শিম্পাঞ্জি বুদ্ধিমান প্রাণী বলে বেশ আলোচিত। শিম্পাঞ্জি বেঁচে থাকার তাগিদে বিভিন্ন সরঞ্জাম তৈরি করতে পারে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে রীতিমতো মানব প্রকৌশলীর মতো আচরণ করে শিম্পাঞ্জি। নিজেদের কাজের জন্য ইচ্ছাকৃতভাবে এমন গাছপালা বেছে নেয়, যা নমনীয় উপকরণ সরবরাহ করে। তানজানিয়ার গোম্বে স্ট্রিম ন্যাশনাল পার্কে শিম্পাঞ্জিদের দীর্ঘদিন পর্যবেক্ষণ করে এ তথ্য জানিয়েছেন গবেষকেরা। শিম্পাঞ্জির এই প্রকৌশলচর্চার খবর ‘আইসায়েন্স’ সাময়িকীতে প্রকাশও করেছেন তাঁরা।

‘আইসায়েন্স’ সাময়িকীতে প্রকাশিত গবেষণা ফলাফলে বলা হয়েছে, শিম্পাঞ্জি সরঞ্জাম তৈরিতে বিশেষ ধরনের সহজাত প্রকৌশলক্ষমতা ব্যবহার করে, যা অনেকটা আদি মানুষের সরঞ্জাম বিবর্তনের প্রতিফলনের মতোই। শিম্পাঞ্জি নিজেদের প্রয়োজনে বিভিন্ন ক্ষণস্থায়ী সরঞ্জাম তৈরি করে। এ জন্য প্রয়োজনীয় প্রযুক্তিগত দক্ষতা ও প্রকৌশলগত নির্ভুলতা সম্পর্কে ধারণা রয়েছে শিম্পাঞ্জির। মানবসভ্যতার শুরুতে এমন প্রযুক্তিগত বিবর্তন কেমন ছিল, তা জানতে শিম্পাঞ্জির প্রকৌশলচর্চা নিয়ে কাজ করছেন গবেষকেরা।

আরও পড়ুনশিম্পাঞ্জি কি সত্যিই মানুষের মতো কথা বলতে পারে৩১ জুলাই ২০২৪

গবেষণার ফলাফলে দেখা গেছে, শিম্পাঞ্জি যে গাছপালা কখনো ব্যবহার করে না, তা নিয়ে যন্ত্র বানাতে আগ্রহী নয়। নিজেদের পছন্দের উপকরণ দিয়ে প্রকৌশল চর্চা করে তারা। গবেষণায় উইপোকা ধরার সময় শিম্পাঞ্জি কীভাবে কাজ করে, তা নিয়ে বিপুল তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে। এ বিষয়ে বিজ্ঞানী আলেজান্দ্রা পাস্কুয়াল-গারিডো বলেন, ‘প্রথমবারের মতো আমরা শিম্পাঞ্জির প্রকৌশলচর্চা নিয়ে বিপুল তথ্য সংগ্রহ করেছি। বন্য শিম্পাঞ্জি উইপোকা ধরার সরঞ্জাম তৈরির জন্য নির্দিষ্ট যান্ত্রিক কৌশল ব্যবহার করে সরঞ্জাম তৈরির উপকরণ নির্বাচন করে।’

গবেষকদের তথ্যমতে, সরঞ্জাম ভাগাভাগির মাধ্যমে অর্জিত শিক্ষাও পরস্পরের সঙ্গে ভাগাভাগি করে শিম্পাঞ্জি। শিম্পাঞ্জি সম্ভবত একধরনের লোক পদার্থবিদ্যা অনুসরণ করে। যার অর্থ শিম্পাঞ্জি বস্তুর বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে সহজাত ধারণা ধারণ করে। এ বিষয়ে বিজ্ঞানী পাস্কুয়াল-গারিডো বলেন, ‘বায়োমেকানিকসের সমন্বয়ে গঠিত এ অভিনব পদ্ধতিটি আমাদের শিম্পাঞ্জির সরঞ্জাম নির্মাণের পেছনের জ্ঞানীয় প্রক্রিয়া ও কার্যকর বৈশিষ্ট্য জানতে সহায়তা করছে। শিম্পাঞ্জির ওপর এমন গবেষণার ফলাফল মানুষ অতীতে কীভাবে সরঞ্জাম ব্যবহারের ক্ষমতা অর্জন করেছে, তা জানতে নতুন তথ্য দিতে পারে।’

সূত্র: এনডিটিভি

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: সরঞ জ ম ত র ব যবহ র

এছাড়াও পড়ুন:

