ঈদ উপলক্ষে আপনি বেতন–ভাতার পাশাপাশি বোনাস পান। হাতে এসেছে বাড়তি নগদ টাকা। তাই এবারের ঈদে হয়তো অনেক কেনাকাটা করেছেন। কেনাকাটা করেছেন স্ত্রী-সন্তানের পাশাপাশি আত্মীয়স্বজনের জন্য। ঈদ উপলক্ষে বেশ ভালো বাজারসদাই করেছেন। এ ছাড়া অনেককে নগদ টাকাও দিয়েছেন।
আপনি কি জানেন, ঈদের খরচ আপনার আয়কর নথিতে দেখাতে হবে? আয়কর নথিতে উৎসবের খরচ অংশে এ খরচ দেখাতে হবে।
ব্যক্তিশ্রেণির করদাতাদের বার্ষিক রিটার্ন দেওয়ার সময় জীবনযাপনের খরচ বিবরণী দিতে হয়। সেখানে ঈদসহ উৎসবের যাবতীয় খরচ দেখাতে হয়। আয়কর রিটার্ন দাখিলের সময় আইটি-১০ বি ফরমের মাধ্যমে জীবনযাত্রার তথ্য দিতে হয়। সেখানে ৭ নম্বর সারণিতে উৎসব ও অন্যান্য বিশেষ ব্যয় খাতে ঈদের খরচের যাবতীয় সব জানাতে হবে।
গুলশান-বনানীসহ অভিজাত এলাকায় বিপণিবিতানে এবারের ঈদে পাঞ্জাবির দাম উঠেছে প্রায় চার লাখ টাকা। ৪০-৫০ হাজার টাকার শাড়ি-জামা অহরহ বিক্রি হচ্ছে। ১০-১২ হাজার টাকার পাঞ্জাবি, শার্ট, টি–শার্ট এখন অনেকেই কেনেন। এসব কেনাকাটার খরচ আয়কর নথিতে দেখানো হয় কি না, তা জানতে চান কর কর্মকর্তারা। তাঁদের আয়ের সঙ্গে খরচের সামঞ্জস্য আছে কি না, তা–ও খতিয়ে দেখেন তাঁরা।
ইদানীং ঈদের ছুটিতে পরিবার নিয়ে কিংবা বন্ধুবান্ধব নিয়ে দল বেঁধে ঘুরতে যাওয়া বেশ জনপ্রিয় হয়ে গেছে। আপনি যদি ঈদের ছুটিতে দেশে-বিদেশে ঘুরতে যান; অবকাশ যাপন করতে যান, তাহলেও তা আয়কর নথিতে দেখাতে হবে। নিজ খরচে দেশে ও বিদেশে ভ্রমণ ও অবকাশ ইত্যাদির খরচ আইটি-১০ বি ফরমের ৬ নম্বর সারণিতে দিতে হয়।
আপনার করযোগ্য আয় থাকলেই, অর্থাৎ সাড়ে তিন লাখ টাকার বেশি আয় হলেই প্রতিবছর যে রিটার্ন দেন, এর সঙ্গে আলাদা ফরমে জীবনযাত্রার ব্যয় বিবরণী জমা দেওয়া বাধ্যতামূলক। তবে কোম্পানির পরিচালক হলে আপনার আয় যা-ই হোক না কেন, খরচ বিবরণী জমা দিতেই হবে। কোম্পানি পরিচালকদের রিটার্ন দেওয়া বাধ্যতামূলক।
বাধ্যতামূলকভাবে সম্পদের বিবরণী দাখিলে নানা শর্ত থাকলেও ক্ষেত্রে জীবনযাত্রার খরচ দেখানোর জন্য কোনো শর্ত নেই। সাড়ে তিন লাখ টাকার বেশি করযোগ্য আয় হলেই কোথায় কত খরচ করলেন, তা জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআর) জানাতে হবে। এখানে ঈদের খরচও বাদ যায়নি।
জীবনযাত্রার ব্যয় কেন দেখাতে হয়, এর পেছনে কারণ আছে। আপনি কতটা ধনী, আপনি কত আয় করেন, কত খরচ করেন, আপনার সামাজিক অবস্থান কী, সেটা দেখতে চায় জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। আপনার বৈধ আয়ের সঙ্গে আপনার জীবনযাত্রার মিল আছে কি না, তা দেখতে চান কর কর্মকর্তারা।
জীবনযাত্রায় যেসব তথ্য দিতে হয়জীবনযাত্রার ফরমে ১ নম্বর সারণিতে আপনার ব্যক্তিগত তথ্য ও পরিবারের ভরণপোষণের খরচের দিতে হয়। আপনার সংসার খরচ কত, তা–ও জানাতে হবে। ২ নম্বর সারণিতে আবাসনসংক্রান্ত তথ্য দিতে হয়। নিজের বাড়ি কিংবা মা-বাবার বাড়ি কিংবা অফিস থেকে কোয়ার্টার পেলেও তা লিখতে হবে। আপনি যদি ভাড়া বাসায় থাকেন, সেটা লিখতে হবে। বছরে কত টাকা ভাড়া দেন, তা হিসাব করে জানাতে হবে। এমনকি রক্ষণাবেক্ষণ খরচের (পৌরকর, সার্ভিস চার্জ প্রভৃতি) কথাও বলতে হবে।
