ঈদের ছুটি চলছে। রাঙামাটির বিনোদনকেন্দ্রগুলো এখন দর্শনার্থীদের পদচারণায় মুখর। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে ঈদের দিন থেকেই আসছেন হাজারো পর্যটক। বুধবার (২ এপ্রিল) রাঙামাটির ঝুলন্ত সেতু, পলওয়েল পার্ক ও আরণ্যকে দর্শনার্থীদের ভিড় দেখা গেছে। নিরাপত্তা নিয়েও সন্তুষ্ট পর্যটকরা।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, ঈদের দ্বিতীয় দিন থেকেই রাঙামাটির ঝুলন্ত সেতুতে পর্যটকদের উপস্থিতি বাড়ছে। ঝুলন্ত সেতুর পাটাতনে হাঁটা-চলার পাশাপাশি অনেকেই কাপ্তাই হ্রদে নৌবিহার করছেন।

পর্যটকরা দলে দলে ভ্রমণ করছেন ঝুলন্ত সেতুতে। কেউ আসছেন পরিবার নিয়ে, কেউ প্রেমিক-প্রেমিকাকে আবার কেউ বন্ধুদের সঙ্গে নিয়ে এসেছেন এখানে। শুধু ঝুলন্ত সেতুতেই তাদের ভ্রমণ সীমাবদ্ধ নয়। নৌঘাট থেকে ইঞ্জিনচালিত নৌকা নিয়ে কাপ্তাই হ্রদে নৌবিহার করছেন পর্যটকরা। হ্রদ-পাহাড়ের সৌন্দর্য যান্ত্রিক জীবনের একঘেয়েমি দূর করছে।

পলওয়েল পার্কসহ অন্য পর্যটন স্পটগুলোতেও পর্যটকদের বিপুল উপস্থিতি রয়েছে। শিশুরা টয় ট্রেন ও দোলনাতে চড়ে আনন্দ উপভোগ করছে। পলওয়েল পার্কের মিনি ঝুলন্ত সেতুতে হেঁটে বেড়াচ্ছেন কেউ কেউ। হ্রদের শান্ত জল ও সবুজ প্রকৃতি দেখে বিমোহিত পর্যটকরা।

খুলনা থেকে রাঙামাটিতে ঘুরতে আসা রাসেল আহমেদ বলেন, ঈদের ছুটি কাজে লাগাতে বন্ধুরা মিলে রাঙামাটি ঘুরতে আসলাম। চমৎকার জায়গা। শান্ত প্রকৃতি। হ্রদের পানিও শান্ত ও স্বচ্ছ। এমন সৌন্দর্য বাংলাদেশের মধ্যে লুকিয়ে আছে, সেটা নিজের চোখে না দেখলে কেউ বিশ্বাস করবে না। 

হাটহাজারি থেকে আসা পর্যটক দম্পতি বলেন, আমরা গতকাল পরিবার নিয়ে এসেছি। ইতোমধ্যে আরণ্যক ও পলওয়েল পার্ক ঘুরেছি। এবার কাপ্তাই হ্রদে এসেছি। হ্রদের সৌন্দর্য আমাদের সত্যিই বিমোহিত করেছে।

নৌযান ঘাটের ব্যবস্থাপক মো.

ফখরুল ইসলাম বলেন, ঈদের দ্বিতীয় দিন থেকে পর্যটকরা রাঙামাটি আসতে শুরু করেছে। আগামী শনিবার পর্যন্ত প্রতিদিনই রাঙামাটিতে প্রচুর পর্যটক হবে বলে আমরা আশা রাখছি। 

রাঙামাটি শহরের অধিকাংশ হোটেল-মোটেলে বুকিং বেড়েছে। হোটেল হিল পার্কের স্বত্বাধিকারী স্বপন শীল বলেছেন, ঈদের ছুটিতে বেশ পর্যটক হবে, সেটি আমরা আগেই ধারণা করেছিলাম। ঈদের আগে আমাদের প্রায় ৭০ শতাংশ রুম বুকিং হয়েছিল। আগামী কয়েকদিনও ভালো পর্যটক হবে।

রাঙামাটি পর্যটন হলিডে কমপ্লেক্সের ব্যবস্থাপক আলোক বিকাশ চাকমা বলেন, ঈদের পরদিন থেকে রাঙামাটিতে পর্যটকরা আসছেন। আমাদের যে টার্গেট ছিল ঈদকে ঘিরে, আশা করছি, সেটা পূরণ হবে। বর্তমানে আমাদের হোটেল-মোটেলগুলোতে ৬০ শতাংশ বুকিং রয়েছে। আাগামী ৩ তারিখ থেকে শতভাগ বুকিং রয়েছে। আশা করছি, এই মৌসুমে আমাদের বেশ ভালো ব্যবসা হবে।

ঢাকা/রফিক

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর স ন দর য ঈদ র ছ ট আম দ র

এছাড়াও পড়ুন:

কক্সবাজারে পর্যটকের ঢল, অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের অভিযোগ 

রাজধানী ঢাকা থেকে ছুটিতে পরিবার নিয়ে কক্সবাজারে বেড়াতে এসেছেন হাবিবুল আউয়াল। ভালো হোটেলে রুম না পাওয়ায় শহরের কলাতলী এলাকায় মধ্যমমানের একটি আবাসিক হোটেলে উঠেছেন। তাঁর কাছে এক রাতের জন্য হোটেলটির দুটি রুমের ভাড়া নেওয়া হয়েছে ২৫ হাজার টাকা। যদিও অন্য সময়ে ৫০০ থেকে ১ হাজার টাকায় এই মানের হোটেলে রুম ভাড়া পাওয়া যায়। ঈদ মৌসুমে চাহিদা বাড়ায় অন্য সময়ের তুলনায় ১২ গুণের বেশি ভাড়া নেওয়া হয়েছে তাঁর কাছ থেকে।

কোরবানির ঈদ ও পরবর্তী ছুটির সময়ে অতিরিক্ত পর্যটক আসায় কক্সবাজার শহর ও এর আশপাশের পাঁচ শতাধিক আবাসিক হোটেল, মোটেল, গেস্টহাউস ও রিসোর্টের প্রায় প্রতিটিতেই অন্য সময়ের চেয়ে ১০ থেকে ১৫ গুণ বেশি ভাড়া আদায় করা হচ্ছে। শুধু আবাসিক হোটেল নয়, রেস্টুরেন্ট থেকে শুরু করে পর্যটনসংশ্লিষ্ট সব সেবা খাতেই অতিরিক্ত অর্থ আদায়ের অভিযোগ পাওয়া গেছে। সংশ্লিষ্ট অনেকের মতে, প্রতিটি ছুটির মৌসুমে কক্সবাজারে পর্যটকদের সংখ্যা একটু বাড়লেই তাদের কাছ থেকে ‘গলাকাটা’ টাকা নেওয়া হয়।

ঈদুল আজহার লম্বা ছুটি শেষ হচ্ছে আজ। গতকাল শুক্রবার কক্সবাজার সৈকতে তিল ধারণের ঠাঁই নেই। লাবণী পয়েন্ট থেকে কলাতলী পয়েন্ট পর্যন্ত প্রায় তিন কিলোমিটার এলাকায় ছিল পর্যটকের ভিড়। সাগরতীর পরিণত হয়েছিল উৎসবের বেলাভূমিতে। শুক্রবার সকাল থেকে তীব্র গরম থাকলেও পর্যটকে পূর্ণ ছিল কক্সবাজার সৈকতের সুগন্ধা পয়েন্ট, লাবণী, কলাতলী, হিমছড়ি, ইনানী, পাতুয়ারটেক থেকে মেরিন ড্রাইভ পর্যন্ত পুরো এলাকা।

রাজধানীর মতিঝিল থেকে ঘুরতে আসা হুমায়ুন কবির বলেন, ‘এখন সমুদ্রে গোসল করছি। বিকেলে মেরিন ড্রাইভে ঘুরব, এরপর শনিবার রাতে ঢাকায় ফিরে যাব।’ নারায়ণগঞ্জ থেকে আসা আসিফ আহমেদ বলেন, ‘অনেক মানুষ, তবুও পরিবারের সবাইকে নিয়ে আনন্দ করছি, ছবি তুলছি, বিচ বাইক ও ঘোড়ায় চড়েছি।’ 

কক্সবাজার শহরের পাঁচতারকা হোটেল ওশান প্যারাডাইস লিমিটেডের বিপণন ব্যবস্থাপক ইমতিয়াজ নুর সোমেল সাংবাদিকদের বলেন, শুক্রবার পর্যন্ত তাদের হোটেলের ৭০-৮৫ শতাংশ রুম বুকিং রয়েছে। যদিও নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক হোটেল ব্যবসায়ী জানান, ১৩ জুন পর্যন্ত অধিকাংশ আবাসিক হোটেল সম্পূর্ণ বুকিং হয়ে গেছে। তবে প্রশাসন, কর ও ভ্যাট কর্মকর্তাদের ফাঁকি দিতে তারা বিষয়টি স্বীকার করতে চান না। 

ট্যুরিস্ট পুলিশ কক্সবাজার জোনের এএসপি নিত্যানন্দ দাস বলেন, এবার কোরবানির ঈদের পর গত সাত দিনে আট লাখের বেশি মানুষ কক্সবাজার ভ্রমণ করেছেন। তিনি বলেন, অতীতের মতো এবারও শহর ও সমুদ্রসৈকতে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা রোধে ওয়াচ টাওয়ার থেকে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। এ ছাড়া সৈকতের প্রতিটি গোলঘরে সার্বক্ষণিক পুলিশের অবস্থান এবং মোবাইল টিমসহ কয়েক স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। পর্যটন স্পটগুলোতে সাদা পোশাকেও দায়িত্ব পালন করছেন পুলিশ সদস্যরা। 

আবাসিক হোটেলে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের বিষয়ে এএসপি জানান, অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। গত কয়েকদিন এমন পাঁচটি অভিযোগ পাওয়া গেছে এবং ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। 

কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট শাহিদুল আলম বলেন, পর্যটকদের হয়রানি রোধে তিনজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সার্বক্ষণিক দায়িত্ব পালন করছেন। অভিযোগ পেলে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। পাশাপাশি সচেতনতা বাড়াতে নিয়মিত মাইকিং করা হচ্ছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ইরান-ইসরায়েল সংঘাত, বিপাকে ৪০ হাজার পর্যটক
  • হাওরের স্বচ্ছ জলে মুগ্ধ পর্যটক, বাড়ছে ভিড়
  • পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকতে কেউ অসুন্দর করলে ব্যবস্থা: চসিক মেয়র
  • সীতাকুণ্ডে ঝরনায় ২ বছরে ৮ পর্যটকের মৃত্যু, নিরাপত্তার ব্যবস্থা নেয়নি বন বিভাগ
  • বরিশাল: পর্যটনশিল্পের নতুন সম্ভাবনা
  • বান্দরবানে পর্যটক নিখোঁজের ঘটনায় পর্যটন সংস্থার প্রধান গ্রেপ্তার
  • কক্সবাজারে পর্যটকের ঢল, অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের অভিযোগ