ঈদের পরদিন ঢাকার অভ্যন্তরীণ রুটগুলোতে চলাচলকারী বাসে বাড়তি ভাড়া আদায়ের অভিযোগ পাওয়া গেছে।

মঙ্গলবার (১ এপ্রিল) ঢাকার বিভিন্ন রুটের বাসের যাত্রীরা অভিযোগ করেন, নির্দিষ্ট ভাড়ার চেয়ে ১০ থেকে ২০ টাকা বেশি ভাড়া নেওয়া হচ্ছে। 

কেরানীগঞ্জ, সদরঘাট, গুলিস্তান, যাত্রাবাড়ী, রায়েরবাগ, মিরপুর, গাবতলী—যেখান থেকেই যাত্রীরা উঠুক না কেন নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে বেশি ভাড়া দিতে হচ্ছে। দিতে না চাইলে হেনস্তার শিকার হতে হচ্ছে বলেও অভিযোগ করেছেন যাত্রীরা।

অন্যদিকে, বাসচালক ও সহকারীদের দাবি, ঈদ উপলক্ষে এ ভাড়া নেওয়া হচ্ছে। এটাকে ‘ঈদ বোনাস’ বলছেন তারা।

‘দিশারী’ পরিবহনের বাসের যাত্রী খালিদ মাহমুদ বলেন, ‘‘ঈদে সরকারি ছুটি হওয়ার দিন থেকেই বাড়তি ভাড়া নেওয়া হচ্ছে। ঈদের দিনও নিয়েঠে। আজও জোর করে বেশি ভাড়া আদায় করা হচ্ছে। কেরানীগঞ্জের কদমতলী থেকে দিশারী বাসে গুলিস্তান ১০ টাকার ভাড়া নেওয়া হচ্ছে ২০ টাকা। এগুলো কী দেখার কেউ নেই?”

তিনি বলেন, “সাধারণ মানুষ জিম্মি। অভিযোগ করলেও কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না।” 

দিশারী পরিবহনের সুপারভাইজার কামাল হোসেন বলেন, “ঈদের আনন্দ সবার জন্য। আমাদের পরিবার আছে। বাস মালিক তো আমাদের বোনাস দেয় না। ঈদের ছুটিতেও ছেলে-মেয়ে রেখে যাত্রীদের সেবা দিচ্ছি। তাদের কাছ থেকে ঈদ বোনাস চেয়ে  নিচ্ছি। সবার কাছে চাই, যে খুশিতে দেয়  তার কাছ  নিচ্ছি। যিনি দিতে চান না তার কাছ থেকে নিচ্ছি না।” 

বুসন্ধরা থেকে ‘ভিক্টর’ পরিবহনে গুলিস্তান এসেছেন গোলাম মোস্তফা বাবুল। তিনি বলেন, “৩০ টাকার ভাড়া ৫০ টাকা নেওয়া হয়েছে। আমি ভাই অল্প আয়ের মানুষ। নিজেই বোনাস পাই নাই। বাসে রোজ তিনবার উঠতে হয়। যত বার উঠেছি তত বার বোনাস দিতে হয়েছে।”

সামিয়া নামে আরেক যাত্রী বলেন, “বাসে উঠলে আর নামলেই ১০ টাকা ভাড়া। এখন দিতে হচ্ছে ২০ টাকা করে।” 

‘সাভার’ পরিবহনে গোলাম হোসেন নামের আরেক যাত্রী বলেন, “ঈদ বোনাস নামে বাড়তি ভাড়া না দিলে খারাপ আচারণ করে। মন চাই না তারপরেও বাড়তি ভাড়া দিচ্ছি।”

 ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো.

সাইফুল আলম বিপুল বলেন, “যাত্রীদের কাছ থেকে সরকার নির্ধারিত ভাড়ার অতিরিক্ত টাকা কোনোভাবেই আদায় করা যাবে না। বাড়তি ভাড়া আদায়ের অভিযোগ পেলে বাসচালক ও সুপারভাইজের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” 

ঢাকা/এএএম/ইভা 

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর পর বহন

এছাড়াও পড়ুন:

বাসাবাড়িতে ১৪ বছরের কম বয়সী শিশু নিয়োগ বন্ধে আইন করার সুপারিশ

বাসাবাড়ির কাজে তথা গৃহকর্মে ১৪ বছরের কম বয়সী শিশুদের নিয়োগ বন্ধে কঠোর আইন করার পাশাপাশি কার্যকরভাবে তা বাস্তবায়নের সুপারিশ করেছে শ্রম সংস্কার কমিশন।

বাংলাদেশ জাতীয় শ্রম আইন ২০০৬ অনুযায়ী, ১৪ বছরের কম বয়সী শিশুদের কাজ করানো হলে তা শিশুশ্রমের অন্তর্ভুক্ত বলে গণ্য করা হয়। এ ছাড়া গৃহকর্মী সুরক্ষা ও কল্যাণনীতি ২০১৫-তে বলা হয়েছে, ১৪ বছরের নিচে কোনো শিশুকে গৃহকর্মে নিয়োগ করা যাবে না।

