রংপুর মেডিকেল কলেজে (রমেক) ছাত্রদলের কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। তবে কমিটি ঘোষণাকে কেন্দ্র করে ‘রাজনীতিমুক্ত ক্যাম্পাসের’ দাবি নিয়ে সরব হয়েছেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। এ ঘটনায় সাধারণ শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে ‘ক্যাম্পাস রাজনীতি’ অবাঞ্ছিত ঘোষণা করে বিবৃতি দেওয়া হয়েছে।

অবশ্য ছাত্রদলের নেতারা বলছেন, ক্যাম্পাসে বিভিন্ন নামে ইসলামী ছাত্রশিবির রাজনীতি করলেও সাধারণ শিক্ষার্থীদের ব্যানারে তারা অন্যদের রাজনীতি করার সুযোগ দিতে চাচ্ছে না। তবে ইসলামী ছাত্রশিবির অভিযোগ ভিত্তিহীন বলে দাবি করেছে।

গত মঙ্গলবার ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সংসদের সভাপতি রাকিবুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দীন স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে মো.

আল মামুনকে সভাপতি ও শামছুদ্দোহা আলমকে সাধারণ সম্পাদক করে রংপুর মেডিকেল কলেজে ছয় সদস্যের কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। একই সঙ্গে আগামী ৩০ দিনের মধ্যে কমিটি পূর্ণাঙ্গ করে কেন্দ্রে জমা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

কলেজের কয়েকজন শিক্ষার্থীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর ১১ আগস্ট ক্যাম্পাসে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধসহ ছয় দফা দাবি জানান সাধারণ শিক্ষার্থীরা। এরপর শিক্ষার্থীদের দাবি মেনে নিয়ে পরদিন ক্যাম্পাসে শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের রাজনীতি নিষিদ্ধ করে আদেশ জারি করে কলেজ প্রশাসন। এরপর থেকে রংপুর মেডিকেল কলেজে প্রকাশ্যে ছাত্ররাজনীতি বন্ধ। এর মধ্যে গত মঙ্গলবার ছাত্রদলের কমিটি ঘোষণা করা হয়।

ছাত্রদলের কমিটি ঘোষণার পর সাধারণ শিক্ষার্থীদের ব্যানারে বিবৃতি দেওয়া হয়। বিবৃতিতে বলা হয়, ‘জুলাই অভ্যুত্থান–পরবর্তী সময়ে ক্যাম্পাসের সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিতের লক্ষ্যে গত বছরের ১২ আগস্ট রমেকের একাডেমিক কাউন্সিলের সিদ্ধান্ত মোতাবেক ক্যাম্পাসে ছাত্র, শিক্ষক ও কর্মচারীদের সব ধরনের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়। নির্দেশ অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা গ্রহণ করার বিধান রাখা হয়। অথচ ছাত্রদল রংপুর মেডিকেল কলেজে কমিটি দেয়। কলেজ প্রশাসনের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে ও সাধারণ শিক্ষার্থীদের মতামত অগ্রাহ্য করে কতিপয় শিক্ষার্থীর এমন নিন্দনীয় কাজের তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি। আমরা সাধারণ শিক্ষার্থীরা ওই কমিটিকে প্রত্যাখ্যান করছি এবং ক্যাম্পাসে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করছি।’

ক্যাম্পাসে রাজনীতি নিষিদ্ধের নামে গুপ্ত রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড চালানো হচ্ছে বলে পাল্টা অভিযোগ করেছেন সদ্য ঘোষিত কমিটির সাধারণ সম্পাদক শামছুদ্দোহা আলম। তিনি বলেন, রংপুর মেডিকেল কলেজের তখনকার অধ্যক্ষ ছিলেন স্বাচিপের নেতা। ছাত্রলীগ নেতা ও স্বাচিপের চিকিৎসকদের সুরক্ষা দিতে তখন ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। এখন সাধারণ শিক্ষার্থীর নাম ব্যবহার করে ছাত্রশিবির গুপ্ত রাজনীতি করতে ছাত্ররাজনীতি বন্ধ চাইছে। যে বিবৃতি দেওয়া হয়েছে, তাতে সাধারণ শিক্ষার্থীরাও বিব্রত।

জানতে চাইলে রংপুর মহানগর ছাত্রশিবিরের সেক্রেটারি আনিছুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, রংপুর মেডিকেল কলেজে ছাত্রশিবিরের কোনো কমিটি নেই। তারা কোনো গুপ্ত রাজনীতি করেন না। তাঁদের বিরুদ্ধে করা অভিযোগ ভিত্তিহীন।

