সংবিধান সংস্কার কমিশন রাষ্ট্রের নাম পরিবর্তনের যে সুপারিশ করেছে, তাতে আপত্তি জানিয়েছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। তবে সংবিধানে রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি থেকে জাতীয়তাবাদ, সমাজতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতা বাদ দিয়ে ‘সাম্য, মানবিক মর্যাদা, সামাজিক সুবিচার, বহুত্ববাদ ও গণতন্ত্র’ অন্তর্ভুক্ত করার সুপারিশের সঙ্গে একমত পোষণ করেছে দলটি। এর পাশাপাশি বহুত্ববাদের সংজ্ঞা সুনির্দিষ্ট করার ওপর জোর দিয়েছে তারা।

সংবিধান সংস্কার কমিশনসহ পাঁচটি কমিশনের সুপারিশের ওপর এনসিপির দলীয় মতামত ২৩ মার্চ জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের কাছে লিখিতভাবে জমা দেওয়া হয়েছে। কমিশনগুলোর গুরুত্বপূর্ণ ১৬৬টি সুপারিশের মধ্যে ১১৩টিতে একমত ও ২৯টিতে আংশিক একমত হয়েছে তরুণদের দলটি।

একই দিনে বিএনপিও ঐকমত্য কমিশনের কাছে মতামত জমা দিয়েছে। বিএনপির মতামতের সঙ্গে এনসিপির মতামতের বেশ কিছু মৌলিক পার্থক্য দেখা গেছে। যেমন বিএনপি সংবিধানের মূলনীতির বদল চায় না কিন্তু এনসিপি চায়। বিএনপি সংসদের মেয়াদ পাঁচ বছর বহাল রাখার পক্ষে আর এনসিপি সংস্কার কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী চার বছর করার পক্ষে। এ ছাড়া একই ব্যক্তির রাজনৈতিক দলের প্রধান ও সংসদ নেতা না হওয়ার সুপারিশে বিএনপি ভিন্নমত জানিয়েছে। এ ক্ষেত্রে এনসিপির মত আলাদা।

সংস্কার কমিশনের অনেক সুপারিশের সঙ্গেই আমরা একমত হয়েছি। বিএনপির মতামতের সঙ্গে আমাদের বড় পার্থক্য হচ্ছে, বিএনপি মনে করছে, নির্বাচিত সংসদের কাছে সংবিধানের মৌলিক পরিবর্তনের এখতিয়ার থাকে। কিন্তু আমরা মনে করি, সংবিধানে মৌলিক পরিবর্তন আনতে হলে নির্বাচিত গণপরিষদই সব দিক থেকে যৌক্তিক পদ্ধতি।এনসিপির সংস্কার সমন্বয় কমিটির সমন্বয়ক ও দলের যুগ্ম আহ্বায়ক সারোয়ার তুষার

এনসিপি তাদের মতামতে মিশ্র নির্বাচনপদ্ধতির কথা বলেছে। নিম্নকক্ষ বা সংসদে বিদ্যমান আসনভিত্তিক পদ্ধতি এবং উচ্চকক্ষ তথা জাতীয় পরিষদে আনুপাতিক ভিত্তিতে আসনের কথা বলেছে দলটি। যেমন কোনো দল জাতীয় পর্যায়ে ৩৫ শতাংশ ভোট পেলে উচ্চকক্ষে ৩৫টি আসন পাবে। ভোটাররা একবারই ভোট দেবেন।

স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের সব নির্বাচন সরাসরি নির্বাচন কমিশনের তত্ত্বাবধানে অনুষ্ঠান এবং একজন প্রধান স্থানীয় সরকার কমিশনার ও চারজন কমিশনার নিয়ে স্থানীয় সরকার কমিশন প্রতিষ্ঠার সুপারিশ করেছে সংবিধান সংস্কার কমিশন। এই দুটি বিষয় বাদে বাকি সব বিধান হয় গণপরিষদ নির্বাচন অথবা গণপরিষদ কাম সংসদ তথা নির্বাচিত গণপরিষদের (যা সংবিধান প্রণয়ন শেষে স্বয়ংক্রিয়ভাবে আইনসভায় রূপ নেবে) মাধ্যমে বাস্তবায়নের পক্ষে মত দিয়েছে এনসিপি।

