ওয়ার্ল্ড প্রেস ফটো প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের তালিকায় প্রথম আলোর শুভ্র কান্তি
Published: 27th, March 2025 GMT
ওয়ার্ল্ড প্রেস ফটো প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের তালিকায় স্থান পেয়েছেন প্রথম আলোর নিজস্ব আলোকচিত্র সাংবাদিক শুভ্র কান্তি দাশ। নেদারল্যান্ডসের আমস্টারভিত্তিক ওয়ার্ল্ড প্রেস ফটো ফাউন্ডেশন এই প্রতিযোগিতার আয়োজন করে। ওয়ার্ল্ড প্রেস ফটোর ৭০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদ্যাপনের অংশ হিসেবে এবার এ প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের নাম ঘোষণায় ওয়ার্ল্ড প্রেস ফটো জানিয়েছে, এ বছর প্রতিযোগিতায় ১৪১টি দেশের ৩ হাজার ৭৭৮ আলোকচিত্রী প্রায় ৬০ হাজার আলোকচিত্র জমা দিয়েছিলেন। সেগুলোর মধ্য থেকে পুরস্কার বিজয়ী আলোকচিত্রগুলো বেছে নেওয়া হয়েছে। এসব আলোকচিত্র প্রামাণিক আলোকচিত্র সাংবাদিকতা ও ডকুমেন্টারি আলোকচিত্রের সাহসিকতাকে তুলে ধরে এবং ভিজ্যুয়াল শ্রেষ্ঠত্ব ও বস্তুনিষ্ঠতার প্রতিফলনের জন্য স্থান তৈরি করে দেয়। একটি স্বাধীন আন্তর্জাতিক বিচারকমণ্ডলী ভিজ্যুয়ালের মান, গল্প বলার ঢং ও বৈচিত্র্যপূর্ণ উপস্থাপনাকে বিবেচনায় নিয়ে বিশ্বের সেরা আলোকচিত্রগুলো বাছাই করে।
আফ্রিকা, এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল ও ওশেনিয়া, ইউরোপ, উত্তর ও মধ্য আমেরিকা, দক্ষিণ আমেরিকা এবং পশ্চিম, মধ্য ও দক্ষিণ এশিয়া—এই ছয়টি অঞ্চলে ভাগ করে প্রতিযোগিতার বিজয়ী আলোকচিত্রগুলো বেছে নেওয়া হয়েছে। প্রতিটি অঞ্চলে তিনটি একক আলোকচিত্র, তিনটি গল্প এবং একটি দীর্ঘমেয়াদি আলোকচিত্র প্রকল্পকে বিজয়ী হিসেবে নির্বাচন করা হয়েছে। এবারের বিজয়ীদের মধ্যে আছেন ৩০টি দেশের ৪২ জন আলোকচিত্রী।
প্রথম আলোর শুভ্র কান্তি দাশ পশ্চিম, মধ্য ও দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলে একক আলোকচিত্রে তিন বিজয়ীর একজন নির্বাচিত হয়েছেন। তাঁর এই আলোকচিত্রের শিরোনাম ‘দ্য ক্যানভাস অব পাওয়ার’, গত বছর ৫ আগস্ট রাজধানীর বিজয় সরণি মোড়ের মৃত্যুঞ্জয়ী প্রাঙ্গণে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাস্কর্য ভাঙচুরের চিত্র এটি।
আলোকচিত্রটির বর্ণনায় ওয়াল্ড প্রেস ফটো বলেছে, ২০২৪ সালের জুলাইয়ে সরকারি চাকরিতে কোটার বিরুদ্ধে ছাত্র বিক্ষোভ সরকারবিরোধী বিক্ষোভে রূপ নেয়, যে সরকারের বিরুদ্ধে বেআইনি আটক, গুম এবং ব্যাপকভাবে ভিন্ন মত দমনের অভিযোগ রয়েছে। এই অস্থিরতার পেছনে সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য দীর্ঘদিনের লড়াই এবং মত প্রকাশের স্বাধীনতাকে ক্ষুণ্ন করা সাইবার নিরাপত্তা আইনের বিরুদ্ধে ক্ষোভও কাজ করেছে।
প্রথম দিকে শান্তিপূর্ণ হলেও কর্তৃপক্ষ ও সরকারপন্থী সশস্ত্র ব্যক্তিরা বিক্ষোভকারীদের ওপর দমন-পীড়ন চালালে তা সহিংস বিক্ষোভে রূপ নেয়। ওই দমন-পীড়নে অন্তত ১ হাজার ৪০০ মানুষ নিহত হন। আগস্টে সরকারের পতন ঘটে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে নির্বাসনে চলে যান এবং অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়।
শুভ্র কান্তি দাশের ‘দ্য ক্যানভাস অব পাওয়ার’-এর সঙ্গে এ বছর পশ্চিম, মধ্য ও দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের অন্য বিজয়ীরা হলেন—একক বিভাগে আনাদোলু এজেন্সির আলোকচিত্রী মুরাত সেঙ্গুলের ‘ড্রোন অ্যাটাকস ইন বৈরুত’ এবং দ্য নিউইয়র্ক টাইমসের আলোকচিত্রী সামার আবু এলৌফের ‘মাহমুদ আজৌর, এজড নাইন’। এ ছাড়া গল্প বিভাগে আনাদোলুর আলোকচিত্রী আলী জাদাল্লাহর ‘গাজা আন্ডার ইসরায়েলি অ্যাটাক’, ফাউন্ডেশন কারমিগনাকের আলোকচিত্রী কিয়ানা হায়েরির ‘নো ওম্যানস ল্যান্ড’ এবং রেভিস্টা ফাইভডব্লিউর আলোকচিত্রী স্যামুয়েল নাকারের ‘দ্য শ্যাডোস অলরেডি হ্যাভ নেমস’। দীর্ঘমেয়াদি প্রকল্প বিভাগে বিজয়ী হয়েছে ইব্রাহিম আলিপুরের কাজ ‘বুলেটস হ্যাভ নো বর্ডারস’।
২০২৫ সালের ‘ওয়ার্ল্ড প্রেস ফটো অব দ্যা ইয়ার’ এবং আরও দুজন ফাইনালিস্টের নাম ঘোষণা করা হবে আগামী ১৭ এপ্রিল নেদারল্যান্ডসের আমস্টারডামের দ্য নিউভে কার্কে অনুষ্ঠেয় ফ্ল্যাগশিপ আলোকচিত্র প্রদর্শনী ২০২৫–এর প্রেস উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে। আর ১৬ মে আমস্টারডামে এক অনুষ্ঠানে সব পুরস্কারবিজয়ী আলোকচিত্রীর হাতে পুরস্কার তুলে দেওয়া হবে।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনা কমাতে গুরুত্ব আরোপ
