ইন্দোনেশিয়ার ভবিষ্যৎ রাজধানীকে হুমকিতে ফেলে দিচ্ছে ইঁদুর
Published: 14th, April 2025 GMT
বোর্নিও দ্বীপের নুসানতারায় ৩ হাজার ২০০ কোটি মার্কিন ডলার ব্যয়ে তৈরি হচ্ছে ইন্দোনেশিয়ার স্বপ্নের সবুজ রাজধানী। নতুন রাজধানী তৈরির কাজ জোরেশোরে চলছে। বিপুলসংখ্যক পর্যটক নতুন রাজধানীর নির্মাণকাজ দেখতে সেখানে বেড়াতে যাচ্ছেন। বনের ফাঁকে ফাঁকে উঁকি দেওয়া চকচকে সরকারি ভবনই শুধু নুসানতারায় পর্যটকদের স্বাগত জানাচ্ছে না, সেগুলোর সঙ্গে সেখানে আছে অসংখ্য ইঁদুর।
নুসানতারায় পর্যটকদের ফেলে যাওয়া আবর্জনার মধ্যে ছুটে বেড়ানো ইঁদুরের বেশ কয়েকটি ভিডিও গত কয়েক দিনে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে।
ভিডিওগুলো ভাইরাল হওয়ার পর নড়েচড়ে বসেছে নুসানতারা রাজধানী কর্তৃপক্ষ। তারা শহরজুড়ে কয়েক শ ইঁদুর ধরার ফাঁদ পেতেছে। ইঁদুর মোকাবিলায় বাড়তি আরও ব্যবস্থা গ্রহণের প্রতিশ্রুতিও দিয়েছে।
ইন্দোনেশিয়া সরকার নুসানতারাকে একটি উচ্চপ্রযুক্তির পরিবেশবান্ধব মহানগর হিসেবে গড়ে তুলতে চায়। তাদের এই উচ্চাকাঙ্ক্ষা ভেস্তে যাওয়া আটকাতে হলে আগে তাদের ইঁদুর নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।
রাজধানী কর্তৃপক্ষের উন্নয়ন নিয়ন্ত্রণ বিভাগের উপপ্রধান টমাস উমবু পাতি তেনা বলেছেন, ‘এটা বন, পাহাড়ি এলাকা। তাই প্রাকৃতিকভাবেই এখানে ইঁদুরের অনেক পুরোনো বাসা আছে। কিন্তু আমরা অলস বসে নেই। আমাদের দল এটা নিয়ে এরই মধ্যে কাজ শুরু করেছে।’
ইন্দোনেশিয়ার বর্তমান রাজধানী জাকার্তা ঘনবসতিপূর্ণ। এ ছাড়া সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বাড়তে থাকায় মহানগরটি ক্রমেই পানির নিচে তলিয়ে যাচ্ছে। এ কারণে রাজধানী বোর্নিও দ্বীপের প্রাণকেন্দ্রে সরিয়ে নেওয়ার বিষয়ে ২০২২ সালে ইন্দোনেশিয়ার পার্লামেন্টে একটি আইন পাস হয়।
ওই বছরই নতুন রাজধানীর নির্মাণকাজ শুরু হয়। নতুন রাজধানী ১৯ লাখ মানুষের বসবাসের উপযোগী করে গড়ে তোলা হচ্ছে। কিন্তু নির্মাণ ক্ষেত্রজুড়ে ছুটে বেড়াচ্ছে ইঁদুর আর ইঁদুর।
ঈদুল ফিতরের ছুটির মধ্যে ৬৪ হাজারের বেশি পর্যটক ভবিষ্যতের রাজধানী নুসানতারা ঘুরে দেখতে গিয়েছিলেন। তাঁদের অনেকেই নগরীর মসৃণ সড়ক এবং আধুনিক স্থাপত্যশৈলি দেখে মুগ্ধতা প্রকাশ করেছেন। তবে কেউ কেউ সেখানে আবর্জনা, বিশেষ করে প্লাস্টিক দূষণ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। আবর্জনার কারণেই ইঁদুরের উৎপাত বেড়ে গেছে, বলেছে রাজধানী কর্তৃপক্ষ।
বহু পর্যটক ইন্দোনেশিয়ার ভবিষ্যৎ রাজধানী নুসানতারায় বেড়াতে আসেন.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ইন দ ন শ য় র ন স নত র য়
এছাড়াও পড়ুন:
কক্সবাজারে পর্যটকের ঢল, অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের অভিযোগ
রাজধানী ঢাকা থেকে ছুটিতে পরিবার নিয়ে কক্সবাজারে বেড়াতে এসেছেন হাবিবুল আউয়াল। ভালো হোটেলে রুম না পাওয়ায় শহরের কলাতলী এলাকায় মধ্যমমানের একটি আবাসিক হোটেলে উঠেছেন। তাঁর কাছে এক রাতের জন্য হোটেলটির দুটি রুমের ভাড়া নেওয়া হয়েছে ২৫ হাজার টাকা। যদিও অন্য সময়ে ৫০০ থেকে ১ হাজার টাকায় এই মানের হোটেলে রুম ভাড়া পাওয়া যায়। ঈদ মৌসুমে চাহিদা বাড়ায় অন্য সময়ের তুলনায় ১২ গুণের বেশি ভাড়া নেওয়া হয়েছে তাঁর কাছ থেকে।
কোরবানির ঈদ ও পরবর্তী ছুটির সময়ে অতিরিক্ত পর্যটক আসায় কক্সবাজার শহর ও এর আশপাশের পাঁচ শতাধিক আবাসিক হোটেল, মোটেল, গেস্টহাউস ও রিসোর্টের প্রায় প্রতিটিতেই অন্য সময়ের চেয়ে ১০ থেকে ১৫ গুণ বেশি ভাড়া আদায় করা হচ্ছে। শুধু আবাসিক হোটেল নয়, রেস্টুরেন্ট থেকে শুরু করে পর্যটনসংশ্লিষ্ট সব সেবা খাতেই অতিরিক্ত অর্থ আদায়ের অভিযোগ পাওয়া গেছে। সংশ্লিষ্ট অনেকের মতে, প্রতিটি ছুটির মৌসুমে কক্সবাজারে পর্যটকদের সংখ্যা একটু বাড়লেই তাদের কাছ থেকে ‘গলাকাটা’ টাকা নেওয়া হয়।
ঈদুল আজহার লম্বা ছুটি শেষ হচ্ছে আজ। গতকাল শুক্রবার কক্সবাজার সৈকতে তিল ধারণের ঠাঁই নেই। লাবণী পয়েন্ট থেকে কলাতলী পয়েন্ট পর্যন্ত প্রায় তিন কিলোমিটার এলাকায় ছিল পর্যটকের ভিড়। সাগরতীর পরিণত হয়েছিল উৎসবের বেলাভূমিতে। শুক্রবার সকাল থেকে তীব্র গরম থাকলেও পর্যটকে পূর্ণ ছিল কক্সবাজার সৈকতের সুগন্ধা পয়েন্ট, লাবণী, কলাতলী, হিমছড়ি, ইনানী, পাতুয়ারটেক থেকে মেরিন ড্রাইভ পর্যন্ত পুরো এলাকা।
রাজধানীর মতিঝিল থেকে ঘুরতে আসা হুমায়ুন কবির বলেন, ‘এখন সমুদ্রে গোসল করছি। বিকেলে মেরিন ড্রাইভে ঘুরব, এরপর শনিবার রাতে ঢাকায় ফিরে যাব।’ নারায়ণগঞ্জ থেকে আসা আসিফ আহমেদ বলেন, ‘অনেক মানুষ, তবুও পরিবারের সবাইকে নিয়ে আনন্দ করছি, ছবি তুলছি, বিচ বাইক ও ঘোড়ায় চড়েছি।’
কক্সবাজার শহরের পাঁচতারকা হোটেল ওশান প্যারাডাইস লিমিটেডের বিপণন ব্যবস্থাপক ইমতিয়াজ নুর সোমেল সাংবাদিকদের বলেন, শুক্রবার পর্যন্ত তাদের হোটেলের ৭০-৮৫ শতাংশ রুম বুকিং রয়েছে। যদিও নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক হোটেল ব্যবসায়ী জানান, ১৩ জুন পর্যন্ত অধিকাংশ আবাসিক হোটেল সম্পূর্ণ বুকিং হয়ে গেছে। তবে প্রশাসন, কর ও ভ্যাট কর্মকর্তাদের ফাঁকি দিতে তারা বিষয়টি স্বীকার করতে চান না।
ট্যুরিস্ট পুলিশ কক্সবাজার জোনের এএসপি নিত্যানন্দ দাস বলেন, এবার কোরবানির ঈদের পর গত সাত দিনে আট লাখের বেশি মানুষ কক্সবাজার ভ্রমণ করেছেন। তিনি বলেন, অতীতের মতো এবারও শহর ও সমুদ্রসৈকতে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা রোধে ওয়াচ টাওয়ার থেকে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। এ ছাড়া সৈকতের প্রতিটি গোলঘরে সার্বক্ষণিক পুলিশের অবস্থান এবং মোবাইল টিমসহ কয়েক স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। পর্যটন স্পটগুলোতে সাদা পোশাকেও দায়িত্ব পালন করছেন পুলিশ সদস্যরা।
আবাসিক হোটেলে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের বিষয়ে এএসপি জানান, অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। গত কয়েকদিন এমন পাঁচটি অভিযোগ পাওয়া গেছে এবং ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট শাহিদুল আলম বলেন, পর্যটকদের হয়রানি রোধে তিনজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সার্বক্ষণিক দায়িত্ব পালন করছেন। অভিযোগ পেলে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। পাশাপাশি সচেতনতা বাড়াতে নিয়মিত মাইকিং করা হচ্ছে।