বগুড়ায় করতোয়া নদীর জায়গায় বানানো টিএমএসএসের কারখানার স্থাপনা উচ্ছেদ
Published: 10th, April 2025 GMT
বগুড়ায় করতোয়া নদী দখল করে অবৈধ স্থাপনা নির্মাণের অভিযোগে ঠেঙ্গামারা মহিলা সবুজ সংঘের (টিএমএসএস) প্রতিষ্ঠান বিসিএল গ্লাস কারখানায় উচ্ছেদ অভিযান চালিয়েছে প্রশাসন। গতকাল বুধবার দুপুরে সদর উপজেলার বাঘোপাড়া এলাকায় কারখানায় অভিযান চালিয়ে বেশ কিছু স্থাপনা গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়। জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আবু শাহমা ও নাহিয়ান মুনসীফ অভিযানে নেতৃত্ব দেন।
বগুড়ার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) পি এম ইমরুল কায়েস প্রথম আলোকে বলেন, করতোয়া নদীর সীমানায় টিএমএসএস মোট ১৬ দশমিক ৯৭ একর জায়গা অবৈধভাবে দখল করে রেখেছে। এর মধ্যে ৯৭ শতাংশ জায়গায় বিসিএল গ্লাস কারখানাসহ বিভিন্ন স্থাপনা নির্মাণ করা হয়। নদীর জায়গা দখলমুক্ত করতে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের সিদ্ধান্ত নেয় প্রশাসন। সেই সিদ্ধান্ত চ্যালেঞ্জ করে টিএমএসএস আদালতে নিষেধাজ্ঞা চেয়ে মামলা করে। সেই নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার হওয়ায় গতকাল উচ্ছেদে অভিযান চালানো হয়।
তবে টিএমএসএসের নির্বাহী পরিচালক হোসনে আরা বেগম প্রথম আলোকে বলেন, সরকারি জায়গায় কারখানা করা হয়নি। টিএমএসএসের নিজস্ব জায়গাতেই কারখানা গড়ে উঠেছে। জেলা প্রশাসন মনগড়াভাবে সীমানা নির্ধারণ করে অভিযান চালিয়ে কারখানা গুঁড়িয়ে দিয়েছে। এতে তাঁদের কোটি কোটি টাকার সম্পদের ক্ষতি করেছে।
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, গত বছরের ২৪ ডিসেম্বর জেলা প্রশাসকের কাছে পাঠানো এক প্রতিবেদনে টিএমএসএস বিরুদ্ধে বিসিএল গ্লাস কারখানা নির্মাণে নদীর জায়গা দখলের কথা উল্লেখ করে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)। প্রতিবেদনে বগুড়া শহরের ‘করতোয়া নদী পুনঃখনন ও ডান তীরে স্নোপ প্রোটেকশন’ প্রকল্প বাস্তবায়নে নদীর সীমানা নির্ধারণে জরিপের কথা উল্লেখ করা হয়। জরিপে টিএমএসএসের বিরুদ্ধে নদীর তীরসংলগ্ন ৯৩ দশমিক ১৫ শতক জায়গা দখল করে ১১টি অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ ছাড়াও নদী ভরাট ও পানিদূষণের অভিযোগ করা হয়। দখল ও দূষণমুক্ত করতে স্থাপনা উচ্ছেদ করা প্রয়োজন বলেও জানানো হয়।
এরপর স্থাপনা সরিয়ে নিতে নোটিশ দেয় জেলা প্রশাসন। সেই সিদ্ধান্ত চ্যালেঞ্জ করে আদালতে মামলা করে টিএমএসএস। আদালত অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা দিলেও পরে তা প্রত্যাহার হয়। এরপর জেলা প্রশাসন গতকাল সেখানে উচ্ছেদ অভিযান চালায়। তবে টিএমএসএসের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার হলেও পরে আপিল করা হয়েছে। সেই আপিলের নিষ্পত্তি হওয়ার আগেই একতরফাভাবে উচ্ছেদ অভিযান চালানো হয়েছে।
অভিযানের বিষয়ে গতকাল ব্রিফিং করেন জেলা প্রশাসক হোসনা আফরোজা। তিনি বলেন, নদী শ্রেণিভুক্ত জমি কাউকে বন্দোবস্ত দেওয়ার সুযোগ নেই। যেহেতু আদালতের নিষেধাজ্ঞা নেই, সে কারণে নদীর অবৈধ দখলদার টিএমএসএসের বিরুদ্ধে উচ্ছেদ অভিযান চালানো হয়েছে। নদীর তীর ঘেঁষে যেসব অবৈধ স্থাপনা তৈরি করা হয়েছে, ভবিষ্যতে সেগুলোও একইভাবে উচ্ছেদ করবে জেলা প্রশাসন।
