ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি রাজনীতিতে এমন সব পদক্ষেপ নিচ্ছেন যেগুলো যতটা না সরকার পরিচালনা, তাঁর চেয়ে বেশি নিজের ভাবমূর্তি পুনর্গঠনের কৌশল বলে মনে হয়। সাম্প্রতিক ওয়াক্ফ সংশোধনী বিল তাঁর সর্বশেষ চেষ্টার একটি দৃষ্টান্ত। এর সাংবিধানিক তাৎপর্য যেমন গুরুত্বপূর্ণ, তেমনি এর রাজনৈতিক ইঙ্গিতও গভীর।
২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে বিজেপির একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পাওয়া মোদির জন্য বড় ধাক্কা। এক দশকের বেশি সময় ধরে যে একচ্ছত্র ক্ষমতা তিনি ভোগ করছিলেন, এই নির্বাচন তাকে হঠাৎ করেই প্রশ্নবিদ্ধ করে দিয়েছে। এমন অবস্থায় মোদির সামনে মূল চ্যালেঞ্জ, কীভাবে এই পরাজয়ের অভিঘাত ধুয়েমুছে আবারও নিজেকে অপ্রতিরোধ্য হিসেবে তুলে ধরা যায়।
এর জবাবে তিনি বেছে নেন পুরোনো পথ—জনগণকে জীবনের মৌলিক সমস্যা থেকে দূরে সরিয়ে রাখার রাজনীতি। মূল্যবৃদ্ধি, কর্মসংস্থানহীনতা, অর্থনীতির অস্থিরতা কিংবা আদমশুমারির মতো মৌলিক কর্তব্য—সবই চাপা পড়ে যায় ‘দেশদ্রোহীদের’ বিরুদ্ধে একাত্মতার ডাক, বা ‘হিন্দু-মুসলিম’ বিভাজনের রণহুংকারে।
২০২৪ সালে আয়োজিত অযোধ্যার রামমন্দিরের উদ্বোধনকেও মোদি রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করেন। কিন্তু তার ফল হয় উল্টো। বিজেপি অযোধ্যার কেন্দ্র ফৈজাবাদে হেরে যায়। উত্তর প্রদেশে সমাজবাদী পার্টি বিজেপিকে ছাপিয়ে যায়। মহারাষ্ট্রেও বিজেপির অবস্থা নাজুক হয়ে পড়ে।
এই পটভূমিতে, মোদি তৎপর হন নিজের ভাবমূর্তি পুনর্গঠনে। শুরু হয় এক বিস্তৃত প্রচারাভিযান। এই অভিযানের লক্ষ্য ছিল, পরাজয় ও হতাশার স্মৃতি ধুয়ে ফেলা। সংসদে নিজের প্রথম ভাষণেই তিনি বলেন, যাঁরা তাঁর সমালোচনা করছেন, তাঁরা দেশবিরোধী ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। এর পর থেকে প্রতিটি বক্তৃতায় তিনি একই বার্তা দেন; মোদি মানেই দেশ, দেশ মানেই মোদি।
এই বার্তা ছড়াতে গিয়ে বিজেপি তিনটি কৌশল নেয়। প্রথমত, তারা নিজেদের ভোটে হারার কারণ হিসেবে ‘অপপ্রচার’ আর ‘ভ্রান্ত তথ্য’কে দোষারোপ করে।
দ্বিতীয়ত, কেন্দ্রীয় সরকারের শক্ত অবস্থানকে নতুন করে জোর দিয়ে তুলে ধরে। মানে, শক্ত হাতে দেশ চালানোই মোদির একমাত্র পথ।
তৃতীয়ত, হেরে যাওয়া রাজ্যগুলোয় বিজেপি জোরালোভাবে ফিরে আসার চেষ্টা চালায়। হরিয়ানায় বিরোধীদের ঘায়েল করে আবার ক্ষমতায় আসে। মহারাষ্ট্রে নজিরবিহীন জয় পায় এবং জম্মু অঞ্চলেও ভালো ফল পায়।
অমৃতসরে ওয়াকফ সংশোধন নিয়ে বিক্ষোভ.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: র জন ত
এছাড়াও পড়ুন:
১০০ কোটি টাকার পাচারের অভিযোগ, জাহাঙ্গীরের নামে মামলা
ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দপ্তরের সাবেক পিয়ন জাহাঙ্গীর আলম ওরফে পানি জাহাঙ্গীরের বিরুদ্ধে ১০০ কোটি টাকা পাচারের অভিযোগে মামলা করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।
শুক্রবার (৩১ অক্টোবর) নোয়াখালীর চাটখিল থানায় মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইনে এই মামলা করেছে সিআইডির ফাইন্যান্সিয়াল ক্রাইম ইউনিট।
