শেষ পর্যন্ত মোকাররমকে বেওয়ারিশ হিসেবে দাফন করতে হয়নি
Published: 10th, April 2025 GMT
‘মোকাররম কাকাকে বেওয়ারিশ হিসেবে দাফন করতে হয়নি। আল্লাহ তাঁর জন্য সুন্দর এক বিদায় লিখে রেখেছিলেন। দিনাজপুরে নিজ বাড়িতে তাঁকে দাফন করেছেন পরিবারের সদস্যরা।’
কথাগুলো বলছিলেন মো. আরিফুর রহমান। তিনি ‘রাশমনা আপন ঘর বৃদ্ধাশ্রম’ ও ‘ভালো কাজের হোটেল’-এর প্রতিষ্ঠাতা। তাঁর বৃদ্ধাশ্রমেই ছিলেন মোকাররম। তাঁর পুরো নাম মোকাররম হোসেন (৭০)।
বৃদ্ধাশ্রমে থাকা অবস্থায় অসুস্থ হয়ে পড়লে মোকাররমকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত শনিবার (৫ এপ্রিল) মারা যান তিনি।
রাজধানীর মেরুল বাড্ডায় আরিফুরের বৃদ্ধাশ্রমটি অবস্থিত। গত বছরের ডিসেম্বরে মোকাররমকে সেখানে আনা হয়েছিল। এর পর থেকে তিনি এখানেই ছিলেন।
বৃদ্ধাশ্রমে আনার পর মোকাররম শুধু দিনাজপুরে নিজের গ্রামের নামটি বলেছিলেন বলে জানান আরিফুর। তিনি বলেন, এর বাইরে মোকাররম আর কোনো তথ্য জানাননি। পরিবারে কে কে আছেন, কী তাঁদের নাম-পরিচয় বা ঠিকানা, কেন তিনি বাড়ি ছেড়েছেন—মোকাররম জীবিত থাকা অবস্থায় এসব তথ্য জানাতে চাননি। এসব তথ্য না জানায় মোকাররম মারা যাওয়ার পর তাঁর লাশ বেওয়ারিশ হিসেবে দাফনের পরিস্থিতি তৈরি হয়।
আরিফুর বলেন, লাশটি বেওয়ারিশ হিসেবে দাফনে মন সায় দিচ্ছিল না তাঁর। তা ছাড়া বেওয়ারিশ হিসেবে লাশ দাফনের ক্ষেত্রে আইনিসহ নানা ঝামেলা আছে। তাই লাশটি ফ্রিজিং গাড়িতে রেখেই ফেসবুকে পোস্ট দেওয়াসহ দিনাজপুরের সংশ্লিষ্ট এলাকায় খোঁজখবর নেওয়া শুরু করেন তিনি। এতে সফলও হন। শেষ পর্যন্ত মোকাররমের দ্বিতীয় ছেলে ও ভাইয়ের ছেলে এসে লাশটি নিয়ে বাড়িতে দাফন করেন।
আরও পড়ুনআমাদের বৃদ্ধাশ্রমগুলো এমন কেন হবে২২ জুন ২০২৪কমলাপুর থেকে বৃদ্ধাশ্রমেরাজধানীর কমলাপুরে আরিফুরের একটি ‘ভালো কাজের হোটেলে’ আছে। সেখানে গত ডিসেম্বরে খেতে এসেছিলেন মোকাররম। আরিফুর বলেন, হোটেলের স্বেচ্ছাসেবকেরা জানতে পারেন, এই বৃদ্ধ লোকটির থাকার জায়গা নেই। তা ছাড়া তিনি তখন অসুস্থও ছিলেন। পরে তাঁকে বৃদ্ধাশ্রমে নেওয়া হয়।
আরিফুর বলেন, মোকাররমকে বৃদ্ধাশ্রমে আনার পর আনুষ্ঠানিকতার অংশ হিসেবে একটি ফরম পূরণ করা হয়েছিল। তখন তিনি নিজের পরিচয় দিয়েছিলেন নিরাপত্তাকর্মী। তবে কোথায় কাজ করতেন, তা তিনি উল্লেখ করেননি।
রাস্তায় পড়ে থাকা, অসুস্থ, অসহায়, যাওয়ার কোনো জায়গা নেই—এমন প্রবীণদেরই শুধু এই বৃদ্ধাশ্রমটিতে রাখা হয় বলে জানান আরিফুর। তিনি বলেন, তাই বৃদ্ধাশ্রমটিতে ছেলেমেয়ের কোনো মা–বাবাকে রেখে যাওয়ার সুযোগ নেই। এখানে থাকা কেউ অসুস্থ হলে তাঁকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানেই চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়। বৃদ্ধাশ্রমের কোনো প্রবীণ নিবাসী মারা গেলে তাঁরা লাশের দাবিদার খুঁজে বের করার চেষ্টা করেন। তবে দাবিদার না পাওয়া না গেলে তখন আইনগত, পুলিশিসহ নানা ঝামেলা পোহাতে হয়। এসব ঝক্কির মধ্য দিয়ে বেওয়ারিশ লাশ দাফন করতে হয়।
২০২২ সালে চালুর পর এখন পর্যন্ত বৃদ্ধাশ্রমটির যতজন প্রবীণ নিবাসী মারা গেছেন, তাঁদের বেশির ভাগই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেছেন বলে জানান আরিফুর। দাবিদার না পাওয়া লাশগুলো বেওয়ারিশ হিসেবে দাফনের ব্যবস্থা করেছেন তাঁরা।
বছরখানেক আগের একটি ঘটনা উল্লেখ করেন আরিফুর। তিনি বলেন, বৃদ্ধাশ্রমে থাকা এক প্রবীণ নিবাসী একটি মুঠোফোন নম্বরে প্রায়ই কথা বলতেন। তিনি মারা গেলে তাঁরা সেই নম্বরে ফোন করেন। নম্বরটি ওই ব্যক্তির ছেলের। ছেলেকে বাবার মৃত্যুর খবর জানানো হয়। দাফনের জন্য বাবার লাশ নিয়ে যেতে বললে ছেলে রেগে যান। বৃদ্ধাশ্রম কর্তৃপক্ষকে লাশটি দাফন করে ফেলতে বলেন। আর তা না পারলে লাশ ফেলে দিতে বলেন। পরে অবশ্য ছেলে আসতে রাজি হন। লাশটি আজিমপুরে দাফন করা হয়।
আরও পড়ুনবৃদ্ধাশ্রম: আমাদের দেশে কেন এতটা অজনপ্রিয়১৭ জুন ২০২৩২৫ বছর পরিবারের বাইরেমোকাররমের দ্বিতীয় ছেলে ও ভাইয়ের ছেলের সঙ্গে এই প্রতিবেদকের কথা হয়। তাঁদের কেউ নিজেদের পরিচয় প্রকাশ করতে চাননি। তাঁরা বলেন, পারিবারিক নানা দ্বন্দ্বের জেরে মোকাররম দীর্ঘ প্রায় ২৫ বছর পরিবারের বাইরে ছিলেন। এই সময়কালে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে তাঁর যোগাযোগ ছিল না বললেই চলে।
এই দুজনের ভাষ্যমতে, মোকাররমের এক ছেলেকে সঙ্গে নিয়ে তাঁর স্ত্রী বাবার বাড়িতে চলে গেছেন। অপর দুই ছেলে বড় হয়েছেন মোকাররমের ভাইয়ের কাছে। মারা যাওয়ার কয়েক মাস আগে একবার বাড়ি গিয়েছিলেন মোকাররম। কিছুদিন পর কাউকে কিছু না জানিয়ে তিনি আবার বাড়ি ছাড়েন। এর পর থেকে আর মোকাররমের সঙ্গে পরিবারের কারও যোগাযোগ হয়নি।
বৃদ্ধাশ্রম কর্তৃপক্ষ মোকাররমের ছবি দিয়ে বিস্তারিত পরিচয় জানতে চেয়ে প্রচার চালালে পরিবারের সদস্যরা তাঁকে (মোকাররম) চিনতে পারেন। পরে তাঁরা যোগাযোগ করে ঢাকা থেকে মোকাররমের লাশ দিনাজপুরের গ্রামের বাড়িতে নিয়ে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করেন।
মোকাররমের ছেলে প্রথম আলোকে বলেন, পরিবারের সঙ্গে তাঁর বাবার যোগাযোগ খুব কমই ছিল। সবশেষ যখন তাঁর বাবা বাড়িতে গিয়েছিলেন, তখন বলেছিলেন, তিনি ঢাকায় ছিলেন। তিনি মারা গেছেন জানার পর তাঁরা লাশ বাড়িতে এনে তাঁরা দাফন করেন।
রাশমনা আপন ঘর বৃদ্ধাশ্রমের প্রতিষ্ঠাতা আরিফুর বলেন, তিনি চান না, কারও লাশ বেওয়ারিশ হিসেবে দাফন হোক। মোকাররমের লাশ যে শেষ পর্যন্ত বেওয়ারিশ হিসেবে দাফন করতে হয়নি, এটা তাঁর জন্য একটা স্বস্তির বিষয়।
আরও পড়ুনগড়ে উঠুক সরকারি বৃদ্ধাশ্রম০৩ জুলাই ২০২৩.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ন ম ক ররম ম ক ররম র পর ব র র ন আর ফ র অবস থ য় ন কর ন ন র পর
এছাড়াও পড়ুন:
জাতীয় নারী ক্রিকেট দলের বেতন বাড়াল বিসিবি
জাতীয় দলের নারী ক্রিকেটারদের বেতন বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড। আজ মিরপুরে বিসিবি পরিচালকদের সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
এত দিন ‘এ’ ক্যাটাগরিতে থাকা মেয়েরা ১ লাখ ২০ হাজার টাকা মাসিক বেতন পেতেন। তাঁদের বেতন ৪০ হাজার টাকা বাড়ানো হচ্ছে। ‘বি’ ক্যাটাগরিতে থাকা ক্রিকেটাররা পেতেন ১ লাখ টাকা করে বেতন। তাঁরা এখন থেকে ১ লাখ ৩৫ হাজার টাকা বেতন পাবেন।
‘সি’ ক্যাটাগরিতে থাকা ক্রিকেটারদের বেতন ৭০ হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে ৯৫ হাজার টাকা করা হয়েছে আর ‘ডি’ ক্যাটাগরিতে ৬০ হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে ৮০ হাজার টাকা।
এ ছাড়া জাতীয় দলের অধিনায়কদের জন্য ৩০ হাজার ও সহ-অধিনায়কদের জন্য ২০ হাজার টাকা অতিরিক্ত দেওয়ার সিদ্ধান্তও হয়েছে।
১ জুলাই থেকে কার্যকর হওয়া নারী ক্রিকেটারদের নতুন চুক্তিতে ‘এ’ ক্যাটাগরিতে আছেন তিন ক্রিকেটার—নিগার সুলতানা, নাহিদা আক্তার ও শারমিন আক্তার। ‘বি’ ক্যাটাগরিতে আছেন ফারাজনা হক, রিতু মনি, ফাহিমা খাতুন, মারুফা আক্তার, রাবেয়া খান ও সোবহানা মোস্তারি। ‘সি’ ক্যাটাগরিতে একমাত্র ক্রিকেটার হিসেবে আছেন স্বর্ণা আক্তার।
‘ডি’ ক্যাটাগরিতে আছেন সুমাইয়া আক্তারর, ফারিহা ইসলাম, রুবাইয়া হায়দার, সানজিদা আক্তার, নিশিতা আক্তার। এই চুক্তির বাইরে থাকা ক্রিকেটারদের কেউ জাতীয় দলে এলে মাসে ৬০ হাজার টাকা বেতন পাবেন।