ট্রাম্পের পাল্টা শুল্কে কোন দেশগুলো সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে
Published: 4th, April 2025 GMT
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের পণ্য রপ্তানির ওপর যে পাল্টা শুল্ক আরোপ করেছেন, তার জেরে সবচয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে যুক্তরাষ্ট্রের ঘনিষ্ঠ মিত্ররাই। যে দেশগুলো যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বেশি ব্যবসা-বাণিজ্য করে, পাল্টা শুল্কের প্রভাবে তারাই সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে বলে মনে করছেন বাণিজ্য বিশ্লেষকেরা।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবশালী গণমাধ্যম নিউইয়র্ক টাইমসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ট্রাম্পের এই সিদ্ধান্তে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া দেশগুলোর বেশির ভাগই যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য অংশীদার ও ঘনিষ্ঠ মিত্র। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে ভিয়েতনাম, থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়া দীর্ঘদিন ধরে চীনের বিকল্প হয়ে ওঠার চেষ্টা করছিল এবং অনেকাংশে তারা সফলও হয়েছে। চীনের মতো সক্ষমতা তারা অর্জন করতে পারেনি ঠিকই, কিন্তু জুতা, ইলেকট্রনিকস ও ব্যাগের মতো পণ্য উৎপাদনে তারা চীনের বিকল্প হয়ে উঠেছিল। আর এসব দেশে উৎপাদিত পণ্যের বেশির ভাগেরই গন্তব্য ছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। ফলে এসব দেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য–ঘাটতি বেশি এবং পরিণামে শুল্কের খড়্গ মূলত তাদের ওপরই বেশি নেমে এসেছে।
ভিয়েতনাম, থাইল্যান্ড, কম্বোডিয়া ছাড়াও আরও যেসব দেশের পণ্যে উচ্চহারে পাল্টা শুল্ক আরোপ করা হয়েছে সেগুলো হলো চীন, জাপান, ভারত ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)। এই দেশগুলোর সুবিধা হলো, রপ্তানির জন্য তারা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ওপর তেমন একটা নির্ভরশীল নয়; তা সত্ত্বেও পাল্টা শুল্কের কারণে এই দেশগুলো বড় ধরনের অর্থনৈতিক ঝুঁকির মধ্যে পড়ে গেছে।
নিউইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভিয়েতনাম তাদের মোট দেশজ উৎপাদন বা জিডিপিরি আকারের ২৯ শতাংশের সমপরিমাণ মূল্যের পণ্য যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি করে। কম্বোডিয়া করে ২৭ শতাংশ; নিকারাগুয়া করে ২৪ শতাংশ; গায়ানা করে ২৩ শতাংশ; তাইওয়ান ১৫ শতাংশ, থাইল্যান্ড ১২ শতাংশ; মালয়েশিয়া ১২ শতাংশ; দক্ষিণ কোরিয়া ৭ শতাংশ; সুইজারল্যান্ড ৭ শতাংশ; জর্ডান ১২ শতাংশ ও ভেনেজুয়েলা ৬ শতাংশ।
ভিয়েতনামের ওপর আরোপ করা হয়েছে ৪৬ শতাংশ শুল্ক, কম্বোডিয়ার ওপর ৪৯ শতাংশ শুল্ক, নিকারাগুয়ার ওপর ১৯ শতাংশ, গায়ানার ওপর ৩৮ শতাংশ, তাইওয়ানের ওপর ৩২ শতাংশ, থাইল্যান্ডের ওপর ৩৭ শতাংশ, মালয়েশিয়ার ওপর ২৪ শতাংশ, দক্ষিণ কোরিয়ার ওপর ২৬ শতাংশ, সুইজারল্যান্ডের ওপর ৩২ শতাংশ, জর্ডানের ওপর ২০ শতাংশ ও ভেনেজুয়োর ওপর ১৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হয়েছে।
আবার যেসব দেশ রপ্তানির জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ওপর খুব বেশি নির্ভরশীল নয়, তারাও ট্রাম্পের এই সিদ্ধান্তে মার খাবে বলে মনে করেন অর্থনীতিবিদ জয়তী ঘোষ। নিউইয়র্ক টাইমসকে তিনি বলেন, এই শুল্কের কারণে বৈশ্বিক সরবরাহ ব্যবস্থা ব্যাহত হবে। পুরো অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় এক ধরনের অনিশ্চয়তা সৃষ্টি হবে। বিনিয়োগের প্রবাহ যাবে কমে এবং কমবে অর্থনৈতিক তৎপরতা। তার প্রভাবে বিশ্বজুড়ে কর্মসংস্থানও কমে যাবে।
