চট্টগ্রামের রাউজানে জুমার নামাজ শেষ করে মসজিদ থেকে বাড়ি ফেরার পথে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন রাউজানের কর্মী ইসতিয়াক হোসেন সিফাতের (২১) ওপর হামলার ঘটনা ঘটেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। আজ শুক্রবার উপজেলার নোয়াপাড়া ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয় এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।

এ সময় হামলাকারী মুহাম্মদ ইমরানকে (২৬) স্থানীয় ব্যক্তিরা আটক করে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করেছেন। তাঁর বাড়ি একই ইউনিয়নের আশ্চার্য্য পাড়ায়।

পুলিশ জানিয়েছে, আটক ইমরান নিষিদ্ধঘোষিত সংগঠন ছাত্রলীগের স্থানীয় নোয়াপাড়া ইউনিয়ন শাখার কর্মী। তাঁর বিরুদ্ধে অস্ত্র, মাদক ও ডাকাতির প্রস্তুতির মামলা রয়েছে থানায়।  

হামলার শিকার বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের কর্মী ইশতিয়াক হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি আজ শুক্রবার জুমা নামাজ পড়ে বাড়ি ফিরছিলাম। এ সময় হঠাৎ ছাত্রলীগের কর্মী ইমরান আমাকে পেছন থেকে হামলা করে। এ দৃশ্য দেখে স্থানীয় লোকজন তাকে আটক করেন। তার সঙ্গে আমার শত্রুতা নেই, রাজনৈতিক কারণে সে আমার ওপর ক্ষেপে থাকতে পারে।’

এদিকে ইসতিয়াক হোসেনের ওপর হামলার ঘটনায় নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন বিবৃতি দিয়েছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন রাউজানের নেতারা। তাঁরা বলেন, আওয়ামী লীগ-ছাত্রলীগের কর্মীরা সুযোগ পেলে এখনো ছাত্র আন্দোলনের কর্মীদের ওপর হামলা করছেন। তাঁদের আইনের আওতায় আনতে রাউজান থানার পুলিশকে আহ্বান জানান।

জানতে চাইলে রাউজানের নোয়াপাড়া পুলিশ ফাঁড়ির উপপরিদর্শক (এসআই) মুহাম্মদ সাইফুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ওই ছাত্রলীগের কর্মীর বিরুদ্ধে অস্ত্র, মাদক ও ডাকাতির প্রস্তুতির মামলা রয়েছে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের এক কর্মীর ওপর হামলার অভিযোগে আজ বেলা তিনটার দিকে ওই ছাত্রলীগ কর্মীকে পুলিশে সোপর্দ করেছেন স্থানীয় লোকজন। তাঁকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানোর প্রস্তুতি চলছে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ন র কর ম কর ম র

এছাড়াও পড়ুন:

গোপালগঞ্জে সহিংসতার ঘটনায় গত চার দিনে ১২ শিশুর জামিন নামঞ্জুর

গোপালগঞ্জে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) পথসভাকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষের ঘটনায় গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের মধ্যে ১৮ জন শিশু রয়েছে। এর মধ্যে গত চার দিনে ১২ শিশুর জামিন আবেদন নামঞ্জুর করেছেন আদালত।

গতকাল বৃহস্পতিবার সাত শিশুর জামিন আবেদনের শুনানি হয়। গোপালগঞ্জ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক (জেলা ও দায়রা জজ) সৈয়দ আরাফাত হোসেন তাদের জামিন আবেদন নামঞ্জুর করেন। এর আগে সোম ও মঙ্গলবার পাঁচ শিশুর জামিন আবেদন করা হয়। তাদের জামিন নামঞ্জুর করা হয়। ওই পাঁচজনের জামিন আবেদন করা হয়েছিল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে।

কারাগার সূত্র জানায়, গত ১৬ জুলাই সংঘর্ষের পর ১৭ ও ১৮ জুলাই জেলার বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে ১৮ শিশুকে আটক করে পুলিশ। ১৮ জুলাই তাদের আদালতে হাজির করে গোপালগঞ্জ জেলা কারাগারে পাঠানো হয়। পরে ২১ জুলাই তাদের যশোরের পুলেরহাট শিশু-কিশোর উন্নয়ন কেন্দ্রে পাঠানো হয়।

