ওয়াক্ফ নিয়ে ভারতের মণিপুরে বিক্ষোভ, পশ্চিমবঙ্গে না চালুর ঘোষণা মমতার
Published: 9th, April 2025 GMT
ওয়াক্ফ আইন নিয়ে ভারতের মণিপুর রাজ্যে নতুন করে প্রতিবাদ শুরু হয়েছে। আর এদিকে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ঘোষণা দিয়েছেন, এ রাজ্যে ওয়াক্ফ চালু হবে না।
মণিপুরে শুরু হয়েছে এক নতুন প্রতিবাদ। এর কেন্দ্রে রয়েছেন মণিপুরের সংখ্যাগরিষ্ঠ মেইতেই সম্প্রদায়ের মুসলমান অংশ, যাঁদের বলা হয় মেইতেই পাঙ্গাল। গত রোববার থেকে মণিপুরের মেইতেই পাঙ্গালরা পথে নেমেছেন ভারতের সংসদে ওয়াক্ফ আইন পাসের বিরোধিতা করে। রোববার থেকে তাঁরা বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন, আজ বুধবারও দেখিয়েছেন। এই আইন মুসলমান সমাজের সম্পত্তি অনেকটাই অধিগ্রহণ করবে বলে মনে করা হচ্ছে। মণিপুরে বিজেপি নেতৃত্বাধীন ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক অ্যালায়েন্সের একটি দল ন্যাশনাল পিপলস পার্টির এক নেতাও জানিয়েছেন, তাঁরা আইনের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে যাবেন।
মণিপুরের বিভিন্ন জেলা যেমন ইম্ফল পূর্ব, থৌবাল ও বিষ্ণুপুরে আজ বুধবার বিক্ষিপ্তভাবে প্রতিবাদ জানিয়েছেন পাঙ্গালরা। আইন কোনোভাবেই রাজ্যে বাস্তবায়ন করতে দেওয়া যাবে না বলে প্রতিবাদকারীরা জানান।
আবদুল সাতর নামের এক ব্যবসায়ী বলেন, ‘আমাদের এই আন্দোলনের পেছনে মেইতেই সমাজের বড় অংশ রয়েছে। যেহেতু মেইতেই সমাজ রাজ্যের প্রধান সম্প্রদায়, তাই সরকার আমাদের আবেগকে উপেক্ষা করলে আবারও বিপদে পড়বে।’
মঙ্গলবারও ওই জেলাগুলোতে বড় ধরনের বিক্ষোভ হয়। স্থানীয় প্রচারমাধ্যম জানিয়েছে, ৫ হাজার বিক্ষোভকারী পায়ে হেঁটে বিষ্ণুপুর জেলায় ঢোকেন। ইম্ফল পূর্ব জেলাতেও মানবশৃঙ্খল তৈরি করেন প্রতিবাদকারীরা। সেখানেও তাঁরা বলেন যে দীর্ঘ সহিংসতার পরে পরিস্থিতি কিছুটা শান্ত হয়েছে রাষ্ট্রপতি শাসন জারির পরে। পরিস্থিতি আবার অস্থিতিশীল হয়ে উঠতে পারে এবং এবারে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে যদি রাজ্যে আইন বাস্তবায়ন করা হয়। এর মধ্যে গত রবিবার বিজেপির সংখ্যালঘু মোর্চার সভাপতি এবং পাঙ্গাল সমাজের নেতা আস্কের আলীর বাড়িতে অগ্নিসংযোগ করে জনতা। এর কারণ তিনি বিজেপির নেতা হওয়ার জন্যই ওয়াক্ফ আইন সমর্থন করেছিলেন।
ইতিমধ্যে ন্যাশনাল পিপলস পার্টির এক এমএলএ শেখ নুরুল হাসান জানিয়েছেন, তিনি আইনটির বিরুদ্ধে কয়েক দিনের মধ্যে সুপ্রিম কোর্টে মামলা করবেন।
পশ্চিমবঙ্গে ওয়াক্ফ চালু হবে না: মমতা
কলকাতায় সংখ্যালঘু জৈন সম্প্রদায়ের অনুষ্ঠানে আজ বুধবার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, পাকা পয়েন্ট পশ্চিমবঙ্গে চালু হবে না। তিনি বলেন, ‘আমি সংখ্যালঘুদের বলছি যে আমি বুঝতে পারছি ওয়াক্ফ নিয়ে যা হয়েছে তাতে আপনাদের মনে কষ্ট হয়েছে। কিন্তু আপনারা ভরসা রাখুন। পশ্চিমবঙ্গে এ ধরনের কিছু হবে না। এভাবে সম্প্রদায়কে ভেঙে শাসন করার যে নীতি, তা পশ্চিমবঙ্গে বাস্তবায়িত হবে না। আপনারা সবাইকে এই বার্তা দিন যে সবাইকে একসঙ্গে থাকতে হবে এবং একসঙ্গে বাঁচতে হবে। নিজে বাঁচো এবং অপরকে বাঁচাও—এটাই এখানে নীতি। আপনারা উদ্বিগ্ন হবেন না।’
