স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট জেনারেল মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেছেন, ‍“মুন্সীগঞ্জ রাজধানী ঢাকার সবচেয়ে নিকটে হলেও এ জেলাটি এখনো অবহেলিত। এখানে কিভাবে অল্প সময়ের মধ্যে কিছু কাজ করতে পারি, এজন্য কয়েকজন উপদেষ্টা, সচিবসহ আমরা সবাই সমবেত হয়েছি।” 

তিনি বলেন, “তাড়াতাড়ি এখানে (মুন্সীগঞ্জ) একটি মেডিকেল কলেজ করা যায় কিনা সে বিষয়ে আমরা সিন্ধান্ত নিয়েছি। এক মাস কিংবা দুই মাসের মধ্যে কিভাবে কাজ শুরু করা যায়, এজন্য আমরা চেষ্টা করছি। মেডিকেল কলেজের জন্য ইতোমধ্যে যায়গা নির্ধারন হয়ে গেছে। এ জেলায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যাপারে এখনো কোনো আলোচনা হয়নি। আগে মেডিকেল কলেজটা শেষ করি, তারপর বিশ্ববিদ্যালয় করার চেষ্টা করব আমরা।” 

সোমবার (৭ এপ্রিল) দুপুর আড়াইটার দিকে মুন্সীগঞ্জ জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত জেলার অবকাঠামোগত উন্নয়ন সংক্রান্ত আলোচনা সভা শেষে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন তিনি।

আরো পড়ুন:

যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য সম্প্রসারণে নতুন পরিকল্পনা 

পরিবেশ রক্ষায় ইতিবাচক মানসিকতা নিয়ে কাজ করতে হবে: রিজওয়ানা

ইদ্রাকপুর দুর্গ সংস্কারের ব্যাপারে জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, “আপনারা জানেন, বিক্রমপুরে ঐতিহ্য কিন্তু অনেক বেশি। এই ইদ্রাকপুর কেল্লা এর মধ্যে একটা। এই কেল্লা (দুর্গ) কিভাবে ইমপ্রুভ (উন্নয়ন) করা যায়, সে ব্যাপরে সাংস্কৃতিক উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী আমাদের ভালো আইডিয়া দিয়েছেন। উনি উনার তহবিল থেকে টাকাও দেবেন। আমরা ওটা দিয়ে কেল্লার সংস্কার করব।”

স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, “এখানে রাস্তাঘাটের অবস্থা খারাপ, রাস্তাঘাটগুলি কিভাবে উন্নত করা যায় এ ব্যাপারে আলোচনা করা হয়েছে। জেলার শ্রীনগর থেকে মুন্সীগঞ্জ পর্যন্ত ৪ লেন সড়ক করার জন্য আলোচনা হয়েছে। এটা হয়তো খুব তাড়াতাড়ি করা সম্ভব হবে।”

শিল্প সাহিত্য বিকাশের ক্ষেত্রে জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, “মুন্সীগঞ্জ শিল্পকলা আমরা সংস্কার করব। শিল্পকলার পাশাপাশি মুন্সীগঞ্জ সদর থানা সংলগ্ন গনসদন হলটিও সংস্কার করে দেব। এসব ব্যাপারে উপদেষ্টারা সবাই কিন্তু সহযোগিতা করার জন্যই এখানে আজ এসেছেন।” 

গজারিয়া উপজেলার ফুলদি নদীতে সেতু নির্মাণের দাবি জানানো হলে তিনি বলেন, “সেতু নির্মানের জন্য আড়াই থেকে তিনশো কোটি টাকা প্রয়োজন হবে। ওটা নিয়েও আমাদের এখানে আলোচনা হয়েছে। আমরা পরে এক সময় শুরু করব। সব কাজ এক সঙ্গে তো করা সম্ভব হবে না।”

আলু বীজ সংরক্ষণ ও সমস্যা সমাধানে ব্যাপারে হিমাগারের বিষয়ে জানতে চাইলে এই উপদেষ্টা বলেন, “সরকারীভাবে টঙ্গিবাড়ী উপজেলায় একটি হিমাগার নির্মাণ করা হয়েছে।” 

মুন্সীগঞ্জের জেলা প্রশাসক ফাতেমা তুল জান্নাতের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন- অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের শিল্প, গৃহায়ন ও গণপূর্ত উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান, সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী। অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন- নৌবাহিনী প্রধান এডমিরাল মোহাম্মদ নাজমুল হাসান, অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের সচিব মো.

শাহ্‌রিয়ার কাদের ছিদ্দিকী, স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব মো. নিজাম উদ্দিন, গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. নজরুল ইসলাম, অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগের সচিব ড. মো. খায়েরুজ্জামান মজুমদার, সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব (রুটিন দায়িত্ব) মো. মফিদুর রহমান, ন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন মনিটরিং সেন্টার (এনটিএমসি) এর মহাপরিচালক মেজর জেনারেল আবদুল কাইয়ুম মোল্লা, ট্যুরিজম বোর্ডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আবু তাহের মুহাম্মদ জাবের, বাংলাদেশ পুলিশের অতিরিক্ত আইজিপি মো. গোলাম রসুল, প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের মহাপরিচালক সাবিনা আলম, বিআইডব্লিউটিএ-এর চেয়ারম্যান কমডোর আরিফ আহমেদ মোস্তফা।

ঢাকা/রতন/মাসুদ

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর উপদ ষ ট র উপদ ষ ট র জন য

এছাড়াও পড়ুন:

অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগে যশোর আইনজীবী সমিতির চার সদস্যকে সাময়িক বহিষ্কার

অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগে যশোর আইনজীবী সমিতির চার সদস্যকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে। গতকাল বুধবার বিকেলে সমিতির নির্বাহী কমিটির সভায় ওই চারজনের কারণ দর্শানো নোটিশের জবাবের শুনানি শেষে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

বহিষ্কৃত সদস্যরা হলেন আইনজীবী আবদুর রাজ্জাক, সৈয়দ কবির হোসেন, রফিকুল ইসলাম রফিক ও তরফদার আবদুল মুকিত। তাঁদের বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার না হওয়া পর্যন্ত আদালতের সব কার্যক্রম থেকে বিরত থাকতে বলা হয়েছে।

এ সমিতির সাধারণ সম্পাদক এম এ গফুর বলেন, ‘অভিযোগ প্রমাণিত হওয়াতে তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। কেউ সমিতির নিয়মনীতির ঊর্ধ্বে নন। বৃহস্পতিবার ওই চার সদস্যকে বহিষ্কারের বিষয়টি নোটিশ দিয়ে জানানো হবে।’

সমিতি সূত্রে জানা গেছে, যশোর জেলা আইনজীবী সমিতির সদস্য সৈয়দ কবির হোসেনের (জনি) কাছে ৩৫ লাখ টাকায় শহরের বারান্দীপাড়া কদমতলা এলাকায় জমি বিক্রি করেন ইমরান হাসান। জমি রেজিস্ট্রির আগে সব টাকা পরিশোধের কথা থাকলেও সৈয়দ কবির হোসেন ১০ লাখ টাকা দিয়েছিলেন। বাকি ২৫ লাখ টাকা না দিয়ে টালবাহানা করতে থাকেন। পরে তিনি আরও ১৭ লাখ টাকা দেন। বাকি ৮ লাখ টাকা চাইলে হুমকি দিতে থাকেন কবির হোসেন। টাকা আদায়ে ব্যর্থ হয়ে ইমরান হাসান আইনজীবী সমিতি বরাবর লিখিত অভিযোগ দেন।

সমিতির নির্বাহী কমিটির সভায় তদন্ত প্রতিবেদনের ওপর শুনানি শেষে কবির হোসেনকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছিল। নোটিশের জবাব সন্তোষজনক না হওয়ায় সমিতির সুনাম ক্ষুণ্ন করায় গঠনতন্ত্র অনুযায়ী কবির হোসেনকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়।

এ বিষয়ে আইনজীবী কবির হোসেন বলেন, ‘বহিষ্কারের বিষয়টি আমি শুনেছি। তবে যে বিষয়ে আমাকে অভিযুক্ত করা হয়েছে, সেই বিষয়ে অভিযুক্ত আমি নই। তারপরও আইনজীবী সমিতি আমার অভিভাবক; তারা যে ব্যবস্থা নিয়েছে, তার বিষয়ে আমার কিছু বলার নেই।’

অন্যদিকে অভয়নগরের নওয়াপাড়ার জয়েন্ট ট্রেডিং করপোরেশন পাওনা টাকা আদায়ে আবদুর রাজ্জাককে মামলার আইনজীবী নিয়োগ দিয়েছিল। ২০১৯ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত আবদুর রাজ্জাক আটটি চেকের মামলা পরিচালনা করেন। এসব মামলার রায় ও আপিল বাদীর অনুকূলে যাওয়ার পর আটটি চেকের ৪১ লাখ ১২ হাজার ৫০০ টাকা ব্যাংক থেকে উত্তোলন করে নেন আবদুর রাজ্জাক। এ টাকা জয়েন্ট ট্রেডিং কর্তৃপক্ষকে না দিয়ে তিনি ঘোরাতে থাকেন। চলতি বছরের ৪ জুন তিনি ১৫ লাখ টাকার একটি চেক দেন। চেকটি ব্যাংকে জমা দিলে পর্যাপ্ত টাকা না থাকায় নগদায়ন করা যায়নি। টাকা আদায়ে ব্যর্থ হয়ে জয়েন্ট ট্রেডিং করপোরেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবদুল ওহাব গত ২৮ জুলাই আবদুর রাজ্জাকের বিরুদ্ধে যশোর আইনজীবী সমিতি‌ বরাবর অভিযোগ করেন।

এ অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে আবদুর রাজ্জাককে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয় যশোর আইনজীবী সমিতি। নোটিশের জবাব সন্তোষজনক না হওয়ায় আবদুর রাজ্জাককে গঠনতন্ত্র অনুযায়ী সাময়িক বহিষ্কার করা হয়। এ ছাড়া রফিকুল ইসলাম রফিক তাঁর সহকর্মীর সঙ্গে অসদাচরণ ও মামলা করতে টাকা ও কাগজপত্র নিয়ে মামলা না করায় সমিতির সুনাম ক্ষুণ্ন করায় সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে। আইনজীবী তরফদার আবদুল মুকিতের বিরুদ্ধেও নানা ধরনের অভিযোগ রয়েছে। এ কারণে তাঁকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