‘যিনি সন্তানের জন্য দুইটা জামা কিনতেন, এখন কেনেন একটা’
Published: 24th, March 2025 GMT
‘‘গত বছরের তুলনায় এবার কাপড় উৎপাদন যথেষ্ট হয়নি। অনেক গার্মেন্টস বন্ধ ছিল। এখনো কিছু গার্মেন্টসে উৎপাদন বন্ধ। বাহির থেকে কাপড়ের আমদানিও তেমন হয়নি। যার কারণে এবার ছোট, বড় সবার কাপড় বেশি দাম দিয়ে কিনতে হয়েছে। তাই কাপড়ের দাম গত বছরের তুলনায় বেশি। বিশেষ করে বাচ্চাদের কাপড়ের দাম। এ কারণে তেমন লাভ হয় না। বিক্রিও গত বছরের তুলনায় কম।’’
কথাগুলো বলছিলেন গাইবান্ধা শহরের সালিমার সুপার মার্কেটের জিম ফ্যাশনের কর্ণধার শাহালম মিয়া।
বিক্রি কম হওয়ার কারণ জানতে চাইলে তার ভাষ্য, ‘‘এ বছর হটাৎ করে সরকারের পরিবর্তন হয়েছে। আওয়ামী লীগের টাকাওয়ালা নেতা ও ব্যবসায়ীদের অনেকেই গা ঢাকা দিয়ে আছেন। তারা নিজেদেরসহ অন্যদের জন্যও কেনাকাটা করতেন। তাছাড়া সরকার পতনের পর কোনো ব্যবসা-বাণিজ্যই তেমন ভালো নয়। মানুষের হাতে টাকা নেই। তাই, আগে যিনি সন্তানের জন্য দুইটা জামা কিনতেন, এবার একটা কেনেন।’’
আরো পড়ুন:
ঈদে মুনমুন মুখার্জীর কালেকশনে যা থাকছে
ঈদে তানজিলা ও আনজিলার কালেকশনে ফিউশন পোশাক
ঈদকে সামনে রেখে জমে উঠতে শুরু করেছে গাইবান্ধার মার্কেটগুলো। যদিও ১০ রোজা পর্যন্ত তেমন বিক্রি হয়নি এ বছর। সকাল, দুপুরে ক্রেতা থাকলেও সন্ধ্যার পর শহরের ক্রেতাদের ভিড় বেশি লক্ষ্য করা গেছে।
নিম্ন আয়ের ক্রেতাদের ফুটপাতের দোকানে ভিড় করতে দেখা গেছে। শহরের মার্কেটগুলোর মধ্যে পৌর মার্কেট, স্টেশন রোডের চুড়ি পট্রি, সালিমার সুপার মার্কেট, ইসলাম প্লাজাসহ পুরো সড়কটিতেই প্যান্ট, শার্ট, কোর্ট, জুতার সারি সারি দোকান। দোকানগুলো সূত্রে জানা গেছে, এ বছর দেশি কাপড়ের দিকে ক্রেতাদের ঝোঁক বেশি।
সরেজমিনে গাইবান্ধার শহরের মার্কেট ঘুরে দেখা যায়, দোকানগুলো ঘুরে ঘুরে নিজেদের চাহিদামতো পোশাক খুজছেন ক্রেতারা। কেউ পরিবার নিয়ে, কেউ একা এসেছেন। দোকানিরাও ব্যস্ত। ক্রেতাদের কেউ কাপড় দেখছেন, কেউ আবার পছন্দের পোশাক খুঁজছেন।
ক্রেতারা বলছেন, গত বছরের তুলনায় দাম কিছুটা বেশি। তবে ব্যবসায়ীরা জানান, কেনাকাটা শুরু হয়েছে ১৫ রোজার পর থেকে। এবার ভারতীয় কাপড়কে পেছনে ফেলে বাজার দখল করেছে দেশীয় সুতি কাপড়। আছে চায়না কাপড়ের দাপট। গরমের কারণে দেশি সুতি থ্রি পিসগুলো সবার পছন্দ ও বিক্রির শীর্ষে রয়েছে।
এছাড়া শিশুদের হরেক রকম পোশাকও বিক্রি হচ্ছে বেশি। তবে শিশুদের পোশাকের দাম অপেক্ষাকৃত বেশি। সর্বনিম্ন ৫০০ টাকা থেকে শুরু করে ৩৫০০ টাকা পর্যন্ত। এসব পোশাকের মধ্যে রয়েছে, টপ, স্কার্ট, ফ্রক, জিন্স প্যান্ট, গ্যাবার্ডিন প্যান্টের পাশাপাশি কালার হাফ শার্ট, ফুলশার্ট, চেক শার্ট, এক কালার শার্ট, গেঞ্জি, জিন্সের প্যান্ট রয়েছে পছন্দের তালিকায়।
হরেক রকমের বর্ণালী পাঞ্জাবির চাহিদা এবার সর্বাধিক। ফুটপাতেও সারি সারি পাঞ্জাবির দোকান। জুতার দোকানগুলোতেও ভিড় বাড়তে শুরু করেছে। বিশেষ করে স্টেশন রোডের কিছুটা কমদামের জুতা-সেন্ডেলের দোকানে বেশি ভিড়।
বাচ্চাদের জন্য পোশাক কিনতে এসেছেন শহরের ব্রিজরোডের বাসিন্দা ফাহমিদা শিখা। তিনি জানান, ছোট দুই মেয়ের জন্য পোশাক কিনতে এসেছেন। গত বছর যে জামা ৮০০ টাকায় কিনেছিলেন, সেই একই রকম জামা এবার ১২০০ টাকায় কিনেছেন। এবার পোশাকের মডেলে তেমন পরিবর্তন হয়নি বলেও জানান তিনি।
সু-প্যালেসের স্বত্বাধিকারী সোহাগ মৃধা বলেন, ‘‘ক্রেতার চাহিদা অনুসারে আমরা উন্নতমানের জুতা ও স্যান্ডেল বিক্রি করি। গত বছরের তুলনায় প্রতিটি জুতা-সেন্ডেল ২০০ থেকে ৩০০ টাকা বেশি দিয়ে কিনতে হয়েছে। তাই, দাম এবার কিছুটা বেশি। এখনো তেমন কেনা-বেচা শুরু হয়নি। তবে, দু-একদিনের মধ্যে বিক্রি ভালভাবে শুরু হবে বলে আশা করছি।’’
