রাত দুপুরে চলন্ত বাস ধাওয়া, পুলিশ বলছে ‘ডাকাতির জন্য নয়’
Published: 6th, April 2025 GMT
ঈদের দিন মধ্যরাতে ঢাকা থেকে নোয়াখালীগামী একুশে পরিবহনের একটি বাসকে মোটরসাইকেল আরোহীদের তাড়া করা, তাদের আঘাতে বাসচালকের আহত হওয়ার ঘটনায় অবশেষে নেয়াখালী সুধারাম মডেল থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছেন বাসটির মালিক জহিরুল ইসলাম তারেক।
আলোচিত এই ঘটনার পাঁচদিন পর শনিবার (৫ এপ্রিল) রাতে তিনি সাধারণ ডায়েরি করেন।
অন্যদিকে, পুলিশ জানিয়েছে, বাসটির চালক জোনাকি পরিবহনের অন্য একটি বাসকে ওভারটেক করার সময় একটি মোটরসাইকেলকে চাপা দেওয়ার উপক্রম হয়। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে ৮ থেকে ১০টি মোটরসাইকেলে করে একদল যুবক বাসটি থামানোর চেষ্টা করে এবং ব্যর্থ হয়ে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করে। এতে বাসচালক আঘাতপ্রাপ্ত হন। এটি ডাকাতির কোনো চেষ্টা নয়।
রবিবার (৬ এপ্রিল) দুপুরে বাংলাদেশ পুলিশের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেইজে এক পোস্টের মাধ্যমে এ তথ্য জানায় পুলিশ সদর দপ্তর।
‘কুমিল্লা-নোয়াখালী আঞ্চলিক মহাসড়কে বাস ডাকাতির চেষ্টা’ শিরোনামে ভাইরাল ভিডিও প্রসঙ্গ উল্লেখ করে ওই পোস্টে আরো বলা হয়, গত ৩১ মার্চ রাত আড়াইটার দিকে কুমিল্লা-নোয়াখালী আঞ্চলিক মহাসড়কে ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা একুশে পরিবহনের একটি বাসকে অজ্ঞাতনামা ৮-১০টি মোটরসাইকেল ধাওয়া করে থামানোর চেষ্টা করে এবং চলন্ত বাসে ইট ছুঁড়ে বাসচালককে আহত করার ঘটনা ঘটে। উক্ত ঘটনাকে বাস ডাকাতির চেষ্টা শিরোনামে বিভিন্ন মিডিয়া ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সংবাদ প্রচার করা হচ্ছে।
পুলিশের অনুসন্ধানে জানা যায়, একুশে পরিবহনের বাসটি কুমিল্লা পদুয়ার বাজার বিশ্বরোড সংলগ্ন রাস্তায় ওভারটেক করার সময় একটি মোটরসাইকেল আরোহীকে চাপা দেওয়ার উপক্রম হলে ওই মোটরসাইকেল আরোহী এবং তার সঙ্গে থাকা ৮-১০ জন মোটরসাইকেল আরোহী ক্ষিপ্ত হয়ে বাসটিকে থামাতে বলে। কিন্তু বাসচালক বাস না থামিয়ে চলার গতি বাড়িয়ে দেয়। গভীর রাত ও রাস্তা ফাঁকা থাকার কারণে বাসযাত্রীরাও চালককে বাস থামাতে নিষেধ করে। এ সময় মোটরসাইকেল আরোহীরা ইট ছুঁড়ে মারলে বাসের চালক মো.
পুলিশ সংবাদ পেয়ে বেগমগঞ্জ চৌরাস্তা এলাকায় পৌঁছলে পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে মোটরসাইকেল আরোহীরা চৌরাস্তা থেকে দ্রুত বেগে সোনাইমুড়ী-লাকসাম অভিমুখে চলে যায়। তবে সেখানে বাসটিকে পাওয়া যায়নি। পরবর্তীতে জানা যায়, বাসচালক বাস নিয়ে মাইজদী চলে গেছেন। তিনি বর্তমানে নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। উক্ত ঘটনাকে চলন্ত বাসে ডাকাতির চেষ্টা বলে কিছু মিডিয়া ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচার করা হচ্ছে, যা সঠিক নয়।
এ দিকে নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল কর্মকর্তা ডা. রাজিব আহমেদ চৌধুরী বলেন, ‘‘ইটের আঘাতে চালকের মুখমণ্ডল, দাঁত ও মাড়িতে মারাত্মক আঘাতপ্রাপ্ত হন। তার চিকিৎসা চলছে। শনিবার বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক তাকে প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিয়েছেন। বর্তমানে তার অবস্থা উন্নতির দিকে।’’