শ্রম সংস্কার কমিশন এ প্রসঙ্গে বলেছে, গৃহকর্মে ১৪ বছরের কম বয়সী শিশুদের নিয়োগ বন্ধে কঠোর আইন করতে হবে। একই সঙ্গে এই আইনের কার্যকর বাস্তবায়নেও গুরুত্ব দিতে হবে সরকারকে।

সম্প্রতি প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে শ্রম সংস্কার কমিশন যে প্রতিবেদন জমা দিয়েছে, সেখানে এসব সুপারিশ তুলে ধরা হয়।

কমিশনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গৃহশ্রমিকদের বাংলাদেশ শ্রম আইনে অন্তর্ভুক্ত করে শ্রমিক হিসেবে স্বীকৃতি ও মর্যাদা দিতে হবে। এর আগপর্যন্ত নিশ্চিত করতে হবে ‘গৃহকর্মীর কল্যাণ ও সুরক্ষা নীতিমালা–২০১৫’–এর যথাযথ বাস্তবায়ন।

নিয়োগের ক্ষেত্রে আবাসিক, অনাবাসিক, খণ্ডকালীন বা স্থায়ী—সব ধরনের গৃহশ্রমিকদের জন্য কর্মঘণ্টা, বেতন, ছুটি, থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা এবং অন্যান্য সুবিধা উল্লেখ করে একটি স্বচ্ছ ও নির্দিষ্ট বাধ্যতামূলক কর্মসংস্থান চুক্তি প্রণয়নের সুপারিশ করা হয়েছে কমিশনের প্রতিবেদনে। পাশাপাশি নিয়োগকর্তার বিরুদ্ধে শ্রমিকের কোনো অভিযোগ থাকলে সেটি কার বরাবর, কোন স্থানে এবং কীভাবে দায়ের করবেন, সে বিষয়ে সুনির্দিষ্ট নির্দেশনাসহ ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করা হয়।

গৃহশ্রমিকদের কাজের দক্ষতা বৃদ্ধি ও নতুন দক্ষতা অর্জনের জন্য সরকারি উদ্যোগে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করার সুপারিশ করেছে শ্রম সংস্কার কমিশন। প্রতিবেদনে বলা হয়, এর মাধ্যমে গৃহকর্মীদের কর্মসংস্থানের সুযোগ বৃদ্ধি ও নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে। এ ছাড়া গৃহকর্মীদের সংগঠন বা ট্রেড ইউনিয়ন করার অধিকার প্রদানেরও সুপারিশ করেছে কমিশন।

পারলারের কর্মীদের সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচিতে নেওয়ার পরামর্শ

এদিকে বিউটি পারলার খাতের শ্রমিকদের সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় অন্তর্ভুক্ত করার সুপারিশ করেছে শ্রম সংস্কার কমিশন। একই সঙ্গে এ খাতের কর্মীদের স্বাস্থ্যসেবা ও তাঁদের সন্তানদের জন্য শিশু দিবাযত্নকেন্দ্র বা ডে কেয়ার সুবিধা পাওয়ার অধিকার নিশ্চিতের কথা বলেছে কমিশন।

অর্থনৈতিক সুরক্ষা নিশ্চিত করতে এ খাতে ন্যূনতম মজুরি বোর্ড গঠনের সুপারিশও করেছে কমিশন। কমিশনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কর্মীদের কাজের মান ও ঝুঁকি বিবেচনা করে সুনির্দিষ্ট মজুরি কাঠামো নির্ধারণ করা এবং তাঁদের দক্ষতা ও অভিজ্ঞতার আলোকে পদোন্নতি কাঠামো তৈরি করতে হবে।

দেশের সব বিউটি পারলার শ্রমিকদের পেশাগত, অর্থনৈতিক ও সামাজিক মর্যাদা সুরক্ষার জন্য শ্রম আইন অনুযায়ী তাঁদের স্বীকৃতি দেওয়া, অধিকার ও কল্যাণ নিশ্চিত করার সুপারিশ করা হয়েছে কমিশনের প্রতিবেদনে।

বিউটি পারলারের কর্মীদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করতে তাঁদের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যক্তিগত সুরক্ষা সরঞ্জাম প্রদান করাসহ সুনির্দিষ্ট নিরাপত্তা নির্দেশিকা প্রণয়নের কথাও বলা হয়েছে প্রতিবেদনে।

বিউটি পারলারের কর্মীদের বড় একটি অংশ রাতে বাসায় ফেরে। কমিশনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কর্মক্ষেত্রে ও রাত্রিকালীন বাড়ি ফেরার সময় তাঁদের হয়রানি প্রতিরোধ ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ব্যবস্থা নিতে হবে। এসব শ্রমিকের সামাজিক মর্যাদা, সুরক্ষা ও নিরাপত্তার স্বার্থে কমিউনিটিভিত্তিক উদ্যোগ নেওয়া যেতে পারে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