দৈনিক ৫ হাজার কদম হাঁটলে বিষণ্নতাও কমে
Published: 10th, April 2025 GMT
হাঁটা কেবল এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় যাওয়া নয়; বরং শারীরিক সুস্থতা, স্থূলতা থেকে মুক্তি, ডায়াবেটিস ব্যবস্থাপনা ও সুনিদ্রার সঙ্গে হাঁটার একটি সহায়ক সম্পৃক্ততা আছে।
নতুন এক গবেষণায় দেখা গেছে, হাঁটলে মেজাজ ভালো থাকে। প্রতিদিন যাঁরা কমপক্ষে ৭ হাজার ৫০০ কদম হাঁটেন, তাঁদের মধ্যে বিষণ্নতার লক্ষণগুলো ৪২ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে। এর তাৎপর্য হলো হাঁটাচলা বাড়লে বিষণ্নতা উল্লেখযোগ্য পরিমাণে কমে যায়। এ ছাড়া নিয়ম করে হাঁটা হতাশাগ্রস্ত হওয়ার ঝুঁকিও কমাতে পারে।
হাঁটা বিষণ্নতার লক্ষণ কমাতে সাহায্য করে
কতটা হাঁটছেন এটা যেমন গুরুত্বপূর্ণ, তেমনি কোথায় ও কোন পরিবেশে হাঁটছেন, তা-ও গুরুত্বপূর্ণ। প্রকৃতির সংস্পর্শ মন ও মেজাজ উন্নত করতে বেশি সাহায্য করে। তাই সবুজের সান্নিধ্যে, পার্কে, নদী বা সমুদ্রের ধারে হাঁটা আরও ভালো।
সবচেয়ে ভালো দিক হলো, হাঁটা এমন এক ব্যায়াম, যা বেশির ভাগ মানুষ নিরাপদে করতে পারেন। এ জন্য কোনো যন্ত্রপাতি, বিশেষ সরঞ্জাম ও ব্যায়ামাগারের সদস্য হতে হয় না। ফলে যে কেউ নিয়ম করে হাঁটতে পারেন। হাঁটলে এনডোরফিনসহ নানা ধরনের সুখের হরমোন নিঃসরণ বৃদ্ধি পায়, যা আমাদের মন-মেজাজ ভালো করে।
প্রথমে ছোট লক্ষ্য নিয়ে শুরু করা ভালো। এখন করতে পারবেন এমন লক্ষ্য নিন। যেমন দিনে ১ থেকে ২ হাজার কদম। যখন মনে হবে আপনি প্রস্তুত, তখন ৫০০ কদম করে বাড়াবেন। হাঁটার পরিমাণ বাড়াতে কিছু কাজ করতে পারেন। লিফটের পরিবর্তে সিঁড়ি বেয়ে উঠতে পারেন। হাঁটতে পারেন খাবারের পর। দোকান থেকে দূরে গাড়ি পার্কিং করা ও বাজারে হেঁটে যাওয়ার মতো কাজও করতে পারেন।
হাঁটা মানুষের মেজাজ উন্নত করতে পারে। যাঁরা বিষণ্নতায় ভুগছেন, তাঁরা অ্যান্টি ডিপ্রেসেন্ট ও সাইকোথেরাপির সঙ্গে হাঁটার মতো আচরণগত স্বাস্থ্য পদ্ধতি চর্চা করলে সর্বোত্তম ফল পেতে পারেন।
মনে রাখুন
দিনে ৫ হাজার বা এর বেশি কদম হাঁটার ফলে হতাশার লক্ষণ কমার প্রমাণ পাওয়া গেছে। যাঁরা দিনে কমপক্ষে ৭ হাজার ৫০০ কদম হাঁটেন, তাঁদের আরও বেশি সুবিধা পেতে দেখা গেছে। যেমন এই পরিমাণ যাঁরা হেঁটেছেন, দেখা গেছে তাঁদের বিষণ্নতা ৪২ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে। হাঁটার পরিমাণ দিনে ১ হাজার কদমের মতো বাড়ালে বিষণ্নতার ঝুঁকি অনেকটাই কমে যায়।
ডা.
