‘শিগগিরই বিয়ে হবে, যদি দেন সালামি’
Published: 30th, March 2025 GMT
ইফতারের পর শরীরটা বিছানায় এলিয়ে দিয়ে মাত্রই ফোন স্ক্রল করতে শুরু করেছি। হুট করে একটা খবরের ফটোকার্ডে চোখ আটকে গেল। তাতে বড় হরফে লেখা ‘সালামি চেয়ে বারবার বিরক্ত করায় জুনিয়রকে পেটালেন সিনিয়র!’ দেখে মনটা খারাপ হয়ে যাচ্ছিল। এ কেমন নিষ্ঠুরতা! কিন্তু একটু পরই বুঝলাম, ফটোকার্ডটি ভুয়া। কেউ হয়তো মজা করার জন্য বানিয়েছে। ক্যাম্পাসের সিনিয়র-জুনিয়রদের মধ্যে সালামি নিয়ে এমন আরও নানা রঙ্গ-রসিকতাই হয়। কয়েকটা মজার ঘটনা কুড়িয়ে এনেছি আপনাদের জন্য।
শিগগিরই বিয়ে হবে, যদি দেন সালামিযাঁদের বিয়ে হচ্ছে না বা যাঁরা বিয়ের বয়স হলেও বাড়িতে বলতে পারছেন না, তাঁরা মন খুলে (পড়ুন ‘হাত খুলে’) সালামি দিন এবার। কেননা, আশিক নামের একজন ফেসবুকে লিখেছেন, ‘গত বছর এক ভাই আমাকে সালামি দিয়েছিল, এই বছর সে বউ নিয়ে ঘুরছে। দেখেন যা ভালো মনে করেন!’ তো, আশিক ভাইয়ের সঙ্গে সুর মিলিয়ে বলতে চাই, দেখেন যা ভালো মনে করেন.
কোক স্টুডিও বাংলা সিজন টু-তে প্রকাশিত হয়েছিল ‘কথা কইয়ো না’ শিরোনামের একটি গান। ২০২৩ সালে প্রকাশিত গানটিতে কণ্ঠ দিয়েছিলেন আরফান মৃধা ও আলেয়া বেগম। তখন থেকেই জনপ্রিয় গানটি অনেকের মুখে মুখে ফেরে। রোশনি নামের একজন এই গানেরই ‘দেখা না দিলে বন্ধু, কথা কইয়ো না’ অংশ জুড়ে দিয়ে একটি মজার ভিডিও বানিয়েছেন। ভিডিওতে গানের সঙ্গে ভেসে ওঠে লেখা—‘ঈদের সালামি না দিলে বন্ধু কথা কইয়ো না।’
উচ্চতা বেশি হলে সালামি পাওয়া যাবেফেসবুকে মিজানুর রহমান নামের এক শিক্ষার্থী পোস্ট করেছেন, ‘যাঁদের উচ্চতা আমার থেকে বেশি শুধু তাঁদেরই সালামি দেব।’ ঈদের সময় জুনিয়রদের পক্ষ থেকে বেশ ‘চাপ’ আসে সালামি দেওয়ার জন্য। সেই চাপে পড়ে সিনিয়রদের ভুগতেও হয় বেশ। মিজানুরের মতো চাইলে আপনিও এভাবে শর্ত জুড়ে দিতে পারেন।
হয় সালামি, নয় বয়কট!ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী শিহাব ফেসবুকে সিনিয়রদের রীতিমতো হুমকিই দিয়ে বসেছেন। মজা করে তিনি লিখেছেন, ‘যেসব সিনিয়ররা এ বছর ঈদে আমাকে সালামি দেবেন না, তারা এই পোস্টে রিঅ্যাক্ট দেন। চিনে রাখি আপনাদের। পরে বয়কট করতে সুবিধা হবে।’ সর্বশেষ পাওয়া খবর অনুযায়ী, শিহাবের সিনিয়ররা এই পোস্ট দেখার পর মহা দুশ্চিন্তায় পড়ে গেছেন। তাঁদের উদ্দেশ্যে বলি, বয়কটের শিকার না হতে চাইলে সালামি দেওয়াই হয়তো ভালো!
