‘‘গত বছরের তুলনায় এবার কাপড় উৎপাদন যথেষ্ট হয়নি। অনেক গার্মেন্টস বন্ধ ছিল। এখনো কিছু গার্মেন্টসে উৎপাদন বন্ধ। বাহির থেকে কাপড়ের আমদানিও তেমন হয়নি। যার কারণে এবার ছোট, বড় সবার কাপড় বেশি দাম দিয়ে কিনতে হয়েছে। তাই কাপড়ের দাম গত বছরের তুলনায় বেশি। বিশেষ করে বাচ্চাদের কাপড়ের দাম। এ কারণে তেমন লাভ হয় না। বিক্রিও গত বছরের তুলনায় কম।’’

কথাগুলো বলছিলেন গাইবান্ধা শহরের সালিমার সুপার মার্কেটের জিম ফ্যাশনের কর্ণধার শাহালম মিয়া। 

বিক্রি কম হওয়ার কারণ জানতে চাইলে তার ভাষ্য, ‘‘এ বছর হটাৎ করে সরকারের পরিবর্তন হয়েছে। আওয়ামী লীগের টাকাওয়ালা নেতা ও ব্যবসায়ীদের অনেকেই গা ঢাকা দিয়ে আছেন। তারা নিজেদেরসহ অন্যদের জন্যও কেনাকাটা করতেন। তাছাড়া সরকার পতনের পর কোনো ব্যবসা-বাণিজ্যই তেমন ভালো নয়। মানুষের হাতে টাকা নেই। তাই, আগে যিনি সন্তানের জন্য দুইটা জামা কিনতেন, এবার একটা কেনেন।’’  

আরো পড়ুন:

ঈদে মুনমুন মুখার্জীর কালেকশনে যা থাকছে

ঈদে তানজিলা ও আনজিলার কালেকশনে ফিউশন পোশাক

ঈদকে সামনে রেখে জমে উঠতে শুরু করেছে গাইবান্ধার মার্কেটগুলো। যদিও ১০ রোজা পর্যন্ত তেমন বিক্রি হয়নি এ বছর। সকাল, দুপুরে ক্রেতা থাকলেও সন্ধ্যার পর শহরের ক্রেতাদের ভিড় বেশি লক্ষ্য করা গেছে।

নিম্ন আয়ের ক্রেতাদের ফুটপাতের দোকানে ভিড় করতে দেখা গেছে। শহরের মার্কেটগুলোর মধ্যে পৌর মার্কেট, স্টেশন রোডের চুড়ি পট্রি, সালিমার সুপার মার্কেট, ইসলাম প্লাজাসহ পুরো সড়কটিতেই প্যান্ট, শার্ট, কোর্ট, জুতার সারি সারি  দোকান। দোকানগুলো সূত্রে জানা গেছে, এ বছর দেশি কাপড়ের দিকে ক্রেতাদের ঝোঁক বেশি।

সরেজমিনে গাইবান্ধার শহরের মার্কেট ঘুরে দেখা যায়, দোকানগুলো ঘুরে ঘুরে নিজেদের চাহিদামতো পোশাক খুজছেন ক্রেতারা। কেউ পরিবার নিয়ে, কেউ একা এসেছেন। দোকানিরাও ব্যস্ত।  ক্রেতাদের কেউ কাপড় দেখছেন, কেউ আবার পছন্দের পোশাক খুঁজছেন।

ক্রেতারা বলছেন, গত বছরের তুলনায় দাম কিছুটা বেশি। তবে ব্যবসায়ীরা জানান, কেনাকাটা শুরু হয়েছে ১৫ রোজার পর থেকে। এবার ভারতীয় কাপড়কে পেছনে ফেলে বাজার দখল করেছে দেশীয় সুতি কাপড়। আছে চায়না কাপড়ের দাপট। গরমের কারণে দেশি সুতি থ্রি পিসগুলো সবার পছন্দ ও বিক্রির শীর্ষে রয়েছে।

এছাড়া শিশুদের হরেক রকম পোশাকও বিক্রি হচ্ছে বেশি। তবে শিশুদের পোশাকের দাম অপেক্ষাকৃত বেশি। সর্বনিম্ন ৫০০ টাকা থেকে শুরু করে ৩৫০০ টাকা পর্যন্ত। এসব পোশাকের মধ্যে রয়েছে, টপ, স্কার্ট, ফ্রক, জিন্স প্যান্ট, গ্যাবার্ডিন প্যান্টের পাশাপাশি কালার হাফ শার্ট, ফুলশার্ট, চেক শার্ট, এক কালার শার্ট, গেঞ্জি, জিন্সের প্যান্ট রয়েছে পছন্দের তালিকায়।

হরেক রকমের বর্ণালী পাঞ্জাবির চাহিদা এবার সর্বাধিক। ফুটপাতেও সারি সারি পাঞ্জাবির দোকান। জুতার দোকানগুলোতেও ভিড় বাড়তে শুরু করেছে। বিশেষ করে স্টেশন রোডের কিছুটা কমদামের জুতা-সেন্ডেলের দোকানে বেশি ভিড়।

বাচ্চাদের জন্য পোশাক কিনতে এসেছেন শহরের ব্রিজরোডের বাসিন্দা ফাহমিদা শিখা। তিনি জানান, ছোট দুই মেয়ের জন্য পোশাক কিনতে এসেছেন। গত বছর যে জামা ৮০০ টাকায় কিনেছিলেন, সেই একই রকম জামা এবার ১২০০ টাকায় কিনেছেন। এবার পোশাকের মডেলে তেমন পরিবর্তন হয়নি বলেও জানান তিনি। 