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই মন্তব্য এমন সময় সামনে এল, যখন প্রায় প্রতিদিনই পশ্চিমবঙ্গের কোথাও না কোথাও ওয়াক্ফবিরোধী জমায়েত হচ্ছে। ধীরে ধীরে তা ছড়িয়ে পড়ছে রাজ্যের সংখ্যালঘু এলাকায় এবং কিছু জায়গায় অশান্তিও শুরু হয়েছে। যেমন গতকালই মুর্শিদাবাদের জঙ্গিপুর, রঘুনাথগঞ্জ, সুতি প্রভৃতি এলাকায় পরিস্থিতি প্রবল উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। বিক্ষুব্ধ জনতা পুলিশের দুটি গাড়িতে আগুন লাগায় এবং পুলিশকে লক্ষ্য করে পাথর ছোড়ে বলে প্রশাসন জানিয়েছে।
অন্যদিকে স্থানীয় মানুষের বক্তব্য—শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভের ওপরে পুলিশ লাঠি চালায়। এর ফলে অন্তত ২৫ জন গুরুতর আহত হয়েছেন এবং সে কারণেই পুলিশের গাড়িতে অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। পরিস্থিতির গুরুত্ব বিবেচনা করে মুর্শিদাবাদের ওই অঞ্চলগুলোতে জমায়েতের ওপরে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। আজও সেই নিষেধাজ্ঞা রয়েছে।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
৭ উপাচার্যের অংশগ্রহণে গোবিপ্রবিতে শিক্ষা সমাপনী
গোপালগঞ্জ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (গোবিপ্রবি) নবম ব্যাচের (নবনীতক ৯) শিক্ষার্থীদের নিয়ে শিক্ষা সমাপনী-২০২৪ অনুষ্ঠিত হয়েছে। ২০১৯-২০ সেশনের শিক্ষার্থীদের বিদায় বেলায় এক মঞ্চে আসীন হন দেশের বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের খ্যাতিমান সাত উপাচার্য।
বুধবার (৩০ জুলাই) দুপুর ১২টায় একাডেমিক ভবন প্রাঙ্গণে আনন্দঘন পরিবেশে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. হোসেন উদ্দিন শেখর ছাড়াও অনুষ্ঠানে অতিথি ছিলেন, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. হায়দার আলী, খুলনা কৃষি বিশ্বিবদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. নাজমুল আহসান, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এম সরওয়ারউদ্দিন চৌধুরী, পিরোজপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মো. শহীদুল ইসলাম, পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এসএম আব্দুল আওয়াল, রাঙ্গামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আতিয়ার রহমান ও শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. মুসলেহ উদ্দিন তারেক।
আরো পড়ুন:
নতুনবাজারের সেই রনির বুলেটের যন্ত্রণা আজো থামেনি
শিশু ছাত্রীকে যৌন নির্যাতন, মাদ্রাসা শিক্ষকের বিরুদ্ধে মামলা
এক মঞ্চে একইসঙ্গে এতজন উপাচার্যকে পেয়ে সমাপনী ব্যাচসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছেন।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. হায়দার আলী বলেন, “এভাবে একসঙ্গে পুরো সেশনের শিক্ষা সমাপনী আয়োজনের আইডিয়াটি অত্যন্ত চমৎকার। এতে করে একটি ব্যাচের একইসঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে প্রবেশ ঘটে। যেখানে সবার একসঙ্গে পরীক্ষা হয়, রেজাল্ট প্রকাশ হয় এবং কোনো সেশন জট থাকে না। আমি এই আইডিয়াটি আমার নিজ বিশ্ববিদ্যালয়েও বাস্তবায়নের চেষ্টা করব।”
খুলনা কৃষি বিশ্বিবদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. নাজমুল আহসান বলেন, “আমরা বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যগণ এখানে এসেছি সংহতি জানানোর জন্য। আমি নবম ব্যাচের শিক্ষার্থীদের জীবনে সফলতা কামনা করছি।”
শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এম সরওয়ারউদ্দিন চৌধুরী বলেন, “শিক্ষার্থীদের বিসিএস দেওয়া, বিভিন্ন সেক্টরে কাজ করা বা ব্যবসা করার লক্ষ্য থাকে। তবে জীবনে কোনো না কোনো কিছু করতেই হবে। এক্ষেত্রে অবসর বলে কোনো শব্দ থাকা উচিত নয়।”
পিরোজপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মো. শহীদুল ইসলাম বলেন, “আমি যখন দেশের বাইরে পড়াশোনা করতাম, তখন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যকে আমি কখনোই দেখিনি। আর বাংলাদেশের কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের মঞ্চে কখনো একসঙ্গে সাতজন উপাচার্যকেও বসতে দেখিনি, এটা অধ্যাপক ড. হোসেন উদ্দিন শেখর করে দেখিয়েছেন।”
পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এস এম আব্দুল আওয়াল বলেন, “আমরা যদি আন্তর্জাতিক পরিপ্রেক্ষিতে চিন্তা করি, আমাদের চাকরি খোঁজার পাশাপাশি এমন কিছু করার মানসিকতা রাখতে হবে, যা দেশ ও জাতির জন্য কল্যাণ বয়ে আনবে।”
রাঙামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মো. আতিয়ার রহমান বলেন, “শিক্ষা সমাপনী মানেই সব সম্পর্ক ছিন্ন করা নয়। বিশ্বে এমন অনেক নজির আছে, যেখানে অ্যালামনাই থেকে উপাচার্য নিয়োগ হয়েছে। তাই নিজেকে বিস্তৃত পরিসরে মেলে ধরে বিশ্ববিদ্যালয়ের মুখ উজ্জ্বল করার দায়িত্ব নিতে হবে।”
শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. মুসলেহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, “নিজেকে চেনাই সবচেয়ে বড় শিক্ষা। আর শিক্ষার্থীদের কর্মজীবনই বলে দেবে, তারা বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে কতটা জ্ঞান অর্জন করেছে।”
প্রধান অতিথিরি বক্তব্যে উপাচার্য অধ্যাপক ড. হোসেন উদ্দিন শেখর আগত উপাচার্যদের কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বলেন, “শিক্ষার্থীদের অনুপ্রেরণা দেওয়ার জন্যই আমাদের এই প্রয়াস। একইসঙ্গে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাবমূর্তি তুলে ধরাও আমাদের লক্ষ্য। আমরা জানিয়ে দিতে চাই, গোপালগঞ্জ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে চায় এবং অচিরে দাঁড়াবেই।”
তিনি বলেন, “আমরা ইতোমধ্যে ইউজিসির দুইটি হিট প্রকল্প পেয়েছি এবং ভবিষ্যতে আরো পাব। আমরা আশা করছি, বি ক্যাটাগরি থেকে আগামী অর্থবছরের আগেই আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়টি এ ক্যাটাগরিতে উন্নীত হবে।”
গোবিপ্রবির উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. সোহেল হাসানের সভাপতিত্বে এতে কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ নাজমুল আহসানসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার, প্রক্টর, ছাত্র পরামর্শ ও নির্দেশনা দপ্তরের পরিচালক, সব অনুষদের ডিন, বিভাগীয় সভাপতি ও প্রাধ্যক্ষগণ, দপ্তর প্রধানগণ, বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে, জুলাই শহিদদের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালনের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠান শুরু করা হয়।
শিক্ষা সমাপনী উপলক্ষে বুধবার ছাত্রদের কালার ফেস্ট ও সাংস্কৃতিক সন্ধ্যা এবং আগামীকাল বৃহস্পতিবার (৩১ জুলাই) সন্ধ্যায় একটি কনসার্টের আয়োজন করা হয়েছে।
ঢাকা/রিশাদ/মেহেদী