অস্তিত্ব সংকটে হরিজন সম্প্রদায়ের ১১ পরিবার
Published: 25th, March 2025 GMT
নানা সমস্যায় জর্জরিত নবীগঞ্জের হরিজন সম্প্রদায়ের অস্তিত্ব এখন সংকটের মুখে। সেখানে থাকা তাদের ১১টি পরিবারের সদস্যরা দিন কাটাচ্ছেন নানামুখী সমস্যায়। জীবিকার তাগিদে তাদের অনেকেই পৈতৃক পেশা ছেড়ে যোগ দিচ্ছেন অন্য পেশায়।
কাজের জন্য নির্দিষ্ট জায়গার অভাব, সামাজিকভাবে নিম্ন মর্যাদা, আবাসন সংকট, বিদ্যুৎ ও স্যানিটেশন সমস্যা, পড়ালেখার পর্যাপ্ত সুযোগ না পাওয়াসহ নানা সমস্যায় প্রতিদিন ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে তাদের। এমন পরিস্থিতিতে পুনর্বাসন ও নিজেদের ঐতিহ্যগত পেশাকে আধুনিকায়নে সরকারের সহায়তা চেয়েছেন তারা।
ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক সংলগ্ন নবীগঞ্জ উপজেলার আউশকান্দি বাজারের পাশে উলুকান্দি গ্রামে গিয়ে জানা যায়, ব্রিটিশ আমল থেকে সেখানে বসবাস করে আসছে হরিজন (মুচি) সম্প্রদায়ের বেশ কয়েকটি পরিবার। সে থেকেই এ পল্লির নামকরণ করা হয় মুচিবাড়ি।
মাত্র ১৩ শতক জায়গার মধ্যে অনেকটা গাদাগাদি করে সেখানে বাস করছেন ১১টি পরিবারের অন্তত শতাধিক সদস্য। এর মধ্যে তাদের অনেক জায়গাই স্থানীয় ভূমিখেকোদের দখলে রয়েছে বলেও অভিযোগ করেছেন সম্প্রদায়ের লোকজন। মুচি সম্প্রদায়ের লোকজন জানান, স্বাধীনতার ৫৪ বছর পেরিয়ে গেলেও তারা বিদ্যুতের সেবা পাচ্ছেন না।
তারা বলেন, নির্বাচনের সময় নানা প্রতিশ্রুতি দিয়ে ভোট আদায় করেন প্রার্থীরা। ভোটের পর তাদের চেহারা আর দেখা যায় না। এমনকি নির্বাচিত হলেই বিদ্যুতের ব্যবস্থা করে দেবেন বলেও আশ্বাস দিয়েছেন তাদের অনেকেই। এভাবেই চলছে যুগের পর যুগ। এ ছাড়াও হরিজনপাড়ায় নেই স্বাস্থ্যকর পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা। ওই ১১টি পরিবার মিলে রিং স্লাব দিয়ে কোনোমতে ২টি শৌচাগার তৈরি করে ব্যবহার করছে।
এখানেই শেষ নয়। এ সম্প্রদায়ের পেশাগত দিক নিয়ে নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হয়নি। নেই সচেতনতামূলক শিক্ষার ব্যবস্থাও। যার কারণে হরিজনেরা জুতা মেরামতের জন্য যে চামড়া সংগ্রহ করেন, তার উচ্ছিষ্ট ফেলেন পার্শ্ববর্তী খালে। এতে করে খালের পানি দূষিত হয়ে গেছে। এ পানিই ব্যবহার করছেন এসব পরিবারের সদস্যরা।
মুচিপাড়ার শিশুদের অধিকাংশই শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত। আর্থিক অসচ্ছলতার কারণে বিভিন্ন কাজ করে তারা। ফলে তাদের স্কুলে যাওয়ার সময় হয় না। আবার অনেকেই বাবার কাজে সহযোগিতা করে।
আউশকান্দি ইউনিয়নের উলুকান্দি গ্রামের মুচিবাড়িতে বসবাসকারী লাখপতি, সুবল, বাবুল, লক্ষ্মণসহ অনেকেই জানান, সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত তারা কাজ করেন। সারাদিন কাজ করেও ২০০ টাকা উপার্জন করতে পারেন না। পরিবারে আর্থিক অনটন লেগেই থাকে। এভাবেই যুগের পর যুগ চলছে তাদের জীবন।
হরিজন সম্প্রদায়ের অন্য সদস্যরা জানান, তাদের বিয়ে, আত্মীয়তা, সালিশ-বিচার নিজেদের মধ্যেই হয়ে থাকে। নিম্নবর্ণের হিন্দু বলে তাদের বিয়ের নথি বা রেজিস্ট্রেশন হয় না এখনও।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ব যবস থ অন ক ই পর ব র র অন ক সদস য সমস য
এছাড়াও পড়ুন:
নড়াইলে সরকারি গাছ বিক্রির অভিযোগে চেয়ারম্যানসহ ১৩ জনের বিরুদ্ধে মামলা