সু-প্যালেসের স্বত্বাধিকারী সোহাগ মৃধা বলেন, ‘‘ক্রেতার চাহিদা অনুসারে আমরা উন্নতমানের জুতা ও স্যান্ডেল বিক্রি করি। গত বছরের তুলনায় প্রতিটি জুতা-সেন্ডেল ২০০ থেকে ৩০০ টাকা বেশি দিয়ে কিনতে হয়েছে। তাই, দাম এবার কিছুটা বেশি। এখনো তেমন কেনা-বেচা শুরু হয়নি। তবে, দু-একদিনের মধ্যে বিক্রি ভালভাবে শুরু  হবে বলে আশা করছি।’’  

তিন ছেলের জন্য পোশাক কিনতে এসেছেন শহরের খানকা শরিফ এলাকার রোজী বেগম। তিনি জানান, তিন ছেলের জন্য যে টাকা এনেছিলেন, সেই টাকায় পোশাক কিনতে পারছেন না। বাচ্চাদের কাপড়ের দাম বেশি। দুই ছেলের জন্য কিনেছেন। পরে আরেক ছেলের জন্য কিনবেন। 

শহরের পৌর মার্কেটের ফারহান ক্লোথ স্টোরের দোকানি আরিফ হাসান জানান, প্রতিদিন ৭০ থেকে ৮০ হাজার টাকা বিক্রি হচ্ছে। এবার তাদের বেশি দামে কাপড় কেনায় লাভ কম হচ্ছে। তাছাড়া গত বছর ১২-১৩ বছরের বাচ্চার কাপড়ের যে দাম ছিল, এবছর সেই দাম দিয়ে ৫-৬ বছরের বাচ্চার কাপড় কিনছেন ক্রেতারা।

চৌধুরী মার্কেট এলাকার অস্থায়ী পাঞ্জাবি বিক্রেতা সৌরভ নিয়ে জানান, এ বছর এখন পর্যন্ত বিক্রি তেমন ভালো না। প্রতিটি পাঞ্জাবি  ৪০০ থেকে ৬০০ টাকায় বিক্রি করছেন। তিনি আশা করছেন, দু-একদিন গেলে বিক্রি বেড়ে যাবে। তার ধারণা, গত বছরের তুলনা এ বছর ব্যবসা ভালো হবে না।

ঢাকা/বকুল

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ঈদ প শ ক প শ ক ক নত ছ ল র জন য এস ছ ন এ বছর ব যবস শহর র

এছাড়াও পড়ুন:

যুদ্ধবিরতি নিয়ে বৈঠকে বসতে যাচ্ছেন জেলেনস্কি ও মার্কিন প্রতিনিধি

যুদ্ধবিরতি নিয়ে আলোচনার জন্য জার্মানিতে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির সঙ্গে বসতে যাচ্ছেন মার্কিন প্রতিনিধি দল। সোমবার এই বৈঠক হবে বলে জানিয়েছে রয়টার্স।

একজন মার্কিন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের দূত স্টিভ উইটকফ এবং জামাতা জ্যারেড কুশনার ইউক্রেনীয় ও ইউরোপীয়দের সাথে আলোচনার জন্য জার্মানি সফর করছেন।

মার্কিন শান্তি প্রস্তাব নিয়ে ইউক্রেন ও রাশিয়ার সাথে আলোচনার নেতৃত্বদানকারী উইটকফকে পাঠানোর সিদ্ধান্তটি একটি সংকেত বলে মনে হচ্ছে। এর কারণ হিসেবে বলা হচ্ছে, ওয়াশিংটন অগ্রগতির সম্ভাবনা দেখছে। বৃহস্পতিবার হোয়াইট হাউস জানিয়েছিল, ট্রাম্প যদি মনে করেন যে যথেষ্ট অগ্রগতি হয়েছে তবেই কেবল একজন কর্মকর্তাকে আলোচনায় পাঠাবেন।

 বৈঠক সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে জার্মান সরকারের একটি সূত্র বলেছেন, “ইউক্রেনে সম্ভাব্য যুদ্ধবিরতি নিয়ে আলোচনা সপ্তাহান্তে বার্লিনে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউক্রেনের পররাষ্ট্রনীতি উপদেষ্টাদের মধ্যে অনুষ্ঠিত হচ্ছে।”

সোমবার জার্মান চ্যান্সেলর মের্জ বার্লিনে জেলেনস্কি এবং ইউরোপীয় নেতাদের একটি শীর্ষ সম্মেলনের আতিথেয়তা করছেন, যা ইউরোপ জুড়ে মিত্রদের কাছ থেকে ইউক্রেনীয় নেতার প্রতি সমর্থনের ধারাবাহিক প্রকাশ্য প্রদর্শনের সর্বশেষ ঘটনা। কারণ প্রাথমিকভাবে মস্কোর প্রধান দাবিগুলিকে সমর্থন করে এমন একটি শান্তি পরিকল্পনায় স্বাক্ষর করার জন্য কিয়েভ ওয়াশিংটনের চাপের মুখে রয়েছে।

ব্রিটেন, ফ্রান্স ও জার্মানি গত কয়েক সপ্তাহ ধরে মার্কিন প্রস্তাবগুলোকে পরিমার্জন করার জন্য কাজ করছে। আগের প্রস্তাবে কিয়েভকে আরো ভূখণ্ড ছেড়ে দেওয়ার, ন্যাটোতে যোগদানের উচ্চাকাঙ্ক্ষা ত্যাগ করার এবং তার সশস্ত্র বাহিনীর সীমাবদ্ধতা মেনে নেওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছিল।

ঢাকা/শাহেদ

সম্পর্কিত নিবন্ধ