রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ম্যুরালের কালি মুছল প্রশাসন
Published: 4th, April 2025 GMT
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ম্যুরালের কালি গতকাল শুক্রবার বিকেলে মুছে দিয়েছে কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলা প্রশাসন। এর আগে গত বৃহস্পতিবার রাতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কালিমাখা ছবি ছড়িয়ে পড়ে। এতে ক্ষোভে ফেটে পড়েন রবীন্দ্রভক্তরা। কে বা কারা এ ঘটনা ঘটিয়েছে, তা জানা যায়নি।
কুষ্টিয়া-রাজবাড়ী আঞ্চলিক মহাসড়কে কুমারখালী উপজেলার জিলাপীতলায় গতকাল শুক্রবার সকালে গিয়ে দেখা যায়, সড়কের দক্ষিণ পাশে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ম্যুরাল। ম্যুরালে থাকা ছবির মুখমণ্ডল কালো রঙে ঢাকা। নামের বানান বিকৃত। দীর্ঘদিন ধরে রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে ম্যুরালের পাশে জন্মেছে আগাছা। চটে গেছে রং। সিসি ক্যামেরা থাকলেও তা অকেজো। ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) বিজয় কুমার জোয়ার্দার।
বিজয় কুমার জোয়ার্দার গতকাল রাতে বলেন, একজন শিল্পীর সহায়তায় দ্রুত ম্যুরালের ছবি ও লেখা সংস্কার করা হয়েছে।
জানতে চাইলে স্থানীয় সাহিত্যিক লিটন আব্বাস বলেন, ‘রবীন্দ্রনাথ নয়, এ কালি বাঙালি জাতির মুখে লেগেছে।’
স্থানীয় রবীন্দ্র গবেষক রেফুল করিম আক্ষেপ করে বলেন, ‘এখানে বসে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর গীতাঞ্জলি কাব্যগ্রন্থের সিংহভাগ রচনা করেছিলেন। এখানকার মানুষের বিকৃত মস্তিষ্ক উদ্ভাসিত হলো কীভাবে?’
কুমারখালী থানার ওসি মো.
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এস এম মিকাইল ইসলাম বলেন, ‘ঈদের ছুটিতে দুর্বৃত্তরা এ ঘটনা ঘটাতে পারে। বিষয়টি খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
ফুলে সাজানো রিকশায় করে প্রধান শিক্ষকের বিদায়
নীলফামারীর ডোমার উপজেলার নাঠুয়াগঞ্জ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক এম এ এম আকতার জাহান বিউটি অবসর গ্রহণ করেছেন। তার কর্মজীবনের শেষ দিনটিকে স্মরণীয় করে রাখতে আবেগঘন বিদায় সংবর্ধনার আয়োজন করেছেন তার সহকর্মী ও শিক্ষার্থীরা। তারা বিদায়ী প্রধান শিক্ষককে ফুলে সাজানো রিকশায় করে বিদ্যালয় থেকে প্রায় ৮ কিলোমিটার দূরে নিজ বাড়িতে পৌঁছে দেন।
এম এ এম আকতার জাহান বিউটিকে বিদায় জানাতে বুধবার (৩০ এপ্রিল) বিকেলে বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন উপজেলা সহকারী প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সুদীপ চন্দ্র শর্মা। সঞ্চলনা করেন সহকারী শিক্ষক মো. আব্দুল মান্নান।
২০১৮ সালে নাঠুয়াগঞ্জ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন এম এ এম আকতার জাহান বিউটি। প্রায় ৩৮ বছরের কর্মজীবনের শেষ দিনেও তিনি শিক্ষার্থীদের পড়িয়েছেন।
অনুষ্ঠানে সহকর্মী শিক্ষকসহ আশপাশের বিভিন্ন বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা বক্তব্য রাখেন। তারা বলেন, নিবেদিতপ্রাণ শিক্ষক হিসেবে আকতার জাহান বিউটি বিদ্যালয়ে পাঠদান, শিক্ষার পরিবেশ ও শৃঙ্খলায় দৃশ্যমান পরিবর্তন এনেছেন।
পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী সালমা আক্তার বলে, “বিউটি ম্যাডাম আমাদের খুব ভালোবাসতেন, শাসন করতেন, ভালোভাবে পড়াতেন।”
চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষার্থী উৎসব রায় বলে, “ম্যাডামের পড়ানোর ধরন একেবারে আলাদা ছিল। তিনি আমাদের আদর করতেন, আবার প্রয়োজন হলে শাসনও করতেন। আমরা তাকে খুব মিস করব।”
সহকারী শিক্ষক মো. আব্দুল মান্নান বলেন, “বিউটি ম্যাডামের উপস্থিতিতে বিদ্যালয়ের চিত্রই বদলে গিয়েছিল। তিনি ছিলেন সবার প্রিয়। শৃঙ্খলা, পাঠদান ও শিক্ষার্থীদের ফলাফল সবদিকেই উন্নতি হয়েছে। এমন এক জন শিক্ষককে বিদায় জানানো আমাদের জন্য অত্যন্ত বেদনাদায়ক।”
সহকারী শিক্ষক দীপক চন্দ্র রায় বলেন, “তিনি শুধু এক জন শিক্ষক নন, ছিলেন অভিভাবকের মতো। বিদ্যালয়ের যেকোনো সমস্যায় তিনি সবার আগে এগিয়ে আসতেন।”
বামুনিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, “আকতার জাহান বিউটি ম্যাডাম দায়িত্বশীল, সৎ ও নিষ্ঠাবান শিক্ষক ছিলেন। তার অবদান দীর্ঘদিন ধরে এই এলাকার শিক্ষাক্ষেত্রে স্মরণীয় হয়ে থাকবে।”
উপজেলা সহকারী প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার সুদীপ চন্দ্র শর্মা বলেন, “আখতার জাহান বিউটি ছিলেন আদর্শ শিক্ষক। সব সময় শিক্ষার্থীদের কল্যাণকে অগ্রাধিকার দিয়েছেন। সময়ানুবর্তিতা, আন্তরিকতা ও দায়িত্ববোধের ক্ষেত্রে উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত তিনি। এমন এক জন শিক্ষককে বিদায় জানানো যেমন কষ্টের, তেমনি গর্বেরও।”
বিদায়ী বক্তব্যে এম এ এম আকতার জাহান বিউটি বলেন, “চাকরিজীবনে সব সময় চেষ্টা করেছি নিষ্ঠা ও আন্তরিকতার সঙ্গে দায়িত্ব পালনের। শিক্ষার্থীদের ভালোবাসা ও সাফল্যই আমার সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি। আজ তাদের চোখের জল আর ভালোবাসা দেখে বুঝতে পারছি—আমার এই দীর্ঘ কর্মজীবন সার্থক হয়েছে। সবার প্রতি আমি কৃতজ্ঞ।”
ঢাকা/সিথুন/রফিক