মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের পণ্য রপ্তানির ওপর যে পাল্টা শুল্ক আরোপ করেছেন, তার জেরে সবচয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে যুক্তরাষ্ট্রের ঘনিষ্ঠ মিত্ররাই। যে দেশগুলো যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বেশি ব্যবসা-বাণিজ্য করে, পাল্টা শুল্কের প্রভাবে তারাই সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে বলে মনে করছেন বাণিজ্য বিশ্লেষকেরা।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবশালী গণমাধ্যম নিউইয়র্ক টাইমসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ট্রাম্পের এই সিদ্ধান্তে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া দেশগুলোর বেশির ভাগই যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য অংশীদার ও ঘনিষ্ঠ মিত্র। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে ভিয়েতনাম, থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়া দীর্ঘদিন ধরে চীনের বিকল্প হয়ে ওঠার চেষ্টা করছিল এবং অনেকাংশে তারা সফলও হয়েছে। চীনের মতো সক্ষমতা তারা অর্জন করতে পারেনি ঠিকই, কিন্তু জুতা, ইলেকট্রনিকস ও ব্যাগের মতো পণ্য উৎপাদনে তারা চীনের বিকল্প হয়ে উঠেছিল। আর এসব দেশে উৎপাদিত পণ্যের বেশির ভাগেরই গন্তব্য ছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। ফলে এসব দেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য–ঘাটতি বেশি এবং পরিণামে শুল্কের খড়্গ মূলত তাদের ওপরই বেশি নেমে এসেছে।

ভিয়েতনাম, থাইল্যান্ড, কম্বোডিয়া ছাড়াও আরও যেসব দেশের পণ্যে উচ্চহারে পাল্টা শুল্ক আরোপ করা হয়েছে সেগুলো হলো চীন, জাপান, ভারত ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)। এই দেশগুলোর সুবিধা হলো, রপ্তানির জন্য তারা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ওপর তেমন একটা নির্ভরশীল নয়; তা সত্ত্বেও পাল্টা শুল্কের কারণে এই দেশগুলো বড় ধরনের অর্থনৈতিক ঝুঁকির মধ্যে পড়ে গেছে।

নিউইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভিয়েতনাম তাদের মোট দেশজ উৎপাদন বা জিডিপিরি আকারের ২৯ শতাংশের সমপরিমাণ মূল্যের পণ্য যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি করে। কম্বোডিয়া করে ২৭ শতাংশ; নিকারাগুয়া করে ২৪ শতাংশ; গায়ানা করে ২৩ শতাংশ; তাইওয়ান ১৫ শতাংশ, থাইল্যান্ড ১২ শতাংশ; মালয়েশিয়া ১২ শতাংশ; দক্ষিণ কোরিয়া ৭ শতাংশ; সুইজারল্যান্ড ৭ শতাংশ; জর্ডান ১২ শতাংশ ও ভেনেজুয়েলা ৬ শতাংশ।

ভিয়েতনামের ওপর আরোপ করা হয়েছে ৪৬ শতাংশ শুল্ক, কম্বোডিয়ার ওপর ৪৯ শতাংশ শুল্ক, নিকারাগুয়ার ওপর ১৯ শতাংশ, গায়ানার ওপর ৩৮ শতাংশ, তাইওয়ানের ওপর ৩২ শতাংশ, থাইল্যান্ডের ওপর ৩৭ শতাংশ, মালয়েশিয়ার ওপর ২৪ শতাংশ, দক্ষিণ কোরিয়ার ওপর ২৬ শতাংশ, সুইজারল্যান্ডের ওপর ৩২ শতাংশ, জর্ডানের ওপর ২০ শতাংশ ও ভেনেজুয়োর ওপর ১৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হয়েছে।