জানতে চাইলে এনসিপির সংস্কার সমন্বয় কমিটির সমন্বয়ক ও দলের যুগ্ম আহ্বায়ক সারোয়ার তুষার গতকাল বৃহস্পতিবার প্রথম আলোকে বলেন, ‘সংস্কার কমিশনের অনেক সুপারিশের সঙ্গেই আমরা একমত হয়েছি। বিএনপির মতামতের সঙ্গে আমাদের বড় পার্থক্য হচ্ছে, বিএনপি মনে করছে, নির্বাচিত সংসদের কাছে সংবিধানের মৌলিক পরিবর্তনের এখতিয়ার থাকে। কিন্তু আমরা মনে করি, সংবিধানে মৌলিক পরিবর্তন আনতে হলে নির্বাচিত গণপরিষদই সব দিক থেকে যৌক্তিক পদ্ধতি।’

সংবিধানের মূলনীতি ও রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি হিসেবে ধর্মনিরপেক্ষতা, সমাজতন্ত্র ও জাতীয়তাবাদ এবং এ–সংশ্লিষ্ট সংবিধানের ৮, ৯, ১০ ও ১২ অনুচ্ছেদ বাদ দেওয়ার সুপারিশ করেছে সংস্কার কমিশন। এর সঙ্গেও এনসিপি একমত।যেসব সুপারিশে একমত

ঐকমত্য কমিশনে জমা দেওয়া মতামতে সংসদের মেয়াদ চার বছর করার সুপারিশের সঙ্গে একমত পোষণ করেছে এনসিপি। সংস্কার কমিশনের সুপারিশে সংবিধানের মূলনীতি হিসেবে ‘সাম্য, মানবিক মর্যাদা, সামাজিক সুবিচার, বহুত্ববাদ ও গণতন্ত্র’ অন্তর্ভুক্ত করার যে সুপারিশ করা হয়েছে, তার সঙ্গে এনসিপি একমত। ওই সুপারিশে বলা হয়েছে, ‘বাংলাদেশ একটি বহুত্ববাদী, বহুজাতি, বহুধর্মী, বহুভাষী ও বহুসংস্কৃতির দেশ, যেখানে সব সম্প্রদায়ের সহাবস্থান ও যথাযথ মর্যাদা নিশ্চিত করা হবে।’ এনসিপি এর সঙ্গে সহমত জানিয়ে এভাবে লেখার প্রস্তাব দিয়েছে, ‘বহুত্ববাদের অর্থ হবে বহুজাতি, বহুধর্মী, বহুভাষী ও বহুসংস্কৃতির দেশ।’ অর্থাৎ তারা বহুত্ববাদের সংজ্ঞা সুনির্দিষ্ট করার ওপর জোর দিচ্ছে।

সংবিধানের মূলনীতি ও রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি হিসেবে ধর্মনিরপেক্ষতা, সমাজতন্ত্র ও জাতীয়তাবাদ এবং এ–সংশ্লিষ্ট সংবিধানের ৮, ৯, ১০ ও ১২ অনুচ্ছেদ বাদ দেওয়ার সুপারিশ করেছে সংস্কার কমিশন। এর সঙ্গেও এনসিপি একমত।

কমিশন সুপারিশ করেছে, সংসদের নিম্নকক্ষে একজন সংসদ সদস্য একই সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী, সংসদ নেতা ও রাজনৈতিক দলের প্রধান—এগুলোর যেকোনো একটির বেশি পদে অধিষ্ঠিত হবেন না। এ বিষয়ে এনসিপির মত হচ্ছে, প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ নেতা একই ব্যক্তি হতে পারেন; তবে এ ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রী মন্ত্রিপরিষদের প্রধান নন, মন্ত্রিদের মধ্যে ‘ফার্স্ট অ্যামং দ্য ইকুয়ালস’ হিসেবে বিবেচিত হবেন।

রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রীসহ রাষ্ট্রের তিনটি অঙ্গের প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে জাতীয় সাংবিধানিক কাউন্সিল বা এনসিসি নামে একটি জাতীয় প্রতিষ্ঠানের সুপারিশ করেছে সংস্কার কমিশন। সুপারিশ অনুযায়ী, সংসদ ভেঙে গেলেও অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা শপথ না নেওয়া পর্যন্ত এনসিসি সদস্যরা বহাল থাকবেন। এই দুই প্রস্তাবের সঙ্গে একমত পোষণ করলেও প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ সাংবিধানিক পদগুলোতে নিয়োগের জন্য এনসিসির মাধ্যমে রাষ্ট্রপতির কাছে নাম পাঠানোর সুপারিশের বিষয়ে এনসিপি একটি মন্তব্য যুক্ত করেছে। তারা বলেছে, এনসিসির সদস্যদের দুই-তৃতীয়াংশের ভোটে এসব নিয়োগ দিতে হবে।

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রস্তাবের সঙ্গে একমত হয়ে এনসিপি মন্তব্য করেছে, এনসিসি নির্বাচনকালীন সরকার হিসেবে ভূমিকা রাখতে পারে। রাষ্ট্রপতি ও আগের সরকারের প্রধানমন্ত্রী ছাড়া এনসিসির অন্য সদস্যদের থেকে একজনকে প্রধান উপদেষ্টা নিয়োগ করা যেতে পারে। এই সরকারের মেয়াদ ৭০ থেকে ৭৫ দিন হওয়া যথেষ্ট। এ ছাড়া রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের ক্ষেত্রে জেলা সমন্বয় কাউন্সিলের সংখ্যাগরিষ্ঠতার ভিত্তিতে মনোনয়ন দেওয়ার পক্ষে মত দিয়েছে এনসিপি।

এনসিপি তরুণ-তরুণী বিবেচিত হওয়ার সর্বোচ্চ বয়সসীমা ৩৫ করার কথা বলেছে। আর প্রার্থিতার ন্যূনতম বয়স ২৩ এবং ভোটাধিকারের বয়স ১৬ বছর করার পক্ষে মত দিয়েছে।দ্বিমত যেসব প্রস্তাবে

সংবিধানের প্রযোজ্য সব ক্ষেত্রে ‘প্রজাতন্ত্র’ ও ‘গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ’ শব্দগুলোর পরিবর্তে ‘নাগরিকতন্ত্র’ ও ‘জনগণতন্ত্রী বাংলাদেশ’ শব্দগুলো ব্যবহারের সুপারিশ করেছে সংস্কার কমিশন। তবে এনসিপি ‘প্রজাতন্ত্র’ ও ‘গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ’ বহাল রাখার পক্ষে।

কমিশনের প্রস্তাব, রাজনৈতিক দলগুলো সংসদের নিম্নকক্ষের মোট আসনের ন্যূনতম ১০ শতাংশ আসনে তরুণ-তরুণীদের মধ্য থেকে প্রার্থী মনোনীত করবে এবং সংসদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার বয়স কমে হবে ২১ বছর।

এনসিপি তরুণ-তরুণী বিবেচিত হওয়ার সর্বোচ্চ বয়সসীমা ৩৫ করার কথা বলেছে। আর প্রার্থিতার ন্যূনতম বয়স ২৩ এবং ভোটাধিকারের বয়স ১৬ বছর করার পক্ষে মত দিয়েছে।

