গত ১৮ মার্চ থেকে যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করে ইসরায়েল পুনরায় হামলা জোরদারের পর গাজায় প্রতিদিন কমপক্ষে ১০০ জন ফিলিস্তিনি শিশু নিহত বা আহত হচ্ছে। জাতিসংঘের শিশু বিষয়ক সংস্থা ইউনিসেফের বরাতে এ তথ্য জানিয়েছে জাতিসংঘের ত্রাণ ও শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা ইউএনআরডব্লিউএ।  

ইউএনআরডব্লিউএ প্রধান ফিলিপ লাজ্জারিনি পরিস্থিতিকে ‘ভয়াবহ’ বলে বর্ণনা করেছেন এবং জোর দিয়ে বলেছেন, “কোনো কিছুই শিশু হত্যাকে ন্যায্যতা দেয় না।”

শনিবার (৫ এপ্রিল) এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে পাকিস্তানি টিভি এআরওয়াই নিউজ।

আরো পড়ুন:

কলকাতায় ঈদের দিন স্বাধীন ফিলিস্তিনের দাবিতে মিছিল

হামাসের মুখপাত্র আবদেল-লতিফকে হত্যা করেছে ইসরায়েল

ইউএনআরডব্লিউএ প্রধান ফিলিপ লাজ্জারিনি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ‘এক্স’-এ এক পোস্টে বলেন, “১৮ মার্চ ইসরায়েলি বাহিনী আবার হামলা শুরু করার পর থেকে গাজায় প্রতিদিন অন্তত ১০০ শিশু নিহত বা আহত হওয়ার খবর পাওয়া যাচ্ছে। যুদ্ধ তাদের শৈশব কেড়ে নিচ্ছে। যুদ্ধ গাজাকে শিশুদের জন্য বসবাসের অযোগ্য করে তুলেছে।’

লাজ্জারিনি আরো উল্লেখ করেন, “দেড় বছর আগে যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে গাজায় ১৫ হাজারের বেশি শিশু নিহত হয়েছে বলে জানা গেছে।”

তিনি বলেন, “এই বছরের শুরুতে অস্থায়ী যুদ্ধবিরতি গাজার শিশুদের বেঁচে থাকার এবং শৈশবের কিছু অনুভূতি অনুভব করার সুযোগ দিয়েছিল। কিন্তু যুদ্ধ পুনরায় শুরু হওয়ায় আবারো তাদের সেই সুযোগ কেড়ে নেওয়া হয়েছে।”

ফিলিপ লাজ্জারিনি আরো বলেন, “এটি আমাদের সাধারণ মানবতার ওপর কলঙ্ক লেপন করেছে। শিশুরা যেই স্থানেই থাকুক না কেন, তাদের হত্যাকে কোনোভাবে সমর্থন করা যায় না। এখনই যুদ্ধবিরতি পুনরায় চালু করা জরুরি।” 

বৃহস্পতিবার ফিলিস্তিনি কেন্দ্রীয় পরিসংখ্যান ব্যুরোর এক প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে তুর্কি বার্তা সংস্থা আনাদোলু এজিন্স জানিয়েছে, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে গাজায় ইসরায়েল হামলা চালিয়ে ১৭ হাজার ৯৫৪ শিশুকে হত্যা করেছে। নিহতদের মধ্যে ২৭৪ জন নবজাতক, ১ বছরের কম বয়সী ৮৭৬ জন শিশু, বাস্তুচ্যুত তাবুতে তীব্র শীতে মারা যাওয়া ১৭ জন শিশু এবং অনাহার ও অপুষ্টিতে মারা যাওয়া ৫২ জন শিশু অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।

গাজা থেকে ফিলিস্তিনিদের উচ্ছেদ করার জন্য মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের পরিকল্পনা বাস্তবায়নের প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকায় ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু গত রবিবার হামলা আরো বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছেন।

২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় ইসরায়লি হামলায় ৫০ হাজার ৬০০ জনেরও বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন ১ লাখ ১৫ হাজারের বেশি। নিহত ও আহতদের অর্ধেকের বেশি নারী ও শিশু।

গাজায় যুদ্ধাপরাধ এবং মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্য আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত নভেম্বরে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু এবং সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্টের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে।

গাজায় তাদের আচরণের জন্য আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে গণহত্যা মামলাও চলছে।

ঢাকা/ফিরোজ

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ইসর য় ল ইসর য় ল র জন য

এছাড়াও পড়ুন:

