়তা দেন তাইজুল, ৩টি উইকেট নেন ৪২ রানে। নাঈম ইসলামের ঝুলিতে যায় ১ উইকেট।

একই ম্যাচে সেঞ্চুরি ও ফাইফার, এমন কীর্তির সাক্ষী হওয়া সবসময় ঘটে না। মেহেদী হাসান মিরাজ সেই বিরল অর্জনের মালিক হয়ে ম্যাচসেরা হয়েছেন। শুধু এখানেই শেষ নয়, দুই টেস্টে মোট ১৫ উইকেট ও একটি দুর্দান্ত সেঞ্চুরির সুবাদে সিরিজ সেরার পুরস্কারও উঠেছে তার হাতেই।

চট্টগ্রামে এই জয়ের মাধ্যমে বাংলাদেশ শুধু সিরিজে সমতা ফেরায়নি, সিলেটের ক্ষতচিহ্নও কিছুটা মুছে দিয়েছে। মিরাজের ব্যাট-বলের বীরত্বে লেখা হলো এক প্রত্যাবর্তনের মহাকাব্য—যেখানে বাংলাদেশের ক্রিকেট আবারও প্রমাণ করেছে, তারা হার মানে না, হারিয়ে দিতে জানে।

ঢাকা/আমিনুল

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • সুন্দরবনের মধুসহ ২৪ পণ্য পেল জিআই সনদ
  • বৈষম্যবিরোধীদের তোপের মুখে যশোর মিনিবাস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদকের পদত্যাগ
  • শ্রীলঙ্কার মাটিতে ঘুরে দাঁড়িয়ে সিরিজে এগিয়ে গেল বাংলাদেশ
  • মিরাজ বীরত্বে দারুণ প্রত্যাবর্তনের গল্প লিখলো বাংলাদেশ
  • সুন্দরবনে হরিণ শিকারে যাওয়া ব্যক্তির লাশ উদ্ধার, মৃত্যুর কারণ নিয়ে ধোঁয়াশা
  • ‘তোর সময় শেষ’ লেখা চিঠির সঙ্গে কাফনের কাপড় পাঠিয়ে সাংবাদিককে হুমকি
  • কড়া নজরদারি সুন্দরবন সীমান্তে
  • সৌন্দর্যের সন্ধানে সুন্দরবনের গহীনে : দ্বিতীয় পর্ব
  • সুন্দরবনে অস্ত্রসহ বনদস্যু আটক
  • উপকূল রক্ষা বাঁধে ভয়াবহ ধস, প্লাবনের আশঙ্কা সুন্দরবন তীরবর্তী জনপদে