আবার যেসব দেশ রপ্তানির জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ওপর খুব বেশি নির্ভরশীল নয়, তারাও ট্রাম্পের এই সিদ্ধান্তে মার খাবে বলে মনে করেন অর্থনীতিবিদ জয়তী ঘোষ। নিউইয়র্ক টাইমসকে তিনি বলেন, এই শুল্কের কারণে বৈশ্বিক সরবরাহ ব্যবস্থা ব্যাহত হবে। পুরো অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় এক ধরনের অনিশ্চয়তা সৃষ্টি হবে। বিনিয়োগের প্রবাহ যাবে কমে এবং কমবে অর্থনৈতিক তৎপরতা। তার প্রভাবে বিশ্বজুড়ে কর্মসংস্থানও কমে যাবে।

যেসব দেশের পণ্যে উচ্চশুল্ক আরোপিত হয়নি, সেইসব দেশও বড় ধরনের অর্থনৈতিক চাপে পড়বে বলে মনে করেন বিশ্লেষকেরা। তারা বলেন, এ সিদ্ধান্তে বিশ্ববাণিজ্যে একধরনের অস্থিতিশীলতা তৈরি হবে। চীনা কোম্পানিগুলো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে মুখ ফিরিয়ে নিতে পারে। যার ফলে যুক্তরাষ্ট্রের বদলে ইউরোপের বাজার সস্তা চীনা পণ্যে সয়লাব হয়ে যেতে পারে।

অন্যান্য দেশের মধ্যে ইসরায়েল তাদের জিডিপির আকারের ৪ শতাংশের সমমূল্যের পণ্য রপ্তানি করে যুক্তরাষ্ট্রে; তাদের ওপর আরোপ করা হয়েছে ১৭ শতাংশ পাল্টা শুল্ক। জাপান তাদের জিডিপির ৪ শতাংশের সমমূল্যের পণ্য রপ্তানি করে; দেশটির ওপর পাল্টা শুল্ক আরোপ করা হয়েছে ২৪ শতাংশ। দক্ষিণ আফ্রিকা করে তাদের জিডিপির আকারের ৪ শতাংশের সমমূল্যের রপ্তানি; তাদের ওপর শুল্ক আরোপ করা হয়েছে ৩১ শতাংশ পাল্টা শুল্ক। শ্রীলঙ্কাও তাদের জিডিপির ৪ শতাংশের সমমূল্যের পণ্য রপ্তানি করে যুক্তরাষ্ট্রে; তাদের ওপর শুল্ক আরোপ করা হয়েছে ৪৪ শতাংশ শুল্ক।

তবে এবারের ঘোষণার ট্রাম্প মেক্সিকো ও কানাডার পণ্যে নতুন করে কোনো শুল্ক আরোপ করেনি। এই দেশ দুটি যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম বৃহৎ বাণিজ্য অংশীদার। তাদের পণ্যে ইতিমধ্যে ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ রয়েছে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: শ র সমম ল য র ত দ র ওপর কম ব ড য় য় র ওপর ন র ওপর র ৪ শত

এছাড়াও পড়ুন:

সোনার টয়লেট ‘আমেরিকা’ নিলামে উঠছে, সর্বনিম্ন দর কত জানেন

নিলামঘর সদবিস গতকাল শুক্রবার ইতালীয় শিল্পী মরিজিও ক্যাটেলানের তৈরি সম্পূর্ণ সোনার টয়লেটটি নিলামে তোলার কথা ঘোষণা করেছে। এ ভাস্কর্যটির নাম ‘আমেরিকা’।

সদবিস জানিয়েছে, এ শিল্পকর্ম এটাই দেখাতে চায়, কখনো কখনো শিল্পের ‘মূল্য’ আর তার বাজারে বিক্রির ‘মূল্য’ এক নয়। এটি শুধু শিল্পকর্মই নয়, একটি পুরোপুরি ব্যবহারযোগ্য টয়লেটও। এ টয়লেটেরই অনুরূপ একটি সংস্করণ ২০১৯ সালে ইংল্যান্ডের বিখ্যাত ব্লেনহাইম প্রাসাদ থেকে চুরি হয়ে বিশ্বজুড়ে আলোচনায় আসে।