আদালতের নথি অনুযায়ী, গ্রেপ্তার হওয়া শিশুদের বয়স, ঠিকানা পরিষ্কারভাবে উল্লেখ নেই। তবে গতকাল পর্যন্ত ১২ শিশুর নাম ও পরিচয় শনাক্ত হয়েছে। প্রথম আলোর পক্ষ থেকে চার পরিবারের সঙ্গে কথা বলা হয়েছে। অভিভাবকদের অভিযোগ, তাদের সন্তানদের কোনো ধরনের তদন্ত ছাড়াই আটক করা হয়েছে।

আরও পড়ুনগ্রেপ্তার হওয়া শিশুদের বিষয়ে তদন্ত কমিটি গঠনের নির্দেশ২৭ জুলাই ২০২৫

একজন শিশুর বাবা বলেন, ‘সংসারে অভাব–অনটন, নিজেরাই সংসার চালাইতে পারি না। আমার কষ্ট দেখে ছেলে রাজমিস্ত্রির কাজে যোগ দেয়। সে গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার রমজান শেখ নামের একটা রাজমিস্ত্রির সহকারী হিসেবে কাজ করে। কাজের সময় পুলিশ তাদের ধরে নিয়ে যায়।’

আরেক শিশুর ভ্যানচালক বাবা বলেন, ‘আমরা গরিব মানুষ, কোথাও কোনো কাইজের মধ্যে নেই। তিনডা ছেলে, বড়টা একটা মাদ্রাসার শিক্ষক। ছোট দুইডা এখনো পড়ে। যারে ধরছে, সে সবার ছোট। ওই দিন সকালে আমার মাদ্রাসায় গেছে, পরীক্ষা ছিল। পরে দুপুরের আগে আমি নিজে যাইয়ে নিয়ে আসছি। সেদিন বাড়িতেই ছিল। পরের দিনও সারা দিন বাড়ি ছিল, সেদিন তো কারফিউ ছিল। আসরের নামাজের পর আমার কাছ থেকে ২০ টাকা নিয়ে গেছে চটপটি খাইতে। পাশে মাদ্রাসার সামনেই চটপটির দোকান বসে। সেই হান দে ওরে ধইরে নিছে।’

ওই ব্যক্তি আরও বলেন, ‘ধরার ঘণ্টাখানেক পর থানা থেইকা ফোন দিছে, কয় ছেলে ধরা হইছে। আমরা থানায় গিয়া অনেক কইছি, ও তো কোথাও যায় না, কোনো গ্যাঞ্জামের ছেলে না। মাদ্রাসায় পড়ে। কিন্তু কেউ কিছুই শুনল না। ছেলেরে ছাড়ায় আনতে অনেক জায়গায় দৌড়াইছি।’ তিনি জানান, এ ঘটনার পর থেকে তাঁদের প্রায় ২০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে।

এ ছাড়া জামিনের আশ্বাস দিয়ে কয়েকজন লোক তাদের কাছ থেকে টাকা নিয়েছে বলেও অভিযোগ করেন একজন অভিভাবক।

আরও পড়ুনগোপালগঞ্জে এনসিপির সমাবেশে হামলার ঘটনায় আরও একটি মামলা, আসামি ৪৭৭ জন৩১ জুলাই ২০২৫

গ্রেপ্তার এক শিশুর আইনজীবী ফিরোজা বেগম বলেন, ১৬ জুলাই সহিংসতার ঘটনায় সন্ত্রাসবিরোধী আইনের মামলায় এই শিশুকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। ফৌজদারি কার্যবিধির ১৭৩ ধারায় দ্রুত তদন্ত করে নির্দোষ প্রমাণিত হলে তাকে মামলা থেকে অব্যাহতি দেওয়ার সুযোগ রয়েছে।

এ বিষয়ে সরকারি কৌঁসুলি তৌফিকুল ইসলাম বলেন, শিশুরা অল্প সময় আগে গ্রেপ্তার হয়েছে, এখনো তদন্ত চলছে। তাই হয়তো বিচারক জামিন নামঞ্জুর করেছেন। এ মামলায় এখনো কারও জামিন হয়নি।

আরও পড়ুনগোপালগঞ্জে সংঘাতের ইঙ্গিত ছিল স্পষ্ট, নিরাপত্তা প্রস্তুতি নিয়ে প্রশ্ন ১৮ জুলাই ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