আরো পড়ুন:
নাফিসা কামালসহ ৮ ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অর্থপাচারের মামলা
সাজিদ হত্যার তদন্তে সিআইডিকে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমোদন
সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার (মিডিয়া) জসীম উদ্দিন খান জানান, প্রাথমিক অনুসন্ধানে উল্লেখযোগ্য প্রমাণ পাওয়ায় নোয়াখালীর চাটখিল থানায় জাহাঙ্গীরের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে।
তিনি আরো জানান, নোয়াখালীর চাটখিল উপজেলার এক নিম্ন-মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান জাহাঙ্গীর আলম জাতীয় সংসদ সচিবালয়ে দৈনিক মজুরিভিত্তিক কর্মচারী হিসেবে কাজ করতেন। পরে ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের পর তিনি অধিকতর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে স্বল্প সময়ের জন্য ‘ব্যক্তিগত সহকারী’ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এই দায়িত্বই তাকে আর্থিকভাবে লাভবান করেছে মর্মে প্রাথমিক অনুসন্ধানে উঠে এসেছে।
জসীম উদ্দিন খান জানান, ২০১০ সালে জাহাঙ্গীর ‘স্কাই রি অ্যারেঞ্জ লিমিটেড’ নামে একটি কোম্পানি গঠন করে বিকাশের ডিস্ট্রিবিউশন ব্যবসা নেন। কিন্তু এর আড়ালে তিনি অসংখ্য সন্দেহজনক ব্যাংকিং কার্যক্রম করেন। কোম্পানির নামে একাধিক ব্যাংক অ্যাকাউন্টে অস্বাভাবিক অঙ্কের টাকা জমা হয়, যার বৈধ উৎস পাওয়া যায়নি ও ব্যবসার সঙ্গে অসামঞ্জস্যপূর্ণ।
সিআইডির এই কর্মকর্তা জানান, প্রতিষ্ঠানটির অ্যাকাউন্টগুলোতে ২০১০ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে বিভিন্ন ব্যাংকে মোট ৫৬৫ কোটিরও বেশি টাকা লেনদেন হয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য অংশ নগদে জমা হয়েছে দেশের নানা স্থান থেকে। এসব অর্থের উৎস অজানা এবং হুন্ডি ও মানিলন্ডারিং কার্যক্রমের সঙ্গে জড়িত বলে প্রাথমিক প্রমাণ মেলে।
বিশেষ পুলিশ সুপার জসীম উদ্দীন জানান, জাহাঙ্গীর আলম তার স্ত্রী কামরুন নাহার ও ভাই মনির হোসেনের সহায়তায় দীর্ঘদিন ধরে অবৈধ অর্থ লেনদেন করতেন। জাহাঙ্গীর আলম ও তার স্ত্রী ২০২৪ সালের জুন মাসে যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমান এবং বর্তমানে ভার্জিনিয়ায় অবস্থান করছেন। বিদেশে তাদের বিনিয়োগ বা সম্পদ ক্রয়ের কোনো সরকারি অনুমোদন না পাওয়া গেলেও তারা যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমিয়েছেন বলে প্রাথমিক অনুসন্ধানে প্রমাণ মেলে।
অনুসন্ধানে প্রাথমিকভাবে প্রমাণিত হয়েছে, জাহাঙ্গীর আলম, তার স্ত্রী কামরুন নাহার, ভাই মনির হোসেন এবং প্রতিষ্ঠান স্কাই রি অ্যারেঞ্জ লিমিটেড যৌথভাবে ২০১০ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে প্রায় ১০০ কোটি টাকা বিদেশে পাচার করেছেন। অপরাধের পূর্ণাঙ্গ তথ্য উদঘাটন, অপরাপর সদস্যদের শনাক্ত ও গ্রেপ্তার করার স্বার্থে সিআইডির তদন্ত ও অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
ঢাকা/মাকসুদ/সাইফ