নড়াইল সদর উপজেলার শাহাবাদ ইউনিয়নে সড়কের পাশে সরকারি গাছ চুরি করে বিক্রির অভিযোগে মামলা হয়েছে। গতকাল বুধবার রাতে শাহবাদ ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা মশিউর রহমান বাদী হয়ে সদর থানায় মামলাটি করেন।
মামলায় ওই ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান জিয়াউর রহমানসহ ১৩ জন আসামি করা হয়েছে। অন্য আসামিরা হলেন প্রশিকা নড়াইল উন্নয়ন এলাকা ব্যবস্থাপক শাহাব উদ্দিন ও প্রশিকার গঠিত সংগঠন প্রভাতী যুব সংঘের সভাপতি নড়াইল সদর উপজেলার তুজরডাঙ্গা এলাকার মুজিবুর রহমান, সদস্য একই এলাকার জরিনা বেগম, রজব আলী, মো. আজিবর, মো. ইলিয়াছ, ইমান আলী, মো. ওমর, মো. হায়দার, আবু সাঈদ, মো. এনামুল ও মো. শরিফুল।
এ বিষয়ে আজ বৃহস্পতিবার সকালে নড়াইল সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাজেদুল ইসলাম বলেন, ‘সরকারি গাছ চুরি করে বিক্রির অভিযোগে একটি মামলা হয়েছে। ঘটনার তদন্ত করে দোষী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনানুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
মামলার এজহারে বাদী অভিযোগ করেছেন, গত ২৯ এপ্রিল নড়াইল সদর উপজেলার শাহাবাদ বাজার থেকে হাজির বটতলা পর্যন্ত সরকারি রাস্তার জায়গা থেকে গাছ কাটা ও চুরি করে বিক্রির সংবাদ পেয়ে তিনি ঘটনাস্থলে যান। উপস্থিত হয়ে দেখেন, কাটা গাছবোঝাই একটি ট্রাক এবং নছিমন জব্দ করেছেন নড়াইল সদর উপজেলা ভূমি অফিসের সহকারী কমিশনার দেবাশীষ অধিকারী। তখন ঘটনাস্থলে শ্রমিকদের জিজ্ঞাসাবাদ ও খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন, মামলার আসামিরা কোনো ধরনের অনুমতি ছাড়াই খাসজমি থেকে গাছ কেটে বিক্রি করেছেন। এর আগেও একবার তাঁরা ওই জমি থেকে গাছ বিক্রি করেছিলেন। জব্দ করা গাছের লগ, ডালপালা এবং আগে কাটা গাছের অবশিষ্ট ভূমিসংলগ্ন গুঁড়ি পর্যবেক্ষণ করে বোঝা গেছে, ওই স্থান থেকে আনুমানিক পাঁচ লাখ টাকার অধিক গাছ চুরি করে কাটা ও বিক্রি হয়েছে।
প্রশিকা নড়াইল উন্নয়ন এলাকার ব্যবস্থাপক শাহাব উদ্দিন বলেন, ২০০৯ সালে প্রশিকা, ইউনিয়ন পরিষদ ও প্রভাতী যুব সংঘের যৌথ উদ্যোগে একটি চুক্তির মাধ্যমে সড়কের পাশে গাছগুলো রোপণ করেছিল। সে সময় সড়কটি খাস খতিয়ানভুক্ত ছিল না। বর্তমানে তা সরকারের আওতায় পড়ায় গাছ কাটার অনুমতি চেয়ে ইউএনওর কাছে আবেদন করা হয়েছিল, তবে প্রশাসন কোনো সিদ্ধান্ত দেয়নি। কিছুদিন আগে ইউপি সদস্য ইব্রাহিম তাঁকে ফোনে জানান, বিদ্যুৎ বিভাগের কাটা ডালপালা বিক্রি করতে চান চেয়ারম্যান। বিদ্যুৎ বিভাগের কাটা ডালপালাগুলো পড়ে থেকে নষ্ট হবে ভেবে তিনি বিক্রিতে সম্মতি দেন। পরে গাছ কীভাবে বা কারা কেটেছে, তা তিনি জানেন না।
মামলা করার আগে অবৈধভাবে গাছ কাটার অভিযোগের ব্যাপার জানতে চাইলে ইউপি চেয়ারম্যান জিয়াউর রহমান বলেছিলেন, প্রশিকার সঙ্গে চুক্তির একটি পক্ষ ছিল ইউনিয়ন পরিষদ। সেই হিসেবে গাছ কাটার অনুমতি নিতে ইউএনও বরাবর প্রশিকার আবেদন তিনি চেয়ারম্যান হিসেবে সুপারিশ করেছিলেন। তবে গাছ কেটেছে প্রশিকা আর তাদের সংগঠন। এখানে চেয়ারম্যান-মেম্বরের কিছু নেই।
নড়াইল সদর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) দেবাশীষ অধিকারী বলেন, প্রশিকার চুক্তির সময় সড়কটি ব্যক্তিমালিকানাধীন জমিতে ছিল, পরে ২০১৫ সালে এটি খাস খতিয়ানভুক্ত হয়। খাসজমি থেকে গাছ কাটা বেআইনি। এ কারণে তাঁদের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে।