এআই’র তৈরি ভিডিও ছড়িয়ে দেওয়ায় আত্মহত্যা করেন সুলতানা, দাবি স্বজনদের
Published: 9th, April 2025 GMT
দশ মাস আগে জাপানপ্রবাসীর সঙ্গে বিয়ে হয়। দু’মাস পরই স্বামীর সঙ্গে দেখা হওয়ার কথা। প্রবাসে সোনার সংসার গড়ে তোলার স্বপ্নে বিভোর নববধূর জীবন তছনছ করে দিল কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) প্রযুক্তি দিয়ে বানানো একটি ভুয়া ভিডিও। ওই রমণী বেছে নেন আত্মহননের পথ। ঘটনাটি ঘটেছে লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলার দুর্গাপুর ইউনিয়নের সিদ্দিক আলীর মেয়ে সুলতানা পারভীনের জীবনে। গত রোববার দুপুরে বাবার বাড়িতে গলায় ওড়না পেঁচিয়ে আত্মহত্যা করেন তিনি। আত্মহত্যার পর এমনটাই দাবি করেছেন তার স্বজনরা।
এদিকে মৃত্যুর আগে লিখে যান তিন পৃষ্ঠার সুইসাইড নোট। স্বামী অনিকের বোন জামাই পর্তুগালপ্রবাসী মোহাম্মদ নাহিন শেখ মৃদুলকে দায়ী করে সুলতানা লেখেন, ‘মৃদুলকে ছেড়ে দিও না, ওর জন্য আমার জীবনটা শেষ হয়ে গেল। ওকে ছেড়ে দিও না। আমার সংসার, অনিক, কোনো কিছুই ধরে রাখতে পারলাম না।’
গতকাল মঙ্গলবার সুলতানাদের বাড়ি গেলে দেখা যায়, মা ফিরোজা বেগম বাকরুদ্ধ। কোস্টগার্ডে কর্মরত একমাত্র ভাই আলিমুল ইসলাম আহাজারি করছেন। তিনি বলেন, ঝুঁকি নিয়ে মানুষের নিরাপত্তায় কাজ করছি। অথচ আমার পরিবারে নিরাপত্তা নেই। ওরা সবাই মিলে আমার বোনকে হত্যা করেছে। দিনের পর দিন মানসিক যন্ত্রণা দিয়ে আত্মহত্যা করতে বাধ্য করেছে।
স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, একটি ফেক আইডি থেকে অনিকের পর্তুগালপ্রবাসী বোন জামাই মৃদুল আপত্তিকর ভিডিও ছড়িয়ে দেন। ভিডিওটি প্রথমে সুলতানাকে, পরে তাঁর স্বামী অনিককে পাঠানো হয়। এই ভিডিওর কারণে শুরু হয় ভুল বোঝাবুঝি। অনিক যোগাযোগ বন্ধ করে দেন। এমনকি ডির্ভোস দেবেন বলেও হুমকি দেন। পরে জানা যায়, ভিডিও এআই দিয়ে তৈরি।
মা ফিরোজা বেগম বলেন, সবাই মিলে মেয়েটাকে হত্যা করেছে। অনিক, অনিকের মা, বোন জামাই মৃদুলের ফাঁসি চান তিনি। দু’এক দিনের মধ্যে থানায় মামলা করব।
জাপানপ্রবাসী অনিকের মোবাইল ফোনে কল দিলে তিনি বলেন, ভগ্নিপতি মৃদুলের সঙ্গে আমার স্ত্রীর বচসা হয়। সুলতানা কীভাবে সংসার করে, তা দেখে নেওয়ার হুমকি দেয় মৃদুল। তার কারণে আমাদের সংসারে অশান্তি হয়। মানসিক যন্ত্রণা সহ্য করতে না পেরে আত্মহননের পথ বেছে নেয় সুলতানা। আমরা দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাইছি।
এ বিষয়ে কথা বলতে পর্তুগালপ্রবাসী মৃদুলের হোয়াটসঅ্যাপে যোগাযোগ করা হয়। তিনি কল রিসিভ করেননি। তাঁকে মেসেজ পাঠালেও সাড়া পাওয়া যায়নি।
আদিতমারী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আলী আকবর জানান, পুলিশের পক্ষ থেকে নিহতের পরিবারকে থানায় অভিযোগ করতে বলা হয়েছে।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: নববধ র ল শ এআই অন ক র প রব স
এছাড়াও পড়ুন:
মুক্তিপণ দিয়েও পাঁচ মাস ধরে ১৪ তরুণের খোঁজ পাচ্ছেন না স্বজনেরা
অবৈধ পথে ইতালির উদ্দেশে যাত্রা করেছিলেন মাদারীপুরের রাজৈর উপজেলার ১৪ তরুণ। কিন্তু দুবাই হয়ে লিবিয়ায় পৌঁছানোর পর পাঁচ মাস ধরে তাঁদের আর খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না। স্বজনদের দাবি, দালালের প্রলোভনে পড়ে জনপ্রতি ৩০ থেকে ৩৫ লাখ টাকা মুক্তিপণও দিয়েছেন তাঁরা। কিন্তু সন্ধান না পাওয়ায় চরম দুশ্চিন্তায় দিন কাটাচ্ছেন তাঁরা।
ইউরোপের কোনো দেশে গেলে সচ্ছলতা আসবে, এমন ধারণা নিয়ে প্রতিবছর মাদারীপুর থেকে শত শত তরুণ সেখানে পাড়ি জমানোর চেষ্টা করছেন। তবে অবৈধ পথে ইউরোপ যেতে গিয়ে অনেকের মৃত্যু হয়েছে। কেউবা দালালের খপ্পরে পড়ে নির্যাতনের শিকার হয়ে কাটাচ্ছেন বন্দিজীবন। জেলা প্রশাসন ও পুলিশের তথ্য বলছে, ২০১৯ থেকে ২০২৩ সালের মার্চ পর্যন্ত জেলার ৪৫ জন লিবিয়া হয়ে ইতালি যাওয়ার পথে মারা গেছেন। ২০১৯ থেকে ২০২৩ সালের মার্চ পর্যন্ত সময়ের মধ্যে নির্যাতনের শিকার হয়ে লিবিয়া থেকে বাংলাদেশে ফিরে আসতে পেরেছেন অন্তত ৩৫০ তরুণ। নিখোঁজ আছেন তিন শতাধিক।
সবশেষ নিখোঁজ তরুণদের সবার বাড়ি রাজৈরের বাজিতপুর ইউনিয়নে। তাঁরা হলেন পাখুল্লা গ্রামের জাহাঙ্গীর ব্যাপারীর ছেলে সালমান ব্যাপারী, চৌরাশী গ্রামের মোসলেম শিকদারের ছেলে বাবুল শিকদার, একই গ্রামের মজিবর বয়াতীর ছেলে সাজ্জাদ বয়াতী, জাকির মাতুব্বরের ছেলে বাদল মাতুব্বর, কানাই রায়ের ছেলে লিটন রায়, নিরঞ্জন বাড়ৈর ছেলে বাঁধন বাড়ৈ, কিসমদ্দি বাজিতপুর গ্রামের আলম চৌকিদারের ছেলে ইমন চৌকিদার, অহিদুল মাতুব্বরের ছেলে নয়ন মাতুব্বর, আজিজ খালাসির ছেলে খলিল খালাসি, সোনা মিয়া চৌকিদারের ছেলে সোহেল চৌকিদার, নয়াকান্দি বাজিতপুর গ্রামের গৌরাঙ্গ বাড়ৈর ছেলে গৌতম বাড়ৈ, একই গ্রামের সামচু সরদারের ছেলে ইমরান সরদার, শ্রীনাথদী বাজিতপুরের জলিল বয়াতীর ছেলে আল আমিন বয়াতি ও শ্রীনদী গ্রামের সিদ্দিকুর রহমান ঘরামির ছেলে আলী ঘরামি। তাঁদের সবার বয়স ১৮ থেকে ২৮ বছরের মধ্যে।
স্বজনদের অভিযোগ, মানব পাচার চক্রের সক্রিয় সদস্য বাজিতপুর এলাকার বাবুল হাওলাদার ইতালি নেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে প্রত্যেক পরিবারের কাছ থেকে প্রথমে ১৬ লাখ টাকা করে নেন। পরে লিবিয়ায় বন্দী করে আদায় করেন আরও ২০ থেকে ২৫ লাখ টাকা। এর পর থেকে ঘরে তালা ঝুলিয়ে পালিয়েছেন অভিযুক্ত বাবুল ও তাঁর পরিবারের সদস্যরা।
মাদারীপুরের ১৪ তরুণ ইতালি যেতে গত ফেব্রুয়ারি মাসে দালালের হাত ধরে ঘর ছাড়েন। নিখোঁজ তরুণদের সন্ধানে তাদের ছবি হাতে স্বজনেরা