ভারতের সেরা সেরা বিশ্ববিদ্যালয়ে স্কলারশিপ, মাসে ২৪৫০০ রুপি, আবেদন যেভাবে
Published: 3rd, April 2025 GMT
আমি কখনো ভাবিনি যে একদিন বিদেশে বিনা খরচে পড়ার সুযোগ পাব। ছোটবেলা থেকেই উচ্চশিক্ষার স্বপ্ন দেখতাম, বিদেশে পড়তে গেলে অনেক টাকা লাগে। কিন্তু আমি স্বপ্ন দেখা থামাইনি, পরিশ্রম করে গেছি, যার ফলস্বরূপ আসিসিআর (ইন্ডিয়ান কাউন্সিল ফর কালচারাল রিলশনস) ফুল-ফান্ডেড স্কলারশিপ পেয়েছি। এই যাত্রাটা সহজ ছিল না। কিন্তু আমি যদি পারি, আপনিও পারবেন। আমার অভিজ্ঞতা আপনাদের জন্য পথপ্রদর্শক হতে পারে। তাই আমার গল্পটাই আজ আপনাদের বলছি।
স্বপ্ন দেখা ও শুরুটা কেমন ছিল? আমি পড়াশোনায় খুব বেশি মনোযোগী ছিলাম না, কিন্তু বিদেশে উচ্চশিক্ষা নেওয়া আমার জন্য কেবল একটা দূরবর্তী স্বপ্ন ছিল। আমার বন্ধু রিমন প্রথমে ভারতে আইসিসিআর স্কলারশিপ সম্পর্কে জানায়। পরে জানতে পারি আইসিসিআর স্কলারশিপের মাধ্যমে বাংলাদেশ থেকে প্রতিবছর ৫০০ শিক্ষার্থীকে বিনা খরচে ভারতে পড়ার সুযোগ দেওয়া হয়। তখনই মনে হলো, এটাই আমার সুযোগ! আমি দ্রুত আইসিসিআরের ওয়েবসাইট ঘেঁটে দেখি, সম্পূর্ণ বিনামূল্যে পড়াশোনা করা যাবে, প্রতি মাসে ১৮,০০০ রুপি স্টাইপেন্ড পাওয়া যাবে, সঙ্গে বাসাভাড়া ৬,৫০০ রুপি এমনকি বিমান ভাড়াও ভারত সরকার বহন করবে। আমি দেরি না করে তৎক্ষণাৎ বন্ধু রিমনের সঙ্গে আবেদন করার সিদ্ধান্ত নিই।
এখন আসি মূল কথায়, আইসিসিআর স্কলারশিপের আবেদন ও সুযোগ-সুবিধা কেমন।
আরও পড়ুনআইডিবি দেবে ৭২০ ঘণ্টা প্রশিক্ষণ, মিলবে হাতখরচের অর্থ২৩ মার্চ ২০২৫সুযোগ–সুবিধাগুলো—১.
সম্পূর্ণ বিনা মূল্যে পড়াশোনার সুযোগ ফুল টিউশন ফি কভার করবে ভারত সরকার। এককালীন বিমান ভাড়া বহন করা হবে (প্রথমবার ভারত যাওয়ার সময় এবং ডিগ্রি শেষে দেশে ফেরার সময়)।
২.
স্টাইপেন্ড: মাসিক স্টাইপেন্ড (ভাতা) মিলবে। আন্ডারগ্র্যাজুয়েটে ১৮,০০০ রুপি (মাসে), মাস্টার্সে: ২০,০০০ রুপি (মাসে), পিএইচডি: ২২,০০০ রুপি (মাসে)।
৩.
বাড়ি ভাড়া সহায়তা: সব পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের জন্য প্রতি মাসে ৬,৫০০ রুপি
৪.
মেডিকেল সুবিধা: ভারত সরকারের নির্ধারিত হাসপাতালগুলোতে ফ্রি চিকিৎসা সুবিধা
৫.
গবেষণা ও একাডেমিক সুবিধা: অনেক বিশ্ববিদ্যালয় ফ্রি লাইব্রেরি ও গবেষণা সুযোগ দেয়। কনফারেন্স, ওয়ার্কশপ ও বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ইভেন্টে অংশগ্রহণের সুযোগ।
আরও পড়ুনঅস্ট্রেলিয়া অ্যাওয়ার্ডস স্কলারশিপে আবেদন শুরু, আইএলটিএসে ৬.৫ অথবা টোয়েফলে ৮৪ হলে আবেদন ০১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫কীভাবে আবেদন করবেন—*আবেদন করার জন্য পাসপোর্ট থাকা বাধ্যতামূলক
*ইয়ার গ্যাপ: এ স্কলারশিপের জন্য ইয়ার গ্যাপ কোনো বাধা নয়, তবে একাডেমিক রেজাল্ট ভালো হলে সুযোগ বাড়বে
১.
