এবার আইসিবি ইসলামিক ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ ভেঙে দিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ব্যাংকটিতে ইতিমধ্যে নিয়োগ দেওয়া প্রশাসককে পর্ষদ ও ব্যবস্থাপনার পরিচালকের ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। গত ডিসেম্বরে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক মজিবুর রহমানকে এমডি পদমর্যাদায় প্রশাসক নিয়োগ দেওয়া হয়।

গভর্নর স্বাক্ষরিত আদেশে বলা হয়েছে, আইসিবি ইসলামিক ব্যাংকের ব্যবস্থাপনাগত ও পরিচালনা পর্ষদের দুর্বলতার কারণে বিপুল পরিমাণের মূলধন ও প্রভিশন ঘাটতি তৈরি হয়েছে। বিপুল অঙ্কের শ্রেণিকৃত বিনিয়োগ, বড় অঙ্কের পুঞ্জিভূত লোকসান, ব্যবস্থাপনায় চরম অস্থিরতা ও প্রবল তারল্য সঙ্কট তৈরি হয়েছে। ব্যাংকের আর্থিক অবস্থার অবনতি, ব্যাংকিং সুশাসন ও শৃঙ্খলা বিঘ্ন করার মাধ্যমে আমানতকারীদের স্বার্থের পরিপন্থি কাজে পর্ষদ সম্পৃক্ত থাকায় জনস্বার্থে বিদ্যমান পর্ষদ বাতিল করা হলো।

অপর এক আদেশের মাধ্যমে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক মো.

মজিবুর রহমানকে একই সঙ্গে পরিচালনা পর্ষদ ও ব্যবস্থাপনা পরিচালকের ক্ষমতা প্রয়োগ এবং দায়িত্ব পালন করতে বলা হয়েছে।

আইসিবি ইসলামিক ব্যাংক ১৯৮৭ সালে আল-বারাকা ব্যাংক নামে বাংলাদেশে কার্যক্রম শুরু করে। ২০০৪ সালে ওরিয়ন গ্রুপ মালিকানায় এসে এর নাম দেয় ওরিয়েন্টাল ব্যাংক। ওই সময় ব্যাংকটিতে বড় ধরনের অনিয়ম ঘটায় বাংলাদেশ ব্যাংক ২০০৬ সালে প্রশাসক বসায় এবং ওরিয়েন্টাল ব্যাংক পুনর্গঠন করে আইসিবি ইসলামী ব্যাংক নামকরণ করা হয়। মালিকানায় আসে মালয়েশিয়া ভিত্তিক আইসিবি গ্রুপ। 

২০১৩ সাল থেকে ২০২৪ সালের নভেম্বর পর্যন্ত ব্যাংকটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ছিলেন মালয়েশিয়ার নাগরিক শফিক বিন আব্দুল্লাহ। তার সময়ে ব্যাংকটিতে নতুন করে বিভিন্ন জালিয়াতির তথ্য পেয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ব্যাংকটির কর্মকর্তাদের আন্দোলনের মুখে তিনি ব্যাংক ছাড়তে বাধ্য হন এবং মালয়েশিয়া চলে যান। গত ডিসেম্বরে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক মজিবুর রহমানকে প্রশাসক নিয়োগ দেওয়া হয়।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: আইস ব ইসল ম

এছাড়াও পড়ুন:

গোপালগঞ্জে সহিংসতার ঘটনায় গত চার দিনে ১২ শিশুর জামিন নামঞ্জুর

গোপালগঞ্জে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) পথসভাকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষের ঘটনায় গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের মধ্যে ১৮ জন শিশু রয়েছে। এর মধ্যে গত চার দিনে ১২ শিশুর জামিন আবেদন নামঞ্জুর করেছেন আদালত।

গতকাল বৃহস্পতিবার সাত শিশুর জামিন আবেদনের শুনানি হয়। গোপালগঞ্জ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক (জেলা ও দায়রা জজ) সৈয়দ আরাফাত হোসেন তাদের জামিন আবেদন নামঞ্জুর করেন। এর আগে সোম ও মঙ্গলবার পাঁচ শিশুর জামিন আবেদন করা হয়। তাদের জামিন নামঞ্জুর করা হয়। ওই পাঁচজনের জামিন আবেদন করা হয়েছিল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে।

কারাগার সূত্র জানায়, গত ১৬ জুলাই সংঘর্ষের পর ১৭ ও ১৮ জুলাই জেলার বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে ১৮ শিশুকে আটক করে পুলিশ। ১৮ জুলাই তাদের আদালতে হাজির করে গোপালগঞ্জ জেলা কারাগারে পাঠানো হয়। পরে ২১ জুলাই তাদের যশোরের পুলেরহাট শিশু-কিশোর উন্নয়ন কেন্দ্রে পাঠানো হয়।

