লিটারে ১৮ টাকা দাম বাড়াতে চান আমদানিকারকরা
Published: 28th, March 2025 GMT
কর ছাড়ের সুবিধা শেষ হওয়ায় ভোজ্যতেলের দাম বাড়াতে চায় এ খাতের আমদানিকারক পরিশোধনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো। বোতলজাত সয়াবিন তেল লিটারে ১৮ এবং খোলা সয়াবিন লিটারে ১৩ টাকা বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়ে বৃহস্পতিবার বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে চিঠি দিয়েছে বাংলাদেশ ভেজিটেবল অয়েল রিফাইনার্স অ্যান্ড বনস্পতি ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন। বাজারে এ খবর ছড়িয়ে পড়ায় বিক্রেতাদের মধ্যে তেল সংগ্রহ ও মজুত বাড়ানোর তোড়জোড় শুরু হয়েছে। অন্যদিকে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন ক্রেতারা।
ছোট ব্যবসায়ীরা বলছেন, তেলের দাম বাড়ানোর আগে কোম্পানিগুলো সরবরাহ কমিয়ে দেয়। এতে খুচরা ব্যবসায়ীরা পড়েন বিপদে। কারণ তেল না থাকলে অন্য পণ্য বিক্রি কমে যায়।
রমজান উপলক্ষে ভোজ্যতেলে কর ছাড়ের সুবিধার মেয়াদ শেষ হবে আগামী সোমবার। এর পরদিন ১ এপ্রিল থেকে বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম লিটারে ১৮ টাকা বাড়িয়ে ১৯৩ টাকা আর পাঁচ লিটারের বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম ৮৩ টাকা বাড়িয়ে ৯৩৫ টাকা করার ঘোষণা দিয়েছেন ভোজ্যতেলের ব্যবসায়ীরা। এ ছাড়া খোলা সয়াবিন তেল ও পাম অয়েল লিটারে ১৩ টাকা বাড়িয়ে ১৭০ টাকা নির্ধারণ করেছেন তারা।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে পাঠানো ওই চিঠিতে শুল্ককর অব্যাহতির মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ায় মূল্য সমন্বয়ের কথা বলা হয়েছে। চিঠিতে বলা হয়, আগামী ১ এপ্রিল থেকে ১৫ শতাংশ ভ্যাট দিয়ে সয়াবিন ও পাম অয়েল বাজারজাত করতে হবে।
ভোজ্যতেল ব্যবসায়ীদের দাম বাড়ানোর এমন প্রস্তাব নিয়ে নিত্যপণ্যের বাজারে বেশ আলোচনা চলছে। গতকাল শুক্রবার রাজধানীর মালিবাগ, তেজকুনিপাড়া ও কারওয়ান বাজার ঘুরে দেখা গেছে, ছোট ব্যবসায়ীদের কেউ কেউ তেল সংগ্রহ ও মজুত বাড়ানোর চেষ্টা করছেন। বিশেষ করে খোলা তেলের ক্ষেত্রে এ প্রবণতা দেখা গেছে। তবে বাজারে পাঁচ লিটারের বোতলের সরবরাহ দুই-তিন মাস ধরেই কম।
তেজকুনিপাড়ার মায়ের দোয়া স্টোরের স্বত্বাধিকারী মো.
কারওয়ান বাজারের আব্দুর রব স্টোরের বিক্রয়কর্মী রায়হান মিয়া বলেন, তেল না থাকলে ক্রেতা অন্য পণ্য কিনতে চান না। দাম বাড়ানোর আগে কোম্পানি তেল ছাড়ে না বাজারে। এ জন্য হয়তো কেউ কেউ মজুত বাড়ানোর চেষ্টা করে।
তবে দাম বাড়ানোর এমন প্রস্তাবে বেশ উদ্বিগ্ন ক্রেতা। গতকাল কারওয়ান বাজারে বিল্লাল হোসেন নামের এক ক্রেতা সমকালকে বলেন, এবার রমজানে জিনিসপত্রের দাম কিছুটা কম ছিল। এখন ব্যবসায়ীরা দাম বাড়ানোর বাহানা করছে। এক লাফে লিটারে ১৮ টাকা বাড়লে গরিব মানুষের কষ্ট হবে।
রোজার আগে দাম সহনীয় পর্যায়ে রাখতে ভোজ্যতেলের শুল্ককরে যে রেয়াতি সুবিধা দেওয়া হয়েছিল, তার মেয়াদ শেষ হচ্ছে ৩১ মার্চ। এই অব্যাহতির মেয়াদ বাড়বে কিনা, এখনও সেই ঘোষণা দেয়নি সরকার। এর আগেই দাম বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছেন ভোজ্যতেল পরিশোধনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো। তাদের দাবি, ভ্যাট অব্যাহতির এই সুবিধা উঠে গেলে আমদানির খরচ বাড়বে। ফলে তখন তাদের দাম বাড়ানো ছাড়া উপায় থাকবে না।
