‘ছোট বোনের জামাই নিরঞ্জনকে কুয়া বানাবার কাজে সাহায্য করনের লাইগ্যা আমার স্বামী (নারায়ণ) শালচূড়া ভূঁইয়াবাড়িতে গেছিল। যাওয়ার আগে বইলা গেছিল, কুয়ার কাজ শ্যাষ কইরা বাজার কইরা বাড়িতে আইবো। আমার স্বামী বাড়িতে ঠিকই আইলো, লাশ হইয়া। আমার স্বামীর দিনমজুরির সামান্য আয় দিয়া আমগর সংসার চলত। বাড়িঘর, জায়গাজমি কিছুই নাই। বাবার বাড়িতে থাকি। পোলাপান নিয়া অহন ক্যামনে সংসার চালামু?’

শেরপুরের ঝিনাইগাতী উপজেলায় কুয়া সংস্কার করতে গিয়ে অক্সিজেনের অভাবে মারা যাওয়া নারায়ণ কোচের সদ্য বিধবা স্ত্রী জয়ন্তী কোচ (৩৫) এভাবে আহাজারি করছিলেন। গতকাল সোমবার বিকেলে উপজেলার রাংটিয়া গ্রামে তাঁদের বাড়ি। এই দম্পতির দুই ছেলে ও এক মেয়ে।

গত রোববার বিকেলে ঝিনাইগাতীর শালচূড়া ভূঁইয়াবাড়ি এলাকায় কুয়া সংস্কার করতে গিয়ে দুই ভায়রার মৃত্যু হয়। এই দুজন হলেন উপজেলার শালচূড়া ভূঁইয়াবাড়ি গ্রামের নিরঞ্জন কোচ (৩৫) ও রাংটিয়া গ্রামের নারায়ণ কোচ (৪১)। তাঁরা উপজেলার রাংটিয়া গ্রামের গণেন্দ্র কোচের দুই মেয়ের জামাতা।

নিরঞ্জনের বাড়িতে ঢুকে তাঁর সদ্য বিধবা স্ত্রী সান্ত্বনা কোচকে (২৫) কাঁদতে দেখা যায়। অর্পিতা কোচ নামে তাঁদের চার বছরের একটি মেয়ে রয়েছে। সান্ত্বনা কোচ বলেন, বাড়িতে বিশুদ্ধ পানির সংকট। সেই ব্যবস্থা করার জন্য তাঁর স্বামী বাড়িতে কুয়া দেওয়ার ব্যবস্থা করেছিলেন। চার দিন পরিশ্রম করে মাটি খুঁড়ে কয়েকটি রিং বসিয়েছিলেন। এরপর ওপরে টিনের চালের ঢাকনা দিয়ে কুয়ার মুখটি বন্ধ করে রেখেছিলেন। রোববার বিকেলে কুয়াটি সংস্কার ও ভেতরের পানি পরিষ্কার করার জন্য প্রথমে নারায়ণ কুয়ার ভেতরে নামেন। সঙ্গে সঙ্গে তিনি অজ্ঞান হয়ে যান। তাঁকে বাঁচাতে গিয়ে তাঁর স্বামীও অজ্ঞান হয়ে পড়েন। দুজনই মারা যান।

সান্ত্বনা কোচের স্বামী নিরঞ্জন ঝিনাইগাতী বাজারের একটি রোগনির্ণয় কেন্দ্রে প্যাথলজিস্ট হিসেবে কাজ করতেন। পাশাপাশি নিজের সামান্য কৃষিজমির দেখাশোনা করতেন। সীমিত আয় দিয়ে তাঁদের সংসার চলত। স্বামীর মৃত্যুর পর কীভাবে সংসার চালাবেন, তা নিয়ে তিনি চরম দুশ্চিন্তায় আছেন।

নারায়ণ ও নিরঞ্জনের বৃদ্ধ শ্বশুর গণেন্দ্র কোচ কান্নাজড়িত কণ্ঠে প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমারই তো এখন মরার কথা। আমার চোখের সামনে আমার দুই মেয়ে বিধবা হলো। সাদা কাপড় পরেছে, দেখতে কষ্ট লাগে।’

বাংলাদেশ কোচ আদিবাসী ইউনিয়ন শেরপুর জেলা শাখার সভাপতি রুয়েল কোচ বলেন, দুটি পরিবারই আর্থিকভাবে অসচ্ছল। তার ওপর দুই বোন তাঁদের উপার্জনক্ষম স্বামী হারিয়ে খুবই অসহায় হয়ে পড়েছেন। এ দুটি পরিবারের চলার জন্য সরকারিভাবে অর্থসহায়তা প্রয়োজন।

ঝিনাইগাতীর নলকুড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো.

