Samakal:
2025-05-01@05:44:36 GMT

প্রেরণাদাত্রী সন্‌জীদা খাতুন

Published: 25th, March 2025 GMT

প্রেরণাদাত্রী সন্‌জীদা খাতুন

বাংলাদেশের সংস্কৃতি অঙ্গণের অগ্রণী ব্যক্তিত্ব, সঙ্গীতজ্ঞ ও ছায়ানটের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা সন্‌জীদা খাতুন মারা গেছেন। মঙ্গলবার বিকেল ৩টার দিকে রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতালের আইসিইউতে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। ২০১৮ সালের ৩ এপ্রিল সমকালের অনলাইনে সন্‌জীদা খাতুনকে নিয়ে লিখেছিলেন আনিসুজ্জামান ও শামসুজ্জামান খান। লেখাটি আবার প্রকাশ করা হলো।-

এক আলোকিত বাঙালি মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করে সকল মানুষের অন্তরে সঙ্গীত-সাহিত্য-শিল্পরুচির আলোকশিখা প্রজ্বালনের সাধনায় নিরন্তর ব্রতী রয়েছেন আপনি। ব্যক্তিগত শৈল্পিক সিদ্ধি অর্জনে গভীর অভিনিবেশে নিমগ্ন থেকেও সমাজের মুক্তি চেতনার দায় প্রতিনিয়ত তাড়িত করেছে আপনাকে। বাইরের দিক থেকে প্রত্যক্ষ প্রেরণায় ছিলেন বুদ্ধির মুক্তি আন্দোলনের সংগঠক, পরিসংখ্যানবিদ, দার্শনিক পিতা, রবীন্দ্রনাথের সাহচর্য এবং নজরুলের স্নেহধন্য, কাজী মোতাহার হোসেন। অন্তরের গহিনে আরেক প্রেরণাদাত্রী ছিলেন মুক্তমনা মাতা সাজেদা বেগম, বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনে ছাত্র হত্যার প্রতিবাদে যিনি অন্তঃপুর থেকে বেরিয়ে এসেছিলেন রাজপথে, কন্যার সঙ্গে একই কাতারে। আর জীবনব্যাপী যে মাভৈঃবাণী বুকে নিয়ে বিরুদ্ধ স্রোতের অভিযাত্রী হয়েছেন আপনি সেই সুর-ছন্দ-কথা অন্তরে গেঁথে দিয়েছিলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। 'দেশকে আপনার জ্ঞানে বুদ্ধিতে প্রেমে কর্মে সৃষ্টি' করতে পারলেই প্রতিভাত হতে পারে 'স্বদেশ', রবীন্দ্রনাথের এই উপলব্ধির সার্থক প্রকাশ আমরা দেখি আপনার মধ্যে। আপনি সন্‌জীদা খাতুন জাতির সৃজনশক্তির মেধাবী প্রতিভূ, বাঙালি সংস্কৃতি ভুবনের অনন্য ব্যক্তিত্ব, কতভাবেই না ঋদ্ধ করে চলেছেন বাঙালির জীবন-সাধনা।

কৈশোর-উত্তীর্ণ কাল থেকে শুরু হয়েছে আপনার মুক্তি অভিযাত্রা। সাতচল্লিশের দেশভাগে সাম্প্রদায়িকতার যে বিষবাষ্প ছড়িয়ে পড়েছিল বাংলায়, তা পীড়িত করেছিল আপনার কিশোরী মনকে। ভাষা আন্দোলনকালে নিজ কর্তব্য নির্ধারণে আপনার মধ্যে তাই কোনো দ্বিধা ছিল না। রাজপথের সংগ্রামের পাশাপাশি সংগ্রামী মানুষদের সঙ্গে আপনার এমন এক আত্মিক বন্ধন গড়ে ওঠে, যা জীবনব্যাপী লালন করেছেন আপনি। পাকিস্তানি আমলের বিপুল বাধানিষেধ উপেক্ষা করে শান্তিনিকেতনে পড়তে যাওয়ার দৃঢ় অঙ্গীকার আপনাকে আরেক বিরল অভিজ্ঞতায় ঋদ্ধ করেছিল।