ফোন নম্বর বলে দেবে আপনি কত সালামি পাবেনআরেক শিক্ষার্থী জয়নাল উদ্দিন সালামি দেওয়ার নতুন এক ফর্মুলা আবিষ্কার করেছেন। লিখেছেন, ‘ফোন নম্বরের লাস্ট দুই অঙ্কের যোগফল দিয়ে আপনার ঈদ সালামি নির্ধারণ করা হবে। কে কত পাবেন?’ অভিনব এই ফর্মুলা আবিষ্কারের জন্য জয়নালকে কোনো পুরস্কার দেওয়া যা কি না, সে চিন্তা আপনাদের ওপরে ছেড়ে দিলাম।
শুধু ছবি থাকলেই মিলবে সালামিসালামি চাইলেই হবে না, থাকতে হবে ছবি—এমন শর্ত জুড়ে দিয়েছেন এক শিক্ষার্থী। ফেসবুকে তিনি লিখেছেন, ‘যাঁদের সঙ্গে আমার ছবি আছে, সেসব জুনিয়ররাই সালামি চাইবেন।’
প্রতিবছর দুই ঈদের আগে সালামি নিয়ে ফেসবুক পাড়ায় এমন মজার মজার পোস্ট দেখা যায়। সালামি না দিলে ‘সিনিয়রদের বয়কট করতে চাওয়া’ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সামসুল আলমের কাছে তার ফেসবুক পোস্ট সম্পর্কে জানতে চাইলাম। তিনি হেসে বললেন, ‘মজা করেই পোস্টটি দিয়েছি। সালামি পাওয়া জুনিয়রদের অধিকার। বৈষম্যহীন সমাজে আমাদের এই অধিকার হরণ হতে পারে না!’ সামসুল আলমের জুনিয়ররাও একই দাবি করে বসলে তাঁর বক্তব্য কী হবে, তা অবশ্য জানা হয়নি।
আরও পড়ুনবিবিএ নিয়ে ৬ ভুল ধারণা০৪ আগস্ট ২০২২উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ন ম র এক ন য়রদ র ফ সব ক র জন য
এছাড়াও পড়ুন:
শিক্ষার্থীর গবেষণাপত্রের অংশ অনুমতি না নিয়ে প্রকাশের অভিযোগ, শিক্ষক বলছেন ‘ভিত্তিহীন’
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ইসরাত জাহানের বিরুদ্ধে তাঁর আগের কর্মস্থলের এক শিক্ষার্থীর তৈরি করা গবেষণাপত্রের অংশ নিজের নামে প্রকাশ করার অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় ওই শিক্ষার্থী কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন। এরই মধ্যে বিষয়টি নিয়ে তদন্ত কমিটিও গঠন করেছে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
লিখিত অভিযোগ দেওয়া ওই সাবেক শিক্ষার্থীর নাম রিফাত সুলতানা। তিনি নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের প্রথম ব্যাচের শিক্ষার্থী ছিলেন। বর্তমানে তিনি ফেনী শহরের বাসিন্দা এবং সেখানে একটি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত। ২০১৯ সালে নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত ছিলেন ইসরাত জাহান। ওই সময়ের শিক্ষার্থী রিফাত সুলতানার থিসিসের সুপারভাইজার ছিলেন তিনি। প্রায় আড়াই বছর আগে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগ দিয়েছেন ইসরাত জাহান।
জানতে চাইলে ইসরাত জাহান মঙ্গলবার রাতে প্রথম আলোকে বলেন, ‘সেই শিক্ষার্থী আমাকে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে ফেলবে, কখনো ভাবিনি। আমার সঙ্গে ওই শিক্ষার্থীর দীর্ঘদিনের সম্পর্ক এবং সে নিজেই একাধিকবার আমার সঙ্গে যৌথভাবে জার্নাল প্রকাশের আগ্রহ প্রকাশ করেছে। আমি দীর্ঘদিন তাকে পড়িয়েছি, আমিই তাকে সব সময় উৎসাহিত করেছি থিসিসে। কিন্তু অভিযোগে এবং গণমাধ্যমে সে যেসব কথা বলেছে, তার সবই ভিত্তিহীন। আমি তার সঙ্গে অসংখ্যবার আলোচনা করেই জার্নালে প্রবন্ধ জমা দিয়েছি। আমার কাছে সব প্রমাণ রয়েছে। কিন্তু কেন সে অভিযোগ করল, এটাই বুঝতে পারছি না।’