শাহজাদা সেলিম, সহযোগী অধ্যাপক, এন্ডোক্রাইনোলজি বিভাগ, বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা (সাবেক বিএসএমএমইউ)
উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
মার্জিন ঋণ নিতে বিনিয়োগ লাগবে কমপক্ষে ১০ লাখ টাকা
পুঁজিবাজারের বিনিয়োগকারীদের মার্জিন ঋণ নিতে হলে বিনিয়োগ থাকতে হবে কমপক্ষে ১০ লাখ টাকা। এছাড়া থাকতে হবে নিয়মিত আয়ের উৎস। আর বিনিয়োগের ৬ মাসের আগে ঋণ পাবে না কোনো বিনিয়োগকারী। একইসঙ্গে মিউচুয়াল ফান্ড এবং কোম্পানির হিসাবেও মার্জিন ঋণ দেওয়া হবে না। চূড়ান্ত মার্জিন ঋণ নীতিমালায় এসব সুপারিশ করেছে পুঁজিবাজার সংস্কারে গঠিত টাস্কফোর্স কমিটি।
সোমবার (২৮ এপ্রিল) আগারগাঁওয়ে সিকিউরিটিজ কমিশন ভবনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে মার্জিন রুলস- ১৯৯৯ যুগোপযোগী করার চূড়ান্ত সুপারিশ প্রসঙ্গে এসব তথ্য তুলে ধরেন পুঁজিবাজার টাস্কফোর্সের সদস্যরা।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন পুঁজিবাজার সংস্কার টাস্কফোর্সের সদস্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ হেলাল উদ্দীন, হুদা ভাসি চৌধুরী অ্যান্ড কোং এর সিনিয়র পার্টনার এ এফ এম নেসার উদ্দীন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাউন্টিং ইনফরমেশন সিস্টেম বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আল-আমিন এবং পুঁজিবাজার সংস্কার ফোকাস গ্রুপের সদস্য প্রাইম ব্যাংক সিকিউরিটিজ লিমিটেডের এমডি এবং সিইও মো. মনিরুজ্জামান।
টাস্কফোর্সের সদস্যরা বলেন, পুঁজিবাজার অংশীজনদের সাথে আলোচনা করেই সুপারিশ চূড়ান্ত করেছে টাস্কফোর্স। পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্তির পর ৩ মাসের আগে মার্জিন ঋণ না দেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে। সুপারিশ বাস্তবায়ন হলে, মার্জিন নিয়ে শেয়ারবাজারে কারসাজি বন্ধ হবে। মার্জিন ঋণ নিয়ে সুশাসন না থাকায় বিপুল অংকের নেগেটিভ ইক্যুইটি সৃষ্টি হয়েছে। যার কারণে বিনিয়োগকারীর পাশপাশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং পুঁজিবাজার। মিথ্যা তথ্য দিয়ে এবং মার্জিন খারাপ কোম্পানির শেয়ার নিয়ে কারসাজি করা হয়েছে। যে কারণে অনেক বিনিয়োগকারী নিঃস্ব হয়ে গেছে। বিনিয়োগকারীদের সুরক্ষা এবং সুশাসন প্রতিষ্ঠা টাস্কফোর্সের মূল্য উদ্দেশ্য।
এ সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ হেলাল উদ্দীন বলেন, অনেক স্টেকহোল্ডার দাবি করছেন তাদের সাথে বসা হয়নি। অথচ আমরা দেখলাম তাদের সাথে আমরা ৩ বারও বসে ফেলেছি। তবে কেন এরকম মিস কমিউনিকেশন। আমরা অংশীজনদের বাহিরেও যারা বাজার সম্পর্কে অভিজ্ঞ তাদের সাথেও আমরা বসেছি। এরপরেও যদি মনে হয় আমরা কিছু বাদ দিয়েছি বা গ্যাপ ছিল, সে বিষয়ে সুনির্দিষ্ট করে জানালে তা আমরা যুক্ত করে দিব। তবে অংশীজনদের থেকে বেশি আমরা সাধারণ মানুষদের থেকে অনেক কিছু পেয়েছি।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাউন্টিং ইনফরমেশন সিস্টেম বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আল-আমিন বলেন, প্রতিদিন পত্র-পত্রিকায় লেখা হচ্ছে নেগেটিভ ইক্যুইটি নিয়ে। যার কারণ বাজার অচল অবস্থায় চলে গেছে। সে অবস্থাটাকে মাথায় রেখে আমরা চিন্তা করেছি, এর অন্যতম কারণ হলো মার্জিন রুলস। কারণ মার্জিন রুলসটা যদি প্ল্যান করে দেওয়া হতো, গভর্নেন্সটা যদি সঠিক থাকতো, তাহলে এ ধরনের অবস্থা তৈরি নাও হতে পারতো। তাই মার্জিন রুলসকে আমরা টপ প্রায়োরিটি আইটেম ধরেছি। পৃথিবীতে মার্জিন রুলসকে শর্টটার্ম ওয়ে হিসেবে নেওয়া হয়। কোথাও কোথাও ১:৩/৪ রেশিওতে মার্জিন ঋণ দেওয়া হচ্ছে৷ এগুলা কিভাবে হয়েছে? এরপর বাজারে নেগেটিভ ইক্যুইটি ক্রিয়েট হয়েছে। আমরা চাচ্ছি এই জিনিসগুলোর যেন পুনরাবৃত্তি বাজারে না হয়। মার্জিন নিয়ে আর গ্যামব্লিং করা যাবেনা। মার্জিন নিয়ে প্রতিষ্ঠানগুলোকে শেষ করে দেয়া হয়েছে। এতো পরিমাণ নেগেটিভ ইক্যুইটি না থাকলে বাজারের আজ এই পরিস্থিতি হতো না।
হুদা ভাসি চৌধুরী অ্যান্ড কোং এর সিনিয়র পার্টনার এ এফ এম নেসার উদ্দীন বলেন, আমাদের কাজে সহযোগিতা করেছে ফোকাস গ্রুপ। মূল কাজ করেছে টাস্কফোর্স। আমরা কাজ করতে যেয়ে পাবলিকের কাছ থেকে অনেক পরামর্শ পেয়েছি। স্টেকহোল্ডারদের কাছ থেকেও পেয়েছি, তবে পাবলিক থেকে পরামর্শ বেশি এসেছে। এটা খুব ভালো বিষয়। কারণ যত বেশি পরামর্শ আসবে, আমরা তত বেশি রিফাইন করার সুযোগ পাব।
সংবাদ সম্মেলনে একটি উপস্থাপনায় পুঁজিবাজার সংস্কার ফোকাস গ্রুপের সদস্য প্রাইম ব্যাংক সিকিউরিটিজ লিমিটেডের এমডি এবং সিইও মো. মনিরুজ্জামান বলেন, আজকে আমার খুবই ভালো লাগছে যে, এই প্রথম বাংলাদেশে আইনি ফরমেশন করতে যাচ্ছি, যেখানে ব্রেইন স্টর্মিং ড্রাফটিং হয়েছে গ্রাউন্ড লেভেল থেকে। এ মার্কেটে যারা কাজ করেন, তাদের আইডিয়াগুলো নিয়েই ড্রাফট করা হয়েছে। এ বিষয়ে আমরা বিএসইসির ওয়ার্কিং টিমের সঙ্গে আলোচনা করেছিলাম। এছাড়া মার্কেটের বড় বড় স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে আলোচনা করে তাদের কাছ থেকে লিখিত প্রস্তাব নিয়ে মার্জিন রুলস- ১৯৯৯ যুগোপযোগী করার চূড়ান্ত সুপারিশ তৈরি করেছি।
এর আগে গত বছরের ৭ অক্টোবর বিএসইসির চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদ স্বাক্ষরিত আদেশে ‘পুঁজিবাজার সংস্কার টাস্কফোর্স’ গঠন করা হয়। গঠিত টাস্কফোর্সের সদস্যরা হলেন- ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ হেলাল উদ্দীন, ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ পিএলসির সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক কে এ এম মাজেদুর রহমান, হুদা ভাসি চৌধুরী অ্যান্ড কোং এর সিনিয়র পার্টনার এ এফ এম নেসার উদ্দীন, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের সিএসই বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. মোস্তফা আকবর এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাউন্টিং ইনফরমেশন সিস্টেম বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আল-আমিন।
ঢাকা/এনটি/ফিরোজ