অধ্যয়নের পাশাপাশি কণ্ঠে গান তুলে নিয়েছিলেন আপনি আত্যন্তিক ভেতর প্রেরণায়, সে প্রয়াস শান্তিনিকেতনে পেয়েছিল গভীরতর আত্মপ্রকাশ। দেশে ফিরে অধ্যাপনা হয়েছিল আপনার জীবিকার অবলম্বন এবং গান হয়ে উঠল প্রাণের বাঙ্‌ময় প্রকাশ। সাহিত্য ও সঙ্গীতের অধ্যয়ন ও অনুশীলন, সেইসঙ্গে বৃহত্তর জীবনের সঙ্গে সংযোগ আপনার ব্যক্তিত্বের গড়নে যে বিশিষ্টতা যুক্ত করেছিল, তার সার্থক প্রকাশ ঘটে ১৯৬১ সালে রবীন্দ্রজন্মশতবার্ষিকীকে ঘিরে পূর্ব বাংলার বাঙালি জাতীয়তাবাদী সাংস্কৃতিক জাগরণে। শতবার্ষিকী উদ্‌যাপনের অনুষ্ঠানমালা হয়ে পড়ে সাংস্কৃতিক জাগরণ চেতনার এক নব্য প্রকাশ এবং তার মধ্যমণি হয়ে উঠলেন আপনি। এরই ধারাবাহিকতায় প্রতিষ্ঠা পায় 'ছায়ানট' সংগঠন, সঙ্গীতে দীক্ষাদানের মধ্য দিয়ে সূচিত হয় সুরস্পর্শে জাতীয় সাংস্কৃতিক জাগৃতির কাঙ্ক্ষিত প্রয়াস। 'ছায়ানট' হয়ে ওঠে পূর্ব বাংলায় আধুনিক বাঙালি সংস্কৃতি বিকাশের কেন্দ্র, আমাদের সংস্কৃতি ও সঙ্গীতচর্চার ব্যতিক্রমী পীঠস্থান। সঙ্গীত শিক্ষাদানে নিষ্ঠা, দক্ষতা, আকুলতা নিয়ে আপনি ও সতীর্থমণ্ডলী বাঙালিত্বের চেতনায় উদ্বুদ্ধ সুরচর্চায় নিবেদিত নবীন-নবীনাদের বিশাল গোষ্ঠী তৈরি করতে সক্ষম হন। 'ছায়ানটে'র উদ্যোগে রমনার বটমূলে বাংলা নববর্ষবরণের প্রভাতি অনুষ্ঠানের সূচনা সামন্তবাদী পাকিস্তানি সাংস্কৃতিক অমানিশা ঘুচিয়ে এক নতুন প্রভাতের আবাহন ঘটাল, যা উদ্বেলিত ও আলোড়িত করল পূর্ব বাংলার নবজাগ্রত বাঙালি সমাজকে। এরই ধারাবাহিকতায় রাজনৈতিক গণসংগ্রামের সমান্তরালে, বলতে গেলে রবীন্দ্রনাথের হাতে হাত রেখে, পূর্ব বাংলার বাঙালি পৌঁছে গেল একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে এবং কণ্ঠে গান নিয়ে আপনি এবং আপনার দীক্ষাপ্রাপ্ত সঙ্গীত দল ঝাঁপিয়ে পড়ে সেই সংগ্রামে।