১৮ নভেম্বর নিউইয়র্কে এ নিলাম অনুষ্ঠিত হবে। টয়লেটটির সর্বনিম্ন দর ধরা হয়েছে এর সোনার বর্তমান বাজারমূল্য অনুযায়ী। এতে ব্যবহৃত হয়েছে প্রায় ১০১ দশমিক ২ কিলোগ্রাম (২২৩ পাউন্ড) খাঁটি সোনা, যার দাম এখন প্রায় ১০ মিলিয়ন (১ কোটি) মার্কিন ডলার (প্রায় ১২২ কোটি টাকা)।

সদবিসের নিউইয়র্ক শাখার সমসাময়িক শিল্প বিভাগের প্রধান ডেভিড গ্যালপারিন বলেন, ক্যাটেলান হচ্ছেন এমন একজন শিল্পী, যিনি তাঁর কাজের মাধ্যমে সবাইকে ভাবাতে ও চমক দিতে পছন্দ করেন।

ক্যাটেলান শুধু বিতর্ক সৃষ্টিকারীই নন; বরং অত্যন্ত সফল শিল্পী। তাঁর আরেকটি কাজ, ‘কমেডিয়ান’। অর্থাৎ দেয়ালে টেপ দিয়ে আটকানো একটি কলা। গত বছর নিউইয়র্কের এক নিলামে ৬২ লাখ ডলারে বিক্রি হয়েছিল শিল্পকর্মটি।

‘আমেরিকা’র দুটি সংস্করণ ২০১৬ সালে তৈরি করা হয়েছিল। যেটি এবার নিলামে উঠছে, সেটি ২০১৭ সাল থেকে এক অজ্ঞাত সংগ্রাহকের কাছে রয়েছে। অন্য সংস্করণটি ২০১৬ সালে নিউইয়র্কের গুগেনহাইম জাদুঘরের একটি বাথরুমে প্রদর্শনের জন্য স্থাপন করা হয়। সেখানে ১ লাখের বেশি দর্শক সার বেঁধে এসেছিলেন।

এর আগে ২০১৬ সালে ক্রিস্টিস নিলামে ক্যাটেলানের আরেকটি ভাস্কর্য ‘হিম’ ১ কোটি ৭২ লাখ ডলারে বিক্রি হয়। ভাস্কর্যটিতে নাৎসি নেতা অ্যাডলফ হিটলারকে হাঁটু গেড়ে প্রার্থনার ভঙ্গিতে দেখা যায়।

ক্যাটেলান নিজেই বলেছেন, তাঁর ‘আমেরিকা’ ভাস্কর্যটি অতিরিক্ত সম্পদ ও বিলাসিতাকে ব্যঙ্গ করে তৈরি করা হয়েছে। তিনি একবার বলেছিলেন, ‘তুমি ২০০ ডলারের দুপুরের খাবার খাও বা ২ ডলারের হটডগ, শেষ ফলাফল টয়লেটে গিয়ে একই হয়।’

‘আমেরিকা’র দুটি সংস্করণ ২০১৬ সালে তৈরি করা হয়েছিল। যেটি এবার নিলামে উঠছে, সেটি ২০১৭ সাল থেকে এক অজ্ঞাত সংগ্রাহকের কাছে রয়েছে। অন্য সংস্করণটি ২০১৬ সালে নিউইয়র্কের গুগেনহাইম জাদুঘরের একটি বাথরুমে প্রদর্শনের জন্য স্থাপন করা হয়। সেখানে ১ লাখের বেশি দর্শক সার বেঁধে এসেছিলেন।