৩ নম্বর সারণিতে যানবাহন–সংক্রান্ত খরচের তথ্য দিতে হয়। সেখানে গাড়ির চালকের বেতন, প্রতি মাসের জ্বালানি ও রক্ষণাবেক্ষণের খরচ—এসব তথ্য জানাতে হবে।
৪ নম্বর সারণিতে পরিষেবার যত তথ্য আছে, তা দিতে হয়। সেখানে গৃহকর্মীর বেতন–ভাতা বাবদ কত দিলেন, সেটাও জানতে চায় এনবিআর। যাবে। বাড়িওয়ালা-ভাড়াটেনির্বিশেষে সবাইকে বিদ্যুৎ, গ্যাস, পানির বিল দিতে হয়। বর্জ্য অপসারণের বিল, ইন্টারনেট ও ডিশের বিলের যাবতীয় তথ্য দিতে হবে। এমনকি মুঠোফোনের রিচার্জে কত খরচ করলেন, তা–ও এই সারণির মাধ্যমে জানাতে হবে।
সন্তানদের পড়াশোনায় পুরো বছরে কত খরচ করছেন, তা জানাতে হয় ৫ নম্বর সারণিতে। ছোট চাকরি করেন অনেকে, কিন্তু ঘুষ-দুর্নীতির টাকায় সন্তানদের নামজাদা স্কুলে পড়ান। তাঁরা যদি কর নথিতে তা না দেখান, তাহলে কর কর্মকর্তারা চাইলে স্কুলের শিক্ষার্থীদের নাম ও পরিচয় দেখে তাদের খুঁজে বের করে ফেলতে পারবেন।
এ ছাড়া সারা বছরের বিভিন্ন সময়ে উৎসে কর কর্তন ও ঋণের তথ্যও জীবনযাত্রার বিবরণীতে দিতে হয়।
আয়কর নথিতে জীবনযাত্রার খরচ দেখানো কোনো শর্ত নেই। সাড়ে তিন লাখ বার্ষিক করযোগ্য আয় হলেই করদাতাতে জীবনযাত্রার খরচ দেখাতে হয়। তবে রিটার্ন জমার সময় সম্পদ বিবরণী নামে আরেকটি বিবরণী জমা দিতে হয়। সে ক্ষেত্রে শর্ত আছে। আপনার সম্পদের পরিমাণ ৫০ লাখ টাকা বেশি হয়; মোটর গাড়ির মালিক হলে, অ্যাপার্টমেন্ট বা গৃহসম্পত্তির মালিক, শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানির শেয়ারহোল্ডার হলে কিংবা সরকারি কর্মচারী হলে সম্পদের বিবরণী দেওয়া বাধ্যতামূলক।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: জ বনয ত র র খরচ দ খ দ র খরচ ব বরণ কর কর আপন র খরচ র
এছাড়াও পড়ুন:
৩০ নভেম্বরের মধ্যে করদাতাদের ই-রিটার্ন জমা দিতে বলেছে এনবিআর
চলতি ২০২৫-২৬ অর্থবছরে এখন পর্যন্ত ১০ লাখের বেশি করদাতা অনলাইনে তাঁদের ই-রিটার্ন জমা দিয়েছেন। গত আগস্টে সব করদাতার জন্য অনলাইনে আয়কর রিটার্ন জমা দেওয়া বাধ্যতামূলক করে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
ই-রিটার্ন সিস্টেম ব্যবহার করে ৩০ নভেম্বরের মধ্যে আয়কর রিটার্ন দাখিল করতে সব ব্যক্তি করদাতাদের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছে এনবিআর। গত বৃহস্পতিবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ অনুরোধ জানায় সংস্থাটি।
গত বছর নির্দিষ্ট এলাকার অধিক্ষেত্রের ব্যক্তি করদাতা, সারা দেশে ব্যাংকে কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং কয়েকটি বহুজাতিক কোম্পানির কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য অনলাইনে রিটার্ন দাখিল বাধ্যতামূলক করা হয়। তাতে ১৭ লাখের বেশি করদাতা অনলাইনে রিটার্ন দাখিল করেন।
