ভিউয়ের দৌড়ে ‘বড় ছেলে’ অপূর্বকে ছাড়িয়ে নিলয়
Published: 9th, April 2025 GMT
মিজানুর রহমান আরিয়ান নির্মিত আলোচিত টেলিফিল্ম ‘বড় ছেলে’। ৫৩ মিনিট ৩৯ সেকেন্ড দৈর্ঘ্যের এই টেলিফিল্মের প্রধান চরিত্রে অভিনয় করেন— জিয়াউল ফারুক অপূর্ব ও মেহজাবীন চৌধুরী।
২০১৭ সালের ৫ সেপ্টেম্বর ইউটিউবে মুক্তি পায় ‘বড় ছেলে’। এ জুটির রসায়ন ভীষণভাবে মুগ্ধ করে দর্শকদের। বাংলা নাটকের ইতিহাসে ইউটিউবে দ্রুততম ভিউয়ের তালিকায় এক নম্বরে জায়গা করে নিয়েছিল এটি। গত ৭ বছর ৭ মাসে (২ হাজার ৭৭৩ দিন) টেলিফিল্মটির মোট ভিউ হয়েছে ৫ কোটি ৪১ লাখ ৯৬ হাজারের বেশি।
আলোচিত টেলিফিল্ম ‘বড় ছেলে’-এর ভিউয়ের রেকর্ড ভাঙল একক নাটক ‘শ্বশুরবাড়িতে ঈদ’। মহিন খান নির্মিত এই নাটকের প্রধান চরিত্রে অভিনয় করেছেন নিলয় আলমগীর ও জান্নাতুল সুমাইয়া হিমি। গত বছরের ৯ এপ্রিল ইউটিউবে মুক্তি পায় নাটকটি। তারপর থেকে দর্শকদের প্রশংসা কুড়াচ্ছে এটি। এক বছরে (৩৬৫ দিন) নাটকটির ভিউ দাঁড়িয়েছে ৫ কোটি ৪৫ লাখ ৬৬ হাজারের বেশি। ৩ লাখ ৭০ হাজার ভিউ বেশি নিয়ে বাংলা নাটকের ভিউয়ে এটি এখন শীর্ষে অবস্থান করছে।
আরো পড়ুন:
দুই পরিবার একসঙ্গে ঈদ করব: মেহজাবীন
মায়ের শাড়িতে বধূ সাজেন মেহজাবীন
‘শ্বশরবাড়িতে ঈদ’ নাটক শীর্ষে অবস্থানের খবর ছড়িয়ে পড়ার পর চর্চা চলছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। নিলয়-অপূর্ব ভক্তরা দুই শিবিরে বিভক্ত হয়েছেন। “অপূর্বকে টপকে গেলেন নিলয়”, ‘অপূর্বর চেয়ে সেরা নিলয়”— এমন নানা ধরনের মন্তব্য করছেন নেটিজেনরা। ভক্তদের অনেকে যার যার প্রিয় অভিনেতাকে এগিয়ে রাখার প্রতিযোগিতাও করছেন। তবে এমন আচরণ পছন্দ নয় নিলয়ের।
বিনয়ের স্বরে নিলয় আলমগীর বলেন, “আমার নাটক এত মানুষ দেখেছেন, সেটা খুশির ব্যাপার। অপূর্ব ভাইয়ের “বড় ছেলে’ নাটকটা অনেক সুন্দর। আমি অপূর্ব ভাইয়ের বড় একজন ভক্ত। আমার মনে হয়, অপূর্ব ভাইয়ের নাটকটাই আমার নাটকের চেয়ে সুন্দর এবং ভালো। তা ছাড়া অপূর্ব ভাইয়ের সঙ্গে আমার তুলনা করা উচিত না।”
অপূর্বর সঙ্গে নিলয়ের তুলনার অনুশীলনটা ভালো নয় বলে মন্তব্য করেছেন অভিনেত্রী জান্নাতুল সুমাইয়া হিমি। তিনি বলেন, “একটি কাজের পেছনে অনেক কষ্ট থাকে। দর্শক সেটা পছন্দ করলে সার্থক মনে হয়। তবে একটি বিষয় খারাপ লাগছে, সেটা হচ্ছে তুলনা। অনেকেই লিখছেন, ‘নাটকটি দিয়ে এ ওকে হারিয়ে দিল।’ আমার কাছে তুলনা করাটা ভালো লাগে না। আমরা দীর্ঘদিন ধরেই শীর্ষ ভিউয়ে ২ নম্বরে ছিলাম, এখন শীর্ষে, এই যা! বাংলা নাটকের শীর্ষ ভিউয়ে রয়েছে এটাই বলা প্রাসঙ্গিক। ১ নম্বরে আছি, এটা বলাটাও আমার পছন্দ নয়। কারণ অনেক নাটক রয়েছে, যেগুলোর ভিউ এখন কম হলেও দর্শকপ্রিয়। যা-ই হোক, এটা আমাকে ভালো কাজে অনুপ্রেরণা দেবে।”
