ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে (ডিপিএল) টাকা না পাওয়ার অভিযোগ নতুন নয়। ব্রাদার্স ইউনিয়নের বিরুদ্ধে বিগত কয়েক বছরে সম্মানী না দেওয়ার অভিযোগে ক্রিকেটাররা লিখিত দিয়েছেন বিসিবিকে। এবারও বিসিবিতে জমা হলো বকেয়া না পাওয়ার লিখিত অভিযোগ। গতকাল পারটেক্স স্পোর্টিং ক্লাবের ১৫ ক্রিকেটাররা বকেয়া সম্মানী আদায়ে বিসিবির সহযোগিতা চেয়ে চিঠি দিয়েছেন।
বিসিবি সিইও নিজামউদ্দিন চৌধুরী বরাবর লেখা চিঠির অনুলিপি সভাপতি ফারুক আহমেদ ও ক্রিকেট কমিটি অব ঢাকা মেট্রোপলিশকে (সিসিডিএম) দেন তারা। বকেয়া টাকার পরিমাণ উল্লেখ নেই চিঠিতে। এদিকে ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদ হোসেন ক্রিকেটারদের অভিযোগকে ভিত্তিহীন বলে উড়িয়ে দেন। তিনি বলেন, বেশির ভাগ ক্রিকেটারকে চুক্তির ৬০ ভাগ সম্মানী পরিশোধ করা হয়েছে। বাকি টাকাও যথাসময়ে দেওয়া হবে বলে জানান তিনি।
লিগের দশম রাউন্ডে গাজী গ্রুপ ক্রিকেটার্সের বিপক্ষে বিকেএসপি মাঠে পারটেক্সের ম্যাচ আজ। গতকাল মিরপুর একাডেমি মাঠে ছিল অনুশীলন। কিন্তু অনুশীলন বয়কট করে ক্রিকেটাররা প্রাপ্য সম্মানীর দাবিতে একাট্টা হয়ে বিসিবিতে লিখিত দেন। চিঠিতে লেখা হয়েছে, ‘পারটেক্স স্পোর্টিং ক্লাব চুক্তি মোতাবেক পেমেন্ট করেনি। টাকা না পাওয়ায় ক্রিকেটাররা মানসিকভাবে বিপর্যস্ত।’ নাম প্রকাশ না করার শর্তে পারটেক্সের এক ক্রিকেটার সমকালকে বলেন, ‘এবার লিগে খুব কম সম্মানীতে খেলছে সবাই। দেড়-দুই লাখ টাকা চুক্তি। সিনিয়ররাও পাঁচ-সাত লাখ টাকায় খেলছে। খেলোয়াড়দের অনুশীলন বয়কট ও বিসিবিতে লিখিত দেওয়ার কারণ হলো, ঈদের আগে সাজ্জাদ ভাই সবার অ্যাকাউন্ট নম্বর নিয়ে টাকা দেননি। দিনের পর দিন ফোন করলেও ফোন ধরেননি তিনি।’
ক্রিকেটারদের সব অভিযোগই অস্বীকার করেন সাজ্জাদ। গ্রুপ ফোনে আহরার আমিন পিয়ানকে সংযুক্ত করে সম্মানী পরিশোধ করার বিষয়টি পরিষ্কার করার চেষ্টা করেন তিনি। পিয়ান কত টাকা পেয়েছেন– জানতে চওয়া হলে তিনি বলেন, ৬৫ শতাংশ টাকা পেয়েছেন। আলাউদ্দিন বাবু পেয়েছেন পুরো টাকা। বাকি ১৪ জনের মধ্যে দু’জন মোহর শেখ অন্তর আর জয়রাজ শেখকে অর্ধেক (৫০ শতাংশ) টাকা দেওয়া হয়েছে বলে দাবি কর্মকর্তার। টাকা পাওয়ার পরও কেন বকেয়ার দাবিতে স্বাক্ষর করেছেন– সাজ্জাদ জানতে চাইলে পিয়ান বলেন, ‘স্যার, আমি তো দলের সিদ্ধান্তের বাইরে যেতে পারি না। সবার সঙ্গে না থাকলে সমস্যা, তাই সাইন করেছি।’