সুদানে কারা গণহত্যা চালাচ্ছে, আরব আমিরাতের ভূমিকা কী

২০২৩ সালের এপ্রিল মাসে সুদান এক ভয়াবহ গৃহযুদ্ধের মধ্যে পড়ে। ক্ষমতার নিয়ন্ত্রণ নিতে দেশটির সামরিক বাহিনী এবং শক্তিশালী আধা সামরিক গোষ্ঠী র‍্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেসের (আরএসএফ) মধ্যে শুরু হওয়া তীব্র লড়াই থেকে এই গৃহযুদ্ধ শুরু হয়। এই যুদ্ধে পশ্চিম দারফুর অঞ্চলে দুর্ভিক্ষ সৃষ্টি হয় এবং সেখানে গণহত্যা সংঘটিত হওয়ার অভিযোগও ওঠে।

সম্প্রতি আরএসএফ এল-ফাশের শহরটি দখল করার পর এর বাসিন্দাদের নিয়ে বড় ধরনের উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। এই সংঘাতে এখন পর্যন্ত সারা দেশে দেড় লাখের বেশি মানুষ মারা গেছেন এবং প্রায় ১ কোটি ২০ লাখ মানুষ নিজেদের ঘরবাড়ি ছেড়ে পালিয়েছেন। জাতিসংঘ এটিকে বিশ্বের বৃহত্তম মানবিক সংকট বলে অভিহিত করেছে।

পাল্টাপাল্টি অভ্যুত্থান ও সংঘাতের শুরু

১৯৮৯ সালের সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসা দীর্ঘদিনের প্রেসিডেন্ট ওমর আল-বশিরকে ২০১৯ সালে ক্ষমতাচ্যুত করার পর থেকেই দফায় দফায় যে উত্তেজনা চলছিল, তার সর্বশেষ পরিস্থিতি হচ্ছে বর্তমান গৃহযুদ্ধ।

বশিরের প্রায় তিন দশকের শাসনের অবসানের দাবিতে বিশাল জনবিক্ষোভ হয়েছিল। তারই প্রেক্ষিতে তাঁকে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে দেয় সেনাবাহিনী। কিন্তু দেশটির মানুষ গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য আন্দোলন চালিয়ে যায়। যার পরিপ্রেক্ষিতে একটি যৌথ সামরিক-বেসামরিক সরকার গঠিত হয়। কিন্তু ২০২১ সালের অক্টোবর মাসে আরও একটি সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে সরকারটিকে উৎখাত করা হয়। এই অভ্যুত্থানের কেন্দ্রে ছিলেন সশস্ত্র বাহিনীর প্রধান ও দেশটির কার্যত প্রেসিডেন্ট জেনারেল আবদেল ফাত্তাহ আল-বুরহান এবং তাঁর ডেপুটি ও আরএসএফ নেতা জেনারেল মোহাম্মদ হামদান দাগালো।

এই দুই জেনারেল দেশের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ ও বেসামরিক শাসনে ফিরে যাওয়া নিয়ে প্রস্তাবিত পদক্ষেপে একমত হতে পারেননি। তাঁদের মধ্যে মূল বিরোধের বিষয় ছিল প্রায় এক লাখ সদস্যের আরএসএফ-কে সেনাবাহিনীর সঙ্গে একীভূত করার পরিকল্পনা এবং নতুন এই যৌথ বাহিনীর নেতৃত্ব নিয়ে। ধারণা করা হয়, দুজন জেনারেলই তাঁদের ক্ষমতা, সম্পদ ও প্রভাব ধরে রাখতে চেয়েছিলেন।

আরএসএফ সদস্যদের দেশের বিভিন্ন স্থানে মোতায়েন করা হলে সেনাবাহিনী বিষয়টিকে নিজেদের জন্য হুমকি হিসেবে দেখে। এ নিয়ে ২০২৩ সালের ১৫ এপ্রিল দুই পক্ষের মধ্যে গোলাগুলি শুরু হয়। সেই লড়াই দ্রুত তীব্র আকার ধারণ করে এবং আরএসএফ খার্তুমের বেশির ভাগ অংশ দখল করে নেয়। যদিও প্রায় দুই বছর পর সেনাবাহিনী খার্তুমের নিয়ন্ত্রণ ফিরে পায়।

জেনারেল আবদেল ফাত্তাহ আল-বুরহান (বামে) এবং আরএসএফ নেতা জেনারেল মোহাম্মদ হামদান দাগালো (ডানে)

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • সুদানে কারা গণহত্যা চালাচ্ছে, আরব আমিরাতের ভূমিকা কী