এ বিষয়ে কলেজের অধ্যক্ষ শরিফুল ইসলাম বলেন, ছাত্রদলের কমিটি ঢাকা থেকে ঘোষণা করা হয়েছে। কমিটি হওয়া আর কর্মকাণ্ড পরিচালনা এক নয়। ক্যাম্পাসে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা না করলে কমিটি নিয়ে আপত্তি থাকার কথা নয়।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: র প র ম ড ক ল কল জ ছ ত রদল র ক র র জন ত ইসল ম

এছাড়াও পড়ুন:

কোরবানির গরু কেনার আড়াই লাখ টাকা ছিনিয়ে নিতে ব্যবসায়ী জাকিরকে হত্যা করা হয়

রাজধানীর সবুজবাগের প্লাস্টিক ব্যবসায়ী জাকির হোসেনের সঙ্গে থাকা আড়াই লাখ টাকা ছিনিয়ে নিতেই ধারালো অস্ত্রের আঘাতে তাঁকে ছয় টুকরা করে লাশ বস্তায় ঢুকিয়ে কাছের একটি ঝোপের ভেতরে পুঁতে রাখা হয়। এর আগে আজহারুল ইসলাম (গ্রেপ্তার) মুঠোফোনে সবুজবাগের ভাইগদিয়ায় তাঁর ভাড়া বাসায় জাকিরকে (৫৫) ডেকে নেন।

গ্রেপ্তার আজহারুল ইসলাম (৩৯) আজ শুক্রবার আদালতে দেওয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে এ কথা বলেছেন বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে। আদালত তাঁর জবানবন্দি নিয়ে তাঁকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। এ ছাড়া এ হত্যাকাণ্ডে গ্রেপ্তার শুক্কুর আলী (৪৪), মো. রাজীব (২৬) ও স্বপনকে (২৫) পাঁচ দিন করে পুলিশি হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি দিয়েছেন আদালত। গ্রেপ্তার শুক্কুর আলী পেশায় রাজমিস্ত্রি এবং বাকিরা রংমিস্ত্রি।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সবুজবাগ থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মো. সামছুল আমিন আজ প্রথম আলোকে বলেন, গ্রেপ্তার আজহারুল, শুক্কুর আলী, রাজীব ও স্বপন জবানবন্দি দিতে রাজি হওয়ায় দুপুরে তাঁদের ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতে পাঠানো হয়। এর মধ্যে আজহারুল আদালত জবানবন্দি দেন। অপর তিনজন জবানবন্দি দিতে রাজি হননি। পরে তাঁদের সাত দিন করে রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন জানানো হয়। শুনানি শেষে আদালত তাঁদের পাঁচ দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

মামলার তদন্ত–সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, আজহারুল আদালতে দেওয়া জবানবন্দিতে বলেন, জাকির হোসেনের সঙ্গে তাঁদের চারজনের (আজহারুল, শুক্কুর আলী, রাজীব ও স্বপন) বন্ধুত্ব ছিল। তাঁরা একসঙ্গে আড্ডা দিতেন। মাঝেমধ্যে জাকিরের সঙ্গে তাঁর ভাইগদিয়ার ভাড়া বাসায় তাঁরা একসঙ্গে মদ্যপান করতেন। ৪ জুন রাতে জাকির নন্দীপাড়ায় শেখের বাজারের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান থেকে বাসায় ফিরছিলেন। তখন আজহারুল মুঠোফোনে জাকিরকে তাঁর বাসায় ডেকে নেন। ওই বাসায় আজহার একা থাকতেন। আগেই জাকির তাঁদের জানিয়েছিলেন, তাঁর কাছে কোরবানির গরু কেনার আড়াই লাখ টাকা আছে এবং ডেমরার আমুলিয়া পশুরহাট থেকে কোরবানির জন্য গরু কিনবেন। জাকির তাঁর বাসায় পৌঁছানোর পর ওই টাকার ওপর তাঁদের সবার লোভ জাগে। তাঁরা টাকা ছিনিয়ে নিতে গেলে জাকির বাধা দেন। তখন ইস্পাতের পাইপ দিয়ে জাকিরের মাথায় সজোরে আঘাত করেন আজহারুল। এতে জাকির অচেতন হয়ে যান। এ সময় তাঁর কাছ থেকে এক হাজার টাকার দুটি বান্ডিল ছিনিয়ে নিয়ে সেই টাকা শুক্কুর আলীর কাছে জমা রাখেন।