২০১৯ সালে নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের শিক্ষক ইসরাত জাহানের অধীন রিফাত সুলতানা একটি থিসিস করেন। যার শিরোনাম ‘সাবজুগেশন, মার্জিনালাইজেশন অ্যান্ড ডাবল কলোনিজেশন: আ রিডিং অব দ্য অবরোধবাসিনী, দ্য ডার্ক হোল্ডস নো টেররস অ্যান্ড দ্য গড অব স্মল থিংস’। ওই থিসিসের বিষয়বস্তুর ওপর ভিত্তি করে গত ৩১ ডিসেম্বর ‘ইন্টারন্যাশনাল জার্নাল অব ইংলিশ লিটারেচার অ্যান্ড সোশ্যাল সায়েন্সেস’ জার্নালে ‘ব্রেকিং দ্য সাইলেন্স: আ কোয়েস্ট ফর সেলফ ইন শশী দেশপান্ডে’স দ্য ডার্ক হোল্ডস নো টেররস’ শিরোনামে একটি নিবন্ধ প্রকাশ করেন ইসরাত জাহান। এই প্রবন্ধে রিফাত সুলতানাকে দ্বিতীয় লেখক হিসেবে উল্লেখ করা হয়।
এরপর গত ১৩ মার্চ কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার বরাবর অভিযোগ পাঠান রিফাত সুলতানা। যার পরিপ্রেক্ষিতে তদন্ত কমিটি গঠন করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
রিফাত সুলতানা অভিযোগ করেন, ইসরাত জাহান তাঁর অনুমতি ছাড়া এমএ থিসিসের ৩ নম্বর অধ্যায় থেকে সরাসরি অনুলিপি করেছেন। এ ছাড়া থিসিসের অন্যান্য অংশও, যেমন ৬ জানুয়ারি ২০১৯ এবং ২৩ আগস্ট ২০১৯ তারিখে পাঠানো থিসিসের খসড়া নমুনা এবং থিসিস প্রেজেন্টেশন থেকেও তিনি উদ্ধৃতি এবং প্যারাফ্রেজিং ব্যবহার করেছেন। তা ছাড়া ইসরাত জাহান থিসিসের মৌলিক লেখকের নাম প্রকাশে তাঁর সম্মতি নেননি। গত বছরের ২৭ সেপ্টেম্বর ইসরাত জাহান তাঁর মুঠোফোনে কল করলেও তিনি ব্যস্ততার কারণে ধরতে পারেননি। এরপর তাঁর সঙ্গে শিক্ষকের আর কোনো যোগাযোগ হয়নি।
রিফাত সুলতানা প্রথম আলোকে বলেন, ‘তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গত ২২ এপ্রিল আমার সাক্ষাৎকার নিয়েছে। তবে সাক্ষাৎকার নেওয়ার সময় তদন্ত কমিটি পক্ষপাতদুষ্ট আচরণ করেছে এবং নিরপেক্ষতা বজায় রাখতে ব্যর্থ হয়েছে। তদন্ত চলাকালীন আমার অভিযোগের তদন্ত না করে আমাকে ব্যক্তিগত আক্রমণ করেছে তারা। তদন্ত কমিটি উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে আমাকে মানসিকভাবে হেনস্তা করেছে।’
তদন্ত কমিটির সদস্যরা তাঁদের মত চাপিয়ে দিতে চেয়েছেন উল্লেখ করে রিফাত সুলতানা আরও বলেন, ‘তাঁরা মনে করেন, থিসিস থেকে শিক্ষার্থী এবং সুপারভাইজার দুজনেই নাকি একক লেখক হিসেবে গবেষণা আর্টিকেল প্রকাশ করতে পারেন এবং কোনো সুপারভাইজার চাইলেই শিক্ষার্থীর থিসিস থেকে প্রথম লেখক হিসেবে আর্টিকেল প্রকাশ করতে পারেন। এ ক্ষেত্রে থিসিসকারী শিক্ষার্থী অনুমতি না নিয়ে আর্টিকেল প্রকাশ করাকে তাঁরা অন্যায় বলে মনে করেন না।’
জানতে চাইলে তদন্ত কমিটির সদস্য কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার (চলতি দায়িত্ব) অধ্যাপক মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘এগুলো সব মিথ্যা ও বানোয়াট কথাবার্তা। ইসরাত জাহান এই গবেষণা দিয়ে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কোনো প্রকার সুবিধা নেননি। এটি তাঁদের ব্যক্তিগত বিষয়। কারণ, পূর্বের প্রতিষ্ঠানে এটি তাঁদের যৌথ কাজ ছিল। ইসরাত যে গবেষণা জার্নালে প্রকাশ করেছেন, সেখানে তিনি শিক্ষার্থীর নামও দিয়েছেন। এরপরও আমাদের কাছে অভিযোগ করায় আমরা এ নিয়ে তদন্ত কমিটি গঠন করেছি এবং অভিযোগকারীর কাছ থেকে বিস্তারিত জানান চেষ্টা করেছি। কিন্তু তিনি যেসব কথা বলছেন সেগুলো সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন ও বানোয়াট।’