এনসিসির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী একজন গ্রহণযোগ্য ব্যক্তিকে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা করার কথা বলেছে সংবিধান সংস্কার কমিশন। এটি সম্ভব না হলে সাবেক প্রধান বিচারপতি ও বিচারকদের মধ্য থেকে প্রধান উপদেষ্টা নিয়োগ বা রাষ্ট্রপতির প্রধান উপদেষ্টা পদে অতিরিক্ত দায়িত্ব নেওয়া এবং অবসরপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি বা আপিল বিভাগের বিচারকদের মধ্য থেকে প্রধান উপদেষ্টা হওয়ার সুপারিশ করেছে কমিশন। এই সুপারিশের সঙ্গে দ্বিমত জানিয়ে এনসিপি বলেছে, সে ক্ষেত্রে এনসিসি নির্বাচনকালীন অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব নিতে পারে।

আছে সম্পূরক প্রস্তাবও

সংস্কার কমিশন সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল বহাল রাখার পক্ষে মত দিয়েছে। তদন্ত ও অনুসন্ধানের জন্য অভিযোগ সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলে পাঠানোর ক্ষমতা রাষ্ট্রপ্রধানের পাশাপাশি এনসিসির থাকবে। এর সঙ্গে একমত হয়ে এনসিপি বলেছে, এনসিসির বিরুদ্ধেও প্রয়োজন অনুযায়ী তদন্ত ও অনুসন্ধান করতে পারবে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল।

সংস্কার কমিশনের সুপারিশ, কেবল এনসিসির সিদ্ধান্তে রাষ্ট্রপতি জরুরি অবস্থা ঘোষণা করতে পারবেন। তবে জরুরি অবস্থার সময় নাগরিকদের কোনো অধিকার রদ বা স্থগিত করা ও আদালতে যাওয়ার অধিকার বন্ধ বা স্থগিত করা যাবে না। এই সুপারিশের সঙ্গে আংশিক একমত হয়ে এনসিপি বলেছে, সংসদ চলাকালে উভয় কক্ষের সংখ্যাগরিষ্ঠতা ছাড়া জরুরি অবস্থা জারি করা যাবে না। অন্তর্বর্তী সরকারের মেয়াদে জরুরি অবস্থা জারি করা যাবে না।

সংস্কার কমিশন সুপারিশ করেছে, বিশেষ কার্যাবলি কিংবা সংবিধানে উল্লেখিত বিষয় ছাড়া অন্য সব বিষয়ে রাষ্ট্রপতি প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শে কাজ করবেন। এনসিপির মতামত হচ্ছে, রাষ্ট্রপতিকে দেওয়া প্রধানমন্ত্রীর এই পরামর্শ হবে নন-বাইন্ডিং (বাধ্যতামূলক নয়)। এনসিপির বক্তব্য হচ্ছে, প্রধানমন্ত্রী ও দলের প্রধান একই ব্যক্তি হতে পারবেন না। প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ নেতা একই ব্যক্তি হতে পারবেন, যদি প্রধানমন্ত্রী মন্ত্রিসভার ‘ফার্স্ট অ্যামং দ্য ইকুয়ালস’ হন।

অর্থবিল ছাড়া নিম্নকক্ষের সদস্যদের তাঁদের মনোনয়নকারী দলের বিপক্ষে ভোট দেওয়ার পূর্ণ ক্ষমতা থাকবে বলে সুপারিশ করেছে সংস্কার কমিশন। এনসিপি অর্থবিলের পাশাপাশি দলের বিরুদ্ধে অনাস্থা ভোটের ক্ষেত্রেও বিধিনিষেধ থাকা প্রয়োজন বলে মত দিয়েছে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: র স প র শ কর ছ প র মত মত র সরক র র প র ষ ট রপত এনস প র ম ন ম নকক ষ বছর কর র মত দ য় ছ প রস ত ব র এনস প হওয় র স এনস স র মন ত র অন য য় সদস য ব এনপ অবস থ

এছাড়াও পড়ুন:

তত্ত্বাবধায়ক নিয়ে একমত হলেও প্রধান উপদেষ্টা মনোনয়নের প্রক্রিয়ায় মূল বিরোধ: আলী রীয়াজ

নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলো একমত হলেও এই সরকারের রূপরেখা নিয়ে ঐকমত্য হয়নি। আজকের আলোচনায় ঐকমত্য কমিশন রূপরেখা নিয়ে একটি সংশোধিত প্রস্তাব দেয়। তবে সেটি নিয়ে ঐকমত্য হয়নি। প্রস্তাবে প্রধান উপদেষ্টা নিয়োগের জন্য কয়েকটি ধাপে বিকল্পের কথা আছে।

আজ মঙ্গলবার রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে ঐকমত্য কমিশনের দ্বিতীয় ধাপের ২১তম দিনের আলোচনা শেষে সাংবাদিকদের কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ এসব কথা বলেন ।

আলী রীয়াজ বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিষয়ে কমিশনের প্রস্তাবে অংশগ্রহণকারী তিন-চতুর্থাংশ দল একমত হয়েছে। মূল বিরোধ এখন প্রধান উপদেষ্টা মনোনয়নের প্রক্রিয়া নিয়ে।

আজকের আলোচনায়—তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা, মহাহিসাব নিরীক্ষক ও ন্যায়পাল নিয়োগের সাংবিধানিক বিধান এবং জাতীয় সংসদে নারী প্রতিনিধিত্বের কাঠামো নিয়ে আলোচনা হয়।

তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান নিয়ে ঐকমত্য কমিশন আজ নতুন করে প্রস্তাব উপস্থাপন করে। কমিশনের সংশোধিত প্রস্তাবে বলা হয়েছে, প্রধান উপদেষ্টা মনোনয়নে একটি পাঁচ সদস্যের বাছাই কমিটি গঠিত হবে। কমিটিতে থাকবে প্রধানমন্ত্রী, বিরোধীদলীয় নেতা, স্পিকার, ডেপুটি স্পিকার (বিরোধী দলের) ও দ্বিতীয় বৃহত্তম বিরোধী দলের একজন প্রতিনিধি। যদি এই কমিটি ঐকমত্যে পৌঁছাতে না পারে, তবে প্রধান বিচারপতির মনোনীত দুই বিচারপতিকে যুক্ত করে সাত সদস্যের কমিটি গঠনের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। এই কমিটি ‘র‍্যাঙ্ক-চয়েস’ভোটিংয়ের মাধ্যমে সিদ্ধান্ত নেবে।

এই র‍্যাঙ্ক-চয়েস প্রক্রিয়া নিয়ে বিএনপি আপত্তি জানিয়েছে। দলটির দাবি, এর পরের ধাপ কী হবে, সেটা ঠিক করার বিষয়টি আগামী সংসদের ওপর ছেড়ে দেওয়া উচিত। অন্যদিকে জামায়াত ও এনসিপি বিচারপতিদের অন্তর্ভুক্তি ও ভোটিং প্রক্রিয়াকেই নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করার সর্বোত্তম উপায় হিসেবে দেখছে।

নারী প্রতিনিধিত্ব নিয়ে আলোচনা ছিল দিনটির উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি। সংসদে নারীদের জন্য সংরক্ষিত আসন ৫০ থেকে বাড়িয়ে ১০০টি করা এবং সরাসরি ভোটের বিধান করার প্রস্তাব দিয়েছিল সংস্কার কমিশন। কিন্তু তাতে ঐকমত্য না হওয়ায় কমিশন নতুন প্রস্তাব দেয়। তাতে বলা হয়, ৩০০ সাধারণ আসনের মধ্যে দলগুলো এক-চতুর্থাংশ বা এক-পঞ্চমাংশ আসনে নারী প্রার্থী মনোনয়ন দেবে। তবে আজকেও এ বিষয়ে ঐকমত্য হয়নি।

অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, ‘আমরা প্রায় ঐকমত্যের কাছাকাছি এসেছি। আগামীকাল কমিশনের পক্ষ থেকে লিখিত প্রস্তাব দেওয়া হবে। আশা করছি তা অধিকাংশ দলের কাছে গ্রহণযোগ্য হবে।’

মহাহিসাব নিরীক্ষক ও ন্যায়পাল নিয়োগের ক্ষেত্রে সংবিধানে কমিটি গঠনের বিধান সংযুক্তির প্রস্তাবে এখনো ঐকমত্য হয়নি। তবে অধিকাংশ দল কমিশনের প্রস্তাবের পক্ষে মত দিয়েছে। ন্যায়পালের নিয়োগ কার্যকর করার বিষয়ে দলগুলো একমত হলেও বিএনপি ও তার কয়েকটি মিত্র দল সংবিধানে নতুন বিধান না এনে বিদ্যমান আইনকে শক্তিশালী করার প্রস্তাব দিয়েছে।

অধ্যাপক আলী রীয়াজ আরও জানান, দ্বিতীয় পর্যায়ের আলোচনার পাশাপাশি প্রথম পর্যায়ে যেসব বিষয়ের ওপর ঐকমত্য হয়েছিল, তার একটি তালিকা আগামীকাল রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে পাঠানো হবে। এ ছাড়া জাতীয় সনদের খসড়ার একটি কপি ইতিমধ্যে দলগুলোকে দেওয়া হয়েছে। সংশোধনের পর আগামীকালই এ অংশটির নিষ্পত্তি করার আশা করা হচ্ছে।

জুলাই সনদের বিষয়ে আশাবাদ ব্যক্ত করে আলী রীয়াজ বলেন, ‘আমরা এখনো আশাবাদী যে ৩১ জুলাইয়ের মধ্যে জাতীয় ঐকমত্য সনদের পূর্ণাঙ্গ রূপ দাঁড় করাতে পারব। সব দলই কোনো না কোনোভাবে সমঝোতার দিকে এগোচ্ছে, এটি ইতিবাচক দিক।’

আজকের আলোচনায় অংশ নিয়েছিল বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, এনসিপি, ইসলামী আন্দোলন, বাংলাদেশ কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি), গণসংহতি আন্দোলনসহ ৩০টি রাজনৈতিক দল।

আলোচনায় প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দারের সঞ্চালনায় আরও উপস্থিত ছিলেন সফর রাজ হোসেন, বিচারপতি এমদাদুল হক, বদিউল আলম মজুমদার, ইফতেখারুজ্জামান ও আইয়ুব মিয়া।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • মৌলিক সংস্কার নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর কার কী অবস্থান
  • উচ্চকক্ষে পিআর পদ্ধতিতে একমত হলেও বাস্তবায়নের সুস্পষ্ট রূপরেখা চায় এনসিপি
  • জুলাই সনদ বাস্তবায়নের মূল দায়িত্ব রাজনৈতিক দলগুলোর
  • রাজনৈতিক দলের মতের ভিত্তিতে  জুলাই সনদের খসড়ায় সংশোধনী আনা হচ্ছে: আলী রীয়াজ  
  • মৌলিক সংস্কারের সব বিষয়ে মতৈক্য হয়নি
  • জুলাই সনদ ও ঘোষণাপত্র বাস্তবায়নে আইনি ভিত্তি জরুরি: জামায়াতের নায়েবে আমির
  • জুলাই সনদের খসড়া নিয়ে ৩ দলের আপত্তি, বিএনপি মোটামুটি একমত
  • জুলাই সনদ ও ঘোষণাপত্রের সাংবিধানিক নয়, রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতির পক্ষে বিএনপি
  • তত্ত্বাবধায়ক নিয়ে একমত হলেও প্রধান উপদেষ্টা মনোনয়নের প্রক্রিয়ায় মূল বিরোধ: আলী রীয়াজ
  • বাকৃবিতে কম্বাইন্ড ডিগ্রি চান শিক্ষার্থীরা, একমত না শিক্ষকরা