পুলিশ সূত্র জানায়, আজহারুল আদালতকে জানান, জাকিরকে বাঁচিয়ে রাখা হলে তাঁরা সবাই ফেঁসে যাবেন—এমন আশঙ্কায় জাকিরকে হত্যা করে লাশ গুম করার সিদ্ধান্ত নেন। এরপর ধারালো অস্ত্রের আঘাতে জাকিরের শরীর থেকে মাথা বিচ্ছিন্ন করে ফেলেন। এরপর শুক্কুর, রাজীব ও স্বপন তাঁর শরীর টুকরা টুকরা করেন। পরে লাশের ছয়টি টুকরা রঙের দুটি পাত্রে ভরে একটি অটোরিকশায় করে দক্ষিণ ভাইগদিয়ায় নিয়ে যান। শুক্কুর, রাজীব ও স্বপন অন্য পথ দিয়ে দক্ষিণ ভাইগদিয়ায় আসেন। তখন তাঁরা সবাই মিলে বালতিভর্তি লাশের টুকরাগুলো পাশের ঝোপে নিয়ে যান। এরপর সেখানে খুঁড়ে লাশের টুকরাগুলো পুঁতে রাখেন।

আজহারুল আদালতকে বলেন, জাকিরের কাছ থেকে ছিনিয়ে নেওয়া টাকা ভাগাভাগি করার আগেই তাঁরা পুলিশের হাতে ধরা পড়েন।

পুলিশ কর্মকর্তা সামছুল আমিন বলেন, আজহারুলের বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাহেরচরে। বাকি তিনজন ঢাকার সবুজবাগের ভাইগদিয়ার স্থায়ী বাসিন্দা।

প্লাস্টিক ব্যবসায়ী জাকির হোসেন সপরিবার সবুজবাগ থানার ভাইগদিয়া এলাকায় থাকতেন। ৪ জুন জাকির হোসেন নিখোঁজ হন। এরপর স্বজনেরা বিভিন্ন স্থানে খোঁজ করেও তাঁর সন্ধান পাননি। পরদিন জাকির নিখোঁজ রয়েছেন বলে তাঁর স্ত্রী রেখা বেগম সবুজবাগ থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন। এর মধ্যে জাকিরের খোঁজ না পাওয়ায় তিনি ১০ জুন আজহার আলীসহ অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামি করে সবুজবাগ থানায় একটি অপহরণের মামলা করেন।

পুলিশ কর্মকর্তা সামছুল আমিন বলেন, এ মামলার তদন্ত করতে গিয়ে এলাকার ক্লোজড সার্কিট টেলিভিশন (সিসিটিভি) ক্যামেরার ফুটেজ বিশ্লেষণ ও তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় হত্যাকাণ্ডে জড়িত আজহারুলকে শনাক্ত করা হয়। গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে আজহারের অবস্থান নিশ্চিত হয়ে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাঁর দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে হত্যায় জড়িত অভিযোগে গতকাল রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে অপর তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়।

ঢাকা মেডিকেল কলেজের মর্গে ময়নাতদন্ত শেষে গতকাল রাতে জাকির হোসেনকে ভাইগদিয়ায় দাফন করা হয়।

সবুজবাগ থানার ওসি ইয়াছিন আলী প্রথম আলোকে বলেন, জমিজমা নিয়ে বিরোধের জের ধরে জাকিরকে হত্যা করা হয়েছে বলে তাঁর পরিবার অভিযোগ করলেও তদন্তে এখন পর্যন্ত এর সত্যতা পাওয়া যায়নি। জাকির হত্যায় আরও একজন জড়িত। তাঁকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • পুরনো স্বাদের ঝুরা মাংসের
  • ভাত খাওয়ার সময় কেন ভাতটাই পরে খেতে বলেন চিকিৎসকেরা?
  • অ্যান্টার্কটিকায় বিরল স্কুইডের সন্ধান
  • পানিতে ভাসছিল ২২ দিনের শিশুর মৃতদেহ, ঘরে ঘুমিয়ে ছিলেন মা
  • বাঁধন কাঁদলেন, কিন্তু কেন...
  • মামাত বোনকে ধর্ষণ-হত্যা করে নিখোঁজের গল্প সাজায় নয়ন: পুলিশ
  • আমাদের যত ঘুঘু 
  • বাউন্ডারি সীমানায় ক্যাচের নিয়ম পাল্টাচ্ছে এমসিসি
  • কমিটি নেই, সবাই নেতা
  • কোরবানির গরু কেনার আড়াই লাখ টাকা ছিনিয়ে নিতে ব্যবসায়ী জাকিরকে হত্যা করা হয়