ভিউয়ের দিক থেকে শীর্ষে অবস্থান করায় ‘শ্বশুরবাড়িতে ঈদ’ নাটকের পরিচালক মহিন খান দর্শকদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন। এ নির্মাতা বলেন, “নাটকটি প্রচারের পর থেকেই দীর্ঘ সময় ট্রেন্ডিংয়ে ছিল। কিন্তু এটা যে কখনো ভিউয়ের দিক থেকে শীর্ষ বাংলা নাটকের একটা হবে, এটা কল্পনাই করিনি। অল্প সময়ে এত দর্শক নাটকটি দেখায় তাদের কাছে কৃতজ্ঞত। অন্যদিকে ‘বড় ছেলে’ দীর্ঘ সময় ধরে সবচেয়ে বেশি দেখা বাংলা নাটকের তালিকায় ছিল। এটাও আমার পছন্দের একটি নাটক।”
ঢাকা/শান্ত
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ম হজ ব ন চ ধ র ট ভ ন টক বড় ছ ল ন টক র পছন দ ন টকট
এছাড়াও পড়ুন:
ভোগবাদী যুগে ইসলামে সুখের খোঁজ
আপনার বাড়িতে কি অপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের স্তূপ জমে আছে? জানেন কি, এর থেকে মুক্তির পথ আছে ইসলামের সরল জীবনধারায়? আধুনিক বিশ্বে ভোগবাদের তীব্র ঝড়ে আমরা প্রায়ই নিজেদের দেখি অপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রে ঠাসা ঘরে।
নতুন ফ্যাশনের পোশাক, সর্বশেষ প্রযুক্তির গ্যাজেট বা মধ্যরাতে এক ক্লিকে কেনা অপ্রয়োজনীয় পণ্য—এসব আমাদের জীবনের অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে। কিন্তু ইসলাম আমাদের ন্যূনতম একটি সরল জীবনধারার পথ দেখায়, যা পার্থিব লোভ থেকে মুক্ত করে আমাদের আল্লাহর পথে নিবেদিত হতে উৎসাহিত করে।
আয়েশা, তুমি যদি আমার সঙ্গে মিলিত হতে চাও, তবে এই দুনিয়া থেকে একজন পথিকের প্রয়োজনীয় জিনিসের মতো সামান্য গ্রহণ করো।সুনানে তিরমিজি, হাদিস: ১৭,৮০০সংযম কেন জরুরিমিনিমালিজম বা ন্যূনতাবাদ এমন একটি জীবনধারা, যেখানে আমরা শুধু প্রয়োজনীয় জিনিসের ওপর নির্ভর করব এবং অতিরিক্ত ভোগবিলাস থেকে দূরে থাকব। ক্রমাগত কেনাকাটার দিকে প্রলুব্ধ না হয়ে শুধু যেটুকু না হলেই জীবন চলে না, সেটুকু নিজের কাছে রাখব।
আল্লাহ তাআলা বলেছেন, ‘হে আদম সন্তান, প্রত্যেক নামাজের সময় বেশভূষা সৌন্দর্য গ্রহণ করো, খাও এবং পান করো, কিন্তু অপচয় কোরো না। নিশ্চয়ই তিনি অপচয়কারীদের পছন্দ করেন না।’ (সুরা আ’রাফ, আয়াত: ৩১)।
এই আয়াত আমাদের জীবনে সংযম ও সরলতার গুরুত্ব মনে করিয়ে দেয়।
আরও পড়ুনদুনিয়ার ভোগ–বিলাস নিয়ে সুরা তাকাসুরের সতর্কতা১০ এপ্রিল ২০২৩বিজ্ঞাপনের প্রলোভন আজকাল আমাদের অপ্রয়োজনীয় কেনাকাটার দিকে ঠেলে দেয়। প্রায়ই এমন জিনিস কিনে ফেলি, যেমন একটি ইউএসবি মগ হিটার বা জামাকাপড়, যা তারপর বছরের পর বছর অব্যবহৃত পড়ে থাকে।
বাড়িতে জমে থাকে প্যাকেট না খোলা গ্লাস–বক্স, অপঠিত বইয়ের স্তূপ। প্রশ্ন করে দেখি তো, আমাদের আসলেই কি এগুলো প্রয়োজন ছিল?