কাশ্মীরের পেহেলগামে হামলার পর ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনা কার্যত সামরিক সংঘাতে রূপ নেওয়ার আশঙ্কা ক্রমেই বাড়ছে। এ পরস্থিতিতে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ ও ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্করকে ফোন করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও। বুধবার দুজনকে করা এ ফোন কলে তিনি ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সৃষ্টি হওয়া উত্তেজনা কমানোর ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন। এছাড়া দুই
ফোনালাপের বিষয়ে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর থেকে দেওয়া পৃথক বিবৃতিতে এই তথ্য জানানো হয়েছে।
ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্করের সঙ্গে ফোনে কথা বলার সময় মার্কো রুবিও বলেন, তিনি পেহেলগাম হামলায় নিহতদের জন্য দুঃখ প্রকাশ করছেন এবং যুক্তরাষ্ট্র সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে ভারতের সঙ্গে কাজ করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
তবে তিনি আরও বলেন, ভারত যেন পাকিস্তানকে অভিযুক্ত করার আগে সতর্ক থাকে, কারণ এখনও পর্যন্ত ভারত এই হামলায় পাকিস্তানের সম্পৃক্ততার কোনও প্রমাণ প্রকাশ করেনি।
মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ট্যামি ব্রুস এক বিবৃতিতে বলেছেন, পররাষ্ট্রমন্ত্রী পেহেলগামে ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলায় প্রাণহানির জন্য দুঃখ প্রকাশ করেছেন এবং সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে ভারতের সঙ্গে সহযোগিতার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেছেন। তিনি দক্ষিণ এশিয়ায় উত্তেজনা কমাতে এবং শান্তি ও নিরাপত্তা বজায় রাখতে ভারতকে পাকিস্তানের সঙ্গে কাজ করার জন্য বলেছেন।
পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ট্যামি ব্রুস বলেন, পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফের সঙ্গে ফোনালাপে রুবিও- ২২ এপ্রিল ভারত-শাসিত কাশ্মীরের পর্যটন কেন্দ্র পেহেলগামে সন্ত্রাসী হামলার নিন্দা করার প্রয়োজনীয়তার কথা বলেছেন।
তিনি এক বিবৃতিতে বলেছেন, রুবিও এই অযৌক্তিক হামলার তদন্তে পাকিস্তানি কর্মকর্তাদের সহযোগিতার আহ্বান জানিয়েছেন।
জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ বলেন, ভারতের উস্কানিমূলক আচরণ শুধু উত্তেজনাই বাড়াচ্ছে এবং পাকিস্তানের সন্ত্রাসবিরোধী প্রচেষ্টাকে বিভ্রান্ত করছে। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি আহ্বান জানান, যেন তারা ভারতের ওপর দায়িত্বশীল আচরণ ও ভাষার ব্যবহার নিশ্চিত করতে চাপ প্রয়োগ করে।
এর আগে গত ২২ এপ্রিল মঙ্গলবার বিকেলে কাশ্মীরের পেহেলগাম জেলার বৈসরণ তৃণভূমিতে বন্দুকধারীদের হামলায় অন্তত ২৬ জন নিহত হন, যাদের প্রায় সবাই পর্যটক। হামলার দায় স্বীকার করে রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্ট নামে একটি সংগঠন। এটিকে পাকিস্তানভিত্তিক লস্কর-ই-তৈয়্যেবার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বলে মনে করা হয়।
এ ঘটনায় আরও বেশ কয়েকজনকে আহত হন। যাদের গুলি করে হত্যা করা হয়েছে, তারা সবাই পুরুষ। বস্তুত, ২২ এপ্রিলের হামলা ছিল ২০১৯ সালের পুলোয়ামা হামলার পর জম্মু ও কাশ্মীরে সবচেয়ে বড় প্রাণঘাতী হামলা। বর্তমানে এ ঘটনায় দুই দেশের মধ্যে চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে।
পেহেলগামের ভয়াবহ ওই হামলার জেরে ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক তলানিতে ঠেকেছে। দুই দেশের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ সিন্ধু পানিবণ্টন চুক্তি স্থগিত করেছে ভারত। জবাবে সিমলা চুক্তি স্থগিত ও ভারতীয় বিমানের জন্য নিজেদের আকাশসীমা বন্ধের ঘোষণা দেয় পাকিস্তান।
তাছাড়া, হামলার পরে দুই দেশই ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে প্রতিবেশী দেশের নাগরিকদের ভিসা বাতিল করে ফিরে যাওয়ার নির্দেশ দেয়। সূত্র-এএফপি