নোয়াখালী অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম এন্ড অবস্) মো. ইব্রাহিম বলেন, ‘‘বাসের মালিক থানায় জিডি করেছেন। পুলিশ তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিল করবে। তবে বিষয়টি সম্পর্কে বাংলাদেশ পুলিশের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেইজে পোস্ট দেওয়া হয়েছে। সেখানে ঘটনার বিষদ বর্ণনা রয়েছে। তারপরও বাসের মালিকের জিডি খতিয়ে দেখা হবে।’’
মাওলা সুজন//
উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
চলন্ত অবস্থায় বৈদ্যুতিক গাড়ি চার্জ করতে সক্ষম সড়ক চালু ফ্রান্সে
জ্বালানিসাশ্রয়ী ও পরিবেশবান্ধব হওয়ায় বর্তমানে বিশ্বব্যাপী বৈদ্যুতিক গাড়ির উৎপাদন ও ব্যবহার বাড়ছে। তবে এসব গাড়ি বাসা বা নির্দিষ্ট স্থানেই শুধু চার্জ করা যায়। ফলে দূরে ভ্রমণের সময় গাড়ির চার্জ শেষ হয়ে গেলে বিপদে পড়েন অনেকেই। এ সমস্যা সমাধানে তারের সংযোগ ছাড়াই বৈদ্যুতিক গাড়ি চার্জ করতে সক্ষম ১ দশমিক ৫ কিলোমিটার দীর্ঘ ‘ওয়্যারলেস চার্জিং সড়ক’ চালু করেছে ফ্রান্স। প্যারিসের উপকণ্ঠে চালু হওয়া সড়কটিতে চলাচলের সময় বিভিন্ন ধরনের বৈদ্যুতিক গাড়ি, বাস ও ভারী ট্রাকের ব্যাটারি স্বয়ংক্রিয়ভাবে চার্জ হয়ে যাবে।
বৈদ্যুতিক গাড়ি চার্জ করার জন্য সড়কটিতে নিরবচ্ছিন্নভাবে ২০০ কিলোওয়াট পর্যন্ত বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হবে। প্রয়োজনে সেটি ৩০০ কিলোওয়াট পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে, যা টেসলার ভি থ্রি সুপারচার্জারের মতো বিশ্বের দ্রুততম চার্জারগুলোর সমান শক্তি সরবরাহ করতে সক্ষম। এই সড়কের নিচে স্থাপন করা হয়েছে অসংখ্য তামার কুণ্ডলী। এসব কুণ্ডলী চৌম্বক ক্ষেত্র তৈরি করে, যা বিশেষ রিসিভারযুক্ত বৈদ্যুতিক গাড়িতে শক্তি স্থানান্তর করে। পদ্ধতিটি অনেকটা ওয়্যারলেস চার্জিং প্রযুক্তির মতো, যেখানে পাওয়ার ব্যাংক বা চার্জিং প্যাডে মোবাইল ফোন রেখে চার্জ নেওয়া হয়। চৌম্বক ক্ষেত্রের মাধ্যমে বিদ্যুৎ স্থানান্তর হওয়ায় ভারী বৃষ্টি, বরফ বা তুষারপাতেও চার্জিং প্রক্রিয়ায় কোনো ব্যাঘাত ঘটে না। দ্রুত চার্জিং সুবিধার ফলে গাড়ি ও ট্রাক এখন দীর্ঘ পথ পাড়ি দিতে পারবে, মাঝপথে চার্জ নিতে থামার প্রয়োজন হবে না। ফলে গাড়িতে বড় ও ভারী ব্যাটারি বহনের প্রয়োজনীয়তা অনেক কমে যাবে।
এরেনা ইভির প্রতিবেদন অনুযায়ী, এই স্বয়ংক্রিয় চার্জিং সড়কে মাত্র কয়েক মিনিট চললেই বৈদ্যুতিক গাড়ির রেঞ্জ বা চলার সক্ষমতা উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়ে। ফলে বৈদ্যুতিক গাড়ির দীর্ঘ যাত্রায় চার্জ ফুরিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা সমাধানে প্রযুক্তিটি নতুন সম্ভাবনা দেখাচ্ছে। প্রযুক্তিটি যদি ব্যাপকভাবে চালু করা যায়, তবে তুলনামূলকভাবে হালকা, সাশ্রয়ী এবং কম ব্যাটারিসমৃদ্ধ বৈদ্যুতিক গাড়ি তৈরি করা সম্ভব হবে। এতে গাড়ির উৎপাদন খরচও কমবে বলে আশা করা হচ্ছে।
প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান ইলেকট্রিওনের তৈরি সড়কটির নকশাতেও রয়েছে বাড়তি সুবিধা। বৈদ্যুতিক গাড়ি চার্জ করার প্রযুক্তি রাস্তার ভেতরের অংশে থাকায় ক্ষয়ক্ষতির ঝুঁকি কম। ফ্রান্সের পরিবহন মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ২০৩৫ সালের মধ্যে দেশজুড়ে প্রায় ৯ হাজার কিলোমিটার ওয়্যারলেস চার্জিং সড়ক নির্মাণের পরিকল্পনা করা হয়েছে, যাতে বৈদ্যুতিক যানবাহন চলাচল আরও সহজ, কার্যকর ও পরিবেশবান্ধব হয়ে ওঠে।
সূত্র: ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস