ওয়ার্ল্ড প্রেস ফটো প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের তালিকায় স্থান পেয়েছেন প্রথম আলোর নিজস্ব আলোকচিত্র সাংবাদিক শুভ্র কান্তি দাশ। নেদারল্যান্ডসের আমস্টারভিত্তিক ওয়ার্ল্ড প্রেস ফটো ফাউন্ডেশন এই প্রতিযোগিতার আয়োজন করে। ওয়ার্ল্ড প্রেস ফটোর ৭০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদ্‌যাপনের অংশ হিসেবে এবার এ প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়েছে।

প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের নাম ঘোষণায় ওয়ার্ল্ড প্রেস ফটো জানিয়েছে, এ বছর প্রতিযোগিতায় ১৪১টি দেশের ৩ হাজার ৭৭৮ আলোকচিত্রী প্রায় ৬০ হাজার আলোকচিত্র জমা দিয়েছিলেন। সেগুলোর মধ্য থেকে পুরস্কার বিজয়ী আলোকচিত্রগুলো বেছে নেওয়া হয়েছে। এসব আলোকচিত্র প্রামাণিক আলোকচিত্র সাংবাদিকতা ও ডকুমেন্টারি আলোকচিত্রের সাহসিকতাকে তুলে ধরে এবং ভিজ্যুয়াল শ্রেষ্ঠত্ব ও বস্তুনিষ্ঠতার প্রতিফলনের জন্য স্থান তৈরি করে দেয়। একটি স্বাধীন আন্তর্জাতিক বিচারকমণ্ডলী ভিজ্যুয়ালের মান, গল্প বলার ঢং ও বৈচিত্র্যপূর্ণ উপস্থাপনাকে বিবেচনায় নিয়ে বিশ্বের সেরা আলোকচিত্রগুলো বাছাই করে।

আফ্রিকা, এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল ও ওশেনিয়া, ইউরোপ, উত্তর ও মধ্য আমেরিকা, দক্ষিণ আমেরিকা এবং পশ্চিম, মধ্য ও দক্ষিণ এশিয়া—এই ছয়টি অঞ্চলে ভাগ করে প্রতিযোগিতার বিজয়ী আলোকচিত্রগুলো বেছে নেওয়া হয়েছে। প্রতিটি অঞ্চলে তিনটি একক আলোকচিত্র, তিনটি গল্প এবং একটি দীর্ঘমেয়াদি আলোকচিত্র প্রকল্পকে বিজয়ী হিসেবে নির্বাচন করা হয়েছে। এবারের বিজয়ীদের মধ্যে আছেন ৩০টি দেশের ৪২ জন আলোকচিত্রী।

প্রথম আলোর শুভ্র কান্তি দাশ পশ্চিম, মধ্য ও দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলে একক আলোকচিত্রে তিন বিজয়ীর একজন নির্বাচিত হয়েছেন। তাঁর এই আলোকচিত্রের শিরোনাম ‘দ্য ক্যানভাস অব পাওয়ার’, গত বছর ৫ আগস্ট রাজধানীর বিজয় সরণি মোড়ের মৃত্যুঞ্জয়ী প্রাঙ্গণে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাস্কর্য ভাঙচুরের চিত্র এটি।

আলোকচিত্রটির বর্ণনায় ওয়াল্ড প্রেস ফটো বলেছে, ২০২৪ সালের জুলাইয়ে সরকারি চাকরিতে কোটার বিরুদ্ধে ছাত্র বিক্ষোভ সরকারবিরোধী বিক্ষোভে রূপ নেয়, যে সরকারের বিরুদ্ধে বেআইনি আটক, গুম এবং ব্যাপকভাবে ভিন্ন মত দমনের অভিযোগ রয়েছে। এই অস্থিরতার পেছনে সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য দীর্ঘদিনের লড়াই এবং মত প্রকাশের স্বাধীনতাকে ক্ষুণ্ন করা সাইবার নিরাপত্তা আইনের বিরুদ্ধে ক্ষোভও কাজ করেছে।

