‘সন্ত্রাসী’ সাজ্জাদের স্ত্রীকে সাত দিনের মধ্যে আত্মসমর্পণের নির্দেশ
Published: 13th, April 2025 GMT
চট্টগ্রামে জোড়া খুনের মামলায় ‘সন্ত্রাসী’ সাজ্জাদ হোসেনের স্ত্রী শারমিন আক্তার তামান্নাসহ তিনজনকে সাত দিনের মধ্যে আত্মসমর্পণের নির্দেশ দিয়েছেন আপিল বিভাগের চেম্বার আদালত।
হাইকোর্টের আদেশের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের করা আবেদনের শুনানি নিয়ে আপিল বিভাগের চেম্বার বিচারপতি মো. রেজাউল হক আজ রোববার এ আদেশ দেন।
রাষ্ট্রপক্ষের তথ্য অনুসারে, চট্টগ্রামে জোড়া খুনের মামলায় তামান্নাসহ তিনজন আগাম জামিন চেয়ে আবেদন করেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে গত বুধবার (৯ এপ্রিল) হাইকোর্টের একটি দ্বৈত বেঞ্চ তাঁদের চার সপ্তাহের মধ্যে নিম্ন আদালতে আত্মসমর্পণ করতে নির্দেশ দেন। এ আদেশের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ আপিল বিভাগে আবেদন করে, যা আজ চেম্বার আদালতে শুনানির জন্য ওঠে।
আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল অনীক আর হক, সঙ্গে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মো.
পরে অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল অনীক আর হক প্রথম আলোকে বলেন, জোড়া খুনের মামলায় আসামি তামান্না, মোবারক হোসেন ও মো. বোরহান—এই তিনজনকে চার সপ্তাহের মধ্যে আত্মসমর্পণের জন্য হাইকোর্ট আদেশ দিয়েছিলেন। এ আদেশের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ আপিল বিভাগে আবেদন করে। শুনানি নিয়ে আপিল বিভাগ তিনজনকে এক সপ্তাহের মধ্যে আত্মসমর্পণের নির্দেশ দিয়েছেন। হাইকোর্টের আদেশ সংশোধন করে এ আদেশ দেওয়া হয়।
জোড়া খুনের ঘটনাটি ঘটে গত ২৯ মার্চ রাতে। ওই দিন রুপালি রঙের একটি প্রাইভেট কার কর্ণফুলী শাহ আমানত সেতু এলাকা থেকে বাকলিয়া অ্যাকসেস রোডে আসতে থাকে। গাড়িটি শাহ আমানত সেতু এলাকা থেকে কিছু দূর যাওয়ার পর পেছন থেকে পাঁচটি মোটরসাইকেল সেটিকে ধাওয়া করে। একপর্যায়ে এলোপাতাড়ি গুলি করতে থাকে। প্রাইভেট কারের ভেতর থেকেও মোটরসাইকেল আরোহীদের লক্ষ্য করে গুলি ছোড়া হয়। গুলিতে অনেকটা ঝাঁঝরা হয়ে যায় গাড়িটি। নিহত ব্যক্তিরা হলেন বখতিয়ার হোসেন (৩০) ও মো. আবদুল্লাহ (৩২)। তাঁরা সন্ত্রাসী সরোয়ার হোসেনের অনুসারী হিসেবে পরিচিত।
আরও পড়ুনচট্টগ্রামে জোড়া খুনের আগে চার ঘণ্টা বৈঠক করেন ‘সন্ত্রাসীরা’০৮ এপ্রিল ২০২৫এ ঘটনায় নিহত ব্যক্তিদের পরিবারের করা মামলায় বলা হয়েছে, দুই সন্ত্রাসী সাজ্জাদ হোসেন ওরফে ছোট সাজ্জাদ ও সরোয়ার হোসেনের বিরোধের জের ধরে আলোচিত জোড়া খুনের ঘটনা ঘটেছে।
সাজ্জাদ ও তাঁর স্ত্রী তামান্না শারমিনকে হুকুমের আসামিসহ সাতজনের নাম উল্লেখ করে বাকলিয়া থানায় মামলা করেন নিহত বখতিয়ারের মা ফিরোজা বেগম। মামলার বাকি পাঁচ আসামি হলেন মো. হাছান, মোবারক হোসেন, মো. খোরশেদ, মো. রায়হান ও মো. বোরহান। তাঁরা সবাই সাজ্জাদের অনুসারী হিসেবে পরিচিত।