স্বাধীন বাংলাদেশের পতন-অভ্যুদয়-বন্ধুর যাত্রাপথে নানা বাধাবিঘ্ন-বঞ্চনা উপেক্ষা করে আপনি সঙ্গীতের মাধ্যমে চিত্তের জাগরণ প্রয়াসে কেবল অটল ও একাগ্র থাকেননি, আরও কতভাবেই না সৃষ্টিশীল কাজের অনন্য সব উদাহরণ তৈরি করে বিস্তার ঘটিয়েছেন সুষ্ঠু সাংস্কৃতিক পরিসরের। অধ্যাপনা ও অধ্যয়নের যুগল-সাধনায় আপনি উচ্চ শিখর স্পর্শ করেছেন, রবীন্দ্রসঙ্গীতের ভাবসম্পদ বিশ্নেষণে জুগিয়েছেন নতুন মাত্রা, ধ্বনি ও কবিতার সম্মিলন বিচারে আপনার উপলব্ধি সৃষ্টিরস অনুধাবনে নববিস্তার ঘটিয়েছে। আপনার রচনাদি বাংলা সাহিত্যে ব্যতিক্রমী সংযোজন হিসেবে কীর্তিত হয়েছে। সেইসঙ্গে চলেছে সঙ্গীতের দীক্ষাদানে আপনার নিরলস সাধনা, 'ছায়ানটে'র বৃত্ত ছাপিয়ে যা দেশব্যাপী বিস্তার লাভ করেছে 'জাতীয় রবীন্দ্রসঙ্গীত সম্মিলন পরিষদ'-এর সুবাদে, আপনি ছুটে চলেছেন দেশব্যাপী চারণের মতো সঙ্গীতসুধারস বিতরণের ব্রত নিয়ে।

সহজ কঠিন দ্বন্দ্বে ছন্দে বহমান আপনার কর্মময় জীবন জাতির সামনে অনন্য উদাহরণ মেলে ধরেছে। নিজেকে পরমভাবে উৎসর্গ করেছেন সুরস্পর্শে মানুষের অন্তর আলোকিত করবার কাজে। আপনার সেই সঙ্গীত-সাধনা স্নিগ্ধ ও গভীর, কোমল ও কঠোর; সর্বোপরি তা নিবেদিত মানবের কল্যাণে, দেশের হিতসাধনে। এমন ব্যক্তিত্বের ছায়াতলে সমবেত আমরা সবাই অন্তরের নিবিড়তম শ্রদ্ধার অঞ্জলি নিবেদন করি আপনার প্রতি, দেশজুড়ে সঙ্গীত-সংস্কৃতির বিস্তারে আপনার কর্মধারায় স্নাত জাতির পক্ষ থেকে পঁচাশিতম জন্মবার্ষিকীতে প্রদান করি ভালোবাসার অর্ঘ্য। আপনি বাঙালি সংস্কৃতির সম্পদ, শিল্পের সুষমা ও শক্তির প্রকাশক, সঙ্গীতে নিহিত সর্বজনীন কল্যাণবোধ আপনি সবার হৃদয়ে সঞ্চারিত করে চলেছেন।

আপনার মঙ্গল হোক, আপনি শতায়ু হোন, আপনি সুরের স্পর্শে, সংস্কৃতি শক্তিতে, মানবিকতার প্রত্যয়ে যে স্বদেশ মূর্ত করে তুলেছেন, তা জাগ্রত হোক সর্বজনের হৃদয়ে। পঁচাশিতম জন্মবর্ষপূর্তিতে আপনার কাছ থেকে নতুনভাবে দীক্ষা নিয়ে বলবান হবে আলোর পথে আমাদের অভিযাত্রা। সেই যাত্রাপথের আনন্দগান আমরা শুনি আপনার কণ্ঠে, আপনাকে পাই অপরিমেয় অব্যাহত প্রেরণাদাত্রী হিসেবে, আপনার প্রতি রইল আমাদের অশেষ শ্রদ্ধা ও বিনম্র অভিবাদন।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ছ য় নট আপন র ম আপন র ক স পর শ ন আপন

এছাড়াও পড়ুন:

মাঠ নিয়ে শ্রাবণের আফসোস

আলোচনা-সমালোচনার মধ্যেও বসুন্ধরা কিংসের গোলরক্ষক মেহেদী হাসান শ্রাবণ নিজের সেরাটা দেওয়ার চেষ্টা করেছেন। ফেডারেশন কাপের ফাইনালে আবাহনীর বিপক্ষে টাইব্রেকারে কিংসের জয়ের নায়ক ক্যারিয়ার নিয়ে কথা বলেছেন সমকালের সঙ্গে। শুনেছেন সাখাওয়াত হোসেন জয়