দুনিয়ায় প্রত্যেক মুসলিমকে যেসব পরীক্ষার মধ্য দিয়ে যেতে হবে

জীবন একটি পরীক্ষার ময়দান, যেখানে আমরা বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ ও কষ্টের মুখোমুখি হই। পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে, ‘আমি অবশ্যই তোমাদের পরীক্ষা করব কিছু ভয়, ক্ষুধা, সম্পদের ক্ষতি, জীবন ও ফসলের ক্ষতি দিয়ে। আর যারা ধৈর্য ধরে, তাদের সুসংবাদ দাও।’ (সুরা বাকারা, আয়াত: ১৫৫)

এই পরীক্ষাগুলো প্রায়ই আমাদের হতাশ বা বিমর্ষ করে তুলতে পারে, কিন্তু ইসলাম আমাদের শেখায় যে এই কষ্টগুলো আল্লাহর নৈকট্য লাভের মাধ্যম এবং পরকালে চিরস্থায়ী সুখের পথ প্রশস্ত করে। পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে, ‘এই দুনিয়ার জীবন তো কেবল ক্ষণস্থায়ী ভোগ, আর পরকালই হলো চিরস্থায়ী আবাস।’ (সুরা গাফির, আয়াত: ৩৯)

পরীক্ষার উদ্দেশ্য

ইসলামে পরীক্ষা বা কষ্টকে আল্লাহর রহমতের অংশ হিসেবে দেখা হয়। এগুলো আমাদের পাপ থেকে মুক্তি, আল্লাহর ওপর নির্ভরতা বৃদ্ধি, নিজেকে নম্র করা এবং তাঁর নৈকট্য লাভের মাধ্যম।

আমি অবশ্যই তোমাদের পরীক্ষা করব কিছু ভয়, ক্ষুধা, সম্পদের ক্ষতি, জীবন ও ফসলের ক্ষতি দিয়ে। আর যারা ধৈর্য ধরে, তাদের সুসংবাদ দাও।সুরা বাকারা, আয়াত: ১৫৫

পরীক্ষা আমাদের ধৈর্য ও বিশ্বাস যাচাই করে এবং এর মাধ্যমে আমরা আল্লাহর কাছে উচ্চ মর্যাদা লাভ করতে পারি। নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘যখনই তুমি আল্লাহর জন্য কিছু ত্যাগ করবে, আল্লাহ তা তোমার জন্য আরও উত্তম কিছু দিয়ে প্রতিস্থাপন করবেন।’ (মুসনাদে আহমদ, হাদিস: ২৩,০৭৪)

আরও পড়ুনযে ৪টি পরীক্ষা নবীজি (সা.)–এর জীবনকে দৃঢ়তা দিয়েছে২২ জুলাই ২০২৫পরীক্ষার মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য

দুনিয়ার জীবন সাময়িক এবং এর কষ্টগুলো ক্ষণস্থায়ী। আমরা প্রায়ই দুনিয়ার সমস্যায়, যেমন অর্থনৈতিক সংকট, সম্পর্কের জটিলতা বা সামাজিক চাপ, এতটাই মগ্ন হয়ে পড়ি যে আমাদের মূল উদ্দেশ্য ভুলে যাই। পবিত্র কোরআন আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয়, ‘কিন্তু যে ব্যক্তি তার প্রভুর সামনে দাঁড়ানোর ভয় করেছে এবং নিজের নফসকে অবৈধ কামনা থেকে বিরত রেখেছে, তার জন্য জান্নাতই হবে আশ্রয়।’ (সুরা নাজিয়াত, আয়াত: ৪০–৪১)

ইবন কাইয়্যিম (রহ.) বলেছেন, ‘যদি আল্লাহ তাঁর বান্দার জন্য পর্দা তুলে দিতেন এবং তাকে দেখাতেন, কীভাবে তিনি তার জন্য সবকিছু পরিচালনা করেন, তবে তার হৃদয় আল্লাহর প্রতি ভালোবাসায় গলে যেত এবং কৃতজ্ঞতায় টুকরা টুকরা হয়ে যেত। তাই যদি দুনিয়ার কষ্ট তোমাকে ক্লান্ত করে, তবে দুঃখ করো না। হয়তো আল্লাহ তোমার দোয়ার কণ্ঠ শুনতে চান।’ (ইবন কাইয়্যিম, আল–ফাওয়ায়িদ, পৃষ্ঠা ১২৮, বৈরুত: দারুল কুতুব আল–ইলমিয়্যাহ, ১৯৯৬)

পরীক্ষা আমাদের ধৈর্য ও বিশ্বাস যাচাই করে এবং এর মাধ্যমে আমরা আল্লাহর কাছে উচ্চ মর্যাদা লাভ করতে পারি।

