নানা সমস্যায় জর্জরিত নবীগঞ্জের হরিজন সম্প্রদায়ের অস্তিত্ব এখন সংকটের মুখে। সেখানে থাকা তাদের ১১টি পরিবারের সদস্যরা দিন কাটাচ্ছেন নানামুখী সমস্যায়। জীবিকার তাগিদে তাদের অনেকেই পৈতৃক পেশা ছেড়ে যোগ দিচ্ছেন অন্য পেশায়।
কাজের জন্য নির্দিষ্ট জায়গার অভাব, সামাজিকভাবে নিম্ন মর্যাদা, আবাসন সংকট, বিদ্যুৎ ও স্যানিটেশন সমস্যা, পড়ালেখার পর্যাপ্ত সুযোগ না পাওয়াসহ নানা সমস্যায় প্রতিদিন ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে তাদের। এমন পরিস্থিতিতে পুনর্বাসন ও নিজেদের ঐতিহ্যগত পেশাকে আধুনিকায়নে সরকারের সহায়তা চেয়েছেন তারা।
ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক সংলগ্ন নবীগঞ্জ উপজেলার আউশকান্দি বাজারের পাশে উলুকান্দি গ্রামে গিয়ে জানা যায়, ব্রিটিশ আমল থেকে সেখানে বসবাস করে আসছে হরিজন (মুচি) সম্প্রদায়ের বেশ কয়েকটি পরিবার। সে থেকেই এ পল্লির নামকরণ করা হয় মুচিবাড়ি।
মাত্র ১৩ শতক জায়গার মধ্যে অনেকটা গাদাগাদি করে সেখানে বাস করছেন ১১টি পরিবারের অন্তত শতাধিক সদস্য। এর মধ্যে তাদের অনেক জায়গাই স্থানীয় ভূমিখেকোদের দখলে রয়েছে বলেও অভিযোগ করেছেন সম্প্রদায়ের লোকজন। মুচি সম্প্রদায়ের লোকজন জানান, স্বাধীনতার ৫৪ বছর পেরিয়ে গেলেও তারা বিদ্যুতের সেবা পাচ্ছেন না।
তারা বলেন, নির্বাচনের সময় নানা প্রতিশ্রুতি দিয়ে ভোট আদায় করেন প্রার্থীরা। ভোটের পর তাদের চেহারা আর দেখা যায় না। এমনকি নির্বাচিত হলেই বিদ্যুতের ব্যবস্থা করে দেবেন বলেও আশ্বাস দিয়েছেন তাদের অনেকেই। এভাবেই চলছে যুগের পর যুগ। এ ছাড়াও হরিজনপাড়ায় নেই স্বাস্থ্যকর পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা। ওই ১১টি পরিবার মিলে রিং স্লাব দিয়ে কোনোমতে ২টি শৌচাগার তৈরি করে ব্যবহার করছে। 
এখানেই শেষ নয়। এ সম্প্রদায়ের পেশাগত দিক নিয়ে নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হয়নি। নেই সচেতনতামূলক শিক্ষার ব্যবস্থাও। যার কারণে হরিজনেরা জুতা মেরামতের জন্য যে চামড়া সংগ্রহ করেন, তার উচ্ছিষ্ট ফেলেন পার্শ্ববর্তী খালে। এতে করে খালের পানি দূষিত হয়ে গেছে। এ পানিই ব্যবহার করছেন এসব পরিবারের সদস্যরা।
মুচিপাড়ার শিশুদের অধিকাংশই শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত। আর্থিক অসচ্ছলতার কারণে বিভিন্ন কাজ করে তারা। ফলে তাদের স্কুলে যাওয়ার সময় হয় না। আবার অনেকেই বাবার কাজে সহযোগিতা করে।
আউশকান্দি ইউনিয়নের উলুকান্দি গ্রামের মুচিবাড়িতে বসবাসকারী লাখপতি, সুবল, বাবুল, লক্ষ্মণসহ অনেকেই জানান, সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত তারা কাজ করেন। সারাদিন কাজ করেও ২০০ টাকা উপার্জন করতে পারেন না। পরিবারে আর্থিক অনটন লেগেই থাকে। এভাবেই যুগের পর যুগ চলছে তাদের জীবন।
হরিজন সম্প্রদায়ের অন্য সদস্যরা জানান, তাদের বিয়ে, আত্মীয়তা, সালিশ-বিচার নিজেদের মধ্যেই হয়ে থাকে। নিম্নবর্ণের হিন্দু বলে তাদের বিয়ের নথি বা রেজিস্ট্রেশন হয় না এখনও। 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ব যবস থ অন ক ই পর ব র র অন ক সদস য সমস য

এছাড়াও পড়ুন:

ম্যাচ রেফারি পাইক্রফ্ট ক্ষমা চাওয়ার পরই খেলতে রাজি হয়েছিল পাকিস্তান

সংযুক্ত আরব আমিরাতের বিপক্ষে বাঁচা-মরার ম্যাচে টসের আগ পর্যন্ত দারুণ নাটকীয়তায় ঘেরা ছিল পাকিস্তানের ড্রেসিং রুম। ম্যাচ রেফারি অ্যান্ডি পাইক্রফ্টকে দায়িত্ব থেকে সরানোর দাবি তোলে পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড (পিসিবি)। তবে আইসিসি সে দাবি আমলে নেয়নি। শেষ পর্যন্ত নিজের ভুল স্বীকার করে পাকিস্তান অধিনায়ক সালমান আলী আগা ও দলের ম্যানেজারের কাছে ক্ষমা চান পাইক্রফ্ট। এরপরই মাঠে নামতে রাজি হয় পাকিস্তান দল।

ঘটনার সূত্রপাত ১৪ সেপ্টেম্বরের ভারত-পাকিস্তান ম্যাচ থেকে। টসের সময় দুই অধিনায়কের করমর্দন হয়নি। আরও বড় বিতর্ক তৈরি হয় ম্যাচ শেষে। জয়ী ভারতের ক্রিকেটাররা করমর্দন এড়িয়ে দ্রুত ড্রেসিং রুমে ফিরে যান। সালমান আলী আগার নেতৃত্বে পাকিস্তানের খেলোয়াড়রা দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করলেও সূর্যকুমার যাদব, শিভাম দুবেসহ পুরো ভারতীয় দল সেই শিষ্টাচার মানেনি।

আরো পড়ুন:

আজ মুখোমুখি শ্রীলঙ্কা-আফগানিস্তান, যে ম্যাচে ঝুলছে বাংলাদেশের ভাগ্য

আমিরাতকে হারিয়ে সুপার ফোরে পাকিস্তান

এমন ঘটনার প্রতিবাদে পাকিস্তান অধিনায়ক পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠান বর্জন করেন। পরে আইসিসির কাছে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ জানায় পিসিবি। তাদের দাবি ছিল, ম্যাচ রেফারি পাইক্রফ্ট ইচ্ছাকৃতভাবেই দুই অধিনায়কের হাত মেলানো আটকান, যা আইসিসির আচরণবিধি ও ক্রিকেটের স্পিরিটের পরিপন্থী।

যদিও আইসিসির ব্যাখ্যা ছিল ভিন্ন। তারা জানায়, এসিসির কর্মকর্তাদের নির্দেশেই কাজ করেছেন পাইক্রফ্ট। কিন্তু পাকিস্তান নড়েচড়ে বসে। এমনকি জানিয়ে দেয়, পাইক্রফ্ট দায়িত্বে থাকলে সংযুক্ত আরব আমিরাতের বিপক্ষে মাঠে নামবে না তারা। এই হুমকির কারণে ম্যাচের শুরুর সময় এক ঘণ্টা পিছিয়ে দিতে বাধ্য হয় আয়োজকরা।

লাহোরে রমিজ রাজা, নাজাম শেঠিসহ শীর্ষ কর্মকর্তাদের নিয়ে জরুরি বৈঠক করেন পিসিবি চেয়ারম্যান মহসিন নাকভি। পরে সমঝোতার পথ খোঁজা হয়। অবশেষে পাইক্রফ্ট স্বীকার করেন, ভুল বোঝাবুঝির কারণেই পরিস্থিতি এতদূর গড়ায়, এবং তিনি পাকিস্তান অধিনায়ক ও ম্যানেজারের কাছে ক্ষমা চান। তাতেই সন্তুষ্ট হয়ে মাঠে নামার সিদ্ধান্ত নেয় পাকিস্তান দল।

বুধবার রাতে ‘এ’ গ্রুপে নিজেদের সেই শেষ ম্যাচে আরব আমিরাতকে ৪১ রানের ব্যবধানে হারিয়ে সুপার ফোরে ভারতের সঙ্গী হয় সালমান-শাহীনরা। দুবাই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে টস হেরে ব্যাট করতে নেমে পাকিস্তান সংগ্রহ করে ৯ উইকেটে ১৪৯ রান। লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে ১৭.৪ ওভারে ১০৫ রানেই গুটিয়ে যায় আরব আমিরাত।

ঢাকা/আমিনুল

সম্পর্কিত নিবন্ধ