চোখে-মুখে রক্ত লেগে আছে; আঙুল দিয়ে চুপ করিয়ে দিতে ইশারা করছেন ববি দেওল। ‘অ্যানিমেল’ সিনেমার বহুল আলোচিত এই দৃশ্য যদি আপনার চেনা হয়, তবে ‘বরবাদ’ সিনেমার টিজারের শুরুতে শাকিব খানের একই রকম দৃশ্যের প্রেরণা কোথায়, সেটাও বুঝে যাওয়ার কথা। ঈদে মুক্তির অপেক্ষায় থাকা সিনেমার মধ্যে দক্ষিণ ভারতীয় নির্মাতা সন্দীপ রেড্ডি ভাঙ্গার প্রভাব স্পষ্ট। ‘দক্ষিণি প্রভাব’ ছাড়াও এবারের ঈদে মুক্তির অপেক্ষায় থাকা সিনেমার মধ্যে কিছু মিল আছে, আছে কিছু অমিলও।
নৃশংসতাই কি এখনকার সিনেমার ভাষা
‘আজকাল সিনেমা যেন কারখানায় তৈরি হয়। কোনো একটা কোম্পানির নুডলস হয়তো জনপ্রিয়তা পেল, আরেক উদ্যোক্তা হুবহু তেমন পণ্য তৈরিতে ঝাঁপিয়ে পড়েন। সিনেমার ক্ষেত্রেও তাই হয়েছে।’ মাস তিনেক আগে ধর্মশালা চলচ্চিত্র উৎসবে ভারতীয় গণমাধ্যম মানিকন্ট্রোল-এর সঙ্গে সাক্ষাৎকারে কথাগুলো বলেছিলেন নির্মাতা দিবাকর ব্যানার্জি।
কবির সিং বানিয়েই বিতর্কিত হয়েছিলেন সন্দীপ রেড্ডি ভাঙ্গা, ‘অ্যানিমেল’ দিয়ে সেই বিতর্ক আরও প্রবলভাবে ছড়িয়ে পড়ে। সঙ্গে ছড়িয়ে পড়ে পর্দায় নৃশংসতা দেখানোর প্রবণতাও। গত ঈদে মুক্তি পাওয়া রায়হান রাফীর তুফান মুক্তির সময়ই তুলনাটা এসেছিল। রাফী অবশ্য সেই সিনেমায় ‘দক্ষিণি প্রভাব’ অস্বীকার করেননি, একই সুরে কথা বলেছেন বরবাদ নির্মাতা মেহেদী হাসানও। কেবল এই সিনেমা নয়, ঈদের মুক্তির অপেক্ষায় থাকা দুই সিনেমা—‘জংলি’ ও ‘দাগি’র টিজারেও সহিংসতার ইঙ্গিত পাওয়া গেছে। পর্দায় নির্মাতা কতটা দেখিয়েছেন, সেটা সিনেমা মুক্তির পর বোঝা যাবে কিন্তু টিজারে সেটা দেখানোর ‘প্রতিশ্রুতি’ আছে। উপমহাদেশের সিনেমার সাম্প্রতিক ঘটনা বলছে, পর্দায় সহিংসতা থাকলে সে সিনেমা নিয়ে দর্শকের বাড়তি আগ্রহ তৈরি হয়।
‘বরবাদ’–এ শাকিব খান। ভিডিও থেকে.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
রাশিয়া থেকে জ্বালানি তেল কেনা কমিয়েছে ভারতের পরিশোধনাগারগুলো, ছাড় কমে যাওয়ার প্রভাব
ভারতের রাষ্ট্রায়ত্ত তেল শোধনাগারগুলো গত সপ্তাহে রাশিয়ার তেল কেনা বন্ধ করেছে বলে রয়টার্সের সংবাদে বলা হয়েছে। গত মাসে ছাড়ের পরিমাণ কমে আসার কারণে মূলত তাদের তেল কেনা কমেছে। এ খবরে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছেন।
সেই সঙ্গে গত বৃহস্পতিবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ভারতের পণ্যে ২৫ শতাংশ পাল্টা শুল্ক আরোপ করার সময় বলেছেন, রাশিয়া থেকে জ্বালানি তেল কিনে ভারত রাশিয়া–ইউক্রেন যুদ্ধে রাশিয়ার ব্যয় মেটাতে সহযোগিতা করছে। ফলে তাদের এ ২৫ শতাংশ শুল্ক দেওয়ার পাশাপাশি অনির্দিষ্ট হারে দণ্ড দিতে হবে। বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম তেল আমদানিকারক ভারত সমুদ্রপথে রপ্তানি হওয়া রুশ অপরিশোধিত তেলের সবচেয়ে বড় ক্রেতা।