মরিজিও ক্যাটেলান হচ্ছেন এমন একজন শিল্পী, যিনি তাঁর কাজের মাধ্যমে সবাইকে ভাবাতে ও চমক দিতে পছন্দ করেন।ডেভিড গ্যালপারিন, সদবিস-এর নিউইয়র্ক শাখার সমসাময়িক শিল্প বিভাগের প্রধান

ওই সময় গুগেনহাইম ভাস্কর্যটি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে তাঁর প্রথম দফায় ক্ষমতায় থাকাকালে ধার দেওয়ার প্রস্তাব দেয়। কারণ তিনি জাদুঘর থেকে একটি ভ্যান গঘ চিত্রকর্ম ধার নিতে চেয়েছিলেন।

২০১৯ সালে ‘আমেরিকা’ প্রদর্শিত হয় উইনস্টন চার্চিলের জন্মস্থান হিসেবে বিখ্যাত ব্লেনহাইম প্রাসাদে। কিন্তু প্রদর্শনীর কয়েক দিনের মধ্যেই একদল চোর ভবনে ঢুকে সেটি পাইপলাইন থেকে খুলে নিয়ে পালিয়ে যায়।

চলতি বছরের শুরুতে দুই ব্যক্তিকে ওই চুরির দায়ে দোষী সাব্যস্ত করে কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। তবে সোনার টয়লেটটি আজও উদ্ধার করা যায়নি। তদন্তকারীরা ধারণা করছেন, এটি সম্ভবত ভেঙে গলিয়ে ফেলা হয়েছে।

গ্যালপারিন বলেন, তিনি অনুমান করতে চান না ‘আমেরিকা’ শেষ পর্যন্ত কত দামে বিক্রি হতে পারে। তবে তাঁর ভাষায়, ক্যাটেলানের ‘ডাকটেপে আটকানো কলা’ শিল্পকর্মটি যেমন ‘অমূল্য ধারণা থেকে মূল্য তৈরি করা’ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিল, ‘আমেরিকা’ ঠিক তার উল্টো। এখানে মূল উপকরণটিই (সোনা) অত্যন্ত মূল্যবান, যা বেশির ভাগ শিল্পকর্মে থাকে না।

ক্যাটেলান বলেছেন, তাঁর ‘আমেরিকা’ ভাস্কর্যটি অতিরিক্ত সম্পদ ও বিলাসিতাকে ব্যঙ্গ করে তৈরি করা হয়েছে। তিনি একবার বলেছিলেন, ‘তুমি ২০০ ডলারের দুপুরের খাবার খাও বা ২ ডলারের হটডগ, শেষ ফলাফল টয়লেটে গিয়ে একই হয়।’

‘আমেরিকা’ প্রদর্শিত হবে সদবিসের নতুন নিউইয়র্ক কার্যালয় ব্রয়্যার বিল্ডিংয়ে, ৮ নভেম্বর নিলাম শুরু হওয়ার আগপর্যন্ত। এটি একটি বাথরুমে স্থাপন করা হবে, যা দর্শকেরা কাছ থেকে দেখতে পাবেন।

তবে গুগেনহাইম ও ব্লেনহাইম প্রাসাদের মতো এবার দর্শকদের টয়লেটটি ব্যবহার করার সুযোগ থাকবে না। তাঁরা শুধু দেখতে পারবেন, কিন্তু ফ্লাশ করতে পারবেন না।

আরও পড়ুনসোনার আস্ত একটি কমোড চুরি করেছিলেন তিনি০৩ এপ্রিল ২০২৪

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • মামদানিকে বারাক ওবামার ফোন, করলেন নির্বাচনী প্রচারের প্রশংসা
  • নিউইয়র্কের এত ইহুদি কেন জোহরান মামদানির পক্ষে প্রচার চালাচ্ছেন
  • সোনার টয়লেট ‘আমেরিকা’ নিলামে উঠছে, সর্বনিম্ন দর কত জানেন
  • ভোটের আগে মামদানি-কুমোর এগিয়ে থাকার লড়াই