শিপিং এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের নির্বাচন বন্ধ করতে বহিরাগতদের বিক্ষোভ
Published: 6th, April 2025 GMT
বাংলাদেশ শিপিং এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের (বিএসএএ) দ্বিবার্ষিক নির্বাচন বন্ধ করতে চট্টগ্রামের বিএনপির নেতাদের নেতৃত্বে বহিরাগত ব্যক্তিরা বিক্ষোভ সমাবেশ করেছেন। রোববার দুপুরে চট্টগ্রামের আগ্রাবাদে সংগঠনটির কার্যালয়ের সামনে এ সমাবেশ হয়। সমাবেশ শেষে শিপিং এজেন্টস কার্যালয়ে গিয়ে নির্বাচন বন্ধের জন্য দাবি জানানো হয়।
বিএসএএর দুই বছর মেয়াদি ২৪ সদস্যের পরিচালনা পর্ষদের নির্বাচন ১৩ এপ্রিল অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। এ নির্বাচনে এবার ভোটার হয়েছেন ২২৬ জন। নির্বাচিত পরিচালকদের থেকে সংগঠনটির চেয়ারম্যানসহ নেতৃত্ব নির্বাচন করা হয়।
এদিকে বহিরাগত ব্যক্তিদের চাপের মুখে অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি এড়াতে ভোটের স্থান পরিবর্তন করেছে বিএসএএ ভোটের জন্য গঠিত নির্বাচন কমিশন। হোটেল আগ্রাবাদের পরিবর্তে চট্টগ্রামের র্যাডিসন ব্লু হোটেলের মেজবান হলে এ নির্বাচনের স্থান ঠিক করা হয়েছে।
শিপিং এজেন্টদের অভিযোগ, এক মাস ধরে নির্বাচন বন্ধ করতে চাপ দিয়ে আসছেন মহানগর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক এস এম সাইফুল আলম এবং মহানগর বিএনপির সদস্য মশিউল আলম। এস এম সাইফুল আলম সম্প্রতি বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন। মশিউল আলমের শিপিং ও শিপ হ্যান্ডলিং ব্যবসা রয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, রোববার দুপুরে মশিউল আলমের নেতৃত্বে বহিরাগত ব্যক্তিরা ব্যানার নিয়ে বিক্ষোভ সমাবেশ করেন। ‘বৈষম্যের শিকার ব্যবসায়ী ফোরাম’ নামে সংগঠনের ব্যানারে বিক্ষোভ সমাবেশ করেন তাঁরা। সমাবেশে তিনজন ছাড়া বাকিরা শিপিং ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত নন বলে শিপিং এজেন্টরা জানান। সমাবেশে কয়েকজন প্রার্থীকে স্বৈরাচারের দোসর হিসেবে অভিযোগ করে ১৩ এপ্রিল নির্বাচন বন্ধের দাবি জানানো হয়। সমাবেশে সম্মিলিত পরিষদের প্যানেল নেতা সৈয়দ মোহাম্মদ আরিফের বিরুদ্ধে বিষোদ্গার করা হয়।
জানতে চাইলে মশিউল আলম প্রথম আলোকে বলেন, ‘নির্বাচন বন্ধ নয়, স্থগিতের দাবি জানিয়েছি আমরা। সমাবেশে বহিরাগতরা নয়, সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টস, লাইটার ঠিকাদারসহ বন্দরের ব্যবসার সঙ্গে যুক্তরা অংশগ্রহণ করেছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমরা চাই, নির্বাচন স্থগিত করে ভোটার তালিকা হালনাগাদ করে নির্বাচন হোক। সংগঠনের ৬০০ সদস্যের মধ্যে কেন ২২৬ জন ভোটার হবে?’ এস এম সাইফুল আলম বিদেশে থাকায় তাঁর সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি।
এ বিষয়ে শিপিং এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সৈয়দ মোহাম্মদ আরিফ প্রথম আলোকে বলেন, রোববার যাঁরা বিক্ষোভ করেছেন, তাঁদের মধ্যে তিনজন ছাড়া সবাই বহিরাগত। অর্থাৎ শিপিং ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত নন। তিনি বলেন, নির্বাচন বন্ধের জন্য এক মাস আগে থেকে চাপ আসছে। একজন সম্মানিত ব্যক্তি নির্বাচনের বদলে মনোনয়নের মাধ্যমে কমিটি গঠনের পরামর্শ দিয়েছিলেন। তবে সংগঠনটির সিংহভাগ সদস্য নির্বাচনের মাধ্যমে কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত নেওয়ায় এ নির্বাচন হচ্ছে।