পরীক্ষা আমাদের আল্লাহর কাছাকাছি নিয়ে যায়। এটি আমাদের নম্র করে, আমাদের পাপমুক্তি ঘটায় এবং আল্লাহর ওপর নির্ভরতা বাড়ায়। নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘দুনিয়ায় যে ব্যক্তি সবচেয়ে বেশি কষ্ট ও পরীক্ষার মধ্য দিয়ে গেছে, তাকে জান্নাতে একবার ডুবিয়ে দেওয়া হবে এবং জিজ্ঞাসা করা হবে, ‘হে আদম সন্তান, তুমি কি কখনো কোনো কষ্ট দেখেছিলে? তুমি কি কখনো দুঃখ অনুভব করেছিলে?’ সে বলবে, ‘না, হে আমার রব! আমি কখনো কোনো কষ্ট দেখিনি, কখনো কোনো দুঃখ অনুভব করিনি।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস নম্বর–২৮০৭)

আরও পড়ুনবালকের ঈমানের পরীক্ষা ও বাদশাহের নির্মম পরিণতি০৪ মে ২০২৪আল্লাহর পরিকল্পনায় ভরসা

পরীক্ষার সময় মনে রাখতে হবে যে আল্লাহর পরিকল্পনা আমাদের পরিকল্পনার চেয়ে উত্তম। পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে, ‘হয়তো তোমরা এমন কিছু অপছন্দ করো, যা তোমাদের জন্য কল্যাণকর। আর এমন কিছু পছন্দ করো, যা তোমাদের জন্য ক্ষতিকর। আল্লাহ জানেন, আর তোমরা জানো না।’ (সুরা বাকারা, আয়াত: ২১৬)

এই আয়াত আমাদের শেখায় যে কষ্টের পেছনে আল্লাহর একটি বৃহত্তর উদ্দেশ্য রয়েছে।

হয়তো তোমরা এমন কিছু অপছন্দ করো, যা তোমাদের জন্য কল্যাণকর। আর এমন কিছু পছন্দ করো, যা তোমাদের জন্য ক্ষতিকর। আল্লাহ জানেন, আর তোমরা জানো না।সুরা বাকারা, আয়াত: ২১৬

আরেকটি হাদিসে বলা হয়েছে, ‘যে ব্যক্তি পরকালের জন্য চিন্তিত থাকে, আল্লাহ তার বিষয়গুলো সহজ করে দেবেন, তার হৃদয়ে তৃপ্তি দেবেন এবং দুনিয়া তার কাছে আসবে, যদিও সে তা অপছন্দ করে।’ (ইবন মাজাহ, হাদিস: ৪১০৫)

পরীক্ষায় ধৈর্য ও দোয়া

পরীক্ষার সময় ধৈর্য ধরা এবং আল্লাহর কাছে দোয়া করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহর ওপর ভরসা করে, তিনি তার জন্য যথেষ্ট।’ (সুরা তালাক, আয়াত: ৩) দোয়ার মাধ্যমে আমরা আমাদের হৃদয়ের কথা আল্লাহর কাছে প্রকাশ করি এবং তাঁর রহমতের জন্য আশ্রয় প্রার্থনা করি।

ইবন কাইয়্যিম (রহ.) বলেছেন, ‘যদি দুনিয়ার কষ্ট তোমাকে ক্লান্ত করে, তবে সিজদায় তোমার আকাঙ্ক্ষা প্রকাশ করো এবং জেনে রাখো, আল্লাহ কখনো ভোলেন না।’ (আল–ফাওয়ায়িদ, পৃষ্ঠা ১৩০, বৈরুত: দারুল কুতুব আল–ইলমিয়্যাহ, ১৯৯৬)

আমরা যদি আল্লাহকে আমাদের হৃদয়ের কেন্দ্রে রাখি, তবে কোনো পরীক্ষাই আমাদের ভেঙে দিতে পারবে না।

জীবনের পরীক্ষাগুলো আমাদের আল্লাহর কাছাকাছি নিয়ে যায়, আমাদের হৃদয়কে বিশুদ্ধ করে এবং পরকালে জান্নাত লাভের পথ প্রশস্ত করে। দুনিয়ার কষ্ট ক্ষণস্থায়ী, কিন্তু আল্লাহর ভালোবাসা ও রহমত চিরস্থায়ী।

আমরা যদি আল্লাহকে আমাদের হৃদয়ের কেন্দ্রে রাখি, তবে কোনো পরীক্ষাই আমাদের ভেঙে দিতে পারবে না; বরং নবীজি (সা.)–এর শিক্ষা ও ধৈর্য, দোয়া এবং আল্লাহর ওপর ভরসার মাধ্যমে আমরা জীবনের প্রতিটি পরীক্ষায় বিজয়ী হতে পারব।

আরও পড়ুনত্যাগের পরীক্ষা, সফলতার উদ্যাপন০১ আগস্ট ২০২০

সম্পর্কিত নিবন্ধ