সমকাল: দু’দিনের ফাইনালের অভিজ্ঞতাটা কেমন হলো?
শ্রাবণ: (হাসি) না, এটা খুব কঠিন ছিল। আমরা সম্পূর্ণ প্রস্তুতি নিয়েছি এক দিন ফাইনাল খেলব, জিতব এবং উদযাপন করব। কিন্তু প্রাকৃতিক কারণে খেলা অনেকক্ষণ বন্ধ ছিল। বাকি ১৫ মিনিট আরেক দিন। এটা একটা নতুন অভিজ্ঞতা। একই চাপ দু’বার নিতে হলো।

সমকাল: এই মাঠের সমস্যার কারণেই কি এমনটা হয়েছে?
শ্রাবণ: অবশ্যই। এত বড় একটা টুর্নামেন্টের ফাইনাল খেলা যে মাঠে, সেখানে ফ্লাডলাইট নেই। যদি ফ্লাডলাইটের সুবিধা থাকত, ওই দিনই খেলাটা শেষ করা যেত। আমার মনে হয়, দেশের ফুটবলের কিছু পরিবর্তন করা উচিত। বিশেষ করে আমরা যখন জাতীয় দলের হয়ে বিদেশে খেলতে যাই, তখন দেখি অন্যান্য দেশের মাঠ খুব গতিশীল। আমাদের দেশের মাঠগুলো আন্তর্জাতিক পর্যায়ের না। প্রায় সময়ই সমস্যা হয়। আমরা স্লো মাঠে খেলি। বিদেশে গতিশীল মাঠে খেলতে গিয়ে সমস্যায় পড়তে হয়। আমাদের লিগটা যদি আন্তর্জাতিক মানের মাঠে হতো।

সমকাল: পেনাল্টি শুটআউটের সময় কী পরিকল্পনা ছিল আপনার?
শ্রাবণ: আমি আগেও বলেছি যে অনুশীলনের সময় আগের ম্যাচের টাইব্রেকার নিয়ে কাজ করেছি। কে কোন দিকে মারে, সেগুলো ট্রেনিংয়ে দেখিয়ে দিয়েছেন কোচ। কোচের দিকনির্দেশনা অনুযায়ী কাজ করছি এবং সফল হয়েছি।

সমকাল: এমেকার শট ঠেকানোর পর মার্টিনেজের মতো উদযাপন করেছেন। এটি কি আগে থেকেই পরিকল্পনা ছিল?
শ্রাবণ: না, সেভ দেওয়ার পর মাথায় এলো। তাই এমি মার্টিনেজের মতো উদযাপন করেছি। বলতে পারেন, এটি কোনো পরিকল্পনা ছিল না। তৎক্ষণাৎ মাথায় এলো।

সমকাল: জাতীয় দল আর ক্লাব– দুটোর অভিজ্ঞতা যদি একটু বলতেন।
শ্রাবণ: ক্লাব আর জাতীয় দল– দুটো ভিন্ন বিষয়। ক্লাব হচ্ছে শুধু একটা ক্লাবকে প্রতিনিধিত্ব করা। আর জাতীয় দল তো পুরো বাংলাদেশকে প্রতিনিধিত্ব করা। যারা ক্লাবে ভালো পারফরম্যান্স করে, তাদেরই জাতীয় দলে ডাকে। আর জাতীয় দলে ডাক পাওয়াটা একজন প্লেয়ারের সবচেয়ে বড় অর্জন।

সমকাল: আপনি একটি সেভ করেছেন। কিন্তু আবাহনীর মিতুল মারমা পারেননি। জাতীয় দলে বেস্ট ইলেভেনে থাকতে পারবেন?
শ্রাবণ: না না, ব্যাপারটা এমন না। ও (মিতুল) সেভ করতে পারেনি আর আমি পারছি– এটি কিন্তু বড় বিষয় না। ও কিন্তু সেমিফাইনালে সেভ করে দলকে ফাইনালে এনেছে। বরং অনুশীলনে কোচ যাঁকে ভালো মনে করেন, তাঁকেই শুরুর একাদশে রাখেন।

সমকাল: একজন গোলরক্ষক হিসেবে নিজেকে কোথায় দেখতে চান?
শ্রাবণ: আমি চাই দেশসেরা গোলরক্ষক হতে। আমার স্বপ্ন আছে, বিদেশে লিগে খেলব।    

সম্পর্কিত নিবন্ধ