আদালতের নথি অনুযায়ী, গ্রেপ্তার হওয়া শিশুদের বয়স, ঠিকানা পরিষ্কারভাবে উল্লেখ নেই। তবে গতকাল পর্যন্ত ১২ শিশুর নাম ও পরিচয় শনাক্ত হয়েছে। প্রথম আলোর পক্ষ থেকে চার পরিবারের সঙ্গে কথা বলা হয়েছে। অভিভাবকদের অভিযোগ, তাদের সন্তানদের কোনো ধরনের তদন্ত ছাড়াই আটক করা হয়েছে।

আরও পড়ুনগ্রেপ্তার হওয়া শিশুদের বিষয়ে তদন্ত কমিটি গঠনের নির্দেশ২৭ জুলাই ২০২৫

একজন শিশুর বাবা বলেন, ‘সংসারে অভাব–অনটন, নিজেরাই সংসার চালাইতে পারি না। আমার কষ্ট দেখে ছেলে রাজমিস্ত্রির কাজে যোগ দেয়। সে গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার রমজান শেখ নামের একটা রাজমিস্ত্রির সহকারী হিসেবে কাজ করে। কাজের সময় পুলিশ তাদের ধরে নিয়ে যায়।’

আরেক শিশুর ভ্যানচালক বাবা বলেন, ‘আমরা গরিব মানুষ, কোথাও কোনো কাইজের মধ্যে নেই। তিনডা ছেলে, বড়টা একটা মাদ্রাসার শিক্ষক। ছোট দুইডা এখনো পড়ে। যারে ধরছে, সে সবার ছোট। ওই দিন সকালে আমার মাদ্রাসায় গেছে, পরীক্ষা ছিল। পরে দুপুরের আগে আমি নিজে যাইয়ে নিয়ে আসছি। সেদিন বাড়িতেই ছিল। পরের দিনও সারা দিন বাড়ি ছিল, সেদিন তো কারফিউ ছিল। আসরের নামাজের পর আমার কাছ থেকে ২০ টাকা নিয়ে গেছে চটপটি খাইতে। পাশে মাদ্রাসার সামনেই চটপটির দোকান বসে। সেই হান দে ওরে ধইরে নিছে।’

ওই ব্যক্তি আরও বলেন, ‘ধরার ঘণ্টাখানেক পর থানা থেইকা ফোন দিছে, কয় ছেলে ধরা হইছে। আমরা থানায় গিয়া অনেক কইছি, ও তো কোথাও যায় না, কোনো গ্যাঞ্জামের ছেলে না। মাদ্রাসায় পড়ে। কিন্তু কেউ কিছুই শুনল না। ছেলেরে ছাড়ায় আনতে অনেক জায়গায় দৌড়াইছি।’ তিনি জানান, এ ঘটনার পর থেকে তাঁদের প্রায় ২০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে।

এ ছাড়া জামিনের আশ্বাস দিয়ে কয়েকজন লোক তাদের কাছ থেকে টাকা নিয়েছে বলেও অভিযোগ করেন একজন অভিভাবক।

আরও পড়ুনগোপালগঞ্জে এনসিপির সমাবেশে হামলার ঘটনায় আরও একটি মামলা, আসামি ৪৭৭ জন৩১ জুলাই ২০২৫

গ্রেপ্তার এক শিশুর আইনজীবী ফিরোজা বেগম বলেন, ১৬ জুলাই সহিংসতার ঘটনায় সন্ত্রাসবিরোধী আইনের মামলায় এই শিশুকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। ফৌজদারি কার্যবিধির ১৭৩ ধারায় দ্রুত তদন্ত করে নির্দোষ প্রমাণিত হলে তাকে মামলা থেকে অব্যাহতি দেওয়ার সুযোগ রয়েছে।

এ বিষয়ে সরকারি কৌঁসুলি তৌফিকুল ইসলাম বলেন, শিশুরা অল্প সময় আগে গ্রেপ্তার হয়েছে, এখনো তদন্ত চলছে। তাই হয়তো বিচারক জামিন নামঞ্জুর করেছেন। এ মামলায় এখনো কারও জামিন হয়নি।

আরও পড়ুনগোপালগঞ্জে সংঘাতের ইঙ্গিত ছিল স্পষ্ট, নিরাপত্তা প্রস্তুতি নিয়ে প্রশ্ন ১৮ জুলাই ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