জেলা প্রশাসক বলেন, ‘১৬ দশমিক ৯৭ একর জমি সরকারের কাছ থেকে বন্দোবস্ত নিয়েছে বলে টিএমএসএস বিভিন্ন সময় দাবি করে এসেছে। কাগজপত্র যাচাই করে দেখেছি, যেভাবে সরকারি জায়গা বন্দোবস্ত দেওয়া হয়, বন্দোবস্ত কেস এবং চিঠির ভাষা কিছুই নেই। বন্দোবস্তের কাগজপত্র তাদের নিজেদের তৈরি বলে আমার কাছে মনে হয়েছে।’ তিনি বলেন, নদীর সীমানা থেকে অবৈধ স্থাপনা সরিয়ে নিতে গত ফেব্রুয়ারিতে টিএমএসএসকে নোটিশ দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু টিএমএসএস অবৈধ স্থাপনা সরিয়ে না নিয়ে আদালতের দ্বারস্থ হয়ে নিষেধাজ্ঞা নেয়। পরে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার হয়। আইনগত বাধা না থাকায় উচ্ছেদ অভিযান চালানো হয়েছে।
তবে টিএমএসএসের নির্বাহী পরিচালক হোসনে আরা বেগম প্রথম আলোকে বলেন, ভূমি মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন সাপেক্ষে ১৯৯৫ সালে জেলা প্রশাসন থেকে ১৬ দশমিক ৯৭ একর সরকারি খাস জায়গা বন্দোবস্ত নেওয়া হয়। পরে কবুলিয়াত দলিল সম্পাদন করে দিতে আদেশ দেন আদালত। জেলা প্রশাসন ওই আদেশের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আপিল করেছে। সেই আপিল নিষ্পত্তি না হতেই আদালতের প্রতি অশ্রদ্ধা দেখিয়ে গতকাল তড়িঘড়ি করে বিসিএল গ্লাস কারখানায় উচ্ছেদ অভিযান চালিয়ে কোটি কোটি টাকার সম্পদের ক্ষতি করা হয়েছে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: গতক ল করত য় সরক র দশম ক
এছাড়াও পড়ুন:
ছাত্রীকে যৌন হয়রানির অভিযোগে শিক্ষককে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার
পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে এক ছাত্রীকে যৌন হয়রানির অভিযোগে সমাজকর্ম বিভাগের সহকারী অধ্যাপক সুব্রত কুমার বিশ্বাসকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ৭৩তম রিজেন্ট বোর্ড সভায় ২৬ জুলাই এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। গতকাল সোমবার বিকেলে বিষয়টি জানাজানি হয়।
সুব্রত কুমার বিশ্বাস পাবনার ঈশ্বরদী পৌর শহরের পোস্ট অফিসপাড়ার বাসিন্দা। তাঁর বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকর্ম বিভাগের সান্ধ্যকালীন (ইভিনিং) স্নাতকোত্তর শ্রেণির এক ছাত্রী যৌন হয়রানির লিখিত অভিযোগ করেছিলেন।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, অভিযুক্ত শিক্ষক ওই ছাত্রীর সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তোলেন এবং বিয়ের আশ্বাসে শারীরিক সম্পর্কে জড়ান। কিন্তু পরে বিয়েতে অস্বীকৃতি জানালে ছাত্রীটি ২০২৩ সালের ২২ সেপ্টেম্বর বিভাগের প্রধানের কাছে লিখিত অভিযোগ করেন। এরপর ২৩ সেপ্টেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কাউন্সিল একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে। তদন্ত কমিটি ওই বছরের ৯ অক্টোবর শিক্ষক সুব্রতকে সব ধরনের একাডেমিক কার্যক্রম থেকে অব্যাহতি দেওয়ার সুপারিশ করে রেজিস্ট্রার বরাবর চিঠি দেয়। পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের যৌন নিপীড়নবিরোধী সেল বিষয়টি নিয়ে উচ্চতর তদন্ত করে। তদন্তে শিক্ষকের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ প্রমাণিত হয়। এরপর তদন্ত কমিটি তাঁকে স্থায়ীভাবে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কারের সুপারিশ করে। এ সুপারিশের ভিত্তিতেই রিজেন্ট বোর্ড বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নেয়।
এ বিষয়ে জানতে অভিযুক্ত শিক্ষক সুব্রত কুমার বিশ্বাসের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাঁকে পাওয়া যায়নি। তাঁর ব্যবহৃত মুঠোফোনটি বন্ধ পাওয়া গেছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এস এম আবদুল আওয়াল প্রথম আলোকে বলেন, রিজেন্ট বোর্ডে একজন শিক্ষককে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত হয়েছে। এটি আইন অনুযায়ীই হয়েছে।