সম্মানী পরিশোধের ভাউচার সিসিডিএম সমন্বয়ক সাব্বিরকে পাঠিয়েছেন সাজ্জাদ। সিসিডিএম কর্মকর্তা সাব্বির বলেন, ‘মানি রিসিট পেয়েছি। এখন ক্রিকেটারদের কাছে চুক্তিপত্র চাইব। চুক্তিপত্রের সঙ্গে ভাউচার মিলিয়ে দেখে বাকি পদক্ষেপ।’
বাস্তবতা হলো, পারটেক্স কোনো ক্রিকেটারেরই চুক্তিপত্র নেই। ক্লাবের সঙ্গে মৌখিক চুক্তি করেছেন তারা। ট্যাক্স ফাঁকি দিতে গিয়ে নিজেরাই ফাঁকিতে পড়ে যাচ্ছেন না তো– জানতে চাওয়া হলে একজন ক্রিকেটার বলেন, ‘আমরা তো এভাবেই ঢাকা লিগে খেলে অভ্যস্ত।’
এমনিতেই লিগে ভালো করতে পারেনি পারটেক্স। তার ওপর সাব্বির রহমানের ব্যাটিং অ্যাপ্রোচ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন কোচ আনোয়ার মুস্তাকিম টরে। ব্রাদার্সের বিপক্ষে ৫০ বল খেলা সাব্বিরের ১৮ রান করা সন্দেহজনক মনে হয়েছে কোচের কাছে। মুক্তার আলি লিগের ম্যাচ না খেলে অসুস্থতার কথা বলে খেলতে গিয়েছিলেন ভারতের লিজেন্ডস লিগে। খেলোয়াড় ক্লাবের এই টানাপোড়েনের ভেতরেই সম্মানী না পাওয়ার অভিযোগ বিসিবিতে।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ড প এল
এছাড়াও পড়ুন:
আফ্রিদি-জয় শাহর ভাইরাল ভিডিওটি এশিয়া কাপের নয়
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি ভিডিও ভাসছে। স্টেডিয়ামে বিশেষ অতিথিদের গ্যালারিতে পাশাপাশি বসে বর্তমান আইসিসি চেয়ারম্যান জয় শাহ এবং পাকিস্তানের সাবেক অধিনায়ক ও অলরাউন্ডার শহীদ আফ্রিদি। বেশ হাসিমুখে কথা বলছেন দুজন। জয় শাহর পাশেই বসে পিসিবি চেয়ারম্যান মহসিন নাকভি। মাঝে একটি আসন দূরে বসে বিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি ও ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) সংসদ সদস্য অনুরাগ ঠাকুর। তিনিও জয় শাহ ও আফ্রিদির সঙ্গে বেশ হাসিমুখে কথা বলছিলেন।
আরও পড়ুনবাংলাদেশ এশিয়া কাপে কয়েকবারের ‘চ্যাম্পিয়ন’, ভেবেছিলেন আফগানিস্তান কোচ১০ ঘণ্টা আগেদুবাইয়ে গত পরশু ভারত–পাকিস্তান ম্যাচ ঘিরে এ ভিডিও ছড়িয়ে পড়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। অনেকেই দাবি করেন, এই ভিডিও চলমান এশিয়া কাপে ভারত–পাকিস্তান ম্যাচের। সমালোচনা করে অনেকেই বলেন, ভারতে যেখানে পাকিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচটি বয়কটের দাবি উঠেছে, সেখানে তাঁদের মধ্যে এত হৃদ্যতা আসে কোত্থেকে? একজন ফেসবুক ব্যবহারকারী ভিডিওটি শেয়ার করে ক্যাপশনে লেখেন, ‘পেহেলগামে সন্ত্রাসী হামলার পর জনতার ক্ষোভের মধ্যেই এশিয়া কাপে ভারত–পাকিস্তান ম্যাচে জয় শাহ ও অনুরাগ ঠাকুরকে শহীদ আফ্রিদির সঙ্গে দেখা যাচ্ছে। গোটা দেশ যখন ম্যাচটি বয়কটের ডাক দিয়েছে, তখন বিজেপির নেতা অনুরাগ ঠাকুর ও জয় শাহ শহীদ আফ্রিদি ও মহসিন নাকভির সঙ্গে মজা করছেন ও সময়টা উপভোগ করছেন।’
ভিডিওটির সত্যতা পরীক্ষা করে ভারতের সংবাদমাধ্যম ‘ইন্ডিয়া টুডে’ জানিয়েছে, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া এই ভিডিও গত পরশু ভারত–পাকিস্তান ম্যাচের নয়। এটি গত ২৩ ফেব্রুয়ারির ভিডিও। তখন দুবাইয়ে চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে ভারতের মুখোমুখি হয়েছিল পাকিস্তান। সেই ম্যাচের এই ভিডিও নতুন করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার পর অনেকেই এটাকে গত পরশুর ম্যাচের ভেবে ভুল করেছেন। ভারত–নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের পেহেলগামে পর্যটকদের ওপর বন্দুকধারীদের হামলায় ২৬ জন নিহত হওয়ার মর্মান্তিক ঘটনা ঘটে গত ২২ এপ্রিল। অর্থাৎ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া এই ভিডিও পেহেলগামে সন্ত্রাসী হামলা হওয়ার আগে।
আরও পড়ুনকেন পাকিস্তানের এমন হার—ব্যাখ্যা দিলেন আকরাম, আফ্রিদি ও গাভাস্কার১০ ঘণ্টা আগেভিডিওটি আরেকটু ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করলে দেখা যায় মাঠের হোর্ডিংয়ে ‘চ্যাম্পিয়নস ট্রফি ২০২৫’ লেখা। পাশাপাশি গত ২৪ ফেব্রুয়ারি এক ‘এক্স’ ব্যবহারকারী একই ভিডিও শেয়ার দিয়ে ক্যাপশনে লেখেন, ‘দুবাই স্টেডিয়ামে শহীদ আফ্রিদি ও জয় শাহ একসঙ্গে ভারত–পাকিস্তান ম্যাচ দেখছেন।’ ক্যাপশনের নিচে হ্যাশট্যাগ দিয়ে ভারত–পাকিস্তান ও চ্যাম্পিয়নস ট্রফি লেখা। গত ফেব্রুয়ারি–মার্চে অনুষ্ঠিত চ্যাম্পিয়নস ট্রফির সূচিতেও দেখা যাচ্ছে, দুবাইয়ে গত ২৩ ফেব্রুয়ারি গ্রুপ পর্বের ম্যাচে মুখোমুখি হয়েছিল ভারত ও পাকিস্তান। ম্যাচে ৬ উইকেটে জেতে ভারত।
এশিয়া কাপে গত রোববার (১৪ সেপ্টেম্বর) দুবাইয়ে পাকিস্তানের বিপক্ষে ৭ উইকেটের সহজ জয় পায় ভারত। পেহেলগামে সন্ত্রাসী হামলার পর পাকিস্তানের বিপক্ষে এই ম্যাচ বয়কটের দাবি তুলেছিলেন ভারতের সাবেক ক্রিকেটাররাই। দেশটির সাবেক অফ স্পিনার হরভজন সিং ও সাবেক ক্রিকেটার কেদার যাদবরা এই ম্যাচ বয়কটের আহ্বান জানান। কিছুদিন আগে শেষ হওয়া ওয়ার্ল্ড চ্যাম্পিয়নশিপ অব লেজেন্ডস (ডব্লুসিএল) টুর্নামেন্টে গ্রুপ পর্ব ও সেমিফাইনালে পাকিস্তানের মুখোমুখি হতে অস্বীকৃতি জানায় ভারত। এর পর থেকে এশিয়া কাপের ম্যাচটি বয়কটের ক্যাম্পেইন আরও বেশি করে শুরু হয় ভারতে। এমনকি ম্যাচটি বাতিলে পাবলিক ইন্টারেস্ট লিটিগেশন (পিআইএল) আবেদন করা হয়েছিল ভারতের সুপ্রিম কোর্টে। যদিও জরুরি ভিত্তিতে তা শুনানির জন্য রাজি হননি আদালত।