সর্বশেষ গত ৯ ডিসেম্বর বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম বাড়িয়ে প্রতি লিটার ১৭৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়। আর পাঁচ লিটারের দর ৮৫২ এবং খোলা সয়াবিন ও পাম অয়েলের লিটার ১৫৭ টাকা নির্ধারণ করা হয়। যদিও রোজার শুরুতে বাজারে এর চেয়ে বেশি দরে বিক্রি হয়েছিল ভোজ্যতেল।
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
বিদ্যুৎ না থাকায় ডিইপিজেডে উৎপাদন কার্যক্রম বন্ধ
ঢাকার সাভার উপজেলার আশুলিয়ায় ঢাকা রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চলে (ডিইপিজেড) আজ সোমবার দুপুর থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। এ কারণে দুপুরের পর ডিইপিজেডের সব কারখানায় শ্রমিকদের ছুটি দেওয়া হয়েছে। ডিইপিজেডের জন্য নিরবচ্ছিন্নভাবে বিদ্যুৎ সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান ইউনাইটেড পাওয়ারের বিদ্যুৎকেন্দ্রে গ্যাস–সংযোগ বিচ্ছিন্ন করায় এ সংকট তৈরি হয়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
ডিইপিজেডের নির্বাহী পরিচালক মো. শরীফুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষ ইউনাইটেড পাওয়ারের ডিইপিজেডে বিদ্যুৎ সরবরাহের প্রকল্পটিতে গ্যাস–সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়। এতে তারা উৎপাদন করতে না পারায় বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে পারছে না। ফলে ডিইপিজেডে প্রায় ৯০টি কারখানার এক লাখের মতো শ্রমিককে ছুটি দেওয়া হয়।
বিদ্যুতের সংযোগ না থাকায় বড় ধরনের বিপর্যয়ের মুখে পড়তে হয়েছে উল্লেখ করে মো. শরীফুল ইসলাম বলেন, মঙ্গলবার যদি এটি অব্যাহত থাকে, তবে সংকট আরও বাড়বে। শ্রমিকেরা কাজ না করতে পেরে বিক্ষুব্ধ হলে বিষয়টি আরও জটিল হয়ে উঠবে। কোনো ধরনের নোটিশ ছাড়া এ ধরনের ঘটনায় বিদেশি প্রতিষ্ঠানগুলো নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
ডিইপিজেডের নির্বাহী পরিচালক বলেন, ‘তিতাস বলছে, ইউনাইটেড পাওয়ারের কাছে বিল বকেয়া রয়েছে। তারা বকেয়া পরিশোধ করেনি। এ ব্যাপারে আদালতে দীর্ঘদিন ধরে মামলা চলছে। কিন্তু আমাদের কথা হচ্ছে, বেপজাকে কোনো ধরনের পূর্ব নোটিশ না দিয়ে হঠাৎ করে এ ধরনের পদক্ষেপ নিয়েছেন। এ ধরনের পদক্ষেপের আগে ডিইপিজেডের গুরুত্ব বিবেচনা করে আলোচনার মধ্য দিয়ে বিষয়টির সমাধান করা উচিত ছিল।’
এ বিষয়ে ইউনাইটেড পাওয়ার প্ল্যান্টের ব্যবস্থাপক মো. মমতাজ হাসান প্রথম আলোকে বলেন, ‘গ্যাসের কোনো প্রেশার নেই। প্রেশার শূন্য। কিন্তু কেন তিতাস কর্তৃপক্ষ এমনটি করল, সে ব্যাপারে এখানকার (আশুলিয়া অঞ্চলের) তিতাসের লোকজন কিছু বলতে পারেননি। আমরা নিজেরাও বিষয়টি নিয়ে জানি না। এ ব্যাপারে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা হচ্ছে।’ তিনি বলেন, ‘আমার জানামতে, বকেয়া নিয়ে কোনো ধরনের মামলা নেই। তিতাস কেন গ্যাস সরবরাহ বন্ধ করে দিল, সেটি জানা নেই।’
জানতে চাইলে তিতাসের আশুলিয়া আঞ্চলিক কার্যালয়ের ব্যবস্থাপক প্রকৌশলী আবু ছালেহ মুহাম্মদ খাদেমুদ্দীন প্রথম আলোকে বলেন, গ্যাসের বিল বকেয়া থাকায় গ্যাস–সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়। এটি সরকারের ঊর্ধ্বতন মহলের সিদ্ধান্ত। দুপুরের দিকে গ্যাস–সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে।