পবিত্র রমজান মাসের শেষ শুক্রবার, জুমাতুল বিদার নামাজ আদায় করতে আজানের পরপর বহু মুসলিম মিয়ানমারের মধ্যাঞ্চল সাগাইংয়ের পাঁচটি মসজিদে জড়ো হয়েছিলেন।

জুমাতুল বিদা মানে শেষ হতে চলেছে রমজান মাস, সামনেই খুশির ঈদ। অন্যান্য শুক্রবারের তুলনায় তাই এ দিন জুমার নামাজ আদায় করতে মসজিদগুলোতে মুসল্লিদের ভিড় একটু বেশিই ছিল। স্থানীয় সময় দুপুর ১২টা ৫১ মিনিট। মসজিদগুলো তখন লোকে লোকারণ্য। হঠাৎ তীব্র ঝাঁকুনি শুরু হয়। ৭ দশমিক ৭ তীব্রতার শক্তিশালী ভূমিকম্পে কেঁপে ওঠে পুরো মিয়ানমার ও আশপাশের কয়েকটি দেশ।

ভূমিকম্পে সাগাইংয়ে তিনটি মসজিদ ধসে পড়ে, যার মধ্যে সেখানকার সবচেয়ে বড় মসজিদ মায়োমাও রয়েছে। ধসে পড়া তিনটি মসজিদের ভেতরে থাকা অনেক মুসল্লি নিহত হয়েছেন।

আরও পড়ুনমিয়ানমারে ভূমিকম্পে নিহতদের স্মরণে ১ মিনিট নীরবতা০১ এপ্রিল ২০২৫

কয়েক শ কিলোমিটার দূরে থাইল্যান্ডের সীমান্তবর্তী শহর মায়ে সোতে বসে ভূমিকম্পে কেঁপে ওঠেন মায়োমা মসজিদের সাবেক ইমাম সোয়ে নাই ওও।

পরের কয়েক দিনে সোয়ে নাই একের পর এক স্বজন, বন্ধু ও সাবেক সহকর্মীর মৃত্যুর খবর পেতে থাকেন। তাঁদের বেশির ভাগই মারা গেছেন মসজিদে। নিহত ব্যক্তিদের কেউ কেউ নগরের মুসলিম সম্প্রদায়ের নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিত্ব ছিলেন।

ইমাম সোয়ে বলেন, ‘যাঁরা প্রাণ হারিয়েছেন, আমি তাঁদের কথা ভাবি, নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে ছোট ছোট শিশুরাও রয়েছে। তাদের কেউ কেউ খুবই ছোট ছিল। এটা নিয়ে কথা বলার সময় আমি আমার চোখের পানি আটকে রাখতে পারিনি।’

মিয়ানমারে শুক্রবারের ভূমিকম্পে মৃত্যুর সংখ্যা ২ হাজার ৭০০ ছাড়িয়েছে বলে জানিয়েছে দেশটির জান্তা সরকার। সবচেয়ে বেশি মানুষ নিহত হয়েছে সাগাইং ও মিয়ানমারের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর মান্দালয়ে। ভূমিকম্পের উৎপত্তি স্থল ছিল সাগাইং অঞ্চলে। ধ্বংসস্তূপে এখনো উদ্ধারকাজ চলছে। তাই হতাহতের সংখ্যা আরও বাড়বে বলে জান্তা সরকার থেকে আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে।

আরও পড়ুনমিয়ানমারে ভূমিকম্প: বাতাসে লাশের গন্ধ ভেসে আসছে৩১ মার্চ ২০২৫

বৌদ্ধ–অধ্যুষিত মিয়ানমারে মুসলিমরা সংখ্যালঘু। সাগাইং ও মান্দালয়ে প্রাচীনকালে তৈরি বহু বৌদ্ধ মন্দির রয়েছে। তবে শহর দুটিতে মুসলিমদের সংখ্যাও উল্লেখ করার মতো।

গত সোমবার মিয়ানমারের জান্তাপ্রধান মিন অং হ্লাইং বলেছেন, নামাজ আদায় করার সময় ভূমিকম্পে মসজিদ ধসে পড়ে প্রায় ৫০০ মুসল্লি মারা গেছেন।

সাগাইংয়ের প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেছেন, ধসে পড়া মসজিদগুলো যে সড়কে ছিল, সেটির নাম মায়োমা স্ট্রিট। ভূমিকম্পে শহরের সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা এটি। মায়োমা সড়কের দুই পাশের অনেক ভবনও ধসে পড়েছে।

সাগাইংয়ের মায়োমা সড়কে এখনো শত শত মানুষ অবস্থান করছেন। হয় তাঁরা ভূমিকম্পে বাড়িঘর হারিয়েছেন অথবা বাড়িঘরে ফিরতে ভয় পাচ্ছেন। কারণ, এখনো পরাঘাতে (আফটার শক) ওই সব অঞ্চল কেঁপে কেঁপে উঠছে। সেখানে খাবারের অভাব দেখা দিয়েছে বলে জানা গেছে।

মায়োমা মসজিদ ধসেই ৬০ জনের বেশি মানুষ মারা গেছেন। মোয়েকিয়া ও মায়োদাও মসজিদ ধসেও বেশ কয়েকজন প্রাণ হারিয়েছেন। গতকাল মঙ্গলবার আরও বেশ কয়েকটি মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে।

আরও পড়ুনমিয়ানমারে ভূমিকম্প: ৬০ ঘণ্টা পর চারজনকে জীবিত উদ্ধার৩০ মার্চ ২০২৫

ইমাম সোয়ে বলেন, যাঁরা বেঁচে গেছেন, তাঁদের বেশ কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে তিনি জানতে পেরেছেন, ভূমিকম্পের সময় মুসল্লিরা মসজিদ থেকে বের হয়ে আসার চেষ্টা করেছিলেন।

২০২১ সালে মিয়ানমারে সামরিক অভ্যুত্থানের পর ইমাম সোয়ে তাঁর স্ত্রী ও মেয়েকে নিয়ে থাইল্যান্ডে পালিয়ে যান।

সোয়ে বলেন, মসজিদ প্রাঙ্গণে যেখানে অজু করা হয়, সেখানেও মৃতদেহ পাওয়া গেছে। উদ্ধারের সময় মৃতদেহগুলোর মধ্যে কেউ কেউ একে অন্যের হাত ধরেছিলেন। খুব সম্ভবত ভূমিকম্পে তীব্র ঝাঁকুনির সময় তাঁরা একজন আরেকজনের হাত ধরে বেরিয়ে আসার চেষ্টা করেছিলেন।

সেখানে ভূমিকম্পে নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে সোয়ের স্ত্রীর পরিবারের বেশ কয়েকজন রয়েছেন। রয়েছেন ঘনিষ্ঠ বন্ধু সাবেক একজন সহকারী ইমামও। স্থানীয় একটি সরকারি বিদ্যালয়ের প্রধান এবং মায়োমা মসজিদের একমাত্র নারী ট্রাস্টিও মারা গেছেন। সোয়ে বলেন, ওই নারী ট্রাস্টি খুবই ভালো মানুষ ছিলেন। তিনি প্রায় সময়ই মসজিদে নানা অনুষ্ঠানের জন্য নিজের পকেট থেকে অর্থ দিতেন।

সোয়ে বলেন, যখনই তিনি তাঁর সম্প্রদায়ের কারও মৃত্যুর খবর পাচ্ছেন, নতুন করে শোকের ঢেউ তাঁর ওপর আছড়ে পড়ছে।

আরও পড়ুনমুঠোফোন বেজে চললেও কোনো জবাব আসছে না: ভবনের বাইরে উদ্বিগ্ন স্বজনদের অপেক্ষা৩০ মার্চ ২০২৫

ইমাম সোয়ে আরও বলেন, ‘আমার বিধ্বস্ত লাগছে.

..আমার বারবার এসব মনে হচ্ছে। আমি তাঁদের স্মৃতি মনে রাখব। যদিও তাঁদের কেউ আমার খুব ঘনিষ্ঠ স্বজন ছিলেন না, কিন্তু তাঁরা সব সময় আমাকে তাঁদের একজন হিসেবে স্বাগত জানিয়েছেন। আমার পেছনে নামাজ আদায় করেছেন, আমার সঙ্গে নামাজ আদায় করেছেন।’

মিয়ানমারের অন্যান্য ভূমিকম্প দুর্গত এলাকার মতো মুসলিমরাও একসঙ্গে এত মৃতদেহ দাফন করতে হিমশিম খাচ্ছেন।

মিয়ানমারের জান্তা বাহিনী ও বিদ্রোহী দলগুলোর সঙ্গে যে লড়াই চলছে, তার কারণেও মৃতদেহ কবর দেওয়া কঠিন হয়ে পড়েছে। সাগাইংয়ে মুসলিমদের যে কবরস্থান সেটি বিদ্রোহী গোষ্ঠী পিপলস ডিফেন্স ফোর্সের (পিডিএফ) নিয়ন্ত্রিত এলাকার খুব কাছে। বেশ কয়েক বছর ধরে সেখানে সাধারণ মানুষের যাতায়াত বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। শক্তিশালী ভূমিকম্পের পর মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী সাগাইং অঞ্চলের বেশ কয়েকটি এলাকায় বিমান হামলাও চালিয়েছে।

সাগাইং শহরের মুসলিমদের মৃতদেহ দাফন করার জন্য মান্দালয়ে যেতে হয়। ইরাবতী নদীর ওপর একটি মাত্র সেতু শহর দুটিকে সংযুক্ত করেছে। ভূমিকম্পে নিহতদের মৃতদেহ মান্দালয়ের সবচেয়ে বড় মসজিদে নেওয়া হয়েছে। কাউকে কাউকে নিহত হওয়ার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে কবর দেওয়া সম্ভব হয়নি।

আরও পড়ুনধ্বংসস্তূপে চাপা পড়া মরদেহের হাত দেখে মাকে চিনে নিলেন ছেলে৩০ মার্চ ২০২৫

ইমাম সোয়ে বলেন, ‘মুসলিমদের জন্য এটা খুবই দুঃখের, আমরা আমাদের পরিবারের সদস্যদের তাদের শেষ যাত্রায় নিজের হাতে দাফন করতে পারছি না।’

এখানেই শেষ নয়। এই ইমাম বলেন, তিনি কয়েক দিন ধরে ঘুমাতে পারছেন না। তাঁর উদ্বেগের কারণ, এখনো কয়েকজন স্বজনের কোনো খোঁজ তিনি পাননি। তাঁদের মধ্যে তাঁর আপন ভাই-বোনও রয়েছেন। তাঁরা মান্দালয়ে বসবাস করতেন।

ইমাম সোয়ে সাগাইংয়ে উদ্ধারকাজে সহায়তা করার চেষ্টা করছেন। সেখানে ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন এমন অন্তত এক হাজার মুসলিমের সাহায্য প্রয়োজন বলে জানান তিনি।

সোয়ে বলেন, ‘সেখানে কেউ যখন সাহায্য চান তখনই কেবল আমার খানিকটা স্বস্তি লাগে এবং আমি তাঁদের সাহায্য করতে পারি।’

আরও পড়ুনমিয়ানমারে ভূমিকম্পে নিহতের সংখ্যা বেড়ে ২৭০০২০ ঘণ্টা আগে

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ভ ম কম প র সময় সবচ য় স বজন

এছাড়াও পড়ুন:

আজ টিভিতে যা দেখবেন (১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫)

এশিয়া কাপে আজ মুখোমুখি শ্রীলঙ্কা ও আফগানিস্তান। চ্যাম্পিয়নস লিগে মাঠে নামবে ম্যানচেস্টার সিটি, নাপোলি, বার্সেলোনা।

সিপিএল: কোয়ালিফায়ার-১

গায়ানা-সেন্ট লুসিয়া
সকাল ৬টা, স্টার স্পোর্টস ২

এশিয়া কাপ ক্রিকেট

আফগানিস্তান-শ্রীলঙ্কা
রাত ৮-৩০ মি., টি স্পোর্টস ও নাগরিক

অ্যাথলেটিকস

বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপ
বেলা ৩টা, স্টার স্পোর্টস সিলেক্ট ১

উয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগ

কোপেনহেগেন-লেভারকুসেন
রাত ১০-৪৫ মি., সনি স্পোর্টস ২

ম্যানচেস্টার সিটি-নাপোলি
রাত ১টা, সনি স্পোর্টস ১

নিউক্যাসল-বার্সেলোনা
রাত ১টা, সনি স্পোর্টস ২

ফ্রাঙ্কফুর্ট-গালাতাসারাই
রাত ১টা, সনি স্পোর্টস ৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