প্রথম দিকে শান্তিপূর্ণ হলেও কর্তৃপক্ষ ও সরকারপন্থী সশস্ত্র ব্যক্তিরা বিক্ষোভকারীদের ওপর দমন-পীড়ন চালালে তা সহিংস বিক্ষোভে রূপ নেয়। ওই দমন-পীড়নে অন্তত ১ হাজার ৪০০ মানুষ নিহত হন। আগস্টে সরকারের পতন ঘটে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে নির্বাসনে চলে যান এবং অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়।

শুভ্র কান্তি দাশের ‘দ্য ক্যানভাস অব পাওয়ার’-এর সঙ্গে এ বছর পশ্চিম, মধ্য ও দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের অন্য বিজয়ীরা হলেন—একক বিভাগে আনাদোলু এজেন্সির আলোকচিত্রী মুরাত সেঙ্গুলের ‘ড্রোন অ্যাটাকস ইন বৈরুত’ এবং দ্য নিউইয়র্ক টাইমসের আলোকচিত্রী সামার আবু এলৌফের ‘মাহমুদ আজৌর, এজড নাইন’। এ ছাড়া গল্প বিভাগে আনাদোলুর আলোকচিত্রী আলী জাদাল্লাহর ‘গাজা আন্ডার ইসরায়েলি অ্যাটাক’, ফাউন্ডেশন কারমিগনাকের আলোকচিত্রী কিয়ানা হায়েরির ‘নো ওম্যানস ল্যান্ড’ এবং রেভিস্টা ফাইভডব্লিউর আলোকচিত্রী স্যামুয়েল নাকারের ‘দ্য শ্যাডোস অলরেডি হ্যাভ নেমস’। দীর্ঘমেয়াদি প্রকল্প বিভাগে বিজয়ী হয়েছে ইব্রাহিম আলিপুরের কাজ ‘বুলেটস হ্যাভ নো বর্ডারস’।

২০২৫ সালের ‘ওয়ার্ল্ড প্রেস ফটো অব দ্যা ইয়ার’ এবং আরও দুজন ফাইনালিস্টের নাম ঘোষণা করা হবে আগামী ১৭ এপ্রিল নেদারল্যান্ডসের আমস্টারডামের দ্য নিউভে কার্কে অনুষ্ঠেয় ফ্ল্যাগশিপ আলোকচিত্র প্রদর্শনী ২০২৫–এর প্রেস উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে। আর ১৬ মে আমস্টারডামে এক অনুষ্ঠানে সব পুরস্কারবিজয়ী আলোকচিত্রীর হাতে পুরস্কার তুলে দেওয়া হবে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: অন ষ ঠ প রথম সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

২ হাজার কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে মামলা হচ্ছে সালমান এফ রহমানের বিরুদ্ধে

জালিয়াতির মাধ্যমে এলসির বিপরীতে প্রায় দুই হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ ও পাচারের অভিযোগে পাঁচটি মামলা করতে যাচ্ছে দুর্নীতি দমন কমিশন, তাতে বেক্সিমকো গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান সালমান এফ রহমানও আসামি হতে যাচ্ছেন।

আজ সোমবার দুদকের প্রধান কার্যালয় মামলাগুলোর অনুমোদন দেয়। সাবেক প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি, শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান রহমানের পাশাপাশি তাঁর ছেলে, ভাই, ভাতিজা, জনতা ব্যাংকের কর্মকর্তাসহ ৩৪ জনের বিরুদ্ধে এই মামলাগুলো হবে।

রাজধানীর সেগুনবাগিচায় দুদকের প্রধান কার্যালয়ে সংস্থাটির মহাপরিচালক মো. আক্তার হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, অনুমোদিত পাঁচ মামলায় ৩৪ জন আসামির বিরুদ্ধে মোট ২১ কোটি ৫৫ লাখ ২৮ হাজার ৮০১ মার্কিন ডলার বা প্রায় ১ হাজার ৯৩৯ কোটি ৭৫ লাখ ৯২ হাজার টাকা আত্মসাৎ ও মানি লন্ডারিংয়ের অভিযোগ আনা হয়েছে।

মামলায় সালমান এফ রহমান ছাড়া আসামিদের মধ্যে রয়েছেন তাঁর ছেলে শায়ান এফ রহমান, ভাই বেক্সিমকো গ্রুপের চেয়ারম্যান সোহেল এফ রহমান, সোহেল রহমানের ছেলে আহমেদ শাহরিয়ার রহমান, বেক্সিমকো গ্রুপের পরিচালক ইকবাল আহমেদ, ব্যবস্থাপনা পরিচালক ওসমান কায়সার চৌধুরী, পরিচালক এ বি সিদ্দিকুর রহমান, মাসুদ ইকরামুল্লাহ খান, শাহ মঞ্জুরুল হক ও রীম এইচ শামসুদ্দোহা।