দেশে বর্তমানে ১ কোটি ১২ লাখের মতো কর শনাক্তকরণ নম্বরধারী (টিআইএন) আছেন। তাঁদের মধ্যে প্রতিবছর মাত্র ৪০ লাখ টিআইএনধারী রিটার্ন দাখিল করেন।
এনবিআর জানায়, এক বিশেষ আদেশের মাধ্যমে চলতি বছর ৬৫ বছর বা তদূর্ধ্ব বয়সের প্রবীণ করদাতা, শারীরিকভাবে অসমর্থ বা বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন করদাতা, বিদেশে অবস্থানরত বাংলাদেশি করদাতা, মৃত করদাতার পক্ষে আইনগত প্রতিনিধি কর্তৃক রিটার্ন দাখিল এবং বাংলাদেশে কর্মরত বিদেশি নাগরিক ছাড়া সব ব্যক্তিশ্রেণির করদাতার অনলাইনে আয়কর রিটার্ন দাখিল বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।
চলতি ২০২৫-২৬ করবর্ষে যেসব করদাতা অনলাইনে রিটার্ন দাখিলের বাধ্যবাধকতা থেকে অব্যাহতি পেয়েছেন, তাঁরাও চাইলে অনলাইনে ই-রিটার্ন জমা দিতে পারবেন। অন্যদিকে ই-রিটার্ন সিস্টেমে নিবন্ধনসংক্রান্ত সমস্যার কারণে কোনো করদাতা অনলাইনে রিটার্ন জমা দিতে না পারলে ১৫ নভেম্বরের মধ্যে সংশ্লিষ্ট উপকর কমিশনারের কাছে সুনির্দিষ্ট কারণ উল্লেখ করে আবেদন করলে অতিরিক্ত বা যুগ্ম কর কমিশনারের অনুমোদনক্রমে কাগুজে রিটার্ন জমা দিতে পারবেন। এই সময়সীমা ৩১ অক্টোবর শেষ হওয়ার কথা থাকলেও তা ১৫ দিন বাড়ানো হয়েছে।
এনবিআরের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, করদাতার পক্ষে ক্ষমতাপ্রাপ্ত প্রতিনিধিও অনলাইনে ই-রিটার্ন জমা দিতে পারছেন। এ ছাড়া বিদেশে অবস্থানরত বাংলাদেশি করদাতাদের ক্ষেত্রে অনলাইনে রিটার্ন দাখিলের বাধ্যবাধকতা না থাকলেও তাঁদের পাসপোর্ট ও জাতীয় পরিচয়পত্রের নম্বর, ই-মেইল ইত্যাদি তথ্য দিয়ে ই-মেইল করলে ই-রিটার্নের নিবন্ধন লিংক পাঠানো হয়। এর মাধ্যমে বিদেশে অবস্থানরত বাংলাদেশি করদাতারা ই-রিটার্ন সিস্টেমে নিবন্ধন করে সহজেই অনলাইনে আয়কর রিটার্ন দাখিল করতে পারছেন। কোনো ধরনের কাগজপত্র বা দলিল আপলোড না করেই করদাতারা তাঁদের আয়, ব্যয়, সম্পদ ও দায়ের প্রকৃত তথ্য ই-রিটার্ন সিস্টেমে এন্ট্রি করে ঝামেলাহীনভাবে আয়কর রিটার্ন দাখিল করতে পারছেন। ই-রিটার্ন দাখিলের পর তাৎক্ষণিকভাবে জমা স্লিপ পাওয়া যাচ্ছে। এমনকি প্রয়োজনীয় তথ্য দিয়ে আয়কর সনদও প্রিন্ট করে নিতে পারছেন করদাতারা।
এনবিআর সূত্রে জানা গেছে, ই-রিটার্ন জমা সহজ করার জন্য গত বছরের মতো এবারও করদাতাদের জন্য প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়েছে। ই-রিটার্নসংক্রান্ত যেকোনো সমস্যায় করদাতাদের সহায়তা দিতে একটি কল সেন্টার স্থাপন করা হয়েছে। আবার ওয়েবসাইটে ই-রিটার্নসংক্রান্ত যেকোনো সমস্যা লিখিতভাবে জানালেও তার সমাধান পাচ্ছেন করদাতারা। কোনো করদাতা সশরীর নিজ নিজ কর অঞ্চলে গিয়েও ই-রিটার্ন জমা দেওয়াসংক্রান্ত সেবা নিতে পারছেন।