গত ১৫ মার্চ ঢাকার একটি শপিং মলে ঘোরাঘুরি করার সময় সাজ্জাদকে আটক করে তেজগাঁও থানা–পুলিশ। এর আগে তাঁকে ধরতে পুরস্কার ঘোষণা করেছিলেন চট্টগ্রাম নগর পুলিশ কমিশনার। ঢাকা থেকে চট্টগ্রামের ‘সন্ত্রাসী’ সাজ্জাদ হোসেনকে গ্রেপ্তারের পর প্রতিক্রিয়া জানিয়ে তাঁর স্ত্রী তামান্না শারমিনের বক্তব্যের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হয়। ভিডিওতে তামান্না শারমিনকে বলতে শোনা যায়, ‘আমরা কাঁড়ি কাঁড়ি, বান্ডিল বান্ডিল টাকা ছেড়ে আমার জামাইকে (স্বামী) নিয়ে আসব। যারা এই ঘটনা ঘটিয়েছে, তাদের ছাড় দেওয়া হবে না।’
আরও পড়ুন‘সন্ত্রাসী’ সাজ্জাদের স্ত্রী বললেন, ‘বান্ডিল বান্ডিল টাকা ছেড়ে আমার জামাইকে নিয়ে আসব’১৬ মার্চ ২০২৫উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: র ষ ট রপক ষ আপ ল ব ভ গ র একট
এছাড়াও পড়ুন:
চমেক শিক্ষার্থী আবিদ হত্যা ১২ আসামিকে আত্মসমর্পণের নির্দেশ
২০১১ সালে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) ছাত্রাবাসে ছাত্রদলকর্মী সন্দেহে ৫১তম ব্যাচের ব্যাচেলর অব ডেন্টাল সার্জারি (বিডিএস) ৩য় বর্ষের শিক্ষার্থী আবিদুর রহমান আবিদ হত্যা মামলায় খালাস পাওয়া ১২ আসামিকে আত্মসমর্পণের নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। আসামিরা নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগের তৎকালীন চমেক শাখার নেতাকর্মী।
মঙ্গলবার বিচারপতি মো. জাকির হোসেন ও বিচারপতি সৈয়দ জাহেদ মনসুর সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ রুলসহ এ আদেশ দেন।
রুলে আবিদ হত্যা মামলায় বিচারিক আদালতের দেওয়া রায় কেন বাতিল করা হবে না, তা জানতে চাওয়া হয়েছে। আদালতে আবেদনের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী অজি উল্লাহ ও আইনজীবী আজিমুদ্দিন পাটোয়ারি।
আসামিরা হলেন- তৎকালীন ছাত্র সংসদের ভিপি মফিজুর রহমান জুম্মা, চমেক ছাত্রলীগ সভাপতি সোহেল পারভেজ সুমন, সাধারণ সম্পাদক বিজয় সরকার, সহ-সাধারণ সম্পাদক হিমেল চাকমা, ফেরদৌস রাসেল, শান্ত দেবনাথ, মাহাফুজুর রহমান ধীমান, নাসির উদ্দিন পাটোয়ারী, দেবাশীষ চক্রবর্তী, মোস্তফা কামাল, রাশেদুর রেজা সানি ও সালমান মাহমুদ রাফসান।
২০১১ সালের ২১ অক্টোবর রাতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান আবিদ। তিনি কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার মধ্যম বড়ইতলী গ্রামের মৃত নুরুল কবির চৌধুরীর ছেলে।
স্বজনদের অভিযোগ, ছাত্রদলের কমিটি গঠনের চেষ্টা করায় তৎকালীন ছাত্রলীগ নেতারা কয়েক দফা পিটিয়েছিলেন আবিদকে। এরপর তাকে পাঠিয়ে দেওয়া হয় বোনের বাসায়। পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান আবিদ।
আবিদ মারা যাওয়ার পরদিন তার মামা নেয়ামত উল্লাহ বাদী হয়ে চট্টগ্রামের পাঁচলাইশ থানায় ছাত্রলীগ ও ছাত্রসংসদের ২২ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়ের করেন। ২০১২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে মামলার তদন্ত শেষে ১২ জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ। বিচার শেষে ২০১৯ সালের ১০ জুলাই আবিদ হত্যা মামলার রায়ে মামলা সব আসামিকে খালাস দেন আদালত। পরে বাদী নেয়ামত উল্লাহ ওই রায়ের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আবেদন করেন।