এ ছাড়া স্কাইনেট অ্যাপারেলস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আনোয়ারুল বাশার ও পরিচালক নাসরিন আহমেদ, ক্রিসেন্ট অ্যাকসেসরিজের এমডি আবু নাঈম মাহমুদ সালেহিন ও পরিচালক মো. মোস্তাফিজুর রহমান তানভীর, প্লাটিনাম গার্মেন্টস লিমিটেডের এমডি মোহাম্মদ আলিফ ইবনে জুলফিকার ও পরিচালক নুসরাত হায়দার, পিয়ারলেস গার্মেন্টস লিমিটেডের এমডি ওয়াসীউর রহমান ও পরিচালক রিজিয়া আক্তার, নিউ ঢাকা ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের এমডি সালাউদ্দিন খান মজলিস ও পরিচালক আবদুর রউফ, কাঁচপুর অ্যাপারেলস লিমিটেডের এমডি মাহফুজুর রহমান খান ও পরিচালক সৈয়দ তানবির এলাহী আফেন্দী সম্ভাব্য আসামির তালিকায় রয়েছেন।

জনতা ব্যাংকের মধ্য থেকে আসামি করা হচ্ছে ব্যাংকটির সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবদুছ ছালাম আজাদ ও আবদুল জব্বার, সাবেক মহাব্যবস্থাপক মিজানুর রহমান, অবসরপ্রাপ্ত উপমহাব্যবস্থাপক আবদুর রহিম, সাবেক মহাব্যবস্থাপক শহিদুল হক, অবসরপ্রাপ্ত ডিজিএম (রপ্তানি বিভাগ) মমতাজুল ইসলাম, সিনিয়র অফিসার রফিকুল ইসলাম, ব্যবস্থাপক সালেহ আহম্মেদ, অবসরপ্রাপ্ত এজিএম মোয়াজ্জেম হোসেন, সাবেক এজিএম (রপ্তানি) মোহাম্মদ শাজাহান, সাবেক এজিএম (রপ্তানি) হুমায়ুন কবির ঢালী ও প্রিন্সিপাল অফিসার শ ম মাহাতাব হোসাইন বাদশাকে।

দুদকের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আসামিদের যোগসাজশে জনতা ব্যাংকের লোকাল অফিস থেকে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নামে বিপুল পরিমাণ অর্থ আত্মসাৎ ও বিদেশে পাচার করা হয়। এর মধ্যে পিয়ারলেস গার্মেন্টস লিমিটেডের নামে ৫ কোটি ২ লাখ ৫০ হাজার ৭৭২ দশমিক ২৫ ডলার, প্লাটিনাম গার্মেন্টস লিমিটেডের নামে ১ কোটি ৮৮ লাখ ৩ হাজার ৬৫৮ দশমিক ৯১ ডলার, কাঁচপুর অ্যাপারেলস লিমিটেডের নামে ৮ কোটি ৪০ লাখ ২৯ হাজার ৫৪৭ দশমিক ৪৫ ডলার, স্কাইনেট অ্যাপারেলস লিমিটেডের নামে ১ কোটি ৪৭ লাখ ২৯ হাজার ৩৪০ ডলার এবং ঢাকা ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের নামে ৪ কোটি ৭৭ লাখ ১৫ হাজার ৪৮২ দশমিক ৪৬ ডলার আত্মসাৎ হয়।

সব মিলিয়ে আত্মসাৎ করা অর্থের পরিমাণ দাঁড়ায় প্রায় ২১ কোটি ৫৫ লাখ ডলার, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় দুই হাজার কোটি টাকা।

সাবেক সংসদ সদস্য সালমান এফ রহমান গত বছর জুলাই অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের কয়েক দিনের মধ্যে গ্রেপ্তার হয়ে এখন কারাগারে রয়েছেন। এরপর তাঁর বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগে বেশ কয়েকটি মামলা হয়।

সম্পর্কিত নিবন্ধ