মহানবী (সা.)-এর সাদাসিধা জীবনমহানবীজি (সা.) এবং তাঁর সাহাবারা সরল জীবনযাপনের উজ্জ্বল উদাহরণ। হজরত আয়েশা (রা.)-কে নবীজি বলেছিলেন, ‘হে আয়েশা, তুমি যদি আমার সঙ্গে মিলিত হতে চাও, তবে এই দুনিয়া থেকে একজন পথিকের প্রয়োজনীয় জিনিসের মতো সামান্য গ্রহণ করো। ধনীদের সঙ্গে মেলামেশা থেকে সাবধান থাকো এবং কোনো পোশাককে তখনই জীর্ণ হয়ে গেছে মনে করো, যখন তুমি তাতে প্যাঁচ লাগিয়েছ (মানে যখন পুরোনো হয়ে যাওয়ার কারণে পেঁচিয়ে যায়)।’ (সুনানে তিরমিজি, হাদিস: ১৭,৮০০)।
এই হাদিসে নবীজি (সা.) স্পষ্টভাবে সরল জীবনযাপন এবং অতিরিক্ত সম্পদ সঞ্চয় থেকে দূরে থাকার পরামর্শ দিয়েছেন।
উপহারের পরিবর্তে আমরা দাতব্য সংস্থায় দানের জন্য অনুরোধ করতে পারি। এমনকি আমাদের একটি অনলাইন সাবস্ক্রিপশন বাতিল করে সেই অর্থ স্থানীয় মসজিদে দান করতে পারি।ইসলাম আমাদের শেখায় যে পার্থিব সম্পদ ক্ষণস্থায়ী এবং এটি আমাদের চিরস্থায়ী জীবনের জন্য প্রস্তুতির পথে বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে। নবীজি (সা.) কখনো অপ্রয়োজনীয় সম্পদ সঞ্চয় করেননি এবং সব সময় দানশীলতার মাধ্যমে আল্লাহর পথে ব্যয় করতে উৎসাহিত করেছেন।
দানের সংস্কৃতিআজকের বিশ্বে ভোগবাদী সংস্কৃতি আমাদের জীবনকে জটিল করে তুলেছে। ক্রেডিট কার্ড, সহজলভ্য ঋণ এবং ই-কমার্স প্ল্যাটফর্মগুলো আমাদের ক্রমাগত কেনাকাটার দিকে প্রলুব্ধ করে। আমাদের পূর্ববর্তী প্রজন্ম, যেমন আমাদের দাদা-দাদিরা, সীমিত সম্পদের মধ্যে সরল জীবন যাপন করতেন। কিন্তু গত কয়েক দশকে বিশ্বব্যাপী মধ্যবিত্ত শ্রেণির উত্থান এবং সহজে ঋণ পাওয়ার সুযোগ আমাদের ভোগবাদী প্রবৃত্তিকে আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।
আরও পড়ুনখাদ্যনিরাপত্তা নিয়ে ইসলামের নির্দেশনা০৯ জুন ২০২৫কিন্তু ইসলাম আমাদের শেখায়, প্রয়োজনের বাইরে অতিরিক্ত সম্পদ সঞ্চয় করা লোভ ও কৃপণতার দিকে নিয়ে যায়, যা একজন মুমিনের বৈশিষ্ট্য নয়।
ইসলাম আমাদের জীবনকে সরল করার পাশাপাশি আল্লাহর পথে ব্যয় করতে উৎসাহিত করে। আমরা চাইলে মাসিক বাজেটের একটি অংশ দানের জন্য বরাদ্দ করতে পারি।
যে ব্যক্তি নিজের সম্পদে সংযমী হয় এবং আল্লাহর পথে ব্যয় করে, তার জন্য জান্নাতের দরজা খুলে যায়।সহিহ মুসলিম, হাদিস: ৯৯৪বিয়ের মতো উৎসবে আমরা বিলাসবহুল আয়োজনের পরিবর্তে সরলতা বেছে নিতে পারি। উপহারের পরিবর্তে আমরা দাতব্য সংস্থায় দানের জন্য অনুরোধ করতে পারি। এমনকি আমাদের একটি অনলাইন সাবস্ক্রিপশন বাতিল করে সেই অর্থ স্থানীয় মসজিদে দান করতে পারি।
নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি নিজের সম্পদে সংযমী হয় এবং আল্লাহর পথে ব্যয় করে, তার জন্য জান্নাতের দরজা খুলে যায়।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ৯৯৪)।
আমাদের ভালো কাজ এবং দানশীলতা পরকালে যেমন উপকারে আসবে, তেমনি সমাজের জন্যও হবে কল্যাণকর। অপ্রয়োজনীয় খরচ কমিয়ে দানশীলতার দিকে মনোযোগ দিলে সমাজের দরিদ্র ও অভাবী মানুষের জীবন উন্নত হবে।
ভোগবাদী জীবন মানুষকে অস্থির করে তোলে এবং ন্যূনতম খরচের জীবনধারা মানুষকে তৃপ্তির জীবন উপহার দেয়। এটি একই সঙ্গে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনেরও একটি পথ।
আমরা যদি আমাদের অপ্রয়োজনীয় খরচ কমিয়ে আল্লাহর পথে ব্যয় করি, তবে তা আমাদের ব্যক্তিগত ও সামাজিক জীবনকে সমৃদ্ধ করবে। ন্যূনতমবাদ আমাদের মনে করিয়ে দেয়, আমাদের প্রকৃত সুখ পার্থিব সম্পদে নয়, বরং আল্লাহর সন্তুষ্টি ও পরকালের প্রস্তুতিতে নিহিত।
আরও পড়ুনআধুনিক এই প্রবণতার শিকড় ইসলামে২০ মে ২০২৫