দেশটির রাষ্ট্রায়ত্ত শোধনাগারগুলো, যেমন ইন্ডিয়ান অয়েল করপোরেশন, হিন্দুস্তান পেট্রোলিয়াম করপোরেশন, ভারত পেট্রোলিয়াম করপোরেশন ও মাঙ্গালোর রিফাইনারি অ্যান্ড পেট্রোকেমিক্যালস লিমিটেড এক সপ্তাহের বেশি সময় ধরে রুশ অপরিশোধিত তেলের কোনো দরপত্র দেয়নি বলে সংশ্লিষ্ট চারটি সূত্র রয়টার্সকে জানিয়েছে। এ বিষয়ে ফেডারেল তেল মন্ত্রণালয় ও সংশ্লিষ্ট কোম্পানিগুলোর সঙ্গে রয়টার্স যোগাযোগ করলেও তারা মন্তব্য করেনি।
সূত্রগুলো জানায়, এই চার শোধনাগার নিয়মিতভাবে সরবরাহ চুক্তির ভিত্তিতে রুশ তেল কিনত; কিন্তু এখন তারা বিকল্প জোগানের জন্য স্পট মার্কেটে ঝুঁকেছে—প্রধানত মধ্যপ্রাচ্যের আবুধাবির মুরবান ক্রুড ও পশ্চিম আফ্রিকার তেল। বেসরকারি শোধনাগার রিলায়েন্স ইন্ডাস্ট্রিজ ও নায়ারা এনার্জি ভারতে রুশ তেলের সবচেয়ে বড় ক্রেতা হলেও রাষ্ট্রায়ত্ত শোধনাগারগুলো দেশটির মোট দৈনিক ৫ দশমিক ২ মিলিয়ন বা ৫২ লাখ ব্যারেল শোধনক্ষমতার ৬০ শতাংশের বেশি নিয়ন্ত্রণ করে।
গত ১৪ জুলাই ট্রাম্প সতর্ক করে বলেন, ইউক্রেনের সঙ্গে বড় ধরনের শান্তিচুক্তিতে পৌঁছানো না গেলে যেসব দেশ রুশ তেল কিনছে, সেই দেশগুলোর ওপর ১০০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হবে।
এদিকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড দাবি করেছেন, তিনি ‘শুনেছেন’ ভারত রুশ তেল আমদানি বন্ধ করেছে। শুধু তা–ই নয়, এটিকে তিনি ভালো পদক্ষেপ হিসেবে প্রশংসা করেছেন। তবে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় স্পষ্ট করে জানিয়েছে, দেশের জ্বালানি কেনাবেচা বাজারের গতি–প্রকৃতি ও জাতীয় স্বার্থের ভিত্তিতে নির্ধারিত হয়। ভারতীয় তেল কোম্পানিগুলো রাশিয়ান তেল আমদানি বন্ধ করেছে—এমন কোনো তথ্য তাদের কাছে নেই।
সংবাদ সংস্থা এএনআইকে ট্রাম্প আরও বলেন, ‘আমার জানা মতে, ভারত আর রাশিয়া থেকে তেল কিনবে না, এটা ভালো পদক্ষেপ। দেখা যাক, কী হয়।’
রাশিয়ার তেল কেনা নিয়ে ট্রাম্পের আক্রমণের জবাবে গতকাল শুক্রবার সংবাদ সম্মেলনে ভারতের পাররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল বলেন, ‘জ্বালানির কেনার উৎস নির্ধারণের বিষয়ে আমাদের বৃহত্তর দৃষ্টিভঙ্গির বিষয়ে সবাই সচেতন। বাজারের সহজলভ্যতা অনুযায়ী আমরা তেল কেনার চেষ্টা করি। এ বিষয়ে আমাদের ধারাবাধা উৎস নেই।’
রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্কের বিষয়টিও ভারতের পক্ষ থেকে স্পষ্ট করা হয়। পরিষ্কার জানানো হয়, রাশিয়া ভারতের অংশীদার ‘পরীক্ষিত’। এক বিবৃতিতে বলা হয়, বিভিন্ন দেশের সঙ্গে ভারতের পররাষ্ট্রনীতির নিজস্ব ভিত্তি আছে। তৃতীয় দেশের লেন্স দিয়ে তা দেখা উচিত নয়।