যেসব দেশের পণ্যে উচ্চশুল্ক আরোপিত হয়নি, সেইসব দেশও বড় ধরনের অর্থনৈতিক চাপে পড়বে বলে মনে করেন বিশ্লেষকেরা। তারা বলেন, এ সিদ্ধান্তে বিশ্ববাণিজ্যে একধরনের অস্থিতিশীলতা তৈরি হবে। চীনা কোম্পানিগুলো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে মুখ ফিরিয়ে নিতে পারে। যার ফলে যুক্তরাষ্ট্রের বদলে ইউরোপের বাজার সস্তা চীনা পণ্যে সয়লাব হয়ে যেতে পারে।
অন্যান্য দেশের মধ্যে ইসরায়েল তাদের জিডিপির আকারের ৪ শতাংশের সমমূল্যের পণ্য রপ্তানি করে যুক্তরাষ্ট্রে; তাদের ওপর আরোপ করা হয়েছে ১৭ শতাংশ পাল্টা শুল্ক। জাপান তাদের জিডিপির ৪ শতাংশের সমমূল্যের পণ্য রপ্তানি করে; দেশটির ওপর পাল্টা শুল্ক আরোপ করা হয়েছে ২৪ শতাংশ। দক্ষিণ আফ্রিকা করে তাদের জিডিপির আকারের ৪ শতাংশের সমমূল্যের রপ্তানি; তাদের ওপর শুল্ক আরোপ করা হয়েছে ৩১ শতাংশ পাল্টা শুল্ক। শ্রীলঙ্কাও তাদের জিডিপির ৪ শতাংশের সমমূল্যের পণ্য রপ্তানি করে যুক্তরাষ্ট্রে; তাদের ওপর শুল্ক আরোপ করা হয়েছে ৪৪ শতাংশ শুল্ক।
তবে এবারের ঘোষণার ট্রাম্প মেক্সিকো ও কানাডার পণ্যে নতুন করে কোনো শুল্ক আরোপ করেনি। এই দেশ দুটি যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম বৃহৎ বাণিজ্য অংশীদার। তাদের পণ্যে ইতিমধ্যে ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ রয়েছে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: শ র সমম ল য র ত দ র ওপর কম ব ড য় য় র ওপর ন র ওপর র ৪ শত
এছাড়াও পড়ুন:
নিউইয়র্কের ম্যানহাটানে বন্দুকধারীর গুলিতে পুলিশসহ নিহত ৫
যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক শহরের ম্যানহাটানের মধ্যাঞ্চলে এক বন্দুকধারীর গুলিতে পাঁচজন নিহত হয়েছেন। নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে একজন পুলিশ কর্মকর্তা এবং সন্দেহভাজন বন্দুকধারীও রয়েছেন। স্থানীয় সময় গতকাল সোমবার সন্ধ্যায় এ ঘটনা ঘটে।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বরাত দিয়ে মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএন এ তথ্য জানিয়েছে। আরও বলা হয়েছে, সন্দেহভাজন বন্দুকধারী ‘আত্মঘাতী’ হয়েছেন বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে।
ঘটনার পরপর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে পোস্ট দিয়ে নিউইয়র্কের মেয়র এরিক অ্যাডামস জানান, একজন পুলিশ কর্মকর্তাকে ‘আঘাত’ করা হয়েছে। ওই পুলিশ কর্মকর্তার পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান মেয়র।
যদিও নিউইয়র্ক পুলিশের মুখপাত্র পরবর্তী সময় বলেন, তিনি একজন পুলিশ কর্মকর্তা নিহত হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত কিংবা অস্বীকার—কোনোটাই করতে পারছেন না।
পুলিশ জানায়, ঘটনাস্থল ৩৪৫ পার্ক এভিনিউ এবং ইস্ট ফিফটি ওয়ান স্ট্রিটের চারপাশ এখন পুলিশের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। আর একমাত্র সন্দেহভাজন বন্দুকধারী নিহত হয়েছেন। যদিও তাঁর নাম-পরিচয় এখনো জানানো হয়নি।
এক্সে পোস্ট দিয়ে পুলিশ কমিশনার জেসিকা টিসচ লিখেন, এ মুহূর্তে ঘটনাস্থল নিয়ন্ত্রণে আনা হয়েছে এবং একমাত্র সন্দেহভাজন বন্দুকধারীকে নিষ্ক্রিয় করা হয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শী একজন নারী নাম প্রকাশ না করার শর্তে এএফপিকে জানান, একটি অফিস ভবনে এ ঘটনা ঘটেছে। তিনি বলেন, ‘আমি তখন পাশেই ছিলাম। তিনি (বন্দুকধারী) একের পর এক ফ্লোরে ঘুরছিলেন।’
প্রত্যক্ষদর্শীরা এএফপিকে জানান, ঘটনাটি বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠান ব্ল্যাকস্টোন ইনভেস্টমেন্ট কোম্পানির একটি কার্যালয়ে ঘটেছে।
ঘটনাস্থলে বেশ কয়েকটি অ্যাম্বুলেন্স জড়ো করা হয়েছে। আকাশে হেলিকপ্টার উড়তে দেখা গেছে। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে সাংবাদিক ও উৎসুক জনতাকে দূরে সরিয়ে দিয়েছে।
ম্যানহাটানের ওই এলাকায় বেশকিছু পাঁচ তারকা হোটেল এবং করপোরেট প্রতিষ্ঠানের সদর দপ্তর রয়েছে।