রুকুনুজ্জামানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ঘটনা জানার পর তিনি পরিবার দুটির পাশে দাঁড়িয়েছেন। সদ্য বিধবা দুই বোনকে আগামী দুই বছরের জন্য প্রতি মাসে ৩০ কেজি করে চাল দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। আগামী অর্থবছরে তাঁদের একটি নলকূপ দেওয়ার ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: র জন য উপজ ল

এছাড়াও পড়ুন:

অফিসে আপনি কি ১১ ঘণ্টার বেশি কাজ করেন

প্ল্যান ওয়ান জার্নালে প্রকাশিত একটি গবেষণা নিয়ে চলছে আলোচনা। সেখানে দুই হাজার ফুলটাইম কর্মজীবীর ওপর একটা জরিপ পরিচালনা করা হয়। পেশাগত কাজ বা চাপের সঙ্গে মানসিক স্বাস্থ্যের সম্পর্ক নিয়ে পরিচালিত গবেষণাটি থেকে পাওয়া গেছে চমকপ্রদ তথ্য।

বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, যাঁরা কর্মক্ষেত্রে ১১ ঘণ্টা বা তার বেশি কাজ করেন, তাঁদের খাদ্যাভ্যাস তুলনামূলকভাবে অস্বাস্থ্যকর, তাঁরা অন্যদের তুলনায় মানসিক চাপে ভোগেন বেশি। ঠিকমতো পানি খাওয়ার প্রবণতা কম। পরিবার, প্রকৃতি ও পোষা প্রাণীর সঙ্গে সময় কাটানোর প্রবণতাও কম। কম ঘুমান। আর যেকোনো মানসিক আঘাত থেকে সেরে ওঠার পর্যাপ্ত সময় বা সুযোগ পান না। এই মানুষেরাই বেশি হতাশায় ভোগেন।

শুধু তা-ই নয়, দ্রুত বুড়িয়ে যাওয়া এবং হৃদ্‌রোগ ও স্ট্রোকের মতো কার্ডিওভাস্কুলার রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিও বেশি। যাঁরা ১১ ঘণ্টা বা তার বেশি সময় অফিস করেন, তাঁদের মধ্যে কর্মক্ষেত্রে অসুস্থ হয়ে যাওয়ার সংখ্যাও অনেক।

আরও পড়ুন২৫ বছর ধরে অফিসে যাননি তিনি১৩ মার্চ ২০২৫যদি ১১ ঘণ্টা কর্মক্ষেত্রে থাকতেই হয়, তাহলে যেসব বিষয় খেয়াল রাখবেন

রাতে ৮ ঘণ্টা ঘুমাতেই হবে। তাতে শরীর ও মস্তিষ্ক দিনের শারীরিক ও মানসিক পরিশ্রমের ধকল কাটিয়ে ওঠার সুযোগ পাবে।

কাজের ফাঁকে ফাঁকে বিরতি নিন। সবুজের দিকে তাকান। ডেস্কে গাছ রাখতে পারেন। উঠে একটু হাঁটুন। ব্যায়াম করুন। সহকর্মীর সঙ্গে চা খেতে খেতে গল্প করুন। গবেষণা জানাচ্ছে, ছোট ছোট বিরতি কাজে মনোযোগ পুনঃস্থাপন করতে সাহায্য করে এবং কাজের গুণমান বাড়ায়।

দুপুরে খাওয়ার পর একটা ন্যাপ নিতে পারেন।

২ লিটারের একটা বোতলে পানি রাখবেন। প্রতিদিন ১ বোতল পানি অবশ্যই শেষ করবেন। তা ছাড়া পানি, শরবত, জুস, ডাবের পানি, তরমুজ, শসা, আনারস ইত্যাদি খাবেন। হাইড্রেটেড থাকলে এনার্জি ধরে রেখে কাজ করা সহজ হয়।

প্রক্রিয়াজাত খাবার, কার্বোনেটেড ড্রিংক, চিনিযুক্ত খাবার বাদ দিন। এসব কেবল আপনার ক্লান্তি বাড়াবে।

আর সম্ভব হলে কর্মক্ষেত্রে কথা বলে আপনার কর্মঘণ্টা ৮ ঘণ্টায় নিয়ে আসতে পারলে তো কথাই নেই।

সূত্র: এনবিসি নিউজ

আরও পড়ুনঅফিসের বাড়তি কাজকে যেভাবে ‘না’ বলবেন১৩ মার্চ ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