নির্বাচনের চলমান পরিস্থিতি নিয়ে শিপিং এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের নির্বাচন বোর্ডের চেয়ারম্যান তারেক কামাল প্রথম আলোকে বলেন, নিয়ম মেনে ভোটার তালিকা হালনাগাদ করা হয়েছে। প্রার্থীরা নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন। ১৩ এপ্রিল নির্বাচন হবে। নির্বাচনে কাউকে অনৈতিক সুবিধা দেওয়ার প্রশ্নই ওঠে না।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: সদস য ব যবস গঠন র ল আলম স গঠন
এছাড়াও পড়ুন:
শিশু নাঈমের পাশে ইবি ক্রিকেট ক্লাব
শিক্ষা বঞ্চিত ৬ বছর বয়সী ছোট্ট নাঈমকে স্কুলে ভর্তি করে পাশে দাঁড়িয়েছে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় (ইবি) ক্রিকেট ক্লাব। তাকে ক্যাম্পাস সংলগ্ন ব্লু বার্ড ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের প্লে শ্রেণিতে ভর্তি করে দেয় সংগঠনটি।
জানা যায়, নাঈমের বাবা অন্তর দ্বিতীয় বিয়ে করে অনত্র চলে যান। নাইমের মা নুপুর গাজীপুরের একটি পোশাক কারখানায় কাজ করেন।
নাইমকে লালন-পালন করছেন তার নানী হাজেরা খাতুন। তিনি ক্যাম্পাসের একটা দোকানে কাজ করে জীবিকানির্বাহ করছেন।
আরো পড়ুন:
তরুণদের শৃঙ্খলা ও দায়িত্ববোধ ভবিষ্যৎ গড়ে দেবে: জবি উপাচার্য
শিক্ষার গতিপথ ও উন্নয়ন নিয়ে ঢাবিতে সেমিনার
বিষয়টি জানতে পেরে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রিকেট ক্লাবের পক্ষ থেকে সংগঠনটির সভাপতি শেখ সাকলাইন ও সাধারণ সম্পাদক মাসুদ রানা সুশিক্ষার উদ্দেশ্যে নাঈমকে স্কুলে ভর্তির সিদ্ধান্ত নেন।
পরে নাঈমকে ব্লু বার্ড ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের প্লে শ্রেণিতে ভর্তি করে সংগঠনটি। এছাড়া নাঈমের পড়াশোনার জন্য আনুষঙ্গিক বই, পোশাক এবং ১ মাসের অগ্রিম বেতন প্রদান করা হয়।
নাঈমের নানী হাজেরা খাতুন বলেন, “অর্থের অভাবে নাঈমকে স্কুলে ভর্তি করাতে পারছিলাম না। পরে ক্যাম্পাসের এই মামাদের জানালে তারা আমাকে আশ্বস্ত করেন এবং নাঈমকে স্কুলে ভর্তি করে দেন। এতে আমি খুশি। আমি চাই নাঈম ঠিকমতো পড়ালেখা করে মানুষের মতো মানুষ হোক।”
ছোট্ট নাঈম জানায়, বড় ভাইয়েরা তাকে স্কুলে ভর্তি করাইছে। এতে সে অনেক খুশি। সে ভালোভাবে লেখাপড়া করতে চায়।
ক্রিকেট ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মাসুদ রানা বলেন, “আমরা যারা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ছি, তাদের প্রতি সমাজের অনেক প্রত্যাশা থাকে শুধু জ্ঞানে নয়, মানবিকতাও। সেই দায়িত্ববোধ থেকেই আমাদের ক্লাব একটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আমরা এক অসহায় ও দরিদ্র শিশুর শিক্ষা জীবনের দায়িত্ব গ্রহণ করতে যাচ্ছি।”
তিনি বলেন, “আমাদের লক্ষ্য তাকে কেবল একটি শিক্ষার সুযোগ দেওয়া নয়, বরং একটি সম্মানজনক জীবনের পথে এগিয়ে নেওয়া। আমরা বিশ্বাস করি, সমাজের প্রতিটি শিশুরই সম্ভাবনা আছে ভালো কিছু করার, শুধু দরকার একটি সুযোগ। আর সেই সুযোগটা দেওয়ার চেষ্টা করছি আমরা। এটা শুধু একটি শিশুর গল্প নয়, এটা আমাদের ক্লাবের ভবিষ্যতের গল্প।”
ক্রিকেট ক্লাবের সভাপতি শেখ সাকলাইন বলেন, “ইবি ক্যাম্পাসে ক্রিকেটারদের খুব আদরের নাঈম। ছোট থেকেই সে তার নানীর কাছে থাকে। তার নানী আমাদের ক্যাম্পাসে একটা দোকানে কাজ করে। আমরা ইবি ক্রিকেট ক্লাব যখন মাঠে খেলি, তখন ছোট নাঈম আমাদের দেখলেই ছুটে আসে। আমরা আদর করে তাকে অনেক কিছু কিনে দেই।”
তিনি বলেন, “একদিন তার নানী আমাকে জানান, নাঈমকে স্কুলে ভর্তি করতে হবে। আমি তাকে আশ্বস্ত করি, নাঈমকে স্কুলে ভর্তি করব। ইবি ক্রিকেট ক্লাব, শুধু ক্রিকেটে সীমাবদ্ধ নয়। আমরা সুযোগ পেলে অসহায় দরিদ্র মানুষের পাশে দাঁড়াতে চাই। খেলাধুলা মানুষের উন্নত মন মানসিকতার বিকাশ ঘটায়। আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি যে নাঈম একদিন অনেক বড় হবে এবং সে দেশ ও জাতির জন্য কাজ করবে, ইনশাআল্লাহ।”
ঢাকা/তানিম/মেহেদী