অনলাইনে ফরম পূরণ করুন: আইসিসিআর–এর অফিশিয়াল পোর্টালে গিয়ে আবেদন ফরম পূরণ করতে হবে। পছন্দের ছয়টি বিষয় বাছাই করতে হবে। ৫০০ শব্দের একটি প্রবন্ধ লিখতে হবে।
২.
প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট আপলোড করুন: এসএসসি ও এইচএসসির মার্কশিট ও সার্টিফিকেট পাসপোর্টের স্ক্যান কপি ইংরেজি দক্ষতার প্রমাণ (TOEFL/IELTS থাকলে) সুপারিশপত্র এবং ফিজিক্যাল ফিটনেসবিষয়ক সার্টিফিকেট।
৩.
লিখিত পরীক্ষা ও ভাইভা: লিখিত পরীক্ষায় ইংরেজি গ্রামার ও বিভিন্ন প্রশ্ন থাকবে। পরীক্ষায় ভলো করলে এরপর ভারতীয় হাইকমিশনে ভাইভা দিতে হবে।
অন্য দেশের স্কলারদের সঙ্গে লেখকউৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: আইস স আর ০০০ র প র স কল স কল র র জন য
এছাড়াও পড়ুন:
বাণিজ্যবিরোধ: ভারত কেন ট্রাম্পের নিশানায়
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গতকাল বৃহস্পতিবার ভারতের বাণিজ্যনীতির তীব্র সমালোচনা করেছেন। ভারতীয় পণ্যের ওপর হোয়াইট হাউসের শুল্ক বৃদ্ধির প্রস্তুতি নেওয়ার পর থেকেই এ আক্রমণের মাত্রা বেড়েছে।
ট্রাম্প জানিয়েছেন, তাঁর প্রশাসন আজ শুক্রবার (১ আগস্ট) থেকে ভারতের রপ্তানি পণ্যের ওপর ২৫ শতাংশ হারে শুল্ক আরোপ করছে এবং এর পাশাপাশি অতিরিক্ত শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ট্রাম্প যখন বিশ্বের বহু দেশের ওপর নতুন শুল্ক আরোপের পরিকল্পনা করছিলেন, তখনই ভারতকে উদ্দেশ করে তাঁর এমন কঠোর অবস্থান সামনে উঠে আসে।
হোয়াইট হাউসের অভিযোগ, ভারত মার্কিন পণ্যকে বাজারে ঠেকাতে অতিমাত্রায় শুল্ক আরোপ করছে। সম্প্রতি রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ চলাকালে ভারত রুশ জ্বালানি কেনা অব্যাহত রাখায় ট্রাম্প প্রকাশ্যে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
‘ভারতের শুল্ক বিশ্বে অন্যতম সর্বোচ্চ’, গত বুধবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এমন মন্তব্য করেন ট্রাম্প। জবাবে ভারত সরকার জানিয়েছে, তারা ট্রাম্পের বক্তব্য ‘লক্ষ্য করেছে’ এবং এর ‘প্রভাব মূল্যায়ন’ করবে।
যুক্তরাষ্ট্র-ভারত বাণিজ্যবিরোধ: পরিস্থিতি কোথায় দাঁড়িয়ে
আজ থেকে ভারতীয় পণ্যের ওপর ট্রাম্পের ধার্য করা ২৫ শতাংশ পাল্টা শুল্ক গত ২ এপ্রিল হোয়াইট হাউসের রোজ গার্ডেনে ঘোষিত সম্ভাব্য শুল্ক থেকে মাত্র ১ শতাংশ কম।
এ হার ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) ও জাপানের ওপর আরোপিত ১৫ শতাংশ শুল্কের চেয়ে বেশি। তবে গত মে মাসে চীনের ওপর আরোপিত ৩০ শতাংশ শুল্কের চেয়ে কিছুটা কম।
হোয়াইট হাউসের অভিযোগ, ভারত মার্কিন পণ্যকে বাজারে ঠেকাতে অতিমাত্রায় শুল্ক আরোপ করছে। সম্প্রতি রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ চলাকালে ভারত রুশ জ্বালানি কেনা অব্যাহত রাখায় ট্রাম্প প্রকাশ্যে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।এ শুল্ক ভারতের সঙ্গে চলমান বাণিজ্য আলোচনা আরও জটিল করে তুলতে পারে। একাধিক দফা আলোচনার মধ্য দিয়ে উভয় পক্ষ একটি চুক্তিতে পৌঁছানোর চেষ্টা করছে।
যুক্তরাষ্ট্রের ১২তম বৃহৎ বাণিজ্য অংশীদার ভারত। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে চীন থেকে উৎপাদন সরিয়ে নেওয়া অনেক কোম্পানির নতুন গন্তব্য হয়েছে দেশটি। মে মাসে অ্যাপলের সিইও টিম কুক জানান, যুক্তরাষ্ট্রে বিক্রির জন্য আইফোন এখন ভারতে উৎপাদিত হচ্ছে; যাতে উচ্চ শুল্ক এড়ানো যায়।
যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য প্রতিনিধি কার্যালয়ের (ওটিআর) তথ্যমতে, গত বছর ভারত-যুক্তরাষ্ট্রের পণ্য বাণিজ্যের মোট পরিমাণ ছিল প্রায় ১২৯ বিলিয়ন (১২ হাজার ৯০০ কোটি) ডলার। ভারতের রপ্তানি পণ্যের মধ্যে রয়েছে পোশাক, রাসায়নিক, যন্ত্রপাতি ও কৃষিপণ্য।
ট্রাম্প কেন ভারতকে নিশানা করছেন
সম্প্রতি ট্রাম্প একাধিকবার বিভিন্ন পণ্যের ওপর ভারতের ‘অতি উচ্চ’ শুল্ক আরোপের সমালোচনা করেছেন। এর মধ্যে কৃষিপণ্য ও দুগ্ধজাত পণ্যও রয়েছে।
বুধবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ট্রাম্প লেখেন, ‘বছরের পর বছর আমরা ভারতের সঙ্গে তুলনামূলকভাবে খুব কম ব্যবসা করেছি। কারণ, তাদের শুল্ক অত্যন্ত বেশি।’
এ মুহূর্তে যখন সবাই চায় ইউক্রেনে হত্যা বন্ধ হোক, তখন ভারত চীনের সঙ্গে রাশিয়ার জ্বালানির সর্ববৃহৎ ক্রেতা।ডোনাল্ড ট্রাম্প, মার্কিন প্রেসিডেন্টদেশীয় শিল্পকে রক্ষা করতে ভারত কিছু পণ্যের ওপর ১০০ শতাংশের বেশি শুল্ক আরোপ করেছে।
ওটিআরের হিসাব অনুযায়ী, ২০২৪ সালে যুক্তরাষ্ট্র ভারতের সঙ্গে পণ্যবাণিজ্যে প্রায় ৪৫ বিলিয়ন (৪ হাজার ৫০০ কোটি) ডলারের ঘাটতি দেখেছে। এটি আগের বছরের তুলনায় ৫ দশমিক ৪ শতাংশ বেশি। তুলনামূলকভাবে গত বছর যুক্তরাষ্ট্র চীনের সঙ্গে প্রায় ২৯৫ বিলিয়ন (২৯ হাজার ৫০০ কোটি) ডলারের বাণিজ্যঘাটতিতে ছিল।
আরও পড়ুনভারতের ৬ প্রতিষ্ঠানের ওপর ট্রাম্পের নিষেধাজ্ঞা, ইরানের পণ্যের বাণিজ্যে জড়িত থাকার অভিযোগ ৩১ জুলাই ২০২৫ট্রাম্প আরও ক্ষুব্ধ যে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ চলাকালে ভারত রুশ তেল কেনা অব্যাহত রেখেছে।
‘এ মুহূর্তে যখন সবাই চায় ইউক্রেনে হত্যা বন্ধ হোক, তখন ভারত চীনের সঙ্গে রাশিয়ার জ্বালানির সর্ববৃহৎ ক্রেতা’, বুধবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লিখেছেন ট্রাম্প।
ভারতের প্রতিক্রিয়া
এ সপ্তাহে প্রকাশিত এক বিবৃতিতে ভারত সরকার ট্রাম্পের ওই বক্তব্যে তুলনামূলকভাবে মৃদু, তবে শক্ত প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে।
ভারতের ওপর ধার্য করা শুল্কহার ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) ও জাপানের ওপর আরোপিত ১৫ শতাংশের চেয়ে বেশি। তবে গত মে মাসে চীনের ওপর আরোপিত ৩০ শতাংশের চেয়ে কিছুটা কম।বুধবার দেওয়া এ বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘কয়েক মাস ধরে ভারত ও যুক্তরাষ্ট্র একটি ন্যায্য, ভারসাম্যপূর্ণ ও পারস্পরিকভাবে লাভজনক দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য চুক্তির লক্ষ্যে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে। আমরা সেই লক্ষ্য অর্জনে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’ বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ‘সরকার জাতীয় স্বার্থ রক্ষায় প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা নেবে।’
আগস্টের শেষ দিকে দুই দেশের মধ্যে আরেক দফা বাণিজ্য আলোচনা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে।
আরও পড়ুনভারতের পণ্যে ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপের ঘোষণা ট্রাম্পের, রাশিয়ার সঙ্গে বাণিজ্যের জন্য আলাদা ‘দণ্ড’৩০ জুলাই ২০২৫আরও পড়ুনট্রাম্পের ২৫ শতাংশ শুল্কে ভারতের অর্থনীতি কতটা ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে, কী বলছেন অর্থনীতিবিদেরা১৪ ঘণ্টা আগে