তিন ছেলের জন্য পোশাক কিনতে এসেছেন শহরের খানকা শরিফ এলাকার রোজী বেগম। তিনি জানান, তিন ছেলের জন্য যে টাকা এনেছিলেন, সেই টাকায় পোশাক কিনতে পারছেন না। বাচ্চাদের কাপড়ের দাম বেশি। দুই ছেলের জন্য কিনেছেন। পরে আরেক ছেলের জন্য কিনবেন।
শহরের পৌর মার্কেটের ফারহান ক্লোথ স্টোরের দোকানি আরিফ হাসান জানান, প্রতিদিন ৭০ থেকে ৮০ হাজার টাকা বিক্রি হচ্ছে। এবার তাদের বেশি দামে কাপড় কেনায় লাভ কম হচ্ছে। তাছাড়া গত বছর ১২-১৩ বছরের বাচ্চার কাপড়ের যে দাম ছিল, এবছর সেই দাম দিয়ে ৫-৬ বছরের বাচ্চার কাপড় কিনছেন ক্রেতারা।
চৌধুরী মার্কেট এলাকার অস্থায়ী পাঞ্জাবি বিক্রেতা সৌরভ নিয়ে জানান, এ বছর এখন পর্যন্ত বিক্রি তেমন ভালো না। প্রতিটি পাঞ্জাবি ৪০০ থেকে ৬০০ টাকায় বিক্রি করছেন। তিনি আশা করছেন, দু-একদিন গেলে বিক্রি বেড়ে যাবে। তার ধারণা, গত বছরের তুলনা এ বছর ব্যবসা ভালো হবে না।
ঢাকা/বকুল
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ঈদ প শ ক প শ ক ক নত ছ ল র জন য এস ছ ন এ বছর ব যবস শহর র
এছাড়াও পড়ুন:
গভীর রাতে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রারের বাড়িতে ককটেল বিস্ফোরণ
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) অধ্যাপক ইফতিখারুল আমল মাসঊদের বাড়িতে ককটেল বিস্ফোরণ করেছে দুর্বৃত্তরা। গতকাল বুধবার গভীর রাতে বিনোদপুরের মণ্ডলের মোড় এলাকায় তাঁর বাড়ির দরজার সামনে এ ঘটনা ঘটে। তবে এতে কেউ আহত হয়নি।
মতিহার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবদুল মালেক প্রথম আলোকে বলেন, তাঁরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। সেখানে তিনটি ককটেল বিস্ফোরণ করা হয়েছে। তবে কে বা কারা এটি করেছে, সে বিষয়ে এখনো কিছু জানা যায়নি। এ বিষয়ে লিখিত অভিযোগও কেউ করেনি। তাঁরা দুর্বৃত্তদের শনাক্তের চেষ্টা করছেন।
এ বিষয়ে কথা বলতে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার ইফতিখারুল আমল মাসঊদের মুঠোফোন নম্বরে একাধিকবার কল করলেও তিনি সাড়া দেননি। তবে ঘটনার পর তিনি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে একটি পোস্টে লিখেছেন, ‘ফ্যাসিবাদী অপশক্তির জুলুম-নিপীড়নের বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিলাম। কোনো রক্তচক্ষুর ভয়ংকর হুমকি অন্যায়ের প্রতিবাদ করা থেকে বিরত রাখতে পারেনি। তবে তারা কখনো বাড়ি পর্যন্ত আসার ঔদ্ধত্য দেখাতে পারেনি। কিন্তু আজ আমার বাড়ির দরজায় গভীর রাতের অন্ধকারে হামলার সাহস দেখিয়েছে কাপুরুষের দল! এরা কারা? এদের শিকড়সহ উৎপাটনের দাবি জানাই।’
এ ঘটনার নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের সহউপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন খান ফেসবুকে লিখেছেন, ‘তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। ভেবেছিলাম বাড়ির গেটে কিংবা গেটের বাইরে। কিন্তু গিয়ে দেখলাম একেবারে বাড়িতে হামলা হয়েছে। গতকালই ওনার অসুস্থ বাবা হাসপাতাল থেকে রিলিজ নিয়ে বাসায় এসেছেন। জানি না শেষ কবে একজন শিক্ষকের বাড়িতে রাতের আঁধারে এভাবে সন্ত্রাসী হামলা হয়েছে। আমরা শঙ্কিত, স্তম্ভিত।’
এদিকে হামলার প্রতিবাদে বিক্ষোভ সমাবেশের ডাক দিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। আজ বৃহস্পতিবার বেলা ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ শামসুজ্জোহা চত্বরে এ সমাবেশের আয়োজন চলছে।